নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাকে লালন করি স্বদেশি হাওয়ায়

মাজহার পিন্টু

একজন মানুষ

মাজহার পিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোগীর মৃত্যু নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং তার ব্যাখা চাওয়া

০৯ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২২


বাংলাদেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নানান কথা থাকলেও ডাক্তার এবং বেসরকারি হাসপাতালের নানা অব্যস্থাপনা প্রত্যক্ষ করলেও আমরা এই ব্যবস্থাপনার ওপর সম্পূর্ণ আস্থা নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আসছিলাম কিন্তু একটি ঘটনা আমাদের সেই আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। নূরজাহান বেগম, বয়স-৬৬। অনেক বছর যাবতই ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। গত ২০২১ সালের প্রথম দিকে তিনি টের পান তার ডান স্তনে গোটার মত কিছু একটা প্রায়ই ব্যথা করে। যেহেতু তিনি বারডেমের নিয়মিত রোগী কিন্তু সেখানে এই বিষয়ক কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় বাইরের ক্লিনিকের শরনাপন্ন হন। এই লক্ষে গত ২৫ জুন ২০২১ রাজধানীর গ্রীন রোডে অবস্থিত ল্যাব সায়েন্সে গাইনি চিকিৎসক ডা. শামসুননাহার এর কাছে স্তনজনিত সমস্যার জন্য যান এবং তিনি রোগীর এক্সরে করে দেখতে পান ব্রেস্ট ক্যান্সারের আলামত। পরবর্তীতে তিনি রোগীকে গ্রীনলাইফ জেনারেল হাসপাতালের জেনারেল সার্জন ডা. নিশাত বেগমের কাছে রেফার করেন। ডা. নিশাত রোগীর কাগজপত্র দেখে বলেন রোগীর ক্যান্সার খুব খারাপ অবস্থায় আছে। তার দ্রæত অপারেশন করতে হবে। তিনি বায়োপসি করার জন্য রোগীকে গ্রীন রোডস্থ এন এন ল্যাব এ পাঠান। বায়োপসিতে ধরা পড়ে রোগীর দ্বিতীয় স্তরের ব্রেস্ট ক্যান্সার। ডা. নিশাত গ্রীন লাইফে অপারেশন করার জন্য রোগীকে তাগিদ দেন। যেখানে অপারেশনে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা খরচ পড়বে। অর্থনৈতিক কারণে রোগী বিকল্প কিছু করা যায় কিনা তার সন্ধান করেন। অতঃপর জুলাই ২০২১ এর প্রথম সপ্তাহে গ্রীন লাইফে বসেন বিএসএমএমইউ এর প্রফেসর ডা. ছয়েফউদ্দিন। তার কাছে যান। তিনিও অপারেশনের কথা বলেন। রোগীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে অপারেশনটি পিজিতে করা যাবে বলে জানান এবং তার রেফারেন্সে রোগীকে পিজিতে ভর্তি করা হয়। পিজিতে প্রায় দশ বারো অতিবাহিত হবার পরও সময় চলে যায় কিন্তু অপারেশনের তারিখ আর হয় না। প্রফেসর ডা. ছয়েফউদ্দিনকেও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় রোগী এবং তার পরিবার উৎকণ্ঠিত হন। রোগীর ভাই বারডেমের সভাপতি ডা. এ কে আজাদ খানের পরিচিত হওয়ায় রোগীকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি পরামর্শ দেন যেহেতু রোগী দীর্ঘদিন ধরেই বারডেমের রোগী এবং এ অপারেশনও এখানেই করা সম্ভব। তিনি বলেন একমাত্র অনকোলজি ছাড়া এমন কোনো বিভাগ নেই যা বারডেমে নেই। তার পরামর্শ অনুযায়ী বারডেমের জেনারেল সার্জন ডা. সমীরনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা করেন এবং ৩ অক্টোবর ২০২১ সালে সফলতার সাথে তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে ডা. সমীরন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. পারভীন সাহিদা আক্তারের কাছে রেফার করেন। ডাক্তার পারভীন সাহিদা আক্তারের তত্বাবধানে প্রথমে ১৬টি কেমোথেরাপি দেয়া হয় আহমেদ মেডিক্যাল সেন্টারে। ১৬টি কেমো দেয়ার পর ২৫টি রেডিওথেরাপি দেয়া হয় মিরপুরের ডেলটা হসপিটালে। অতঃপর রোগীর চিকিৎসা বিষয়ক ফলোআপ অব্যাহত রাখতে গিয়ে উল্লেখিত সমস্যা দেখা দেয়। গত ছয় মাস রোগীকে বিনা কারণে টিবির ঔষধ খাওয়ানোর কারণে রোগীর নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। নূরজাহান বেগম ২২ বছর যাবত বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নিয়মিত রোগী ছিলেন। শুরু থেকেই তিনি বারডেম-এ নিয়মিত চেকআপ করিয়ে আসছেন। এখানে প্রথমে আউটডোর এবং পরবর্তীতে চিফ মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফজলুল হক এবং পরে ডা. প্রফেসর রাজিউর রহমানের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজিউর রহমান দুই বছর আগে রোগীর কিডনীজনিত জটিলতার কারণে নেফ্রোলজির সহযোগি অধ্যাপক ডা. ওয়াসিম মহসিনুল হকের কাছে রেফার করেন। এযাবৎ চিকিৎসা ভালোভাবেই চলছিলো কিন্তু গত সাত মাস আগে নভেম্বর ২০২১ এ নেফ্রোলজিস্ট ডা. ওয়াসিম মহসিনুল হক রোগীকে একটি কেইউবি সিটি স্ক্যান করতে দেন। তাতে প্রথম ধরা পড়ে রোগীর দুই কিডনির মাঝ বরাবর একটি সিস্ট আছে। ডা. ওয়াসিম তখন রোগীকে রেফার করে দেন বারডেমের ইউরোলজিস্ট ডা. মির্জা ম. ফয়সালকে। তিনি বিষয়টি কনফার্ম হওয়ার জন্য ঢাকার গ্রীন রোডে অবস্থিত ড্রিমস ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এফএনএসি করতে পাঠান। সেই রিপোর্টে বলা হয় রোগীর সম্ভবত যক্ষা আছে। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ডা. মির্জা ডা. ওয়াসিমের সাথে আলোচনা করে যক্ষার ওষুধ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে বারডেম এর ডট সেনটার রোগীর কফ পরীক্ষা করে নেগেটিভ রিপোর্ট দিলেও বারডেমের ডাক্তাররা রিপোর্টটিকে গুরুত্ব দেননি। ৬ মাস টিবির ওষুধ খাওয়ার পর ডা. ওয়াসিম আবারও কেইউবি ইউএসজি করতে দিলে সেখানে ধরা পড়ে কিডনির মাঝ বরাবর সেই সিস্টটি কিছু তো হয়ইনি বরং সেটি দিনে দিনে বড় হচ্ছে। তিনি ইউরিন টেস্ট করে দেখেন রোগীর কোনো টিবি নেই। তিনি আবারো রোগীকে রেফার করেন ডা. মির্জা ফয়সালের কাছে। মির্জা ফয়সাল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে রোগীকে রেফার করেন বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে। সকল রিপোর্ট দেখে ডা. দেলোয়ার বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীর কোনো টিবি ছিল না। তিনি রোগীকে আবার রেনাল এফএনএসি করে আনার জন্য বলেন। আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসে রেনাল এফএনএসি করা হয়। যেখানে বলা হয়েছে ক্যান্সার থাকতে পারে না এটা আরো নিশ্চিত হতে হলে বায়োপসি করতে হবে। ডা. দেলোয়ার আবারো রোগীকে বায়োপসি করতে পাঠান। বায়োপসি রিপোর্টে বলা হয় এটা নিশ্চিত ক্যান্সার। ডা. দেলোয়ার যেহেতু ইউরোলজির ডাক্তার নন তিনি আর এ বিষয়ে কিছু না বলে ইউরোলজির ডাক্তার দেখাতে বলেন।
কিডনির একজন জটিল রোগীকে ডা মির্জা ফয়সাল কেন বক্ষব্যাধির ডাক্তারের কাছে পাঠালেন এটা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে ল্যাবে এফএনএসি করতে পাঠিয়েছিলেন যাদের ভুল ডায়াগনসিস এর কারণে টিবির ওষুধ খেতে হলো তাদের সাথে ডা মির্জা ফয়সালের কি কোন আর্থিক লেনদেন আছে? কেন ডাক্তার মির্জা ফয়সাল ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা না করিয়ে রোগীকে টিবি ওষুধ দিলেন?
পরবর্তী অনেক খোঁজখবর করে আমরা বাংলাদেশের ইউরো অনকোলজির সেরা ডাক্তারের সন্ধান পাই কমফোর্ট নার্সিং হোমে। বেশ কয়েকজন ডাক্তারের মতামতের ভিত্তিতে আমরা তার কাছে যাই। উনি সব রিপোর্ট দেখে বলেন জটিল অবস্থা অপারেশন তো করতেই হবে। প্রয়োজনে একটা কিডনি ফেলে দিতে হতে পারে। রোগীকে তো বাঁচাতে হবে আগে। প্রয়োজনে বোর্ড গঠন করতে হতে পারে। তাতে কি আপনারা রাজী? হ্যা আমরা রাজী হয়েছিলাম। এরপর তথাকথিত সেরা চিকিৎসক ডা. এম এ সালাম অনেকগুলো ব্যয়বহুল পরীক্ষা করতে দেন। সকল পরীক্ষা সম্পন্ন করে আবার কমফোর্টে গেলে ইউরো অনকোলজীর অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম এবং তার সহকারি ডা. শাহীনের পরামর্শ অনুযায়ী ২২ অক্টোবর ২০২২ তারিখ বিকেলে আমাদের রোগী নূরজাহান বেগমকে কমফোর্ট নার্সিং হোমে ভর্র্তি করা হয়। সেদিন ইউরো অনকোলজীর অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম তার সহকারি ডা. শাহীনের উপস্থিতিতে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় অপারেশনের তারিখ নির্ধারিত করেন কিন্তু রোগীর শারিরীক অবস্থা খারাপ থাকায় সেদিন আর অপারেশন হয়নি। সেদিন আবার পরবর্তী তারিখ ঠিক করা হয় ২৫ অক্টোবর বিকেল ৩টা। কিন্তু দুঃখজনক প্রথমবার অপারেশনের তারিখ ঠিক করার পর যেভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিলো এবার আর তা করা হোল না। আমরা বোধহয় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে কারণে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সেদিন আবার নতুন করে রিস্ক বন্ডে সই নেয়া হলো। তার মানে তারা জানতেন অঘটন একটা ঘটবে। নয়তো এভাবে ডাবল বন্ড নেয়ার মানে কি? রোগীকে আরো সুস্থ হওয়ার জন্য কেন সময় দেয়া হলো না? একজন সুস্থ মানুষের মতই তিনি ২৫ তারিখ অপারেশন থিয়েটারে গেলেন। দুই ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীকে পোস্ট অপারেটিভে নেয়া হলো। কিন্তু রোগীর শারিরীক অবস্থা আর ঠিক হলো না। পোস্ট অপারেটিভে আনার পর ডাক্তাররা রোগীর প্রতিনিধির সাথে আর কোনোরকম যোগাযোগ করেনি। অপারেশনের প্রধান চিকিৎসক হিসেবে ডা. সালামের রোগীর প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করা উচিত ছিলো কি না? পোস্ট অপারেটিভে দুদিন রোগীকে ফেলে রাখা হলো যেখানে কোনোরকম ডিউটি ডাক্তার নেই। একজন সিনিয়র নার্স শুধু সব দেখাশোনা করছেন? এটা কেমনতর পোস্ট অপারেটিভ যেখানে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার পরও নার্স ডাক্তার শাহীনকে বার বার ফোন করেও কোনো সাড়া পাননি। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে খারাপ হয়ে পড়ে। আশঙ্কাজনকভাবে ২৮ অক্টোবর সকালে রোগীকে আইসিইউতে পাঠানো হয়। আইসিইউর ডিউটিরত ডাক্তার বলেছেন রোগীকে আরো আনলে একটা কিছু করা যেত। একটু দেরী হয়ে গেছে। এটা কার গাফিলতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার নাকি ডাক্তার?
অপারেশন পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে কেন রোগীর আত্মীয়স্বজনকে জানানো হলো না? কেন তাকে দুই দিন ডিউটি ডাক্তার ছাড়া পোস্ট অপারেটিভে ফেলে রাখা হলো? অপারেশনের আগে ডা. সালামের একটি বোর্ড গঠন করার কথা ছিলো। রোগীসহ রোগীর প্রতিনিধিদের তার চেম্বারে তিনি এ কথা বলেন। তিনি কি বোর্ড গঠন করেছিলেন? কেন করেননি? ডা. সালামের সহকারি ডা. শাহীন কেন বার বার রোগীর আত্মীয়স্বজনকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়েছেন? বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শুধু ফোনে ফোনে পরামর্শ দিয়ে কাজ সেরেছেন। একজন জটিল রোগীর ক্ষেত্রে এটি কি যুক্তিসঙ্গত? বিন্দুমাত্র মানবিক বোধ এদের আছে বলে মনে হয় না। একবার ডায়ালাইসিস করলেই মানুষের শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। সেখানে পর পর তিনবার কি করে দুই দুইবার অপারেশন হওয়া একজন দুর্বল শরীর রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়? কোন যুক্তিতে? পর পর তিনটি অ্যালবুমিন ইনজেকশন কি করে দেয়া হয়? ডাক্তারের দায়িত্ব একজন রোগীর টেস্টের রিপোর্ট বিস্তারিতভাবে রোগীর আত্মীয়স্বজনকে বুঝিয়ে দেয়া। এখানে তা করা হয়নি। আমাদের রোগীর সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও তথাকথিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা একজন গিনিপিগের মত আচরণ করেছে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.