![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দিনশেষে করাত কলে বৃক্ষের আর্তনাদ
ভেসে আসে মাতাল বাতাসে
সাবধান, পৃথিবীর অভিমান বাড়ছে
কাহিনী সংক্ষেপ
পৃথিবী এখন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাইত্রে বহুগুণ বেশি মারাত্মক মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। এ সমস্যা উত্তরণে দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। প্রকৃতির শিকার হতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানুষকে বুঝতে হবে আমরা আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। আজ মানবসৃষ্ট ভুমিকম্পে কাঁপছে পৃথিবী। আজ পৃথিবী ও মানবজাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অথচ আমরা নিশ্চিন্তে ফুটবল খেলি সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছোট্ট একটি সংবাদ নাড়িয়ে দেয় ড. আরেফিন রাব্বিকে। আফ্রিকার গহীনে একটি দেশ ইবানোয়াতে একটি শক্তিশালি টর্ণেডো ধ্বংস করে দিয়ে গেছে বিরাট এব পারমানবিক প্রকল্পকে। আর কোথাও কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু হিসাবটা কোনোমতেই মিলছে না তার। ড. আহমেদ পাশা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন কিভাবে পৃথিবীকে আবার আগের রূপে ফেরানো সম্ভব। পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যারা এই ধ্বংসকে তরান্বিত করছে তাদের কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়। এই ফরমুলা আবিষ্কার। মানব শরীরে যে জিনগুলো মানুষকে সুপুরিয়র করে তোলে সেই জিনগুলোর নিয়ন্ত্রন এবং কৃত্রিম টর্ণেডো তৈরি। এ দুটোই এখন তার হাতের মুঠোয়। শেষ পর্যন্ত তিনি তা করতে সক্ষম হয়েছেন। যার সফল পরীক্ষা তিনি চালিয়েছেন ইবানোয়াতে। এবার তিনি এই ফরমুলা ছড়িয়ে দিতে চান সারা পৃথিবীতে। পৃথিবীর বাজে মানুষগুলো শাস্তি পাক।
ড. আরেফিন রাব্বীর হঠাতই মনে পড়ে যায়। ড. পাশার গবেষণার কথা। একসময় তিনি পাশার সহকারি ছিলেন। তখন তার ফরমুলার অংশ বিশেষ চুরিও করেছিলেন। যদিও কোনো লাভ হয়নি। ড. পাশার মত এত মেধা তার নেই। রাব্বি এবার যোগাযোগ শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর সাথে। তাদের বলে ড. পাশার কথা। তারা এর সত্যতা পেয়ে নিজেদের ব্যবসা বাঁচাতে দায়িত্ব দেয় রাব্বিকে। সে অনুযায়ী রাব্বি প্রথমে পাশাকে কেনার চেষ্টা করে সে। কিন্তু নীতিবান বিজ্ঞানী পাশা প্রত্যাখান করে রাব্বিকে। রাব্বি এবার পাশার সাবেক স্ত্রী সাধনাকে আকৃষ্ট করে। নানারকম সুবিধা দেয় সাধনাকে। এবং সাধনাকে বলে পাশার সাথে তার আবার মিশতে হবে এবং তার ফরমুলাটা চুরি করতে হবে। এর সাথে জড়িয়ে আছে পৃথিবীর তাবত বৃহৎ কোম্পানিগুলো। বদলে সে যে সুবিধা পাবে তা কোনো রানীও কল্পনা করতে পারবে না। সাধনা তাপসী অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছে। আজ বছর ঘুরে এলো সে ডিভোর্স দিয়েছে ড. আহমেদ পাশাকে। যে লোকটার কোনো ধরনের চাহিদা নেই তেমন লোকের সাথে ঘর করা অসম্ভব। সে শুধু তার গবেষণা নিয়েই ব্যস্ত সারাক্ষণ। এই পৃথিবীর রূপ রস উপভোগ করার মত সময় তার নেই। অথচ আবার তার কাছেই তাকে ফিরতে হবে ইচ্ছে না থাকা স্বত্তে¡ও। কারণ জীবনকে উপভোগ করতে হলে টাকার দরকার অনেক। আর সেটা কখনোই অবৈধ পথ ছাড়া চটজলদি পাওয়া সম্ভব নয়। লোভ সাধনাকে গিলে ফেলে। আদনান ফারুকী। প্রথম সারির একজন পেশাদার খুনি। আমেরিকা থেকে তাকেও ভাড়া করে আনে রাব্বি। অতপর...
