![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটি গবেষণাধর্মী তথ্যচিত্র
পদ্ম বাংলাদেশের অতুলনীয় জলজ সম্পদ
ওহে পদ্মফুল, ভোরের হাওয়ার শীতল স্পর্শে দুলছো দোদুল-দুল। সে সাথে দুলছে গ্রাম বাংলার লাখো কোটি মানুষের মন। তা তুমি ভাই ফুটবে কখন ? সূর্যদেব উঠবে যখন, তার দীপ্তিতে দীপ্ত হয়ে ফুটবে তবে ফুল! সরোবরের জল বয়ে যাচ্ছে। জীব বৈচিত্র্যের এক অসীম ভান্ডার আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বিশেষ করে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ জগৎ বাংলাদেশের বিশাল সম্পদ এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে ছড়িয়ে আছে ছোট বড় অনেক জলাশয়। এইসব জলাশয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ হলো পদ্ম। পদ্ম সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং নান্দনিক বৈচিত্র্যের জন্য সকলের অত্যন্ত প্রিয় । পদ্মফুলের বহু নাম রয়েছে যেমন- পদ্ম, কমল, শতদল, সহ¯্রদল, উৎপল, মৃণাল, পঙ্কজ, অম্বুজ, নীরজ, সরোজ, সরসিজ। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, ডোবা ও জলাশয়ে এক সময় শাপলা ও পদ্মের অবাধ বিচরণ ছিল। পদ্ম, শাপলা, শালুক, কলমি, হেলেঞ্চা, ঘেচু প্রভৃতি উদ্ভিদ প্রতিবেশি হিসাবে একে অন্যকে জড়িয়ে জলাশয়ে উপস্থিত থেকে নিজেরা প্রস্ফুটিত হয়ে রূপ-সৌন্দর্য সুধা প্রকৃতির মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিতো স্বমহিমায়। 'জলে ভাসা পদ্ম আমি/ শুধুই পেলাম ছলনা/ ও আমার সহেলী/আমার নাই তো কোথাও কোন ঠাঁই' অসাধারণ এ গানে ফুটে উঠেছে আমাদের দেশে বর্তমানে পদ্মফুলের অবস্থান। আমাদের দেশের জলাশয়ে বর্ষা এবং শরতের অযতেœ অবহেলায় প্রস্ফুটিত হয় পদ্ম ফুল। অর্থাৎ জুন থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিলে ঝিলে পদ্ম দৃশ্যমান হয়। জলাভূমির হারিয়ে যাওয়া এবং ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন; সেই সঙ্গে অবহেলা, অযতœ আর অসচেতনতায় আজ হুমকির মুখে গুণে ও সৌন্দর্যে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় জলজ উদ্ভিদ পদ্ম। বর্ষায় প্রস্ফুটিত পদ্ম মানুষকে আকৃষ্ট করে, ফলে সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে জলাশয়ে ছুটে যায়। তবে পদ্ম শুধু সৌন্দর্য্যই বর্ধন করে না। এ পদ্মের রয়েছে নানাগুণ। পদ্ম পুষ্টিকর, উপাদেয় খাদ্য উপাদন থেকে শুরু করে নানা প্রকৃতির সুগন্ধিসহ অতুলনীয় সব ভেষজ গুণে সমৃদ্ধ। পদ্মের ফুল, ফল, কচি পাতা, বীজ, নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। এর কন্দ ও মূল জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতমান, চীন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং ভারতে বিশেষ ধরনের খাদ্য হিসাবে ব্যাপক প্রচলিত। পদ্মের অপরিপক্ব ও শুল্ক বীজ পুষ্টিগুণে ভরপুর। শুষ্ক বীজ থেকে প্রস্তুত ময়দা দ্বারা কেক পেস্ট্রি প্রভৃতি বিশেষ আকর্ষণীয় খাবার প্রস্তুত করা যায়। পদ্মে পুংকেশর এবং সাদা ফুলের পাপড়ি সুগন্ধি হারবাল টি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ভারতে পনেরটি রোগের ওষুধ তৈরি করা হয় পদ্ম থেকে। এর সুগন্ধি ফুল থেকে গুণসম্পন্ন মধু উৎপন্ন করা হয় যা চোখের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। প্রস্তুত হয় উচ্চমূল্যের সুগন্ধি।পদ্মের পাতা ও ফুলের ডাটা থেকে এক বিশেষ প্রকৃতির ল্যাটেক্স উৎপন্ন হয় যা ছাড়া প্রাকৃতিক তন্তু উৎপন্ন করা যায়। এই তন্তু দ্বারা উন্নতমানের সুতা এবং বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়। এই সুতা দ্বারা উৎপাদিত পোষাক বিভিন্ন উন্নত দেশে উচ্চ মূল্যে বিক্রয় হয়। বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী জলাভূমিগুলো দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। ভূমির ব্যবহার এবং ব্যবহারের ব্যাপক পরিবর্তন জলাভূমির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নষ্ট হচ্ছে। এই অপরিবর্তনীয় প্রভাব পড়ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপর। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জলাভূমিগুলোতে যে পদ্ম আছে তাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থান পরিবেশের জন্য বড় মাত্রার হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পদ্ম আমাদের জীব বৈচিত্র্যের অন্যতম স্বীকৃত বিশেষ উপাদান। যেসব জলাশয়ে এখনও পদ্ম আছে সেগুলো যথাযথ সংরক্ষণ করা হলে পানির দূষণ রোধসহ পরিবেশ সুরক্ষা করা সম্ভব। ফলে এই সব জলাশয়ে অবস্থিত অসংখ্য জলজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত প্রায় কীটপতঙ্গ, মাছ, পাখি এবং ক্ষুদ্র প্রাণি রক্ষা করা সম্ভব হবে। এই অপরূপ সুন্দর এবং অত্যন্ত উপকারী এই উদ্ভিদটিকে যথাযথ সংরক্ষণ করা হলে আমরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারব। জলাশয়ের আশেপাশে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা হলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। আকর্ষণীয় সৌন্দর্যম-িত পদ্মবিলকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা যেতে পারে। গড়ে তোলা সম্ভব। এর মাধ্যমে পদ্মও টিকে থাকবে এবং টিকে থাকবে নিশ্চিহ্ন হতে থাকা নানারকম জলজ উদ্ভিদ, কীটপতঙ্গ এবং বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। পদ্ম আমাদের জন্য সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারে। এই লক্ষ্যে পদ্ম নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন, প্রয়োজন সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ। সর্বোপরি আগ্রহী মানুষের ব্যাপক সচেতনতা এবং পরিবেশ ও প্রকৃতির প্রতি আমাদের মমতা ও দায়িত্ব। আর সেজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে অতুলনীয় এই প্রাকৃতিক সম্পদকে সংরক্ষণ করা আবশ্যক। জলজ উদ্ভিদ পদ্ম নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল প্লান্টস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের একদল গবেষক কাজ করছেন ২০১৬ সাল থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার এবং পদ্ম গবেষক সিকদার আবুল কাশেম শামসুদ্দীনের নেতৃত্বে রয়েছেন একদল তরুণ গবেষক। তারা পদ্ম’র জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম। হুমকির মুখে পড়া পদ্ম রক্ষা, প্রকৃতির বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য রক্ষার ব্রত নিয়ে।
প্রত্যাশা থাকবে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদ্মফুল সংরক্ষনে এবং প্রসারে প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা আসবে। পদ্ম তথা জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এগিয়ে আসবেন সবাই। (একটি তথ্যচিত্র নির্শাণের জন্য করা গবেষণাপত্র।)
©somewhere in net ltd.