নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিশ্চিন্তির অপেক্ষায়

১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩

নিশ্চিন্তির অপেক্ষায়

কু শী ল ব...........................

উপস্থাপক ...........................
শমসের আলী.......................
পাগলা কানাই......................
তপন.................................
মোমেনা বেগম............................
সুলতানা...................................
সাহিদা....................................
সালাম....................................
ছেলেটা....................................

নিশ্চিন্তির অপেক্ষায়..................................................................................................................................
উপস্থাপক : আমরা একটা নাটক দেখাবো আজ। এ নাটক হরহামেশাই আমরা দেখে থাকি আমাদের জীবনে। আর এই জাতি, যাদের কোনো কিছুতেই কিছু আসে যায় না। আবেগশূন্য। নাকি ডিজিটাল দুনিয়ার ফল। আবেগগুলোও ইদানিং ডিজিটাল। আসুন না দেখি কি ঘটছে চারপাশে।
সবাই গান ধরে মঞ্চে আসে।
কোরাস : কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়। /ওরে ভাইরে ও ভাই / কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়।/ আমি যেই দিকেতে চাই / দেখে অবাক বনে যাই
আমি অর্থ কোনো খুঁজে নাহি পাই রে।।
সবাই যে যার মত চাযের দোকানে বসে যায়। চায়ের দোকানটা সরাসরি দেখা যায় না। তপন নামে একটা ছেলে ভেতর থেকে চা এনে পরিবেশন করে। সালাম তার কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে বসে। পাশেই বস্তা এনে রেখে পাশে বসে মোমেনা। ক্লান্ত শ্রমজীবী মানুষ শমসের আলী একটা জায়গা খুঁজে বসে। তপন এসে দাঁড়ায়।
শমসের : হা, চা খাবো। দুধ চিনি বেশি দিয়ে। তার আগে বলদিনি ইস্টিশানটা কোনদিকে হবে?
তপন সামনে দেখায়।
তপন : ওই তো, হেঁটে গেলে দু’মিনিট লাগবে। যাবেন কনে?
শমসের : তা দেখি আল্লা কোনদিকে নেয়।
তপন : কিন্তু ট্রেন তো সেই রাত বারোটায়।
শমসের : তা হোক সেটা কোনো ব্যাপার না। দেখতে দেখতে কেটে যাবে সময়। যাও চা আর একটা বিস্কিট নিয়ে এসো।
তপন হাঁক দিয়ে ভেতরে যায়। আনন্দিত চিত্তে গান ধরে আসে পাগলা কানাই।
পাগলা : দুনিয়ামে সাব চোর চোর/ কোই লুঙ্গি চোর কোই টাকা চোর / কোই পয়সা চোর।
শমসেরের দিকে চোখ পড়তে থমকে যায়। সবাইকে দেখে।
শমসের : হ বেশ ভালো এট্টা গান। কিন্তু আপনার মনে হয় দুনিয়ায় সব মানুষই চোর?
পাগলা : বড় সুন্দর প্রশ্ন করেছেন ভাইজান। কিন্তু বড় জটিল। আমি পাগলা কানাই ঘুরে ঘুরে খাই এ সওয়ালের জবাব আমার জানা নাই।
শমসের : দু চারটে ভালো মানুষ আছে বইলেই দুনিয়াটা এখনও টিকে আছে।
পাগলা : আপনি কি জ্যোতিষী নাকি?
