![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্থান রাজপথ একটি মুক্তমঞ্চ। জনসভার প্রস্তুতি চলছে। উপস্থাপক মাইকে বারবার ঘোষণা দিচ্ছে। অন্য দিকে একজন ক্যানভাসার মঞ্চের পাশেই পশরা সাজিয়ে বসেছে ডুগডুগি বাজিয়ে রসের রসের কথা বলে মানুষকে তার দিকে আকৃষ্ট করছে। একজন ঘোষণা দেবে। মঞ্চে আসেন নেতা।
নেতা : সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা, আমার সংগ্রামী শুভেচ্ছা গ্রহন করবেন।...
ক্যানভাসার : উপস্থিত ভায়েরা আমার, হিন্দু ভাইদের নমস্কার মুসলমান ভাইদের সালাম অন্যান্যদের আদাব ও শুভেচ্ছা।...
নেতা : আজ এই বিশাল জন সমুদ্রে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিতে চাই.....
ক্যানভাসার : আজ ছাব্বিশ বছর যাবত আমি এই লাইনে কাজ করে আসতেছি। চিন্তা করে দেখেন ভাইজান, একটানা ছাব্বিশ বছর কাটাইতে আমারে কতটা টেকনিক খাটাইতে হইছে। এই পর্যন্ত আমি বহু দেশ ভ্রমণ করেছি আর বহু বাতের রোগী, গলা ব্যথা, কান ব্যথা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, গনরিয়া, হিস্টিরিয়া, মানসিক বিকৃতি, বাচাল রোগীকে শুধু আমার এই খান্দানি বাটিকার একটা বড়ি খাওয়াইয়া ভাল করছি, কিন্তু....
নেতা : আপনারা জানেন আমার বিরোধীরা আমার বিরুদ্ধে কি সব বলে বেড়ায়। আমি নাকি বাংলার মানুষের সাথে বেইমানী করেছি, আমি নাকি জনগনকে ধোকা দিয়ে পয়সার ধান্দা করি। আমি নাকি হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছি।
ক্যানভাসার : সত্য কথা, আমি বলবো খাঁটি কথা, কিন্তু ভাইজান একটা কথা মনে রাখবেন, রাস্তায় দাঁড়াইয়া ঘন্টার পর ঘন্টা লেকচার দিয়া বড়ি বিক্রি করি। সব মানুষতো সমান না, কতজন কত কথাইতো বলে, তাই বলে সব কথা শুনলে কি আর কিছু করে খাওয়া যায়। বলেন ভাইজান আপনারা, আমি আপনাদের সব কথা মাথা পেতে নেব তবে আমি গ্যারান্টি দিয়া আপনাদের বলবো। অনুরোধ করবো। আমার একটা বড়ি আপনারা খাইবেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি একশন না হয় তাহলে আমার ছাব্বিশ বছরের এই ব্যবসা আমি বন্ধ করে দেব। আর যদি ভুল প্রমাণিত হয়...
নেতা : আমি এই জন সমুদ্রে ঘোষণা দিয়ে রাখছি, আমি আপনাদের ছাড়ব না। আমি কাউকে রেহাই দিবো না। খেয়াল রাখবেন আমি একজন জনতার প্রতিনিধি। জনগন তাদের কথা বলার জন্য আমাকে নেতা বানিয়েছে। সুতরাং আমি ওদেরকে বুঝিয়ে দেব রাজনীতি কাকে বলে। তাদের নেতা বলে আমার নাকি চরিত্র খারাপ। আমি নাকি হোটেলে ময়দানে বাগানে রাত কাটাই ভালো কথা কিন্তু তুমি জানো কি ভাবে। নিশ্চয়ই তুমিও সেখানে ছিলা। হা হা হা অত সোজা না বুঝলেন অত সোজা না, খয়ের লাগাইয়া ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ দিয়া আরামে পান চিবাইবেন, সুইচ টিপা হুকুম করবেন এইটা হবে না। শুইনা রাখেন আমরাও পারি, খালি জনগনের সুখের দিকে তাকাইয়া...
ক্যানভাসার : তাদের সুখ দুঃখের কথা চিন্তা কইরা আমি তাদের সাধ্যের মধ্যে মূল্য রাখার চেষ্টা করছি। অনেকে ডাক্তার কবিরাজ দেখাইতে পারেন না। কবিরাজের কাছে যাইতে ভয় পান। কারন ডাক্তারের কাছে গেলেই কমপক্ষে ৩০০ টাকা ভিজিট, সাথে আরও ২ থাইকা ৩শ টাকার ঔষাধ। কবিরাজের কাছে গেলে বছরের পর বছর নাকে দড়ি দিয়া আপনার সব টাকা চুইসা খাবে। তাই...
নেতা : আমি একা তাদের কিছুই বলতে পারিনা, দলবল নিয়া যাইনা কারণ...
ক্যানভাসার : আমার একটা বড়িই যথেষ্ট...
