নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথনাটক : ছাড়পত্র চাই

০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৫


প থ না ট ক
ছাড়পত্র চাই

খো লা হা ও য়া য়
বিশ্বাস হোক বা না হোক, ঘটনা সত্য। আজমত আলী একজন বড় ব্যবসায়ী। নামডাক তার ম্যালা। তার স্ত্রী শাহজাদী বেগম সন্তান সম্ভবা। প্রতিদিন তার ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করাতে হয়। আজমতের মা আফলাতুন বিবি অসুস্থ প্রতিদিন তারও ডাক্তারি চেকআপ করাতে হয়। আজমত উল্লাহর ছোট বোন শাবনুর কলেজ ছাত্রী। মোদ্দা কথা, গাড়ি ছাড়া তাদের কারোই চলে না। গাড়িতো আছে কিন্তু অভাব চালকের। ভালো মানুষ ড্রাইভারের অভাব আরো বেশি। বাধ্য হয়ে তাই আজমত আলী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন ড্রাইভার আবশ্যক। তারপরই খেল শুরু। মোটামুটি একটা তামাশার মধ্যেই পড়ে যান আজমত আলী। এদিকে স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় আগত। বাধ্য হয়ে অবশেষে ঘরেই ডেকে আনেন ডাক্তার। ডাক্তার টোটকা আবদুল আর তার সহকারি ডা. গাইনি ডালিয়া এসে আজমত আলীকে তাদের নানান ব্যবসার ধান্দায় ফেলতে যান, কিন্তু বার বার পিছলে যান চালু ব্যবসায়ী আজমত আলী। অবশেষে ডেলিভারির সময় হতেই ডাক্তার পর্দা ঘিরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর চিৎকার করতে করতে ভেতর থেকে বেরিযে আসে ডাক্তার টোটকা টোনা। আজমত জানতে চায় কি ব্যাপার? ডাক্তার গাইনি আজমতকে জানান গর্ভে থাকা সন্তান জন্ম নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। আজব কান্ড, কিন্তু কারণ কি? নবজাতকের একগাদা প্রশ্ন সবার কাছে তুলে ধরে ডাক্তার টোটকা ও গাইনি।


চরিত্রলিপি.................................
আজমত আলী :
মজুন ড্রাইভার :
হাসমত ড্রাইভার :
ডা. টোটকা টোন :
ডা. গাইনি ডালিয়া :

ছা ড় প ত্র চা ই.....................................................
মঞ্চের পেছনে স্ট্যান্ডে লম্বা সাদা কাপড়। একজন লোক ড্রাম বাজাতে বাজাতে চলে যায়। আজমত তাকে ফলো করে।
একজন লোক ঘোষণা দিতে দিতে বেরিয়ে যায়। তার পেছন পেছন আজমত ঘুরতে থাকে।
ঘোষক : একটি বিশেষ ঘোষণা। একটি বিশেষ ঘোষণা। আজ সকাল ৯ টা থেকে মেইন রোডের পায়খানার লাইন সারাইয়ের কাজ চলবে। এজন্যে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেইন রোড বন্ধ থাকব। সকলে বিকল্প পায়খানা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করবেন।
বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে আজমত আলী।
আজমত : দেখছনিকি রাস্তাঘাটের অবস্থা। কেমতে কি অইব। রাস্তা বন হাগামুতাভি বন। কয়দিন পর কতা কওয়াভি বন অয়া যাইবো।এইদিকে বিবির আবর অখনতখন অবস্থা। কি করি কি করি। কোন যে জ্বালায় পড়লাম।
এসময় মোবাইল বেজে উঠতে পকেট থেকে বের করে কাঁদতে কাঁদতে কথা বলে —
আজমতঃ হ্যা লো, মামা — কান্দি কি আর সখে— রাস্তাঘাটের অবস্থা দেইখা মনে অহে জঙ্গলে গিয়া থাকি। কেমতে কি অইব বুঝা পারতাছি না। মামা, বহুত সখ কইরা একখান গাড়ি লিছিলাম। অখন তো চালায়া পারতাছি না। মাসে মাসে ব্যাংকের লোন শোধ করি আর এই দিকে গাড়ির পার্টসে জং ধরতাছে। ড্রাইভার খুইজা পাই না। আছে নিকি মামা? হ জানি কইবা নাই। এইখানে যারা আহে তাগো আবার নানান প্যাকনা, ঘড়ি ধইরা ডিউটি চাইর বেলা খাওন, নিজের ব্যবসা করুম না ঘরের ডিউটি করুম। ধুত্তরি হালায়...