শমসের: আরে পাগল, এ জন্যি জ্যোতিষ হওয়া লাগে না। দুনিয়াদারী ঘুরলে এমনিই বোঝা যায়।
পাগলা সবাইকে দেখে।
পাগলা : ভালো, তা মুখে মাস্ক নেই যে? জটিল অবস্থা। মাস্ক না থাকলি তো সমস্যা। মাস্ক হলো গিয়েÑ
শমসের অবাক হয়।
শমসের : কি এত মাছ মাছ করতিছেন, মাছ? মুখে মাছ নিয়ে কেইবা ঘুইরে বেড়াবো? রুই কাতলা বোয়াল এ কেমন কথা।
পাগলা : আরে মাছ না, মাস্ক মা স ক মাস্ক মানে মুখোশ।
শমসের : মুখোশ! হা হা হা আরে আমি কি চোর না ডাকাত যে মুখোশ পইরে ঘুইরে বেড়াবো? এ কি পাগলামী।
পাগলা : ওরে লোকে যে আমারে কয় পাগল এ তো দেখছি আমার চে বড় পাগল, মাস্ক চেনে না।
শমসের : আচ্ছা মিয়াভাই ঘটনাটা এট্টু খুলে বলেনদিনি?
পানবিড়ির দোকানদার মোবারক মাঝবয়সী একজন দরিদ্র মানুষ। স্টেশনে ঢোকার মুখে একটু খালি জায়গায় একটা পানবিড়ির ট্রে নিয়ে বসে। পাশে চায়ের একটা ফ্লাস্ক। আশেপাশে কয়েকটা গাছের গুড়ি বা সিমেন্টের পিলার। সকালবেলা যথারীতি সে তার জায়গায় এসে বসে যায়। একটু পর গান গাইতে গাইতে ঢোকে স্থানীয় দালালগোছের মানুষ হারুন মুন্সী।
মুন্সী : এ মোবারক, গত তিনদিন কনে আছিলি?
মোবারক : আর বলিসনারে ভাই, বিপদ আর বিপদ। একে জিনিসপত্রের দাম লাফায় লাফায় বাড়তিছে তার মদ্যি রোগশোক কত কিছু-
মুন্সী : নির্ঘাত করোনা ভাইরাস।
মোবারক : আরে না, কোনো অসুখ হলেই সবাই ভাবে এই বুঝি করোনায় ধরলো। ছোট ছেইলেটার পেটে অসুখ। দু’দিন দৌড়ালাম হাসপাতালে হাসপাতালে। লাভ হোলো না। কোথাও ডাক্তার নেই গো। শেষে রতন ফারমিসির রতন ওষুদ দিলো। কিনে খাওয়ায়ে তবে শান্তি।
হাঁপ ছাড়ে মুন্সী।
মুন্সী : বড় বাচা বেচে গিয়েছিস। দে একটা পান খাওয়া।
মোবারক পান বানাতে ব্যস্ত।
মুন্সী : সকাল থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কোনো ধান্দা হলো না। ভাবচক্কর ভালো ঠেকতিছে না। মোবারক কোথাও লকডাউন দিয়েছে না কি?
মোবারক : ওরে মুন্সীর ব্যাটা মুন্সী আমি কি সাম্বাদিক নাকি রে? তোমার জন্যি সব খবর নিয়ে বসে থাকবো।
মুন্সী : আহা ্রাগ হচ্ছিস কেনো? বুঝিসই তো-
এসময় এক পাগলা যুবক ঢোকে।
পাগলা : হেই দুনিয়ামে সাব চোর চোর কোঈ লুঙ্গি চোর কোই মুরগী চোর কোঈ পায়সা চোর.....
ওকে দেখে মুন্সী একটু লুকানোর চেষ্টা করে।
পাগলা : এইখানে এতো ভীড় কিসের? সেন্ট্রি তালা লাগাও। এইবার বুঝায় দেবো। এইবার হবে খেলা। বুঝায় দেবো।
মোবারক : যাও, বুঝাওগে। আপাতত এইখান থেকে সরে যাও।
পাগলা : এই যে হারুন মুন্সী। আর কত? তোমার কি লজ্জা হয় না? নাম রেখেছ মুন্সী অথচ করে বেড়াচ্ছো দুনিয়ার আকাম কুকাম।
মুন্সী রেগে যায়।
মুন্সী : পাগলা, মুখ সামলে কথা বল। আকাম তো করিস তুই।
এসময় দুরে হৈচৈ শোনা যায়। পাগলা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
পাগলা : জল মানে না বাধ রে গুরু.. ওই সাবধান।
মোবারক : ওখানে আবার কি হলো?