নেতা : কোন শয়তানের বাচ্চা আমার বক্তৃতায় বাগরা দেয়।
ক্যানভাসার : কোন শুয়োরের বাচ্চা আমার ক্যানভাসে বাধা দেয়।
নেতা : এই সাবধান আমি জনগনের নেতা।
ক্যানভাসার : এই সাবধান আমি জনতার চিকিৎসক।
নেতা : চুপ, দিনে দুপুরে আমার প্রেস্টিজ লইয়া টানাটানি? চাপাবাজি বন্ধ কর?
ক্যানভাসার : তুমি গলাবাজি বন্ধ কর।
নেতা : হেই মুখ সামলাইয়া—
ক্যানভাসার : হেই সাবধান।
মারামারির প্রস্তুতি। একজন পিস্তল বের করে অন্যজন সাপ বের করে— একজন লোক আসে তাকে দেখে দুজন অস্ত্র লোকায়
লোক : সালাম, সায়েবেরা, কিছু মনে কইরেন না বহুদূর হাইটা আসছি খুব ক্লান্ত, একটু বসি।
দুজনেই : অবশ্যই অবশ্যই।
নেতা : বিশ্রাম নেন ভালো কইরা, আপনাকে আমার বিশেষ প্রয়োজন।
লোক : ঘটনা কি?
নেতা : ঘটনার শেষ নাই বন্ধুগন। আজকে দেশে মানুষ দুবেলা ঠিকমত দু মুঠো খেতে পায় না, চাকরি নেই বেকারে বেকারে ভরে গেছে দেশ, রাহাজানি খুনোখুনি হরদম চলছে, রাস্তা ঘাটের কারণে জনগনের মরণ দশা। হাজার হাজার লোক আজ গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে আসছে। আজ কেন এই পরিস্থিতি? জনগনের ঘর নেই, দুয়ার নেই, কাপড় চোপড় কিছু নেই। সবকিছুই জনগনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ আমাদের সরকারের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা সব লুটেপুটে খাচ্ছে আবার বলছে আমরা দেশের কল্যাণে সব উৎসর্গ করে দিচ্ছি। এই যখন অবস্থা তখন যদি জনগন এগিয়ে না আসে জনগন যদি তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাপিয়ে না পড়ে তাহলে এই দেশ আর থাকবে না তাই আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
লোক : ঠিক কথা, কোন ভুল নাই।
ক্যানভাসার : কিন্তু ভাইজান একটা কথা মনে রাখবেন, আইজ ছাব্বিশ বছর যাবৎ আমি এই ভেষজ উপাদানে তৈরি আমার এই খানদানি বটিকা বিক্রি করে আসছি। জীবনে বহুত আন্দোলন দেখেছি, বহুত মিছিল মিটিং হরতাল দেখেছি, কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন ভাইজান, শরীর যদি সুস্থ না থাকে, শরীর যদি কোন ভাল না থাকে তাহলে কিছু করেই আপনি কোন সুখ পাবেন না। বউয়ের কাছে যাবেন বউ মুখ ঝামটা দেবে। যারা মিছিলে যাবেন কিছুদূর হাটলে মনে হবে হাপানি ধরছে। গলা দিয়া আওয়াজ বাইর হবে না তখন শুধু মুরগীর বাচ্চার মত চি চি করতে হবে। সুতরাং আমার কাছে আসেন, আমার এই খানদানি বড়ি খেয়ে শরীর ঠিক করেন তাহলে সব হবে।
লোক : এইডাওতো ঠিক কথা—
নেতা : ওই হারামজাদা ক্যানভাসারের বাচ্চা, এইখান থিকা যাবি, আমার মানুষ তোর দিকে যায় ক্যা।
ক্যানভাসার : কারণ তোমার ক্যানভাসে কোন মজা নাই একই প্যাচাল তুমি একশো বছর ধইরা পাড়তাছো।
নেতা : কি কইলি? আমি ক্যানভাসার?
ক্যানভাসার : না তো কি? ভালো কইরা চিন্তা কইরা দেখ।
নেতা : তুই তো শালা ফটকাবাজ। মানুষজনরে ধোকা দিয়া দুই নম্বার ওষুধ বেইচা খাস। ব্যাটা অশিক্ষিত, মূর্খ, শয়তান।
ক্যানভাসার : হেই, সাবধান হইয়া কথা কইও, আমি তোমার মত মানুষ মাইরা খাই না।
নেতা : তরে জাগা দিয়া হইছে আমার ভুল।
ক্যানভাসার : হাহাহা নিজের কবর নিজে খুঁড়ছ তাতে কার কি?
নেতা : হেই হারামজাদা ঠিকমত কথা কইস, জানস আমি কে?