এ সময় কলিং বেলের শব্দ শোনা যায়। আজমত সেদিকে তাকায়।
আজমত : মামা, মনে অহে ক্যান্ডিডেট আইছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিছিলাম। অখন রাখি পরে কথা কমুনি।
আজমত ফোন রাখতে না রাখতেই গান গাইতে গাইতে ড্রাইভার মজনু ঢোকে। হিরোর মত তার ভাবভঙ্গ।
মজনু : হ্যাল্লো গাইজ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিছিলেন, ডেরাইভার আবশ্যক। মালিক কে আপনে?
মজনু আজমতকে আগাপাশতলা মাপে। তারপর চারদিক দেখে। বিনীত আজমত।
আজমত : জ্বী। আপনার পরিচয়?
মজনু : আমি ফাইটার মজনু
আজমত : ফাইটার! বেজায়গায় আয়া পড়ছেন মনে লয়, আ— আমার তো ফাইটার দরকার নাই। ডেরাইভার দরকার।
মজনু অট্টহাসি হাসে। আজমতকে আশ্বস্ত করে।
মজনু : ডরাইয়েন না বস। ফাইটার আমার পদবি। মাইনষে ভালোবাইসা দিছে।
আজমত : এইডা আবার কিমুন ভালোবাসা?
মজনু : সাঁৎ সাঁৎ সাঁই সাঁই মানে আমার গাড়ি চালানি দেইখাই আদর কইরা আমার কাছের মাইনষে আমার নাম দিছে ফাইটার।
আজমত : কি গাড়ি চালাইতেন?
মজনু : লেগুনা। মিরপুর মহাখালি, গুলশান, ফার্মগেট, আসাদগেট, ঝিকাতলা-
আজমত : লাইসিন আছে?
মজনু : এইটা আবার কি জিনিস? খায় না মাথায় দেয়?
আজমত : ব্যস ব্যস বুঝা পারছি আপনে কেমন ফাইটার মানে ডেরাইভার। তা পেরাইভেট কার চালানের অভ্যাস আছে?
মজনু : হে হে হে পেলাসটিক পেলাসটিক! পেলাসটিকের কথা কন?
আজমত : পেলাসটিক!
মজনু : হালকা মাল! ধাক্কা খাইলে শেষ। লাইনের লোকজন কয় পেলাসটিক। বাসের হেলপার কয় ওই পেলাসটিক সাইড চাপ।
আজমত : চালাইছ কোনো দিন?
মজনু : চালাইছি মাইনে, একসময় মন্ত্রী এমপি গো গাড়ি চালাইছি না। পুরাই ফাইটার। একদম পঙ্খীরাজের মতন কোনো কিছু মানন লাগে না। সিগনাল মিগনাল ফু— চলে আমার গাড়ি হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া-
আজমত : ভাই, আমারে মাফ কইরা দেও। আমার গাড়ি চালাইয়া তোমার পোষাইব না। যাও ভাই যাও যাও অন্যদিকে দেহ —
মজনু : আচ্ছা, কাজ কি কি বলেন তো একবার হুনি?
