![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পথনাটক
শান্তি আজ শুধু একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। অশান্তির আগুন জ্বলছে সবখানে। এরই ভেতর শান্তির জন্য সমাবেশ করছে একদল মানুষ বস্তুত এসব স্বার্থপর মানুষগুলোই অশান্তির কারণ।
একজন মাইকিং করতে করতে ঢোকে।
মাইকার : ভাইসব, ভাইসব আগামীকাল রোজ শনিবার বেলা তিন ঘটিকায় গোবর ঘুঁটির ময়দানে এক বিরাট শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হইয়াছে। উক্ত সমাবেশে সভাপতি হইবেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী শমসের আলী শান্তি। প্রধান অতিথি জনতার নেতা জীবন পেরেশানি। বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট আমলা, সর্ববিশিষ্ট কবি মাওয়াতুল মুশতাক বিশ্বাস। উক্ত শান্তি সমাবেশে দলে দলে যোগদান করিয়া শান্তির পক্ষে সামিল হোন। করোনায় ভালো করে সাবান দিয়া হাত ধোন। ভাইসব, ভাইসব-
মাইকার বেরিয়ে যায়। ব্যায়াম করতে আসেন মাওয়াতুল, সাথে সহকারি আমানত।
আমানত: স্যার, করোনার সময় এইসব ব্যায়াম ট্যায়াম না করলেই কি নয়।
মাওয়া: আমানত, ব্যাংকে এখন ব্যালেন্স কত তোমার?
আমানত: কি যে বলেন সার, আমার তো সম্পদ বলতে কিছুই নেই। আমার শ্বশুরই তো কত বড়লোক। সবই ওই আমার স্ত্রী, শ্যালিকা, শালা আর ভাতিজার নামে-
মাওয়া: কত হতে পারে?
আমানত: তা তো সার বলা মুশকিল। এজন্য তো সার দু’জন অ্যাকাউন্টেন্ট রাখতে হয়েছে।
মাওয়া: এইবার বোঝো। ৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের আমানতের টাকার হিসাব নাই। হা হা... তাহলে তোমার বসের কি অবস্থা?
আমানত: আপনি তো সার গুরু মানুষ।
মাওয়া: তা করোনার এই সময় কেমন ইনকাম হচ্ছে?
আমানত: স্যার নতুন একজন অ্যাকাউন্টেন্ট-
মাওয়া: তাহলে বলো, তুমি যে এতো ভয় দেখাচ্ছো, হুট করে মরে গেলে এতো সম্পদ খাবে কে? ইমিউনিটি বাড়াতে হবে বুঝলে।
এসময় একজন মাইকিং করতে করতে চলে যায়।
মাওয়া: আমার নাম বলছে?
আমানত: হ্যাঁ সার, এই শান্তি সমাবেশে আপনি বিশেষ অতিথি।
মাওয়া: তাই নাকি! দেখ দেখি কান্ড আমি তো ভুলেই গেছি।
দু’জন বেরিয়ে যায়। গান গাইতে গাইতে আসে রনি রকার সাথে রাপ রানা।
রনি: শান্তি ও শান্তি
তুমি পালাবে কোথায়
রাস্তার মোড়ে মোড়ে লেগে গেছে তালা
কি জ্বালা
মন বলে এক্ষুণি পালা পালা পালা
তোমার জন্য আমি দিওয়ানা যে হায়
র্যাপ রানা : কিসের গান এটা বস?
রনি: শান্তি সমাবেশের জন্য গানটা রেডি করছি।
রানা: রকি ভাই একেবারে ক্রাশ করে দেবে। এ গানে শান্তি না এসে পারবে না। ওয়াও ওয়াও।
রনি: এবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডটা আমিও পাবো।
রানা: তবে বস, করোনা নিয়ে একটা কিছু করা দরকার। ন্যাস্টি পিপল কিছুই মানে না। প্যানডামিক চলছে-
রনি: র্যাপ্পু, ওটাও রেডি-
বার বার ধুয়ে ফেলো হাত
করোনাকে করো কুপোকাত
মাস্কটা পরতে হবে নিয়ম মেনে
সঠিক নিয়ম তুমি নিও জেনে
এতেই হয়ে যাবে তেলেসমাত
করোনাও হয়ে যাবে কাত।
রানা: ওয়াও ওয়াও
রনি: ওকে চল, একটা ডেমো করে নেই।
ওরা বেরিয়ে যায়। বিপ্লব আর বাঙালি ঢোকে।
বাঙালি: বিপ্লব, শান্তি সমাবেশে আমাদের বিশেষভাবে ইনভাইট করেছে নাটক করার জন্য। বুঝেছ, নাটকটা সুন্দরভাবে করতে হবে।
বিপ্লব : হ্যাঁ বাঙালি ভাই, এবার বিপ্লব করেই আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনবো।
বাঙালি: এর ভেতর আবার বিপ্লব আসলো কোথা থেকে! চাপাবাজি বন্ধ করে মন দিয়ে ক্যারক্টোর করো।
বিপ্লব: চাপাবাজি! বিপ্লব ভাই একে আপনি চাপাবাজি বলছেন। বিপ্লবকে চাপাবাজি বলছেন!