একটা ছেলে দৌড়ে আসে।
ছেলেটা : আসতিছে, আসতিছেরে আসতিছে।
মোবারক : ও রজব কি হয়ছে রে?
ছেলেটা : কাকা সাবধান বান আসতিছে।
মুন্সী : কোথায় রে?
ছেলেটা : দুমকি নদীর চুমকি পয়েন্ট পার হয়েছে।
মোবারক : ওরে সেতো আরো বিশ মাইল দুরে।
মুন্সী : এমন করে বলছিস মনে হয় ইস্টিশানের লাইনশুদ্ধ ডুবে গেছে। যা ভাগ, শুধু শুধু ভয় দেখাস।
ছেলেটা সাবধান বলতে বলতে বের হয়ে যায়। এসময় হুজুর জালালী তার বোরকা পরা স্ত্রীকে নিয়ে ঢোকে।
একটা খালি জায়গা দেখে।
জালালী : যাক পাওয়া গেছে। তুমি এখেনে বসো আমি এট্টু খাবার ব্যবস্থা করি। ওরে কষ্টরে কি যে কষ্ট আরো বাকী কে জানে। হাটতে হাটতে জানটা বারায় গেলো। ইয়া আল্লাহ।
জালালী বেরিয়ে যায়। মুন্সী তাকিয়ে দেখে। সামনে এগিয়ে যায়।
মুন্সী : ভাবীসাবরা যাবেন কুনদিকে।
আয়শা : জ্বী, আমি তো ঠিক বলতে পারিনে-
এসময় জালালী হাঁক দেয়।
জালালী : কি হয়ছে? পরস্ত্রীর সাথে কিসের কথা। ভাব দেখে তো মনে হয়...
মুন্সী : না জিগাস করছিলাম যদি ভাড়ার গাড়ি লাগে আমাকে বলবেন।
জালালী : গাড়ি ভাড়া করা লাগবে কেন? ট্রেনের কি হয়ছে?
মুন্সী : হুজুর, ট্রেন তো চলে গেছে তিনদিন আগে।
জালালী : মানে!
মুন্সী : মানে তিন দিন ধরে ট্রেন চলতিছে না। জায়গায় ব্রেক।
জালালী : কি হয়ছে, কি ব্যাপার বলদিনি?
মুন্সী : বাংলাদেশ বলে কথা। কত কি হতে পারে, বড় কোনো অ্যাকসিডেন্ট হতে পারে, যান্ত্রিক কারণে হতে পারে, কোনো ভিআইপি প্যাসেঞ্জারের কোনো অনুষ্ঠান হতে পারে, ঝড় হতে পারে, বন্যা হতে পারে-
জালালী : বুজিছি। তা তোমার গাড়িতে কত পড়বে?
মুন্সী : যাবেন কনে সেটা আগে বলেনদিনি।
জালালী : যাবো তো ধরো, শ্বশুরবাড়ি। আপদটারে রেখে আসি।
মুন্সী : আপদ! কিসের আপদ!
জালালী : বিয়ে থা কইরেছো কিছু?
মুন্সী : না
জালালী : তালি পর তোমারে বইলে লাভ নেই। কাজের কথা বলো।
মুন্সী : আপনার শ্বশুরবাড়িটা কোথায়?
জালালী : সেতো ম্যালা দুর রে পাগল। সেই ঢাকা শহর।
মুন্সী একনজর পুরো জালালীকে দেখে নেয়।
মুন্সী : দু হাজার পড়বে।
জালালী : কি আর করবো, কিন্তু দু হাজার কি জনপ্রতি?
মুন্সী : হ্যা. মাথা গুনে দু হাজার।
কথা শুনে জালালী মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
মুন্সী : কি হলো, ও হুজুর সমস্যা কি?