আজমত : তেমন কিছু না ধর সকাল বেলা আমার বইনেরে কলেজে দিয়া আসবা। দুপুরে লিয়া আইবা। বিকালে আমার মায়ের নিয়া ডাক্তারের কাছে যাইবা সন্ধ্যায় লিয়া আইবা।
আজমত : সন্ধ্যায় আমার ইসতিরিরে নিয়া ডাক্তারের কাছে যাইবা রাইতে আহনের সুমে আমারে অফিস থিক্কা লিয়া আইবা।
মজনু : একেবারে সোজা।
আজমত : বল তো কি কি কাজ?
মজনু : সকালে আপনের স্ত্রীরে ডাক্তারের কাছে, দুপুরে ফিরত। দুপুরে আপনারে মারে নিয়া ডাক্তারের কাছে বিকালে ফিরত আর সন্ধ্যায় আপনের বইনেরে নিয়া ঘুরতে যাওন। জামাল গুদু জামাল গুদু-
আজমত : ধ্যাত্তেরি, যাও যাও, বুঝছি তুমি কেমন ডেরাইভার। যাও যাও।
মজনু : ওস্তাদ আরেকবার ভাইবা দেখেন। আমার মতন ডেরাইভার আর পাইবেন না। দিল কোরবান কইরা দিমু, এই পিস লাখে একটা মিলবো না ওস্তাদ এক্কেরে জান দিয়া গাড়ি চালামু—
আজমত : জান দিয়া না জান লিয়া? মিয়া লাইসিন কারে কয় তাই জানো না। চালাইতা লেগুনা অখনে চালাইবা পেলাসটিক পরে ধাক্কা খাইয়া বিবি বাচ্চা সুদ্ধা মরুম নিকি? না ভাই তুমি যাও। লাগবো না আমার ডেরাইভর।
মজনু : এত কচি মনে করলেন নাকি আমারে। একবার টেরাই কইরা-
আজমত : ওরে বাবা লাগলে ডাইকা নিমুনে।
মজনু : আইচ্ছা যান বেতন কমাইয়া দিয়েন।
আজমত : ব্যাটা গেলি। আমি কইতাছি তোমারে রাখুম না আর-
মজনু : আইচ্ছা ঠিক আছে আর প্যাচাল পাইরেন না।
বিরক্ত হয়ে চলে যায় মজনু। আজমত মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। এসময় দু’জন ফকির আসে গান গেয়ে ভিক্ষা করতে করতে।
ভিক্ষুক—১ : বাবা দুইডা ভিক্ষা দেন।
হঠাৎ রেগে যায় আজম।
আজমত : এই বেটা, শরম করে না হালা এই বয়সে ভিক্ষা চাস? তাগড়া শইল লিয়া মাইনষের কাছে হাত পাতস।
ভিক্ষুক—১ : শরম করলে তো বাড়ি করতে পারতাম না বস। উত্তরায় দুইটা বাড়ি, হাতিরপুলে একটা বাড়ি মোহাম্মদপুরে পাইলিং চলতাছে সবই তো ওস্তাদ এই টাকায়। বছরে একবার থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুর চিকিস্সা করতে যাই ইন্ডিয়া। হপ্তায় একবার চাইনিজ। বুজলেন তো এই ব্যবসায়। খাটনি বেশি ঝামেলা কম। ট্যাক্সের ঝামেলা নাই। এই দ্যাশে এইডাই হইল সবচে সলিড ব্যবসা। আয়া পড়েন বস।
আজমত : ডেরাইভারি করবি?।
ভিক্ষুক—১: কিসের ডেলিভারি ওস্তাদ?
আজমত : আরে ব্যাটা ডেলিভারি না ডেরাইভারি। গাড়ি চালায়া পারস?
