ইন্টারঅ্যাকটিভ পপুলার থিয়েটার (আইপিটি)

২৫ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

বি শে ষ প্র তি বে দ ন
উন্নয়নের প্রথম শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে শুধু রাস্তাঘাট গাড়িঘোড়া নয় এ যোগাযোগ মানুষে মানুষে সমাজে সমাজে যার ভেতর দিয়ে মানুষ তার জীবনযাপনের সকল সুবিধা অসুবিধা বুঝতে পারবে, একে অপরের সাথে মত বিনিময় করে যে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে। তার বাইরে যারা সমাজের সচেতন নাগরিক তারা নানান যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন। আইপিটি এমনই একটি শক্তিশালী মাধ্যম। যার ভেতর দিয়ে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে একটি কার্যকর যোগাযোগ গড়ে উঠছে।
শিশুর জন্য ভালোবাসা কর কি তোমরা অনুভব? চাই বাধা বন্ধন মুক্ত আনন্দময় শৈশব। আমরা ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবী সাজাবো সকল শিশুর জন্য একটি শিশুরও জীবন হতে দেব না বিপন্ন। এই প্রত্যয় নিয়েই ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় প্রদর্শিত হয় ইন্টারঅ্যাকটিভ পপুলার থিয়েটার প্রদর্শনী। ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জেলার নাট্যদলগুলো বিষয়ভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকটিভ পপুলার থিয়েটার প্রদর্শনী করে আসছে। যেমন গতবার একটি বিষয় ছিল ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের যত্ন। জন্মের পর থেকে একটি শিশুকে নানারকম রোগ জীবানু থেকে সুরক্ষায় সহজ উপায় এই নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এবার তাদের লক্ষ্য ছিলো বস্তি এলাকার মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা। আইপিটি দল বস্তিতে ঢুকলে বস্তিবাসীরা তাদের সাদরে গ্রহণ করে। মিরপুরের বস্তির রাশিদা তার মেয়েকে নিয়ে নাটক দেখতে এসেছেন। তিনি জানান এ ধরণের নাটক তাদের যেমন আনন্দ দেয় তেমনি জানারও আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে এবার শিশুর যত্ন নিয়ে যে নাটক হলো এটা প্রতিটা মানুষেরই জানার দরকার আছে। আরো ভালো লাগে যখন নাটকের মাঝখানে বা শেষে দর্শকদের কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়। এতে মনে হয় এই নাটকের আমিও একজন । আমাদের জীবনযাগনগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরে নাটকের লোকজন।
মিরপুর বস্তিরই একজন পরিশ্রমী মানুষ রশিদ মিয়া। বস্তিতেই তার চায়ের দোকান। জীবনে এই প্রথম এধরনের নাটক দেখলেন। উনি নাটক বলতে বুঝতেন শুধু টিভি নাটক। এ নাটক দেখার পর তার ভাবনার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। নাটকের ভেতর দিয়েও যে সমাজের অনেক কথা বলা যায় এটা সে বুঝতে পেরেছে। হালিমা খাতুন মিরপুরের বস্তিতে স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে তার বসবাস। সংসারের সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। সন্তান লালন পালনের কষ্টের কথা উঠে আসে তাঁর বর্ণনায়। তার এক ছেলের ভয়ংকর ডাইরিয়া হয়েছিল। অনেক কষ্টে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে সে। ১০/১২ বছর আগে তখন তো এতো সুযোগ সুবিধা ছিল না। এই নাটক তাদের অনেক উপকার করেছে। ভবিষ্যতে আরো বেশী বেশী করে আইপিটি হোক তার কামনা। মিরপুর বস্তির বাসিন্দা রিকশা চালক আবদুল জব্বার। দুই সন্তানের একজনের বয়স পাঁচ বছরের কম। মাইকিং শুনে নাটক দেখতে এসেছেন। এর আগে আরো অনেক বিষয় নিয়ে তিনি নাটক দেখেছেন। তবে এবারই প্রথম শিশুর যত্ন বিষয়ে এত সুন্দর উপস্থাপনা দেখছেন। বিশেষ করে নাটকের তথ্যগুলো পেয়ে তার খুব উপকার হয়েছে। এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ বিষয়গুলো নিয়ে সে তার পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আলোচনা করবে। তবে এই ধরণের নাটক যদি ঘন ঘন হয় তাহলে বেশী মানুষের জানার সুযোগ হবে। মিরপুর বস্তির বাসিন্দা মজিদ লস্কর প্রথমে নাটক করা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করছিলেন। মাঝে মাঝে নাটকের চরিত্র নিয়ে ব্যঙ্গ করছিলেন অন্যান্য দর্শকদেরও বিরক্ত করে তুলছিলেন। এক পর্যায়ে দেখা গেল তিনি নিজেই গভীর মনোযোগে নাটক দেখছেন এবং নাটক শেষে ইন্টারঅ্যাকশনে তাকেই সক্রিয় দেখা গেল। তিনি ভুল স্বীকার করে বলেন আসলে বিষয়টাকে তিনি এত গুরুত্বপূর্ণ কখনো ভাবেননি। নাটক দেখাও তার এই প্রথম। এখনো বিয়ে করেননি মজিদ কিন্তু নাটকের এই ঘটনা দেখে তিনি ভবিষ্যত সম্পর্কে সাবধান হবেন। এই বস্তিরই আবেদা খাতুন দুঃখ করে বলেন বছরখানেক আগে তার নাতনীটা অযত্নের কারণে জন্মের পরপরই মারা গেছে তখন যদি এই তথ্যগুলো তারা জানতো হয়ত সে বেঁচে থাকতো। এই নাটক অনেক উপকার করছে মানুষের।
নাটকের মাঝখানে বা শেষে ইন্টারঅ্যাকশন পর্বটা স্বতস্ফূর্ত অংশ নেয় দর্শক। বিশেষ করে মহিলারা এ ব্যাপারে অগ্রগামী। বস্তি মানেই নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। এখানে রিকশাওয়ালা, দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা থেকে শুরু করে আরো নানান পেশার মানুষের আশ্রয়। সপ্তাহের প্রতিটাদিনই তাদের সকাল থেকে রাত উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয়। এই মানুষগুলোর জন্য বিনোদনটাও নাগালের বাইরে। তাদের কাছে আইপিটি প্রদর্শনী একটা বিরাট বিনোদন। আবার তারই ভেতর দিয়ে জেনে নেয়া যাচ্ছে জীবনের নানান খুঁটিনাটি তথ্য। বিশেষ করে মা ও শিশুদের জন্য। দেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের সুস্থ সুন্দর এবং আনন্দময় জীবন নিশ্চিত করা দেশের প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব। আইপিটির ভবিষ্যত সাফল্য প্রত্যাশা করি।

০ টি +০/-০