সাবধান
পৃথিবীর অভিমান বাড়ছে
চ রি ত্র লি পি.........................................................
১. ড. আহমেদ পাশা- বিজ্ঞানী ও গবেষক....................... :
২. সাধনা তাপসী- পাশার স্ত্রী ও পুষ্টিবিদ........................ :
৩. আরেফিন রাব্বি- পাশার সাবেক সহকারি ও গবেষক......... :
৪. আদনান ফারুকী- প্রফেশনাল কিলার........................ :
সা ব ধা ন
পৃথিবীর অভিমান বাড়ছে
সূ চ না কা ল দৃশ্য -০১
পায়চারীর মাঝে মাঝে টেবিলে রাখা নোটবুকে
কিছু লিখছে আর বিড় বিড় করছে ড. আহমেদ পাশা।
আহমেদ পাশা : মানব সভ্যতা ও পৃথিবীর সংকট বিষয়ক গবেষণা। কি হবে? কি হবে হে মানব। কোথায় যাবে তুমি? কোথায় লুকাবে? কোন গর্তে? কোন বিন্ধ্যাাচলে? অথবা কোন গভীর সাগরতলে? কোন হিমাচল তোমাকে আশ্রয় দেবে। হে মানব কে তোমাকে নেবে? প্রাগৈতিহাসিক কাল পেরিয়ে আদিম যৃগ প্রস্তর যুগ লৌহ যুগ, তাম্র যুগ যুগ পেরিয়ে সভ্যতা চলেছে ছুটে আলোর গতিতে। তবুও দিনশেষে করাত কলে বৃক্ষের আর্তনাদ ভেসে আসে মাতাল বাতাসে। অলক্ষ্যে বিষন্ন হাসি মহাশূন্যে ম্রিয়মান তারকা জ্যোতির। হে মানব এখনো হিসাব কষো দু’আনার লেনদেন লাভ আর ক্ষতির? অনুভব করো উপলব্ধি করো হে মানব, ভিসুভিয়সের জ্বালা পৃথিবী জঠরে।
আজ আমার মানব সভ্যতা ও পৃথিবীর সংকট নিয়ে গবেষণার তিরিশ বছর হলো। সেই সাথে শেষ হলো গবেষণা। আমি খুশি পৃথিবী রক্ষার কয়েকটি ফরমুলা এতে সংযোজন করতে পেরেছি।
এসময় ভিডিও কল আসে। ইতস্তত পাশা ফোন রিসিভ করে। অপরপ্রান্ত সালাম দেয়।
আদনান ফারুকী : স্যার আমার নাম আদনান ফারুকী। একজন টেকনিশিয়ান।
আহমেদ পাশা : কিসের টেকনিশিয়ান?
আদনান ফারুকী : স্যার ল্যাব টেকনিশিয়ান।
আহমেদ পাশা : আমার কাছে কি প্রয়োজন?
আদনান ফারুকী : স্যার শুনলাম আপনি একটা রিসার্চ করছেন। সে ব্যাপারে-
আহমেদ পাশা : সরি, আমার কাজটি শেষ এ মূহুর্তে কোন টেকনিশিয়ানের দরকার নেই। আপনি অন্য কোনো দিকে-
আদনান ফারুকী : স্যার, একটু যদি-
আহমেদ পাশা : আমি রিসার্চ করছি কে বলেছে আপনাকে?