ভিক্ষুক—১ : পারি না আবার আমার বেয়ারিংয়ের গাড়ি তো আমি নিজেই চালাই।
আজমত : ধুত্তোর গেলি।
ভিক্ষুক হাসতে হাসতে চলে যায়।
আজমত : নাহ, বড় যন্ত্রনায় পড়লাম। একে যানজট গুতাগুতি হুড়াহুড়ি, পাবলিকের চাপে অবস্থা টাইট তার উপরে রাস্তাঘাট খুইদামুইদা যা তা। তার উপরে হাগামুতা বন তার উপরে কিনছি একখান গাড়ি। নাহ, ব্যবসাউবসা বাদ দিয়া কি অখন আমারেই ডিউটি করন লাগবো। এইদিকে বিবির আবর অখনতখন অবস্থা।
এ সময় গাড়ির হর্ণের মত আওয়াজ শোনা যায়। এরপর গাড়ি চালানোর অভিনয় করতে করতে আসে হাসমত।
হাসমত : এই ডাইনে চাইপা ভো ভো বামে চাইপা ভো ভো..
আজমত : এই এই কি ব্যাপারে এই থামো। কে, তোমারে ঢুকতে দিছে কেঠা? কেঠা তুমি? কোন গোডাইনের মাল?
হাসমত ব্রেক করে।
হাসমত : আমি হাসমত। গাড়ি চালাই। যেমনে খুশি। পত্রিকায় ড্রাইভার আবশ্যক দেইখা আসলাম। জবর একখান বিজ্ঞাপন দিছেন।
আজমত : ভালা করছ, কিন্তু এই সব কি ফাইজলামি।
হাসমত : ফাইজলামি! এইডারে আপনে ফাইজলামি কইতাছেন। চব্বিশ ঘন্টা প্র্যাকটিসে আছি আর আপনে কন ফাইজলামি।
আজমত : ফাইজলামি কমু না তো কি কার রেস কমু? বেটা ফাজিল।
হাসমত : এ মিয়া গালি দিবেন না কইয়া দিলাম। ফাজিল আছিল মোর দাদার নাম। আর আপনে গালি দেন। গালি দেন তো—
আজমত : না গালি দিলাম কই, আদর কইরা ডাক দিলাম। দাদা ফাজিল।
হাসমত : হ্যাঁ এই তো কথার মতন কথা।
আজমত : ফাজিল বাবা সরি হাসমত বাবা গাড়ি চালাও কয় দিন?
হাসমত : হিসাব তো রাখি নাই বস, তয় ম্যালা দিন হইব। ছোটবেলায় তো তক্তার মধ্যে বেয়ারিং লাগাইয়া ঠেইলা চালাইতাম আর বড় হইয়া তা ধরেন ২০/২৫ দিন তো হইবই?
আজমত : ২০/২৫! এর আগে কি চালাইতা বাপ?
হাসমত : টেরাক।
আজমত : অ্যা! ওরে বাবারে-
হাসমত : ডরান ক্যান, হাত আমার পাক্কা। এই পর্যন্ত ৪১ টা টেম্পোরে ধাক্কা দিছি, ৬১ টা রিকশা ভচকাইয়া গেছে। ২৫ টা প্রাইভেট ট্যামা হইছে, ভটভটি ভাঙছে গোটা চাইরেক নছিমন করিমন আরো কত গাড়িরে ধাক্কা দিছি। মরছে কয়জন কইতে পারি না, তয় আমি নিজে মরতে মরতে বাইচা গেছি অনেকবার। হাত পুরা পাকা হে হে হে..
আজমত : তুমি ডেরাইভার না জল্লাদ!
হাসমত : কি কমু কন, অ্যাকসিডেন্টের উপর তো কারো হাত নাই। যারে কয় দুর্ঘটনা। দেহেন না আমার মতন কত পাকা ডেরাইভার ডেইলি কত—
আজমত : লাইসেন্স আছে?
হাসমত : আছে ১৪ নম্বর লাইসেন্স।
আজমত : মাইনে! ওইটা আবার কেমন?
হাসমত : মানে ওস্তাদেরটা কাটিং কইরা ফটোকপি কইরা-
আজমত : ভাই আমারে মাফ কইরা দেও, আমার ডেরা্ইভারের দরকার নাই।
হাসমত : এ্ইডা কি কন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন?
