নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজ এবং কর্মীকে সম্মান করি

২২ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৯


একটি সুসজ্জিত অফিস। কিন্তু অফিসের ভেতরটা নোংরায় ভরা। অফিসের লোকজন নাক মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে যার যার কাজ করছে আর সবাই ক্লিনার হাশেমের মুন্ডুপাত করছে। কিভাবে আজ অফিস করবে সেই আলোচনা চলছে সবার ভেতর। এসময় এমডি এসে পরিস্থিতি দেখে সবার দিকে তাকায়। এসময় একজন এসে জানায় ক্লিনার হাশেম খুবই অসুস্থ। সে আসতে পারবে না। একথা শুনে সবাই দ্বিধাগ্রস্ত। চারপাশের এই নোংরার ভেতরই কাজ করতে হবে। এমডি কোনো কথা না বলে নিজেই রুমের নোংরা পরিস্কার করতে লেগে যায়। বসকে এমন নোংরা ছোট কাজ করতে দেখে সবাই হা হা করে ওঠে। এমডি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলেন- কোন কাজকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই কারো। আমি নিজে যে কাজই করি না কেনো, অপরের কোন কাজকে ছোট করে দেখা বা অবমূল্যায়ন করা মানে নিজেরই মূর্খতার বহিঃপ্রকাশ তা বুঝতে হবে। কাজ তা যে কোনো কাজই হোক, কাজকে সম্মান আমাকে করতেই হবে। গ্রামের কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, কঠোর পরিশ্রমী এবং শহরের স্বল্প আয়ে জীবিকা নির্বাহকারী যাদেরকে আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখি, আসলে তারা সাধারণ নয়, অসাধারণ ভেবে মূল্যায়ন করতে হবে তাদের। হিসেব করে দেখতে হবে, তারাই দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী। নিজের চেয়ে অপরের কাজ এবং ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান করতে ভুলে গেলে চলবে না। ভাবতে হবে, একজন রিকশাচালক আমার চেয়ে অনেক দামি। কারণ, মাত্র বিশ বা পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে যিনি এতোটা পথ আমাকে বহন করলেন, এ কাজটি কি আমি করতে পারবো? এ কারণেই তার পেশা ও ব্যক্তিত্বকে সম্মান করতে হবে। সে যে পেশারই হোক, আমি যদি তাকে ও তার কাজকে সম্মান করি, ভদ্রোচিত ব্যবহার করি তার সঙ্গে, তবে সে তার কাজের প্রতি এবং অন্যের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। আজকে হাশেম অসুস্থ। আগামীকাল যে কেউ অসুস্থ হতে পারে। তাই বলে কি কাজ বন্ধ করে রাখলে চলবে। হাশেম নিজের পেশায় মহৎ আজ আমরা সবাই তা উপলব্ধি করলাম। আসুন তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এ কাজটুকু নিজেরাই করি। তাতে কোনো অসম্মান হবে না। কি বলেন? কোনো কাজকে ছোট করে দেখবেন না আশা করি। পৃথিবীতে সব শ্রেণি পেশার মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী সম্মান পাওয়ার দাবি রাখে। কোনো শ্রেণি পেশার মানুষকেই হেয় করা বা ছোট করে দেখা উচিত নয়। সে যত নিম্নমানের কাজই করুক না কেন। কোনো কাজই ছোট নয়। উন্নত বিশ্বে মানুষ কোনো কাজকেই ছোট করে দেখেন না। এমডির কথা শুনে সবাই এ ওর দিকে তাকায়। এরপর প্রবল উৎসাহ নিয়ে অফিস পরিস্কার করার কাজে লেগে যায় সবাই।