বাঙালি: চাপাবাজি না বলে একে গালিগালাজও বলতে পারো।
বিপ্লব: না না বাঙালি ভাই, আপনার এ কথা আমি মানতে পারছি না। বিপ্লব হলো দিন বদলের-
বাঙালি: কচু। আমাদের দেশে কোনোদিন বিপ্লব হবে না। বাদ দাও্ তুমি যা করতে আসছো তাই করে দেখাও।
বিপ্লব: কি করতে হবে?
বাঙালি: বিপ্লবী শহীদের ডায়লগ বলো।
বিপ্লব: আমি শহীদ, আমি বায়ান্নর শহীদ, আমি ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের শহীদ, আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ। চব্বিশের শহীদ।কেন আমি শহীদ? কেন আমি ভালোবেসে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিয়েছিলাম? শান্তি শান্তি শান্তি। শান্তির জন্য আমি হাতের মুঠোয় এনেছি পৃথিবী, শান্তির জন্য আমি সূর্যকে জ্বালিয়ে দিয়েছি অবারিত আকাশের গায়, শান্তির জন্য আমি চাঁদকে ঢেলে দিয়েছি আমার স্নিগ্ধতার আলো, শান্তির জন্য আমি হাতে নিয়েছি অস্ত্র, শান্তির জন্য আমি ত্যাগ করেছি বস্ত্র-
বাঙালি হাত ওঠায়-
বাঙালি: ব্যস ব্যস আর এতোখানি যাবার দরকার নেই।
বিপ্লব: আমার জোস এসে গেছে বাঙালি ভাই আমাকে শেষ করতে দিন।
বাঙালি: এই জোসটা জায়গা মত দেখিও। চল।
ওরা বেরিয়ে যায়। মামা ভাগ্নে ঢোকে।
মামা: ভাইগ্না, চল শান্তি সমাবেশ ঘুইরা আসি।
ভাগ্নে: এইডা আবার কি মামুৃ?
মামা: এইখানে বড় বড় মানুষজন আসবো, শান্তির বাণী শুনাইবো।
ভাগ্নে: না মামু, তুমি যাও, শান্তির বাণী শুইনা তো আমার পেট ভরবো না। উল্টা কোনো অশান্তিতে পরুম কি না ঠিক আছে। একে তো করোনার সময়, কয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখূন আবার এইদিকে বাসে উঠলে গুতাগুতি এখন আবার সমাবেশ। কেমনে কি হইবো কে জানে।
এসময় মাইকার আসে।
মাইকার: একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি, শান্তি নামে একটি বিলাতি হাইব্রিড কুকুর হারানো গিয়াছে। কুকুরটির গায়ের রং কালো, চোখ দুইটা ঘোলা ঘোলা মনটা খুবই ভালো। যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি এমন কুত্তার সন্ধান পান তাহলে এই ঠিকানায় যোগাাে করবেন। কাওলা নাছের ১০৯ ঝামেলা নগর, ঢাকা।
মাইকার বেরিয়ে যায়।
ভাগ্নে: মামু হুনছো? কুত্তা হারাইয়া গেছে সেজন্য মাইকিং করতাছে।
মামা: হ ভাইগ্না, মনে হয় অনেক দামী কুত্তা। তয় ভাইগ্না সমাবেশ মনে হয় এইসব কুত্তার জন্যই। নাকি কও?
ভাগ্নে: মামু বুঝলা তো? এই দেশে কুত্তার দাম আছে কিন্তু মানুষের কোনো দাম নাই। আবার তুমি কও শান্তি সমাবেশে যাইতে?