আজমত : বিজ্ঞাপন দিয়া মহা অন্যায় করছি।
হাসমত : আইচ্ছা যান বেতন কমাইয়া দিয়েন।
আজমত : কইলাম তো আমার লাগবো না।
হাসমত : আইচ্ছা যতক্ষণ লাগে ডিউটি দিমু।
আজমত : কইলাম তো লাগবো না।
হাসমত : আইচ্ছা যান ঘরের কাজকামও কইরা দিমু।
আজমত : আহ ব্যাটা যাবি না পুলিশ ডাকুম।
হাসমত : পুলিশ ওরে বাবা ধরলেই হু হু। যাইগা, লাগলে খবর দিয়েন।
হাসমত বেরিয়ে যায়। ভেতর থেকে একটি মেয়ের কাতরানি শোনা যায়।
আজমত : বিবিজান, আরেকটু ধৈর্য ধর। নাহ, কি করি এই দিকে বিবির অখনতখন অবস্থা। বুঝছি ডাক্তাররেই ফোন দিতে হইবে।
ডাক্তারকে ফোন লাগায় আজমত। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে পায়।
আজমত : হ্যালো কে ডাক্তার টোটকা আবদুল? ডাক্তার সাব খবর সিরিয়াস, জলদি আহেন। রোগীর তো অখনতখন অবস্থা। খবর হইয়া গেছে —আসেন আসেন দেরী কইরেন না পিলিজ।
ফোন রেখে মাথায় হাত দিয়ে পায়চারী করে। মাঝে মাঝে স্ত্রীর কাতরানি শুনে সেদিকে তাকায়।
আজমত : কোন গজবের মধ্যে যে পড়লাম। কে জানে। একজন ভালো ডেরাইভার খুইজা পাইলাম না।
বাইরে থেকে ঢোলের শব্দ শোনা যায়। আজমত অবাক হয়ে খেঁাজে। নাচতে নাচতে আসে ডাক্তার টোটকা ডাক্তার আবদুল আর গাইনি।
আজমত : কি কি ব্যাপার আপনেরা কারা? কি সমাচার?
ওয়াজের স্টাইলে ডাক্তার কথা বলে।
টোটকা : সমাচার তো আপনে দিছেন। ডেলিভারি কেস। ফেস টু ফেস, কোথায় পেশেন্ট কোথায়? হাসপাতালে নিয়া কোনো লাভ হবে না। শুধুই সময় নষ্ট পয়সা খরচ তারচাইতে মুদাব্বির ক্লিনিকে ভর্তি করান। সবরকম সুবিধা পাবেন। সিসিইউ পিসিইউ আইসিইউ আই লাভ ইউ অপরেশন থিয়েটার সিনেমাস সিনেমাস অপারেশন হবে এক্কেবারে জাক্কাস। ওষুধ খাবেন অবশ্যই মইত্যা ফার্মাসিউটিকেল এর। জাগায় ব্রেক। ইনকাম নগদ। অ্যাকশন পুরাই। ডাক্তারির মজাই তো এই। আর টেস্ট হইছে তো? ব্লাড,সুগার, লিভার, ইসিজি, বিসিজি, কিডনি, মিডনি, সিডনি সিটিবিটি খিটিমিটি ইউরিন সিউরিন মিউরিন। নাইলে এক্ষণে যান, টেস্ট না হইলে তো রোগ ধরা যাবে না। রোগীর টেস্ট অল দা বেস্ট। আর হ্যাঁ অবশ্যই কুতুব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাবেন, অন্য জায়গায় টেস্টে কাজ হইব না। কমিশন ফিফটি ফিফটি।
আজমত : দম লন দম লন ডাক্তার সাব। আপনেতো সব জায়গায় আমারে ঘুরায়া লিয়াইছেন। এক্কেরে জাহান্নম পর্যন্ত। আর টেস্ট তো আপনে এই পর্যন্ত চৌত্রিশবার করছেন, বত্রিশ বার আমার বিবির আর দুইবার ভুল কইরা আমার। আবারো টেস্ট করন লাগবো?