জালালী : না কিছু না, তবে বাসে গেলে পর তিনশ, ট্রেনে গেলে একশ’ সত্তর আর তোমার গাড়ি দু হাজার! এ তো ডাকাতি হচ্ছে। মগের মুল্লুক নাকি! ইচ্ছে মত নিলেই হলো? অসম্ভব?
মুন্সী : হু হু অসম্ভবকে সম্ভব করাই আমাদের কাজ। এটা মগের মুল্লুক না এটা মগের চাচাত ভাইয়ের মুল্লুক। এখানে সবই চলে। দরকার হলি পর যাবেন না হয় বইসে থাকবেন।
জালালী : গাড়ি কনে?
মুন্সী : আসতিছে।
জালালী : আসতিছে মানে!
মুন্সী : না মানে ট্রিপ নিয়ে তো ঢাকা গেছিল। এখন ফিরার পথে আছে। ঘন্টাদুয়েক তো লাগবেই।
জালালী : এ কেমন বিপদ বলদিনি?
মুন্সী : কি আর করা যাবে হুজুর। দেখেন না বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি চলতিছে। যুদ্ধ চলতিছে। আমাদের মানুষগুলার দিকে চাইলে বোঝা যায় বলেন। কোনো বিকার নেই গো। মনে হয় লোহা দিয়ে বানানো। কোনো নিয়ম কানুনের বালাই নেই।
জালালী : বিকার থাকবে কি করে? পেট তো চালাতি হবে। এই যে আমি কি সাধে ঢাকা যাচ্ছি। পকেটে টান পড়েছে বলেই যাচ্ছি। কাজ না করলি খাবো কি।
মুন্সী : হুম যুক্তির কথা বলেছেন কিন্তু ঠিক আছে কাজ কর তবে মুখে একটু মাস্কটা পড়, সাবান দিয়ে একটু হাতটা ধুয়ে নে দুরত্ব বজায় রেখে চল, তা না খালি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেও লোক গায়ের ওপরে এসে পড়বে। এগুলো বুঝেছেন অভ্যাসের ব্যাপার।
জালালী : সত্যি বইলেছ। কিন্তু ভাই, আমাদের যাবার কি হবে?
মুন্সী : অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই।
এসময় একজন ভদ্রলোক ঢোকে। সবাইকে দেখে। একটা সিগারেট কিনে এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায়। সবাই তাকে দেখে।
হামিদ : ট্রেন তো আসবে তাই না?
মুন্সী: জ্বী আসবে তবে দু’দিন অপেক্ষা করতে হবে।
হামিদ: কেন?
মুন্সী : কাজী সাহেবের মেয়ের বিয়ে তো তাই।
হামিদ : কাজী সাহেবটা আবার কে?
মুন্সী : হবে হয়তো হোমরাচোমরা কেউ। আপনি সার আসলেন কোথা থেকে আর যাবেনই বা কোথায়? সেই অনুয়ায়ীর গাড়ির ব্যবস্থা হবে। ট্রেনের আশায় থাকলি থাকতি হবে অনন্তকাল।
হামিদ : আসছি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। সওদাগর কম্পানির পক্ষ থেকে। এখন ঢাকা ফেরত যাবো। ভাইরে ভাই চারটে মাস এখানে আটকে ছিলাম করোনার জন্য। কি যে কষ্টে ছিলাম বলে বোঝানো যাবে না।
মুন্সী : তবে সার যদি বলেন সিট নিতে পারেন। এখনো দুটো খালি আছে।
হামিদ : ভাড়া কত?
মুন্সী : মাথাগুণে দু’হাজার করে নিচ্ছি। অ্যাডভান্স এক হাজার। সকালে আবার রেট বেড়ে যাবে।
জালালী এগিয়ে আসে।
জালালী : ও চাচা তা আমার কাছ থেকে যে অ্যাডভান্স নিলে না?