আসলে মানুষ তো সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে একে অপরকে ছাড়া কখনোই কেউ পরিপূর্ণ হতে পারে না। এখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পরস্পরের সহায়ক, বেঁচে থাকার অবলম্বন। তাই কোনো পেশাকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কাজকে যদি ভালোবেসে নিষ্ঠার সঙ্গে করা হয়, তাহলে সব কাজই সম্মানজনক। কারণ প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখেন। বিশ্বে অনেক মনীষী ছিলেন সাধারণ পেশাজীবী পরিবারের সন্তান। কৃষক, মুচি, ঝাড়ুদার ও সমাজের ক্ষুদ্র পেশা থেকে প্রেসিডেন্ট, বিশ্ববিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন-এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন নয় বছর বয়সে তার মাকে হারান। খুব অল্প বয়সেই দরিদ্র পরিবারের হাল ধরেন। কখনো নৌকা চালিয়ে, আবার কখনো কাঠ কেটেও সংসার চালিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হবার পর আব্রাহাম লিংকনকে এক ব্যক্তি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলেছিল, ‘মি. লিংকন, আপনার ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে আপনার বাবা আমার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করত।’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি খুব ভালো করেই জানি আমার পিতা আপনার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করতেন। শুধু আপনার কেন, এখানে এ রকম অনেকেই আছেন, যাদের পরিবারের জন্য বাবা জুতা তৈরি করতেন। জুতা তৈরিতে তিনি ছিলেন একজন জিনিয়াস। তিনি এমন এক অদ্ভুত নির্মাতা ছিলেন যে আজ পর্যন্ত তার নির্মাণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি বা কেউ অভিযোগ করেনি। আপনার কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে বলুন, আমি আপনার জন্য আরেক জোড়া জুতা তৈরি করে দেব। আমি নিজেও জুতা বানাতে পারি।’ লিংকন আরও বলেন, কোনো কাজ ছোট নয়। ছোট সে, যে কাজকে ছোট ভেবে অহেতুক বিদ্রুপ করে। ইরানি সাহিত্যিক ও দার্শনিক শেখ সাদী এক রাজার আমন্ত্রণে খুবই সাধারণ পোশাকে রাজদরবারে যাওয়ার পথে রাত হয়ে গেলে এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। তার পোশাক দেখে তারা তাকে সাধারণ পেশার মানুষ মনে করে সাধারণ খাবার ও সাধারণভাবে থাকার ব্যবস্থা করেন। পরদিন রাজার কাছ থেকে বিভিন্ন উপঢৌকন ও দামি পোশাক-পরিচ্ছদ উপহার পেয়ে রাজকীয় হালে ফেরার পথে আবারও সেই বাড়িতে আশ্রয় নিলে তারা তাকে উচ্চমর্যাদার পেশাজীবী মনে করে ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করেন। এভাবে আমাদের সমাজেও অনেকে আছে, যারা পোশাক-পরিচ্ছদ ও পেশার মাপকাঠিতে ব্যক্তির মূল্যায়ন করে থাকে। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। কাজ হলো মানুষের বেঁচে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তবে কাজটা হওয়া উচিত বৈধ। অবৈধ কাজ যেমন নিজের নৈতিকতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তেমনি তা জনগণের অমঙ্গলের কারণ হয়।
আমাদের দেশে একজন তরুণ পড়াশোনা শেষ করে বের হয় চাকরির সন্ধানে। অন্য কোনো সুযোগ না পেয়ে অনেকে দেশের ভেতরে কোনো শ্রমিকের কাজ করে। তখন তার ভেতরে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। অথচ তারাই যখন দেশের বাইরে লেবারের কাজ করে, তখন ঠিকই মানিয়ে নেয়। আজকের সমাজ মান-সম্মানের কথা বেশি ভাবে। অথচ সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায়, কেউ কখনো হঠাৎ করে বড় হয়নি। জীবনে বড় কাজগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য ছোট কাজগুলোকে অবহেলা করলে চলবে না। কোনো কাজে লজ্জা না করে বরং কাজটা সম্মান দিয়ে করলে আসতে পারে মহা সাফল্য। সৃষ্টিকর্তা কারও ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না সে নিজে তার ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.