![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অ বি ন্য স্ত জী ব নে র ছা য়া চি ত্র
প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম জলপারানী। যেখানে এখনো বিদ্যুতের ছোঁয়া ঠিক মত লাগেনি। নৌকাই যেখানে এখনো প্রধান বাহন। এই গ্রামেরই প্রাচীন হাট বটমিলান। প্রতি হাটেই নিজের লেখা কবির গানের বই বিক্রী করতে আসে মন্তাজ ফকির। নানান জনের নানান প্রেমকাহিনী লেখা থাকে তাতে। যদিও আগের মত এখন আর বই কেনে না লোকে। তারপরও যে ক’টা বিক্রী হয় তা দিয়েই চলে যায় একা মানুষ মন্তাজের। এতেই তার শান্তি। হাটে হাটে ঘুরে ঘুরে বই বিক্রী করে সুতরাং যেখানেই রাত সেখানেই কাত। যেদিন হাট বসে তার আগের রাতেই সেখানে চলে যায় মন্তাজ। কখনো সঙ্গী জুটে যায় কখনো একাই কাটিয়ে দেয় রাত। এবারো বটমিলানে এসে কাউকে না পেয়ে ঝাঁপ তোলা এক দোকান ঘরে আশ্রয় নেয় মন্তাজ। সাথে রাখা চিড়া গুড় খেয়ে শোবার আগে নতুন বইয়ের পাতা ওল্টায় মন্তাজ। মফস্বলের লেটার প্রেসে ছাপা বইয়ের পাতা কোথাও কোথাও আটকে আছে দেখে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে দু’এক পাতা থেকে গুন গুন করে পড়ার চেষ্টা করে। এ সময় ঝাঁপের ওপর মৃদু টোকার শব্দে ভুরু কুচকায় মন্তাজ। ভুত প্রেতে মন্তাজের কোনো বিশ্বাস নেই। এই যে এত বছর ধরে সে একা একা চলাফেরা করে। এমন কোনো ঘটনাও সে দেখেনি কোনোদিন। টোকার শব্দ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সে তার কাজে মনোযোগী হয়।
সব কিছু গুছিয়ে শোবার আয়োজন করে। এ সময় আবারো টোকার শব্দ। এবার মন্তাজ উঠে গিয়ে ঝাপটা খোলে। হতবাক মন্তাজ। তার সামনে দাঁড়িয়ে বোরখা পরা একটা মেয়ে। মেয়েটা ভেতরে ঢোকার অনুমতি চায়। দ্বিধাগ্রস্থ মন্তাজ। এত রাতে একটি মেয়ে। আশেপাশে তাকায় মন্তাজ। মেয়েটা বুঝতে পেরে আশ্বস্ত করে মন্তাজকে। মন্তাজ মেয়েটাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়।
ঝাঁপ লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে মেয়েটা এবার বোরকাটা খুলে ফেলে। মেয়েটার নাম রূপা। মন্তাজের বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি। এতোদিন পর এতো রাতে রূপাকে এই হাটে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মন্তাজ। মন্তাজের খুবই ভক্ত রূপা। মোটামুটি মন্তাজের গীতি কবিতা সবই তার মুখস্থ। প্রায়ই মন্তাজ প্রথম কবিতা লেখার পর রূপাকে শোনাত কেমন হয়েছে জানার জন্য। রূপা ভালোবাসতো মন্তাজকে। তার কবিতাকে। কিন্ত কখনোই মন্তাজকে বলা হয়নি সেকথা। হঠাৎ একদিন রূপার মামা রূপাকে প্রায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলেন পাশের গ্রামের ছেলে জসিমের সাথে।
এরপর আর মন্তাজের সাথে দেখা হয়নি রূপার। বাবা-মা কেউ নেই রূপার। আত্মীয় বলতে এক মামা। তার কাছেই বড় হয়েছে রূপা। বহু কষ্টে ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। কথা ছিল বিয়েতে মামা যৌতুক দেবে। কিন্তু বিয়ের পর মামা তার কথা রাখেনি। ফলে তাকে প্রতিদিনই শ্বশুর বাড়ির যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। একদিন তার স্বামী জসিম তাকে বলল তার মামার কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা এনে দিলে সব শোধ হয়ে যাবে। কিন্তু রূপা তার মামার কাছে টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো কথা শুনে ফেরত আসে। মামার কাঁধ থেকে যে বোঝা নেমেছে এতেই মামা খুশি। এখন রূপা মরুক বাঁচুক কিছই আসে যায় না তার। যৌতুক না পাওয়ার কারণে অকথ্য নির্যাতন চালায় শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
একদিন রুপা বাগানে কাজ করতে গিয়ে দেখে ফেলে তার স্বামী পাশের গ্রামের সিলভিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বসে আছে। দেখে ফেলার অজুহাতে রূপাকে না খাইয়ে বন্দী করে রাখে তার স্বামী। শ্বশুর বাড়ির সবাই আলোচনা করে যৌতুকই যখন পাওয়া গেল না কি লাভ এই মেয়েকে রেখে। সেদিন রাতে তার শ্বশুর-শাশুড়ি রূপার স্বামীকে বলে রূপাকে শেষ করে দিতে। পাশের গ্রামের নুরুল আমিনের মেয়ে সিলভিয়াকে বিয়ে করলে অনেক টাকার যৌতুক পাওয়া যাবে। তার বাবার সাথে কথাও হয়েছে।
একথা জানতে পেরে সে রাতেই রূপা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ধরা পড়ে যায় শাশুড়ির কাছে। আবারো তার বন্দী জীবন। স্বামী জসিম একটা ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে রূপাকে। রূপা পালিয়ে এসেছে একথাগুলো বলার জন্য। যে করেই হোক সকালে গিয়ে যেন রূপার খোঁজ নেয় সে। নাহলে তাকে মেরে ফেলবে। মন্তাজের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। এসময় হঠাৎ করেই ভোরের আজান শোনা যায়। রূপা দ্রুত বোরকা পড়ে। রূপা বলে, ভোর হয়ে আসছে, ওরা টের পেলে সর্বনাশ। যাবার সময় হাত জোড় করে মন্তাজকে বলে-আমারে বাঁচাও, বেরিয়ে যায় রূপা। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মন্তাজ। শোবার প্রস্তুতি নেয়। মনে মনে ভাবে সকালে একবার যেতে হবে রূপার শ্বশুরবাড়ি। রূপার জন্য তার কষ্ট হয়। একবার মনে হয় এখনই রূপাকে নিয়ে পালিয়ে গেলেই হয়! যদি সে রাজী থাকে। সকালেই সব কিছুর সমাধান হবে বলে ঘুমিয়ে পড়ে সে। কালই সে রূপাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে দুরে কোথাও।
ভোরবেলা মন্তাজ তাড়াতাড়ি রূপার শ্বশুর বাড়িতে যায়। গিয়ে জানতে পারে দু’দিন আগে গলায় ফাঁস দিয়েছিল রূপা। হিসাব মেলাতে পারে না মন্তাজ। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তার। এরপর একদিন কোনো এক হাটে রূপার ভালোবাসা আর শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার নিয়ে কবিতা পড়ে বই বিক্রি করতে দেখা যায় মন্তাজকে। আবারো কোনো সপ্তায় বটমিলানের হাটে গভীর রাতে মন্তাজ বসে থাকে রূপার অপেক্ষায়।
©somewhere in net ltd.