মুন্সী : সবার কাছ থেকে সব কিছু নিতে হয় না।
এসময় মোমেনা ব্যাগসহ বস্তা নিয়ে অন্যদিকে গিয়ে বসে। পাগলা কোমরের পেছন থেকে একটা দুমড়ানো পত্রিকা বের করে।
পাগলা : বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ মানে করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। আক্রান্ত বাংলাদেশও।
শমসের : হা হা বুঝতে পেরেছি। করোনা ভাইরাস হলি পরে শেষ। মুখ দিয়ে ঢোকে। তাই মুখ ঢেকে পথ চলতি হয়।
পাগলা : জানেন তো দেখি সবই তা মানেন না কেনো?
শমসের : আরে ভাই রোজগার না হলে খাওয়া জোটে না। তা খালি পেটে মুখে মুখোশ লাগিয়ে বসে থাকবো?
পাগলা : হুম তাও কথা ঠিক। তা যাবেন কনে?
শমসের : শহরে। কাজের সন্ধানে। ক’মাস তো বইসে খেলাম। এখন আর উপায় নেই।
এসময় ভদ্রলোক সালাম শাহেদ চিৎকার করে ওঠে।
সালাম : আমার ব্যাগ, আমার ব্যাগ চুরি হয়ে গেছে। মহামূল্যবান ব্যাগ আমার কোথায় গেলো। কে নিলো?
এসময় মোমেনা খাতুন এগিয়ে আসে।
মোমেনা : কি বলেন, এখানে লোকই মাত্র কয়েকজন। কেউ তো নড়াচড়াও করলো না। মনে হয় অন্য কোথাও-
সালাম : না না এখানে রেখেছিলাম, আমার পাশে। ব্যাগে আমার নাম লেখা আছে সালাম শাহেদ। প্লীজ একটু দেখুন।
মোমেনা খুঁজে খুঁজে দেখে। পাগলা এগিয়ে আসে।
পাগলা : আপনার ব্যাগে কি ছিলো স্যার?
সালাম : দুটো লুঙ্গি, একটা গামছা, সাবান, তেল, চিরুনি...
পাগলা : আর?
সালাম : মুড়ি আর চানাচুরের স্যাম্পল।
পাগলা : টাকা পয়সা?
সালাম : আছে তবে ব্যাগে না। অন্য জায়গায়।
শমসের : ধুর মিয়া, তালি আর এতো হা হুতোশ করে লাভ কি হলো। আবার বলেন মহামূল্যবাণ। আমি তো ভেবেছিলাম হীরা মাণিক্য থাকতি পারে নিদেনপক্ষে ঘুষের টাকার বান্ডিল। ধুর মিয়া সব নষ্ট করে দিলেন।
এসময় সুলতানা চিৎকার করে।
সুলতানা : আমার টাকা চুরি হয়ে গেছে।
পাগলা : এসব হচ্ছে কি, বুঝে আসতিছে না।
মোমেনা : সব্বোনাশ, কত টাকা?
সুলতানা : তিন হাজার ছিলো এই পার্সে। এখন আমার কি হবে। আমি এখন কোথায় যাবো।
সালাম : আপনি যাবেন কোথায়?
সুলতানা : জানি না। মানে যাবো তো এক জায়গায়।
সালাম : একটা কেমন রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
মোমেনা : আপনি ঠিক বলেছেন। এই মেয়ে তোমার উদ্দেশ্য কি বলোদিনি?
সুলতানা : আমি আসলে বাড়ি থেকে পালায় এসেছি।
মোমেনা : ওমা বলে কি, তোমার সাহস তো কম না।
পাগলা : কারণ?
সুলতানা : আমার বয় ফেরেন্ডের সাতে দেখা করতি। সে আমারে খুব ভালোবাসে। আমরা সংসার করবো।
শমসের : তা সোনার চান আছে কোথায় এখন?
সুলতানা : জানিনে ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
সালাম : পরিচয়টা কিভাবে হোলো?
