নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব পাচার

১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৪


জোরপূর্বক শ্রম, যৌন দাসত্ব অথবা পাচারকৃত মানুষদেরকে ব্যবসায়িক যৌনশোষণমূলক কাজে নিয়োজিত করার জন্য সংঘটিত অবৈধ মানব বাণিজ্যই মানব পাচার। মানব পাচার বল প্রয়োগের মাধ্যমে সংঘটিত একটি অপরাধ যা মানুষের মুক্ত চলাচলের অধিকারকে হরণ করে। বহুজাতিক অপরাধ সংঘটনগুলোর সংঘটিত অপরাধকর্মগুলোর মধ্যে মানবপাচারকে অন্যতম দ্রুত এবং জঘন্যতম অপরাধকর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রতি বছরই মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এটি আধুনিক বা নব্য দাসত্বের লক্ষণ। গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মানব পাচার নামক আধুনিক দাসত্বের শিকার বিশ্বের আনুমানিক ৪ কোটিরও বেশি মানুষ। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মানুষ নিজেদের জীবনযাপনকে সচ্ছল করতে পারবে এই বিশ্বাসে ছুটছে উন্নত দেশগুলোতে। স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোর সরলতার সুযোগকে কাজে লাগায় পাচারকারীরা। এ মানুষগুলো পাচারের শিকার হওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু অপরাধের শিকার হয়। যেমন-প্রতারণা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নারীদের ক্ষেত্রে জোরপূর্বক যৌন কাজে বাধ্য করা, শ্রমদাসত্ব, মুক্তিপণ হিসেবে অর্থ আদায়, মাদক পাচারে ব্যবহার, দেহের অঙ্গ স্থানান্তর করে বিক্রি, বিপদজনক খেলাতে ব্যবহার এমনকি অর্থ না পেলে মেরেও ফেলা হয় অনেককে। অনেকগুলো অপরাধ একসাথে সংগঠিত হওয়ায় মানব পাচারকে জঘন্যতম অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। মানব পাচার বর্তমানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও এটি দীর্ঘদিন যাবত ঘটে চলেছে। ইতিহাস ঘাটলে মানব পাচারের অনেক মর্মান্তিক ঘটনা জানা যায়। ২০১৫ সালে বিশ্ব গণমাধ্যমে বিশেষ শিরোনাম ছিল থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের গণকবর পাওয়ার ঘটনাটি। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখান থেকে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা অভিবাসীদের ৮টি কঙ্কালসহ ২ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও আরো শতাধিক কবর পাওয়া যায় যেখানে এক বা একাধিক কঙ্কাল ছিল। ২০১৫ সালের ২৭ মে সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার ৭ উপজেলার প্রায় ৩৫০ জন কিশোর ও যুবককে ভালো অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা অবৈধ পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া পাঠায়। কিন্তু কিছুদিন পর দালাল চক্র মোবাইলে তাদের পরিবারের কাছে যুবকদের করুণ আকুতি শোনায়। প্রিয় সন্তানের জীবন রক্ষায় বসতভিটা বিক্রি করে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি তাদের পরিবার। অনেকে আবার বিভিন্ন সমিতি থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সমস্ত টাকা তুলে দিয়েছেন দালালদের হাতে। যদিও তাদের অনেকেরই খোঁজ মেলেনি শেষ পর্যন্ত। টাকা দিতে না পারায় কয়েকজনকে হত্যা করে সাগরে ফেলে দিয়েছে বলে পরিবারকে জানানো হয়। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় তারা নিজেদের দুর্ভাগ্য ডেকে এনেছেন। ২০১৯ সালের ৯ মে ভূমধ্যসাগর হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ৮০ জন পুরুষ নৌপথে যাত্রা শুরু করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে। তাদের এই স্বপ্ন পূরণের যাত্রা মরণযাত্রাতে পরিণত হয়। নৌকা উল্টে অধিকাংশ যাত্রী মারা যায়। এদের মধ্যে ৩৯ জন বাংলাদেশী। তাদের মাঝে ভাগ্যক্রমে কিছু যাত্রী বেঁচে ফেরে। পুরুষের থেকে তুলনামূলক বেশি হারে নারী ও শিশু পাচারের শিকার হয়। ১৪ মে ২০২২ উদ্ধার হয় ৩২ জন বাংলাদেশী। সমুদ্রপথে ইউরোপে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগর থেকে ৩২ জন বাংলাদেশী উদ্ধারের ঘটনাটি আন্তজার্তিক সংবাদ শিরোনামে পরিণত হওয়ার পর তদন্ত শুরু করে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিগত ৭ বছরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে সাড়ে ২০ লাখ পাচার হওয়া মানুষ। এ সময়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌযান ডুবে ১৯ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুসারে, কেবলমাত্র ২০২১ সালে ভূমধ্যসাগরে প্রায় ২ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০১। ভূমধ্যসাগর পথ পাড়ি দেয়া এবং সাগরে ডুবে যাওয়া মানুষের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশীরাও। শুধু তাই নয়, ভূমধ্যসাগর দিয়ে যত মানুষ ইউরোপে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, সেই তালিকার শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশের নাম। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১৮টি রুটে মানব পাচার হচ্ছে বিদেশে। মানব পাচারের জন্য পাচারকারীরা বেছে নিয়েছে মৃত্যুকূপ ভূমধ্যসাগর। জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের এক প্রতিবেদনে মানব পাচার সম্পর্কে এই ধরনের তথ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সমুদ্রপথে ইউরোপ যাওয়ার সময় গত ১৪ মে ২০২২ আবারও ৩২ বাংলাদেশীসহ ৮১ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার নৌবাহিনী। বাংলাদেশী ছাড়া উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৩৮ জন মিশরের, ১০ জন সুদানের ও ১ জন মরক্কোর নাগরিক। সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বয়স ২০ থেকে ৩৮ বছর। তাদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশনের ২০১৭ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পাচার হওয়া ভিক্টিমদের ৭১ শতাংশ নারী ও মেয়ে শিশু এবং ২৯ শতাংশ পুরুষ ও ছেলে শিশু। অনেকে নিজ দেশে আবার অনেকে বিদেশে পাচার হচ্ছে। আর এদের শেষ ঠিকানা হচ্ছে যেকোনো যৌনপল্লীতে। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এদের বিক্রি করা হয় পতিতালয়ের প্রধানের কাছে। একবার যেখানে প্রবেশ করলে মুক্তি পাওয়া মুশকিল। অনেকে মুক্তি পেলেও সমাজ তাদের আর স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় না। পরে তাদের ফিরে যেতে হয় আগের ঠিকানাতে। জাতিসংঘের ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে পাচার হওয়া মানুষদের মাঝে ৩৪ শতাংশ নিজ দেশে এবং ৩৭ শতাংশ আন্তঃসীমান্তে পাচার হচ্ছে। সেইভ দ্য চিলড্রেনের ২০১৪ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৫ বছরে ৫ লাখ বাংলাদেশী নারী বিদেশে পাচার হয় যাদের গন্তব্য ভারত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। বিবিসির একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় পাচার হওয়া এক নারীর পাচারকারী হয়ে ওঠার ঘটনা। এছাড়া আরো হাজার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৪ সালের রিপোর্ট মতে পাচারকারীরা বছরে ১৫১ বিলিয়ন ডলার আয় করে যার ৯৯ বিলিয়ন আসে যৌন পেশায় বাধ্য করার মাধ্যমে। মোট কথা নারী পাচার আসলে একটি ব্যবসা। দেশজুড়ে রয়েছে নারী পাচারকারীদের ভয়াবহ নেটওয়ার্ক। তারা টিকটক, লাইকি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, ডিসকড, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির অ্যাপস ব্যবহার করে পাচারের জন্য নারীদের সংগ্রহ করছে। নিজস্ব দালাল নিয়োগ করেও নানা কৌশলে নারীদের পাচার করে দিচ্ছে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, কাতার, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, এরকম ৩০টি বা তারও বেশি চক্র সারা দেশে বিস্তৃত রয়েছে। আবার আদম পাচারকারী দালালদের কিছু চক্র নারীদের গৃহপরিচারিকার চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার করছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কত নারী পাচার হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান পুলিশ বা কোনো বেসরকারি সংস্থার কাছে নেই। বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু পাচার হয়েছে। মানব পাচারের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, এই জঘন্যতম অপরাধটি কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই অপরাধের পেছনে থাকে বিশাল এক চক্র। যে যে দেশে মানব পাচার হয় সেই দেশের দালালদের মধ্যে থাকে যোগসূত্র। দলবদ্ধ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অপরাধটি সংঘটিত হয়। মানব পাচার হয় মৌসুম হিসাব করে। পাচারকারীরা একটি মৌসুম নির্বাচন করে সেই অনুযায়ী পাচার করে মানুষকে। তারা হেমন্ত ও শীতকালকে পাচারের মৌসুম হিসাবে ধরে, কারণ এই সময় সমুদ্র কিছুটা শান্ত থাকে, তাই তারা ছোট ছোট নৌকা করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্যমতে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ২০১৭ সালের জরিপে দেখা গেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে। খুব সম্প্রতি পাচারকারীরা লিবিয়াতে ২৬ জনকে অপহরণ করে, তারপর লিবিয়ার তাদেরএকজনকে হত্যার প্রতিশোধে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে অপহরণকারীরা। এ সকল তথ্য অনুসারে অনুমান করা যায় যে, মানব পাচার কোনোভাবেই কমছে না বরং দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। মানব পাচারের দিক থেকে আন্তজার্তিক সংস্থার তালিকাতে কেন বাংলাদেশ শীর্ষে? আমরা যদি এর কারণ খুঁজি তাহলে সর্বপ্রথম যে কারণটি আসবে তা হলো বেকারত্ব। দেশের বিপুল পরিমাণ বেকার ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ধারণা, বিদেশে গেলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। পারিবারিক সচ্ছলতা আসবে এই বিশ্বাস নিয়ে অবৈধ পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় তারা। তাদের এই বিশ্বাসকে পুজি করে স্বার্থ হাসিল করে পাচারকারীরা। নারীদের ক্ষেত্রেও একইভাবে বিভিন্ন এলাকার তালাকপ্রাপ্ত, অল্প বয়স্ক বিধবা, কাজের সন্ধান করছে এমন নারীদের টার্গেট করে। অনেক সময় অপহরণ বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে পাচার করে দেশে-বিদেশে। আবার সীমান্তবর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির জন্যও মানব পাচার হয়। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সূত্রমতে কক্সবাজার ও টেকনাফের ৮০টি পয়েন্ট দিয়ে মানব পাচার হয়। বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার জন্য মানব পাচার কমানো যাচ্ছে না। আমাদের দেশে মূলত একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলে তারপর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্নভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলে আলোচনা, সমালোচনা, নীতিনির্ধারকদের টকশো এবং সুশীলদের পরামর্শ। কিন্তু কিছুদিন পরে আরো একটি ঘটনার চাপে ঢাকা পড়ে যায় পূর্ববর্তী ঘটনা। আর এভাবেই অপরাধীরা আইনের থেকে পার পেয়ে যায়। মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারে বিলম্ব না করে দ্রুত শাস্তি দেয়া উচিত।
মানব পাচারের আরো একটি কারণ হলো অসচেতনতা। তাই সর্বস্তরের মানুষকে একই প্ল্যাটফরমে দাঁড়িয়ে এই পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে অবৈধ মানব পাচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। মানব পাচার প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের পাশাপাশি আমাদের সচেতনতাও প্রয়োজন। সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানব পাচার প্রতিরোধকল্পে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে-
ক. সরকার বিভিন্ন কর্মী নিয়োগকারী দেশের সঙ্গে কর্মী প্রেরণের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে। উন্নত বিশ্বে কারিগরি ক্ষেত্রে যে পরিমাণ কর্ম খালি আছে, তাতে প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ প্রেরণের মাধ্যমে আমাদের বেকারত্বের হার প্রায় শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। প্রবাসে প্রেরিত কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে আমাদের দূতাবাসগুলো। এছাড়া দূতাবাসগুলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের অসুবিধার কথা শুনে সেগুলো সমাধান করতে পারে।
খ. যেসব দেশে মানব পাচারের হার বেশি, সেসব দেশের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে মানব পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মানব পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পদ-পদবি অবশ্যই বিবেচনাযোগ্য নয়।
গ. অনেকেই অল্প খরচে বিদেশে যাওয়ার জন্য অবৈধ পথকে বেছে নেয়। এজন্য সরকারিভাবে যাওয়া কর্মীদের অভিবাসী ব্যয় অবশ্যই যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। কোনোভাবেই এজেন্সিগুলো যেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করে, সেটা তদারক করতে হবে।
ঘ. এলাকায় অপরিচিত কিংবা নতুন কাউকে দেখলে এবং আচার-আচরণে সামান্যতম সন্দেহ হলে অবশ্যই খোঁজখবর নিতে হবে। প্রয়োজনে পুলিশ, জনপ্রতিনিধিকে জানাতে হবে। এছাড়া মানবপাচার বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্যক ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একবার করে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক আলোচনা করা যেতে পারে।
ঙ. দেশে কিংবা বিদেশে কোথাও চাকরির লোভনীয় প্রস্তাব পেলে সেই চাকরি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
চ. দূরে কোথাও মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় অবশ্যই ছেলেপক্ষের খোঁজখবর নিতে হবে। এক মাস কিংবা দুই মাস মেয়াদি ভিসায় কেউ যেন বিদেশে না যায়, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ছ. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং বেকারদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
জ. তথ্য ও সচেতনতা বৃদ্ধি-সংক্রান্ত কর্মসূচি নিতে হবে। পাচারের শিকার ব্যক্তিরা যেন সমাজে আগের সম্মান ও মানমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, সেজন্য সরকারসহ সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
ঝ. পাচারের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তত্ত্বাবধানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এনজিওগুলোকে পাচারের শিকার ব্যক্তির জন্য কাপড়, খাদ্য, অর্থ এমনকি সময় দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ অনুসারে পাচার ও তদ্সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানব পাচার সামান্য কোনো সমস্যা নয়। মানব পাচার নামক ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা। পাশাপাশি মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বেকারত্ব দূর করতে হবে। অন্যথায় এ সমস্যা মহামারী আকার ধারণ করবে। দেশের স্বার্থে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। বন্ধ হোক সব ধরনের মানব পাচার। (একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য করা গবেষণাপত্র।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.