আদনান ফারুকী : হা হা হা স্যার, বাতাসে সবই ভেসে বেড়ায়।
আহমেদ পাশা : ও, তাহলে বাতাসেই দেখে নিন আমার কাজটা।
আদনান ফারুকী : স্যার স্যার একবার-
লাইন কেটে দেয় পাশা।
আহমেদ পাশা : আশ্চর্য!
চিন্তিত আহমেদ পাশা।
দৃশ্যান্তর
দৃশ্য -০২
সাধনা ঘর গোছাচ্ছে। এসময় ফোন বাজছে।
সাধনা রিসিভ করে।
সাধনা তাপসী : বলো।
আরেফিন রাব্বি : মনে আছে তো।
সাধনা তাপসী : হ্যাঁ, আমার মনে আছে কি করতে হবে।
আরেফিন রাব্বি : মিশন সাকনেনফুল না হলে আমাদের সবাইকে মরতে হবে।
সাধনা তাপসী : আর সাকসেসফুল হলে?
আরেফিন রাব্বি : পুরো পৃথিবী তোমার।
সাধনা হাসে।
আরেফিন রাব্বি : এটা হাসির কোনো কথা নয়। সত্যি বলছি।
সাধনা তাপসী : আমি জানি ওকে কেমন করে চালাতে হয়।
আরেফিন রাব্বি : হ্যা আর সেজন্যই তোমাকে আমার খুঁজে বের করতে হয়েছে।
দৃশ্যান্তর
দৃশ্য -০২
আহমেদ পাশার ঘর। ফোন বাজে।
আহমেদ পাশা : রাব্বি, কেমন আছো।
আরেফিন রাব্বি : স্যার আপনার খবর নেবর জন্য ফোন দিলাম। শরীর ভালো তো? গত সপ্তাহে বোধহয় একটু খারাপ ছিলো।
আহমেদ পাশা : হ্যা, ভালো। আচ্ছা তুমি আদনান ফারুকী নামে কাউকে চেনো?
আরেফিন রাব্বি : আদনান ফারু- ন্ না তো স্যার। কেন?
আহমেদ পাশা : আমার থিসিসের ব্যাপারে জানতে চায়।
আরেফিন রাব্বি : তাই নাকি! স্ট্রেঞ্জ! কিন্তু ও জানলো কি করে? আপনি তো স্যার এখনো কাউকে জানাননি। আর আমি তো ওকে চিনি না স্যার। তাহলে কিভাবে জানলো?
আহমেদ পাশা : বাতাসে।
আরেফিন রাব্বি : বাতাসে!
আহমেদ পাশা : হ্যা আজকাল সব কিছুই নাকি বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
আরেফিন রাব্বি : ষ্যার কিছু বুঝতে পারছি না।
আহমেদ পাশা : বাদ দাও। বল কি খবর।
আরেফিন রাব্বি : স্যার, আপনার কাজ তো বোধহয় শেষ।
আহমেদ পাশা : এখনো একটু সংযোজন করতে হবে। এখনো খেলারাম কলকাঠি নাড়ে পর্দার অন্তরালে। গিনিপিগ মানবসমাজ।
আরেফিন রাব্বি : বাহ চমৎকার, স্যার কি কবিতা লিখতে শুরু করেছেন নাকি?
আহমেদ পাশা : কবিতা লিখছি। কবিরাই রেখে যায় দিনবদলের আগাম বার্তা।
আরেফিন রাব্বি : স্যার ধিসিসটা শেষ হলে আমি একটু পড়তে চাই। আশা করি কিছু সংযুক্ত করতে পারবো। তাতে ভালোই হবে।
আহমেদ পাশা : হ্যা অবশ্যই। তুমি আমার একসময়ের সহকারি, আমার বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্খী। অবশ্যই দেবো।
আরেফিন রাব্বি : থ্যাংক ইউ স্যার।
রাব্বি অফ হয়ে যায়। চিন্তিত মনে হয় আহমেদ পাশাকে।
আহমেদ পাশা : সভ্য মানুষের অসভ্যতয় পৃথিবীর আজ বড় অভিমান।ঝড় উঠবে ঝড়।
এসময় ভিডিও কল আসে।
আহমেদ পাশা : ইয়েস
সাধনা তাপসী : অনেকদিন পর।
অস্বস্তিতে পাশা।
আহমেদ পাশা : কি মনে করে?