সুলতানা : ওই তো ফেসবুকে টানা দু বছর ধরে কথা হচ্ছে। আরে ওই তো বসে আছে। রানা এই রানা।
একটা ছেলে বসে চা খাচ্ছে। সুলতানা এগিয়ে যায়।
সুলতানা : আমি তোমার জন্যি সেই কখন থেকে বসে আছি। তুমি কখন এলে? কি অবাক হচ্ছো আমাকে দেখে? আমি সত্যি এসেছি।
ছেলেটা অবাক হয়ে যায়।
ছেলেটা : আমাকে বলতিছেন?
সুলতানা : মশকরা কোরো নাতো। আমার টাকা চুরি হয়ে গেছে।
ছেলেটা : কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনতি পারতিছিনে। আপনি কিডা?
সুলতানা : আমি সুলতানা। তোমার ফেসবুকের ফেরেন্ড। দুবছর ধরে পেরেম করতিছি আর এখন বলো কিডা?
ছেলেটা : বিশ্বাস করেন আমার কোনো ফেসবুক নেই।
সুলতানা : মিথ্যে কথা বলতিছো।
সালাম : হু, বলেছিলাম না একটা রহস্য আছে। আচ্ছা এক কাজ করতো মেয়ে। ওর ফেসবুকটা বার করো তো দেখি।
সুলতানা কান্না ভাব নিয়ে ফেসবুক ওপেন করে।
সুলতানা : এই যে দেখেন এটা কার ছবি।
সবাই দেখে।
ছেলেটা : তাই তো দেকতিছি। আমারই ছবি কিন্তু এ জিনিস তো আমি চালাতি পারি না। কসম খেয়ে বলতিছি এটা কেউ দুনম্বরী করতিছে।
সুলতানা : তুমি মিথ্যে বলতিছো।
ছেলেটা : আচ্ছা আমার মোবাইলটা দেখেন।
সালাম মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা করে।
সালাম : হুম কথাতো ঠিক। তোমার সাথে কেউ চিটারি করেছে। তবে মনে হয় সে এই ছেলেরই কেউ হবে।
ছেলেটা : তা হতি পারে।
মোমেনা : আমি বলি কি কোনো ক্ষতি যখন হয়নি তখন এসব বাদ দাও বাড়ি যাও সেটা ভালো হবে।
পাগলা : হা হা মুখ দেখে ভুল কোরো না মুখটা তো নয় মনের আয়না...।
শমসের : হ্যা আর ভবিষ্যতে ওই ফেসবুক দেখে পেরেম কোরো না আখেরে খুব খারাপ হবে। আর এই ছেলে তুমি খুঁজে বের করবা তোমার কোন বন্ধু এই আকাম করিছে। তারে একটা শিক্ষা দিতি হবে।
সালাম : ঠিক বলেছেন ভাইজান। এই ছেলে, তুমি এই মেয়েটাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে এখানে আসবে যাও।
ছেলেটা সুলতানাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
তপন : এই যে ভাইরা সবাই জায়গা খালি করেন। এভাবে বসে থাকলে ব্যবসা চলবি না।
সালাম : কিন্তু ট্রেন না এলে আমরা যাবো কোথায়।
তপন : কোন টেরেনের কথা বলতিছেন?
পাগলা : নিশিন্তি এক্সপ্রেস।
তপন : ও তো অনেক দেরি। রাত বারোটার আগে আসবে না।
সালাম : তাহলে এতক্ষণ কি করবো। তুমি বরং একটু পর পর এসে চা দিয়ে যেও।
শমসের : আমি একটু খবর নিয়ে আসি।
শমসের বেরিয়ে যায়। সাথে পাগলাও। সালাম মোমেনাকে জিজ্ঞেস করে।
সালাম : আপনি কোথায় যাবেন?