টোটকা : হায়রে, টেস্টের কোনো শেষ আছে। টেস্ট প্রিটেস্ট বিফোর টেস্ট আফটার টেস্ট। লং টেস্ট শট টেস্ট মিড টেস্ট ওয়াইড টেস্ট। যতবার ডাক্তার কইব ততবার টেস্ট করতে হবে। রোগ তো ধরা খাইব টেস্টেই। টেস্টেই তো মজা। টেস্টেই তো টেস্ট। কমিশন খাড়া খাড়া। যান যান এক্ষণি যান। দেরী করলে লেট হয়ে যাবে। লসও হইতে পারে।
আজমত : আরে ধূর মিয়া, রোগির যখনতখন অবস্থা ডেলিভারি কেস আর আপনে কন টেস্ট করতে হইব। আগে রোগী দেইখা লন। যান।
টোটকা : তাই নাকি! আচ্ছা আচ্ছা চলেন চলেন।
আজমত এ সময় গাইনিকে দেখে।
আজমত : উনি আবার কে?
টোটকা : উনি আমার পি্এস আমার জান আমার পরান ভেরি ভেরি মিস্টিরিয়াস মিসিলিনিয়াস স্পেশালিস্ট মাহাব্বত কি গালিয়া মিস গাইনি ডালিয়া। লাভ এক্সটারট, পাওনা থেরাপিস্ট গাওনা থেরাপি এক্সপার্ট।
আজমত : গাওনা থেরাপি। এইটা আবর কি?
টোটকা : মিস গাইনি। শুনিয়ে দিন গাওনা থেরাপি।
মিস গাইনি নেচে নেচে গান গাইতে থাকে। আজমত ধমক দেয়।
আজমত : থামেন, এই সব কি?
টোটকা : এইটাই হইল গাওনা থেরাপি। ডিজিটাল যুগ, সব কিছু ডিজিটাল। চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক আধুনিক। এখন বাচ্চার মুড বুইজা নানারকম থেরাপি দিয়া ডেলিভারি করতে হয়। সব চিকিৎসার ক্ষেত্রেই এইটা—
এসময় পর্দার আড়াল থেকে ধুপধাপ শব্দ ভেসে আসে।
আজমত : ওই যে, ডাক্তার সাব, সময় হইয়া আসছে।
ডা. টোটকা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
টোটকা : মিস গাইনি। যান। আপনার কাজ শুরু করে দেন।
মিসেস গাইনি ভেতরে যান। ওরা অপেক্ষা করে। ভেতরে গান শোনা যায়। গান থেমে যায়। চিৎকার করে বাচ্চার কান্না শোনা যায়।
আবার হঠাৎ চুপ। একটু পর গাইনি দৌড়ে বেরিয়ে আসে।
গাইনি : স্যার স্যার, কাজ হচ্ছে না স্যার
টোটক : মিস গাইনি আপনি একের পর এক থেরাপি চালিয়ে যেতে থাকুন।
গাইনি আবার ভেতরে যায়। একের পর এক নানারকম গান ভেসে আসে। বাইরে দু’জন পায়চারী করে। এসময় টোটকার ফোন আসে।
টোটকা : ইয়েস, স্বাস্থ্য —থেকে? কি ধর্মঘট— গতকাল থেকে এই চলছে? আপনারা কিভাবে জানলেন? ডা. ইজ্জত? ওকে ওকে আচ্ছা আমি দেখছি।
উদ্বিগ্ন আজমত।
আজমত : কি সমস্যা ডাক্তার সাব।
ডা. টোটকা ব্যস্ত হয়ে পড়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে।
টোটকা : সমস্যা তো সমস্যাই। সমস্যা নিয়েই তো আমাদের চলতে হয়। এই দেশে সমস্যার শেষ নেই। একটু অপেক্ষা করেন এক্ষণি জানা যাবে। নো চিন্তা ডু ফুরতি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
টোটকা ভেতরে যায়। চিৎকার করে শিশুর কান্না শোনা যায়। হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। একটু পর দুই ডাক্তার মাথা নিচু করে বেরিয়ে আসে।
উদ্বিগ্ন আজমত।
আজমত : কি ব্যাপারে ডাক্তার। কোনো ঝামেলা।
টোটকা : ঝামেলা মানে ঝামেলা। বিশাল ঝামেলা। ধর্মঘট ঝামেলা। ধর্মঘট চলছে
আজমত : ধর্মঘট, কিসের ধর্মঘট?