সাধনা তাপসী : তোমার কথা মনে করে।
আহমেদ পাশা : তাই নাকি! অদ্ভুত।
সাধনা তাপসী : অদ্ভুত মনে হচ্ছে তোমার?
আহমেদ পাশা : যে তুমি এক বছর আগে আমার সাথে সব সম্পর্ক ত্যাগ করলে আমার কোনো কিছুই তোমার পছন্দ নয় বলে। সেই তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেমন আছি। শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়ে চলে গেলে।
সাধনা তাপসী : আমি তো একটা মানুষ। দিনের পর দিন তুমি তোমার ল্যাবে কাটাবে আর আমি একা একা-
আহমেদ পাশা : কিন্তু বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে গবেষণায় সাহায্য করবে। একটা নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে।
সাধনা তাপসী : বলেছিলাম কিন্তু পারিনি।
আহমেদ পাশা : কেন?
সাধনা তাপসী : রঙিন পৃথিবী আমাকে ডেকেছে।
আহমেদ পাশা : আমি তো তোমাকে বাধা দিইনি।
সাধনা তাপসী : হ্যা দাওনি।
আহমেদ পাশা : আসলে অসম প্রেম কখনো ইতিবাচক হয় না।
সাধনা তাপসী : আমার তা মনে হয় না। প্রেমের কোনো বয়সের সীমারেখা নেই।
আহমেদ পাশা : থাক সাধনা, এত বছর পর ওসব প্রসঙ্গ টেনে না আনাই ভালো। বোঝা যাচ্ছে ভালোই আছো। তা কি মনে করে ফোন করেছো জানতে পারি?
সাধনা তাপসী : তুমি আসলে সেরকম নিরসই রয়ে গেছো।
আহমেদ পাশা : তিরিশ বছর ধরে গবেষণায় লেগে আছি। অন্যরকম হবার সময় কোথায়। যাক, কাজের কথা থাকলে বলো।
সাধনা তাপসী : একটা জার্নালে সেদিন তোমার একটা লেখা পড়লাম। ফুড, নট ফর অল। বেশ অনেকগুলো অজানা তথ্য জানলাম। মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য মাথা উঁচু করে বাঁচতে পরবে না। এবং মানুষের বাজে জিনও তুমি আবিষ্কার করেছো।
আহমেদ পাশা : বিকাশের সাথে সাথে মানুষ তার খাদ্যাভ্যাসও নিয়মিত পাল্টেছে। মানুষ মাটির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
সাধনা তাপসী : মানুষ তার চাহিদা মেটাতে গিয়ে অতি দ্রæত এবং মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য ফলাতে গিয়ে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে বিষাক্ত করে তুলছে মাটিকে। সেই খাদ্য ছড়াচ্ছে বিষ।
সাধনা তাপসী : হুম এভাবে তো ভাবিনি কখনো।
আহমেদ পাশা : হ্যাঁ কেউই ভাবে না। প্রতিটি পেশাতেই মানুষ ভাবে পেশাটা হচ্ছে একটা রুটিন ওয়ার্ক। পেশাকে দায়িত্ব হিসেবে ভাবে না কেউ। আসলে মানুষের ভালো-মন্দ বিচারের বোধটাই নষ্ট হয়ে গেছে।
সাধনা তাপসী : ভালো বলেছো।
আহমেদ পাশা : হ্যাঁ অনেকদিন পর তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।
সাধনা তাপসী : মাঝে মাঝে ফোন করবো বিরক্ত হবে নাতো?