ক্যানভাসার : জানুম না কেন। তোমার সকল পরিচয় সবাই জানে। আগে আছিলা মহল্লার পাতিরংবাজ তারপর হাতে অস্ত্র পাইয়া প্রমোশন লইছ। আইছ ইউনিভার্সিটিতে। তারপরে অস্ত্রের জোর দেখাইয়া নেতা হইছ। পাবিলিকরে ভয় দেখাইয়া এমপি হইছিলা। এখন হইছ জাতীয় নেতা, তোমারে চিনুম না কেন? পোলাপান পাঠাইয়া আমার কাছ থাইকা চান্দা লইছ।
নেতা : হারামির বাচ্চা, আইজ তরে খুন করুম (পিস্তল বের করে)
ক্যানভাসার : আমি কি তোমারে ছাইড়া দিমু? (সাপ বের করে)
লোকটি : আ হা হা করেন কি করেন কি আপনেরা।
নেতা : চুপ, একদম ভুড়ি বাইর কইরা ফালামু।
লোকটি : ভাই আপনে থামেন (ক্যানভাসারকে)
ক্যানভাসার : সাপের ছোবল খাইলে সব রোগ ভালো হইয়া...
লোকটি : হায় হায়রে এহন দেহি দুজনেই আমারে মারে। ভাই আমি একজন সাধারণ জনগণ, আমিতো কোন মাতে প্যাঁচে নাই। বহুদূর কষ্ট কইরা এইখানে আপনাগো অনুমতি নিয়া বসছি একটু বিশ্রাম নিতে।
নেতা : এখন ক তুই আমার সাথে যাবি।
ক্যানভাসার : আগে ক তুই আমার ঔষধ খাবি।
লোকটি : তাইলে আগে শুনেন আমার দুইটা কথা।
দুজনে : আচ্ছা ক। (দুজনে পিস্তল এবং সাপ পকেটে ভরে রাখে)
লোকটি : ভাইরে আমি একজন সাধারণ মানুষ। গেরামে গেলে কৃষি কাজ কইরা খাই। শহরে থাকলে কারখানায়, নাইলে রিশকা চালাইয়া খাই। যখন কাম কাজ নাই পেটে পাথর বাইন্ধা থাকি। কষ্ট হইলেও আমার পোলারে লেখাপড়া করতে দিছিলাম। বড় পাশ করবে, বড় চাকরি করবে। ওমা কয়দিন পরে শুনি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলাগুলির শব্দ হয়। পরানডার মধ্যে ধুকধুক করে। ভুলই করলাম নাকি! কিয়ের লেখাপড়া, এই দিকে ধুস এই দিকে ধাস। একদিন খবর আসলো ছেলে আমার মারা গেছে গুলি খাইয়া। আর খালি মাইনষে বড় বড় কথা শুনায় কত আশার বাণী, শান্তনার কথা। একজন দুই চারডা বড়িও খাওয়াইল কিসের কে জানে। আমরাতো অতশত বুঝি না। তারপর থিকা কথা শুনলে মানে চাপাবাজি শুনলে ভয় করে আসলে কামের কামতো কিছু না। কথা দিয়া যেন সব দুঃখ দূর করবো। আমি একটা গান বানাইছিলাম পরে। শুনবেন ভাইয়েরা সেই গান?
দরশক : হ শোনান গান শুনান।
লোক : ওরে বাংলাদেশে আছে কি সেইজন
কথার বস্তা বন্ধ কইরা
কাজে দেবে মন।
আরে আছেন কতো জ্ঞানি গুণী ভাই সবারে জানাই।
নইলে দেশের উন্নতি নাই ভাইরে
এইভাবে কাটবে জীবন।।
গান বন্ধ করে নেতার দিকে চেয়ে— আপনি দেশের নেতা জানেন কিচু বাংলাদেশের? বলেনতো বাংলাদেশে কয়টা নদী আছে? কোন নদীর পানি কি রকম? (নেতা মাথা চুলকায়) আপনেতো ডাক্তার কনতো ডুমুরের ফুল কোন মাসে ফোটে? (ক্যানভাসার মাথা চুলকায়) হে হে হে পারলেন নাতো? আগে জাইনা আসেন তারপর কাজ করবেন। নইলেতো শেষ পর্যন্ত জনগন থাকবো না একটাও। (নেতা ও ক্যানভেসার চোখাচোখি করে) নেতা ও ক্যানভাসার একসাথে থাকবে, হে হে থাকতে হবে। কোথায় যাবে? যা বলবো তা শুনতে হবে।
গান : জনগনের কথা কবো
বড়ো বড়ো সুযোগ লব।
খমতা আকড়াইয়া ধইরা থাকবো চিরকাল।
যেই শালার পো বুঝবে বেশী
তার উপরই খাটবে পেশি।
তারে ধইরা ক্ষতম করলে
মিটবে মনের ঝাল।
লোক : জনগন সব বুঝতে শিখেছে।
নেতা ও ক্যানভাসার : চোপ হে হে, শক্তি আর বুদ্ধি ছাড়া যায় নারে ভাই জেতা একই দাদার নাতি আমরা ক্যানভাসারার আর নেতা।
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.