টোটকা : অদভুত ধর্মঘট। নবজাতকের ভূমিষ্ঠ না হওয়ার ধর্মঘট।
আজমত : অ্যাঁ!
টোটকা : হ্যাঁ, এই দুনিয়ায় সে জন্ম নিব না নিব না নিব না। যদি সে তার প্রশ্নের উত্তর না পায়।
আজমত : কয় কি হালায়। কেমতে কি? কি প্রশ্ন কন দেহি।
টোটকা : সারা বাংলাদেশের সকল নবজাতকের এই প্রশ্ন সকল বাবা মার কাছে। সকল মানুষের কাছে।
আজমত : আরে হালায় প্রশ্নটা কি কন্না?
টোটকা : অনেক প্রশ্ন, হাজার প্রশ্ন।
গাইনি : সহজ প্রশ্ন। সঠিক প্রশ্ন। আমি তো ডরাইছি। বাপরে বাপ কি কয়।
আজমত : আবে হালায় সেই প্রশ্নগুলি কি কয়া পারেন না?
গাইনি : যুদ্ধে যুদ্ধে মরতাছে নিরীহ মানুষ।
টোটকা : পেট্রল বোমায় পোড়ে গাড়ি। পোড়ে মানুষ, জ্বলে ঘরবাড়ি।
গাইনি : গারমেন্টসেআগুন লাইগা পোড়ে শত শত মানুষ।
টোটকা : বিল্ডিং ভাইঙ্গা মরে হাজার হাজার মানুষ।
গাইনি : এসিডে ঝলসাইয়া যায় মানুষের মুখ।
টোটকা : ভুল চিকিৎসা টোটকা চিকিৎসায় মরতাছে শত শত মানুষ।
গাইনি : ফরমালিন আর ভেজাল খাইয়া ক্যান্সার কিডনি ডায়াবেটিক আরো নানা রোগে ধুইকা ধুইকা মরে শত মত মানুষ।
টোটকা : রোড অ্যাকসিডেন্টে প্রতিদিন মরে কত শত মানুষ।
গাইনি : আইনের রক্ষকরা ভক্ষন করে মানুষ।
টোটকা : ধান্দাবাজরা চোষন করে মানুষ।
গাইনি : ভুয়া নেতারা শোষন করে মানুষ।
টোটকা : নির্যাতনের শিকার হইয়া মরে মানুষ।
গাইনি : মরন নেশার ছোবলে মরে শত শত মানুষ।
টোটকা : শত শত বেকার মরে হতাশায়।
গাইনি : ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে মরে অসহায় মানুষ ।
টোটকা : নীতিহীন, নীতিভ্রষ্ট সমাজ।
গাইনি : দেখরে, নয়ন মেলে এই দুনিয়ায়
মানুষ আর মানুষ নাই।
মানুষের ভিতরে আরেক অমানুষ,
সুদ খায়, রক্ত চোষে; নাই কোন হুঁশ।
তবু বিচারপতি দেয় না রায়
টোটকা : যেইখানে মানুষ কুত্তার মতন কামড়া কামড়ি করে। একে অন্যেরে করে অবিশ্বাস। সেই দেশে বাস? সেইখানে জন্ম নিলে আমাগো কি দশা হইব? উত্তর চাই। যদি হয় তাহলেই জন্ম নিব। শান্তির দেশে। আর নাইলে—
স্বর্গেতে যাবো গো।
হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে
স্বর্গেতে যাবো গো।
জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী
যদি বোঝে দেশের মানুষ
স্বর্গ সেখানে গো।

ক্রমশ..............


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.