আহমেদ পাশা : সম্পর্কের বিষয়টা বাদ দিয়ে যদি করো আপত্তি নেই।
সাধনা তাপসী : আর যদি-
এসময় ফোন বাজে।
আহমেদ পাশা : সরি সাধনা একটা জরুরী কল এসেছে।
লাইন কেটে দেয় পাশা। নতুন কল রিসিভ করে।
আহমেদ পাশা : হ্যাঁ বলো।
পাশা শুনছে। নানান অভিব্যক্তি দেখে বোঝা যাচ্ছে তার অনুভুতি।
আহমেদ পাশা : কি বলছো?
মন দিয়ে কথা শোনে।
আহমেদ পাশা : ঠিক আছে। এসব তথ্য তোমাদের আরো আগে আমাকে জানানো উচিৎ ছিলো। ঠিক আছে।
হাত থেকে ফোনটা রেখে দিয়ে বসে পড়ে। চিন্তিত আহমেদ পাশা কিছুক্ষণ পায়চারী করে।
এসময় রাব্বির ভিডিও কল আসে।দ্বিধাগ্রস্থ পাশা ফোন রিসিভ করে।
আহমেদ পাশা : বলো রাব্বি
আরেফিন রাব্বি : স্যার আমি আপনার থিসিসটার অপেক্ষায় আছি।
একটু রেগে যান পাশা।
আহমেদ পাশা : থিসিসটা নেবার জন্য তুমি এতো অস্থির হয়ে আছো কেন? বার বার ওটা চাইছো?
আরেফিন রাব্বি : হয়তো ওতে আমি কিছু যুক্ত করতে পারবো। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক বিরাট আবিষ্কার স্যার। কেমন চমকে যাবে সবাই। হা হা হা। দারুন দারুন একটা ব্যাপার।
আহমেদ পাশা : রাব্বি, তুমি আসলে কি চাও?
আরেফিন রাব্বি : ফরমুলাটা স্যার।
একদৃষ্টে রাব্বির দিকে তাকিয়ে পাশা।
আহমেদ পাশা : মানব সভ্যতা বিকাশের এ পর্যায়ে এসে মানুষের মানবতাবোধ আজ উধাও। নরপশুদের হিংস্রতা আজ ভয়াবহ। আমার সামনে তোমাকে দেখে সেটা আরো উপলব্ধি করতে পারছি। আর এরই স্বরূপ উন্মোচন আমার থিসিসে। এখানে যুক্ত করেছি আরো একটি তালিকা। কারা পৃথিবী ও মানব সভ্যতার আজকের এই সংকটের জন্য দায়ী। এবং প্রাকৃতিকভাবেই এদের কিভাবে মোকাবেলা করা যেতে পারে তার ফরমুলা। এই নরপশুদের ভয়াবহ কর্মকান্ডে মানুষ আজ দিশাহারা। ভুলে গেছে প্রতিবাদের ভাষাও। প্রতিবাদহীন মানবতাবোধ দেশ ও জাতির ধ্বংসের কারণ। সত্য ও মিথ্যার মাঝে যদি স্বার্থ, অন্ধ দলবাজি ও মানবতার মৃত্যু হয় তবে সেখানে মিথ্যাই জয়ী হবে। সত্যকে সত্য ন্যায়কে ন্যায় এবং মিথ্যাকে মিথ্যা আর অন্যায়কে অন্যায় বলার মত সাহসী লোক যে দেশে বা যে সমাজে নিরব সে দেশ ও সমাজের অধ:পতন ঘটবেই। যারা আজ অপরাধী তারা আজ সংঘবদ্ধ। নিজেকে বাঁচাবার জন্য নিজের অন্যায় অপকর্মকে আড়াল করার জন্য নিজেকে ভালো মানুষ হিসেবে প্রমাণ করতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্ধন শক্ত করতে ব্যস্ত। আর যাদের এসব দেখার কথা তারা আজ দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা কর্মচারী জনপ্রতিনিধি নাম ভাঙিয়ে নিজেদের স্বার্থ ও অনৈতিক কাজে ব্যস্ত। ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় যারা একনিষ্ঠ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে মানবসভ্যতার সকল অর্জনই ব্যর্থ হবে। হ্যাঁ দীর্ঘদিনের গবেষণায় আমি এই মানুষগুলোকে চিহ্নিত করেছি।
আরেফিন রাব্বি : স্যার প্লীজ তালিকাটা আমাকে দিন। আমিই ওটা কাজে লাগাবো।
আহমেদ পাশা : ওটা আমি কোনো ব্যক্তির হাতে দেব না। জায়গামতই ওটা আমি প্রকাশ করবো। তারপর যে যার মত নিয়ে নেবে। কারণ ফরমুলাগুলো খুবই সহজ, যে কেউ কাজে লাগাতে পারবে।
আরেফিন রাব্বি : স্যার ওটা এখনই প্রকাশ করবেন না। সর্বনাশ হয়ে যাবে।
আহমেদ পাশা : কার সর্বনাশ হবে রাব্বি? পৃথিবীর নাকি তোমার?
