![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পুরনো দিনের টাইপ রাইটারে নিজের জবানবন্দী টাইপ করছেন বৃদ্ধ আমীর আলী। জীবনের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সবই এখন একর পর এক চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এই ডিজিটাল জমানায় যখন মূহুর্তেই ছবিসহ সংবাদ পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে, তখনও তিনি আঁকড়ে আছেন সেই পুরনো টাইপ রাইটার। যদিও মাঝে মাঝে দু’চারজন খদ্দের জুটে যায়। তাই দিয়েই চলে আমীর আলীর সংসার। কত স্মৃতি তার এই টাইপ রাইটার ঘিরে। এই টাইপ রাইটারকে কেন্দ্র করেই তার বিয়ে, সন্তান বীথির জন্ম, বড় হওয়া এবং সেই আদরের সন্তানের পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা। মেয়েটাকে বড় ভালোবাসতেন আমীর আলী। সেই মেয়ে এমন করবে সে ভাবতেই পারেনি। এখনও সে তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রেখেছে। মাঝে মাঝে আমীর আলীকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু আমীর আলী কঠোর এ ব্যাপারে। বর্তমানে আমীর আলীর স্ত্রী রাবেয়া অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। ফলে ঘরে বাইরে দু’দিকই সামলাতে হচ্ছে আমীর আলীকে। একটা ফ্যানের অভাবে খুব কষ্ট পেতে হচ্ছে রাবেয়াকে কিন্তু আমীর আলী নিরুপায়। খাবার জোটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে ফ্যান কিনবে কি দিয়ে? আমীর আলীর মনে পড়ে বীথিকে নিয়ে একদিন ঘুরতে বের হয়েছিল সে। টেবিল ফ্যান দেখে কেনার জন্য বায়না ধরেছিল বীথি। অক্ষমতায় সেদিন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল আমীর আলীর। এমন ছোট ছোট অনেক কষ্টকর স্মৃতি মনে পড়ে আমীর আলীর। আজ সপ্তাহের প্রথম দিন ঘরের সব কাজ সেরে সকাল সকালই বেরিয়ে পড়েন আমীর। দিনের প্রথম ভাগেই একজন খদ্দের আসার কথা। পুরনো দিনের কিছু ডকুমেন্টস টাইপ করাবে। আশা করা যায় ভালো টাকাই পাওয়া যাবে। যাবার সময় রাবেয়া মনে করিয়ে দেন তার ওষুধের কথা। একরাশ ভাবনা মাথায় নিয়েই কর্মস্থলে আসেন আমীর আলী। এরপর সারাদিন শুধু অপেক্ষা। কোনো খদ্দেরই আসে না তার টাইপ রাইটারে কাজ করাতে। বরং পাশের টেবিলে জাফর তার কম্পিউটারে কাজ করে হাজারের ওপর ইনকাম করে। কম্পিউটারের ক-ও বোঝে না আমীর। সে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে আর তার অতীতের কথা মনে পড়ে। কি ব্যস্ততাই না ছিল তার। দম ফেলার সুযোগ মিলত না। একবার এক কাজ এসেছিল দুই হাজার পৃষ্ঠার। একটা উপন্যাস। আহা কি দিনই না ছিল। দীর্ঘশ্বাস পড়ে আমীরের। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত টকা ধার করে ওষুধ কিনে নিতে হবে। ধার দিতে অপারগতা প্রকাশ করে জাফর। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় সেই অতীতের মত। কি হবে ভেবে পায় না আমীর। রাত ঘনিয়ে আসে। জাফরও চলে গেছে অনেকক্ষণ। বিষন্ন বিধ্বস্ত আমীর আস্তে আস্তে গোটাতে থাকে তার জিনিসপত্র। এসময় দুর থেকে কাগজপত্র হাতে এগিয়ে আসতে থাকে এক লোক। খুশিতে চক চক করে ওঠে আমীরের চোখ। শেষ পর্যন্ত বোধহয় একজন খদ্দের পাওয়া গেল। লোকটা এসে নানান কথা জিজ্ঞেস করে। কত করে পাতা নেন। কালিটা ভালো কিনা ইত্যাদি। খুশি মনেই জবাব দেন আমীর। এরপর জিজ্ঞেস করেন কি টাইপ করবে সে। লোকটা হেসে জানায় টাইপ করাতে আসেনি। সে স্ট্যাপলার খুঁজছে। হা করে তাকিয়ে থাকে আমীর আলী। আমীর আলীর মনে হয় কে যেন তার গালে একটা কষে চড় মারল। লোকটা চলে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে আমীর। একসময় টাইপ রাইটারটা আছাড় মারে।
©somewhere in net ltd.