| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নদীমাতৃক দেশ হিসেবেই পরিচিত আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু কোন পথে যাচ্ছে আজ দেশ? আমাদের নদীগুলো কেন হারিয়ে যাচ্ছে? সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদী, খাল-বিল অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে পানিপ্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নদ-নদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর? রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে প্রকৃতি, জলাভূমি, বনভূমি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নদী দখল করে রাখে। আমাদের দেশে নীতি, আইন, পরিসংখ্যান সব আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় যদি নদীর জমি ব্যক্তির নামে খারিজ না করত কিংবা খাজনা না নিত, তাহলে সেই জমিতে ব্যক্তি কখনোই মালিকানা দাবি করতে পারত না। কিন্তু গোটা দেশে এমনি চিত্র দেখা যায়। এর দায় কি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার এড়াতে পারেন? দেশের পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর কারণে ১৮ কোটি মানুষের পানির অধিকার হরণ করা যাবে না। নদীকে ধ্বংস করে দেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করা যাবে না। আমরা হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারব কিন্তু একটি নদীও সৃষ্টি করার সামর্থ্য কারও নেই। তাই আমাদের নদী ধ্বংসের আয়োজন থেকে দূরে আসতে হবে। অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমিমাংসিত ইস্যু। দু'দেশের মধ্যে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানির বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তাসহ আলোচনায় থাকা ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি কেন? ভারত তিস্তা নদীতে বাংলাদেশের উজানে গজল ডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি অনৈতিক ও একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো কৃষি হুমকির মুখে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এর জন্য উত্তরবঙ্গ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। শুধু তিস্তা নয়, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাঁধের মালায় বাংলাদেশকে ঘিরে ফেললে তা বাংলাদেশের প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ভয়ংকর ঝুঁকিতে ফেলবে। ইতোমধ্যে ফারাক্কা বাঁধের কারণে সুন্দরবন হুমকির মুখে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা এবং রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ ঘটে চলছে। এতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। আসলে নদী রক্ষায় সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বাংলাদেশ নদী ও পানির দেশ। পানির প্রবাহ বন্ধ হলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই নদীর প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কে নদী দখল করে নিয়েছে, কে নদী দূষণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ওয়াসা থেকেও প্রতিদিন যাতে নদীতে ময়লা ফেলতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়বো আমরা।

©somewhere in net ltd.