আরেফিন রাব্বি : স্যার আমি আপনার বিশ্বস্তÑ
আহমেদ পাশা : বিশ্বস্ত, হ্যাঁ, বিশ্বস্ত বলেই তো তুমি টাকার মূল্যে বিক্রি হয়ে গেছ। প্রফেসর আরেফিন রাব্বি। একসময় তুমি আমার গবেষণায় সহকারি ছিলে। হঠাৎ করেই একদিন কাজ ছেড়ে চলে গেলে। আমি কিছুই মনে করিনি। কিছুদিন পর এসে জানালে তুমি নিজেই এ সংক্রান্ত গবেষণায় যুক্ত হয়েছো। আসলে তুমি আমার থিসিসের অর্ধেক কাজ চুরি করে নিয়েছিলে। মনে করেছো বাকীটা তুমি শেষ করতে পারবে। কিন্তু কাজ যদি এত সহজই হতো। তাহলে আবার তুমি ফিরে আসতে না। তখনই আমার সন্দেহ হয়েছিলো। তুমি আমার স্ত্রী সাধনাকে এখান থেকে চলে যাবার পর হিপনোটাইজ করে তোমার অপকর্মে যুক্ত করেছ। তুমি আমাকে খুন করার জন্য লোক ঠিক করেছো। আজ যখন এসব তথ্য আমার হাতে আসল তখন নিশ্চিত হলাম তুমি কেমন বিশ্বস্ত।
আরেফিন রাব্বি : সবই যখন জেনে গেছেন তখন আর লুকিয়ে থেকে কি লাভ। হ্যাঁ অনেক অনেক টাকার বিনিময়ে আপনার থিসিসিটা পাইয়ে দেবার কাজটি আমি নিয়েছি। সাথে নিয়েছি সাধনাকে। কিন্তু আপনি ওটা কোথাও সরিয়ে ফেলেছেন। প্লীজ স্যার, থিসিটা আমাকে দিয়ে দিন বিনিময়ে যা চাইবেন-
আহমেদ পাশা : রাব্বি, টাকা কামানোর জন্য আমি এ কাজ করিনি। পৃথিবী এবং মানুষকে ভালোবাসি বলেই আমার এই থিসিস। একটা সুন্দর পৃথিবীর জন্য। আমি স্বপ্নে দেখি-
আরেফিন রাব্বি : হা হা স্বপ্ন দেথে লাভ নেই স্যার। দেখছেন তো করোনা নামক ভাইরাস কিভাবে গিলে খাচ্ছে পৃথিবী। মানুষকে আপনি রক্ষা করতে পারবেন না।
আহমেদ পাশা : মানবসৃষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত একটি ভাইরাস। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ভাইরাস আর দেখা যায়নি। বিশ্ব মোড়লদের একটি ডিজিটাল প্রজেক্ট। ভাইরাস ওয়ার। তাইতো এর নতুন নতুন পাখা গজায়। কোন মানুষগুলো জড়িত সব পাবে আমার এই থিসিসে।
আরেফিন রাব্বি : স্যার আমি আবারো বলছি ওটা আমাকে দিয়ে দিন। আমার লোক পাঠাচ্ছি আপনার কাছে। ওটা যদি প্রকাশিত হয় তাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের।
আহমেদ পাশা : কখনোই নয় রাব্বি। তুমি ভালো করেই জানো। বরং তোমাকে বলবো পৃথিবীর জন্য কিছু করো। এটা নষ্ট হয়ে গেলে আমরা কেউই বেঁচে থাকবো না।
আরেফিন রাব্বি : ঠিক আছে দেবেন না যখন তখন আমার মত করেই আমাকে কাজ করতে হবে।
লাইন কেটে দেয় রাব্বি।