মামা: আর কিছু না হোক, তামাশা তো দেখা যাইবো।
ভাগ্নে: হ, যাও দেইখা আসো তামাশা।
দু’জন দু’দিকে বেরিয়ে যায়। কালো সানগ্লাস চোখে সুখময় সরকার আসে।
সুখময়: সুপ্রিয় দর্শক, আমি সুখময় সরকার যখনই দরকার আমি আছি কাছাকাছি। আপনাদের সাদর আমন্ত্রণ অবশেষে আজকের এই বিশ্ব শান্তি সমাবেশে। আমাদের অতিথিরা সবাই এসে গেছে। আলোচনা ছাড়াও থাকছে শান্তিকে নিয়ে গান, নাটক, কবিতা পাঠ। তাহলে শুরু করছি আমাদের আজকের এই শান্তি সমাবেশ। প্রথমেই আসছেন আমাদের বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট আমলা, সর্ববিশিষ্ট কবি মাওয়াতুল মুশতাক বিশ্বাস।
মাওয়া: সবাইকে জানাই আমার শুভেচ্ছা। আমি প্রীত হলেম আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হলেম। আজ শান্তির সমাবেশে আসতে পেরে আমি ধন্য। আমার এ নগন্য উপস্থিতি আপনাদের যদি একটু শান্তি দেয় তাহলে আমি স্বার্থক। আজ সারা পৃথিবী জুড়ে শুধু শান্তির জন্য হাহাকার, আমাদের দেশে অবশ্য সে তুলনায় কোনো অশান্তি নেই। সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। অবশ্য যেটুকু অশান্তি আছে তা দুর করতে আমরা অতি শীঘ্র একটি শান্তি আনয়ন প্রকল্প করতে যাচ্ছি যার খরচ হবে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা। বিদেশ থেকে আসবে শান্তি বিশেষজ্ঞ। একটুখানি শান্তির জন্য এ টাকা কিছুই নয়। এ ব্যাপারে আমাদের জনগণ খুবই উদার। তারা কোনোদিন খরচ নিয়ে মাথা ঘামায় না। সুতরাং শান্তি আসবেই। শান্তি বিষয়ে আমার একটি কবিতা এবার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কবিতাটি হলো-
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া
সবাই আছে শান্তি নিয়াÑ
ও শান্তি তুই চাস কি
বাড়ি বাড়ি যাস কি?
কে যেন ফোড়ন কাটে
একজন-১: কবিতা না কচু, শান্তির মায় মরছে।
মাওয়া: অ্যাই কে কথা বললো?
সবাই এদিক ওদিক দেখে
মাওয়া: অ্যাই কে কথা বললো?
সুখময়: কই স্যার কেউ তো কথা বলেনি।
মাওয়া: আমি স্পষ্ট শুনলাম।
সুখময়: ওটা স্যার আপনার মনের ভুল।
মাওয়া: কিন্তু, যাক আপনাদের আমি আশ্বস্ত করছি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের শান্তি প্রকল্প চালু হবে। সবাইকে শান্তি দেয়া হবে। এই বলে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
সুখময়: অনেক অনেক ধন্যবাদ জনাব মাওয়াতুল সাহেব। এবার শান্তি নিয়ে কথা বলবেন জনতার নেতা বিপুল ভোটে জেতা জনাব জীবন আনসার পেরেশানি।
জীবন: খুবই সুন্দর সময়ে আমি এইখানে আসছি। আহা শান্তি পিরথিবিতে শান্তির উপর আর আছে কি? সংসারে একটু শান্তি থাকলে কত আনন্দ কত সুখ-বন্ধুগণ, আমার নিজের দল বইলা বলতাছি না। তবে এইটুকু বলতে পারি চক্রান্ত সব চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কইরা শান্তি ভঙ্গ করা হচ্ছে। আমরা কাউকে ছাড়বো না। খালি একটু অপেক্ষা করেন দেখেন শান্তি কিভাবে আসে। আমাদের বাঙালির স্বভাবই হইলো একজনের পাছায় আরেকজনের আঙুল দিয়া রাখা। সকলে মিলামিশা একত্রে কাজ করতে হবে তাইলেই আসবে শান্তি। আমরা শান্তিকে এনে ছাড়বোই।
সুখময়: আমাদের নেতা খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন বাঙালির স্বভাবই হইলো একজনের পাছায় আরেকজনের আঙুল দিয়া রাখা। উনি নিজেও তার প্রমাণ রেখে গেছেন। ধন্যবাদ আপনার এই মূল্যবান বক্তব্যের জন্য। এবারে বক্তব্য দিবেন আজকের এই শান্তি সমাবেশের সভাপতি বিশিষ্ট ল্যাজবিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী জনাব শমসের আলী শান্তি। এরপর শান্তির গান নিয়ে আসবে সুপার হিট সিঙ্গার রনি র্যাকার, নাটক পরিবেশন করবে পাবলিক থিয়েটার।
এসময় সভায় হট্টগোল লেগে যায়। পাবলিক মঞ্চের লোকজনকে মারতে শুরু করে।
সুখময় : বন্ধুরা এখানে গোলমাল লেগে গেছে। শান্তি নষ্ট হয়ে গেছে। শান্তি সমাবেশ আপাতত সমাপ্তি টানা হলো।
সবাই দৌড়ে পালায়।
©somewhere in net ltd.