মোমেনা : ঢাকা যাবো। গার্মেন্সে কাজ করি। কামাই দিলে চাকরি থাকবে না। দু‘দিনের জন্য বাড়ি এসেছিলাম বাবা মা রে দেকতি। এখন শুনি গাড়ি আসবে সেই রাত বারোটায়।
তপন : বারোটা বাজতি কিন্তু আর বেশি সময় নাই।
সবাই নিরব। এসময় কোনে বসা বোরকা পরা মহিলা হঠাৎ ফিট হয়ে যায়। সবাই তাড়াহুড়ো করে তাকে সুস্থ করে।
পাগলা : ও চাচী যাবেন কনে?
মহিলা : জানিনে বাবা।
সালাম : ও বাবা আপনিও জানেন না কনে যাবেন?
পাগলা : তা এখেনে এসেছেন কেন?
মহিলা : বাবারা কি বলব, লজ্জার কথা। আমার দু ছেলে স্বামী মারা গেছে তিন বছর হলো। আমার ছেলেরা আমারে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। বলে বুড়া মানুষ ঘরে রাকবে না।
মোমেনা : তুমি তো দেখি কুলাঙ্গার পয়দা করেছো। আহা এখন কি হবে? সমাজের কেউ কিছু বলল না?
মহিলা : কার কি দায় ঠেকেছে মা, সবাই ব্যস্ত।
মোমেনা : হায় রে কপাল।
সালাম মোবাইল বের করে মহিলার ছবি তোলে।
সালাম : সাহায্য চেয়ে আপলোড দিলাম। দেখি কি হয়। দুঃখজনক। শুনুন চাচী। একটু অপেক্ষা করেন দেখেন কি হয়। আচ্ছা অ্যাকাউন্ট নাম্বার তো দিলাম না। আপনার কি অ্যাকাউন্ট আছে? বা অন্য আত্মীয়স্বজন-
মহিলা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মহিলা নাম্বার দেয়। সালাম ছবি ও লেখাসহ নাম্বার আপলোড করে দেয়।
মোমেনা : মানুষগুলি কেমন যেনো হয়ে গেছে তাই না?
ডোরা কাটা দাগ দেখে---------
সালাম : এই তো রেসপন্স এসে গেছে, ওরে বাবা এতো দেখি অনেক টাকা। অঙ্কটা নাই বললাম। ওয়াও আমাকে বলেছে তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে। অবশ্যই।
এসময় শমসের আসে।
শমসের : শুনেছেন নাকি ঘটনা। টেরেন নাকি আসতি লেট হবে।
সালাম : কতক্ষণ?
শমসের : এই যা সেটা তো জিগাস করতে ভুলে গেছি।
এসময় পাগলা আসে।
পাগলা : আমি কিন্তু ভুলি নাই। আমি ঠিক জেনে এসেছি।
শমসের : কতক্ষণ?
পাগলা : দু’ঘন্টাও হতে পারে আবার ভোরবেলাও আসতি পারে।
মোমেনা : এটা আবার কেমন কথা?
পাগলা : এটাই কথা । মাস্টার যা বইলেছে তাই বললাম।
সালাম : এখন কি হবে? এখন তো অন্য কোনো যানবাহনও পাওয়া যাবে না।
শমসের : হুম কি আর করা । উড়ে তো আর যাতি পারবোনানি।
মোমেনা : অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা, যাবার জন্যি অপেক্ষা, আসার জন্যি অপেক্ষা, বলার জন্যি অপেক্ষা, চলার জন্যি অপেক্ষা, একমুঠো খাবারের জন্যি অপেক্ষা, একটা সুন্দর ভোরের জন্যি অপেক্ষা...অপেক্ষা... অপেক্ষা...নিশ্চিন্তি এক্সপ্রেসের জন্যি অপেক্ষা নিশ্চিন্তি নিশ্চিন্তি....
পাগলা গান ধরে
পাগলা : অপেক্ষা করে আছি কখন সকাল আসবে বুলিয়ে দেবে সোনালি পরশ। তোমরা মেঘের মত হবেই হতাশ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না তখন। দেয়ালে ঠেকেছে পিঠ বাঁধ রে কোমর, চিৎকার করে বল-

নিশ্চিন্তির অপেক্ষায়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.