আহমেদ পাশা : পৃথিবী এখন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাইতেও বহুগুণ বেশি মানবসৃষ্ট দুর্যোগ। এ সমস্যা উত্তরণে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। প্রকৃতির শিকার হতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণে বাড়ছে আবাসিক সমস্যা, জলাধারগুলো ভরাট হয়ে গেছে, খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। নেই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। অপরিকল্পিত শিল্পায়ণে বায়ু ও পানি দূষিত হচ্ছে। শব্দদূষণে তৈরি হচ্ছে মানুষের শারিরীক ও মানসিক নানা রোগ। বিষাক্ত ধোঁয়া ও শিল্পবর্জ্যরে কারণে মাটি তার গুনাগুণ হারাচ্ছে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে গাছ কাটছে অথচ সেই পরিমাণ গাছ লাগায়নি।বন উজাড় করায় প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে। পাহাড় কাটা হচ্ছে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। বাড়ছে খরা, ঘটছে মরুকরণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। স্বার্থ ও আধিপত্যের লড়াইয়ের ফলে তৈরি হচ্ছে উদ্বাস্তু সমস্যা। ক্ষমতলোভী ও স্বার্থপর মানুষের খেয়ালখুশির খেসারত দিচ্ছে লক্ষ কোটি মানুষ। নতুন নতুন প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাপনকে সহজ ও উপভোগ্য করেছে টিভি মোবাইল কম্পিউটারের মত লাভজনক পণ্যের ব্যবসা দুনিয়াব্যাপি বিস্তৃত কিন্তু এগুলোর তেজষ্ক্রিয়তা বা ইলেকট্রিক বর্জ্যের মাধ্যমে যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তার ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেউ ভাবছে না। পারমনবিক অস্ত্রের ফল হিরোশিমা নাগাসাকি ফুকোশিমা চেরনোবিলের ভয়াবহ ক্ষতি বিশ্ববাসি দেখেছে। ১৯৪৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত চালানো আড়াই হাজার পরীক্ষার মধ্যে ১৪৬৬টি মাটির গভীরে ৪২৯টি বায়ুমন্ডলে এবং ১৬টি গভীর সমুদ্রের তলদেশে। আজ মানবসৃষ্ট ভুমিকম্পে কাঁপছে পৃথিবী। আজ পৃথিবী ও মানবজাতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অথচ আমরা নিশ্চিন্তে ফুটবল খেলি সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে। দোদুল্যমান পৃথিবী দোদুল্যমান জীবনের হিসেব নিকেশ। মাবধান পৃথিীবির অভিমান বাড়ছে। পৃথিবীও প্রতিশোধ নিতে জানে।
এসময় কলিংবেল বাজে। দ্বিধাগ্রস্ত আহমেদ পাশা দরজা খোলে। সামনে দাঁড়িয়ে সানগ্লাস পরা আদনান ফারুকী।
অন্ধকার হয়ে যায় সব। একটা গুলির শব্দ শোনা যায়।
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.