নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়ে যাবা?

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

তোমার বউ হয়েই আছি, অথচ দুটা ভিন্ন শহরে আমরা। শুধু শহরটা ভিন্ন হলেও হতো, ভিন্ন এখানে প্রতিটা নিঃশ্বাষ, প্রতিটা লোমকুপ এখানে দূর্গন্ধ ছড়ায়। এটা আমার প্রথম ঈদ না তোমাকে ছাড়া, টানা তিন বছর হলো তুমি আমি আলাদা ঈদ করছি। এমন কথা ছিল না আমাদের, বিয়ের রাতেতো একটুও বুঝাওনি কিছু, দাসত্বটা মেনে নিতাম তাহলে কারো হাতে-পায়ে ধরে।



যাই হোক ভাগ্য এখানে নিয়ে এসেছে বলে সান্তনা দিয়ে এসেছি এতদিন নিজেকে। এখনো সে সান্তনাটা নিয়েই আছি যেভাবে তুমি রেখে গিয়েছ। এখানের মানুষগুলা আমার খুব যত্ন নেয়, ক্ষুধার জ্বালাটা যেটা তুমি আমি একসাথে পেতাম এখানে সেটা নাই। কিন্তু জানো আমার সে ক্ষুধাটায় না কষ্ট পাইনি কোনদিন, শুধু একটা টান অনুভব করতাম যখন তোমার ক্ষুধার কষ্টটা বুঝতে পারতাম। কত করে বললাম তোমাকে, কত করে বুঝাতাম ঐসব না খেতে, একটু যদি বুঝতে! ব্যর্থ হলাম, আমার ব্যর্থতার এত বড় শাস্তি পাবো জানলে আমি চলে যেতাম, যেখানেই যেতাম তোমাকে কিছু দেবার ব্যবস্থা না করে যেতাম না। এখানে ক্ষুধা লাগেনি কোনদিন, হুম মাঝে মাঝে পানির তৃষ্ণা লাগে, অতটুকুই।



সব ভুলে গেছি। আমার মত হতভাগিনি এখানে একটা না, অনেকেই আছে। কিন্তু অন্দরের ফুল এখানে আর একটাও ঝরেনি। কাউকে বলতে পারি না জানো, কাউকে শুনাতে পারিনি সে ঝরে যাবার কথা। এখানে শিশির পড়তে দেয়া হয়না, তাই এখানকার ফুলগুলায় সুঘ্রাণ হয় না। শিশির খুঁজতে বের হলে প্রখর রোদে পুড়ে জ্বলতে হয়, এ কোথায় রেখে গেলা তুমি আমাকে?



কি দিয়েছিলে তুমি আমাকে বিয়ের দু'বছরে? ভাবছো তাইনা? না, কিছু দাওনি, আমি কি কখনো কিছু চেয়েছিলাম বলো? আমি কি কোনদিন বলেছিলাম আমার বাবার দেয়া সবগুলা শাড়িই পুরনো হয়ে ছিঁড়ে যাচ্ছিলো? কখনো বলিনি তোমাকে, তাও আমাকে বোঝা মনে হলো? বলতে তুমি আমাকে, তাহলে এই বোঝাকে দূরে ফেলতে নিয়ে যেতাম। কিন্তু তুমিতো আমাকে ফেলনা হয়েও থাকতে দিলে না। কত বিশ্বাস আমার স্বামীর উপর তার প্রমান তুমি পেলে, কিন্তু মূল্যায়ন করার সময়টা আর পেলে না। ভরসা করে ভুল করিনি তোমাকে আমি, কিন্তু ভরসা করার জন্য এত বড় শাস্তি দিলা?



শেষবারের মতো যখন ঘুম থেকে জাগাচ্ছিলে তখনও আমার ঘুম ভাঙেনি। এখানে আসার অনেক পরে সত্যিকারের ঘুমটা ভেঙেছে যেদিন দেখলাম চিরতরে কেউ একজন ঘুমিয়ে গেল। এখন আর ঘুম আসেনা, আমার ঘুমটা এখানে অন্য কেউ ঘুমিয়ে নেয় পালা করে, চিনি না তাদের কাউকে। অচেনা কারো কাছেতো যেতে ইচ্ছা হয়নি কখনো, যাইওনি, যেতামও না, আর সেই অচেনাদের কাছেই বেচে দিলা আমাকে!



সে বালিশটা পেয়েছো? আমি হাতের কাজ করে রেখে এসেছি তাতে, তোমার জন্যে। আমার এখানের নরম বিছানার তুলতুলে বালিশের অভাব নেই, কিন্তু সে বালিশের নীচে আমাদের দু’জনের সে স্বপ্ন দেখা রাতগুলো আর নেই, অনেক খুজেছি বালিশের নীচে হাতরিয়েছি, পাইনি। বলতে ভুলে গেছি বাবার চুপে পাঠানো টাকা রেখে দিয়েছিলাম পরের ঈদের জন্যে, রেনু আপার কাছে, দিয়েছে তোমাকে? সার্ট কিনে দেবো ভেবে রেখে দিয়েছিলাম, আমিতো বুতাম লাগিয়ে, রেপু করে দিতে পারতাম প্রতিবার, কিন্তু তোমার জীর্ন গায়ে পুরনো এক সার্ট দেখতে ইচ্ছা হয় নি। তোমাকে দিলেতো আবার খেয়ে শেষ করে দিতা পুরো টাকাটা, তাই নিজের কাছেও রাখিনি। অনেক মেরেছিলে সেদিন বাবা যাবার পর টাকা চেয়ে, দেই নি, নিজের কাছে এজন্যই রাখিনি। টাকাটা পেয়েছো? একটা সার্ট কিনে নিও..তোমাকে নীল সার্ট খুব মানায়, দেখোতো পাও কিনা।



তুমিকি আজও ভেঙে পড় আগের মত? এখনতো কেউ নেই, খুব চিন্তা হয় তোমার জন্যে। সকালে উঠেই চা খাবার জন্যে বকা দেবার কাউকে পেয়েছো? না পেলে আমাকে নিয়ে যাবেনা? আর দেরী করবো না তোমাকে চা দিতে। জানোতো রাত জেগে পানি রাখার জন্যে কলের পাশে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ব্যাথার শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম, সকালে আর টের পেতাম না। আর তুমিতো কেনো জানি মিষ্টি বেশি খেতে চাইতে, আর চিনি থাকতোনা ঘরে সবসময়, কতদিন আনা যায় পাশের বাসা থেকে, তারা দিতে চাইতো না, তাই তোমার মারের ভয়ে আমি ঘুমের ভান করে থাকতাম।



তুমি না বলেছিলে আমাদের মেয়ে হলে যাতে আমার মত হয় দেখতে? নামও ঠিক করে রেখেছিলাম আমি, তোমাকে বলিনি। জানো, আমার মেয়ে হয়েছিল, আমার মতই হয়েছে দেখতে, কিন্তু ওরা মেরে ফেলেছে। আমার চোখগুলাও নাকি ওদের, কাঁদতেও দিলোনা সেদিন। যেদিন জ্ঞান ফিরলো, সেদিন দেখি আমাকে পেতে দাঁড়িয়ে আরো কিছু অচেনা মুখ, মরতেও দেয় না ওরা আমাকে।



অচেনা শহরের কোনার এক গলির অন্ধকার ঘরে রেখে যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার হাত ধরে বলেছিলাম, ‘কোথায় যাচ্ছো, যেওনা, আমি একা থাকবো এখানে!’ সেদিন কেন তোমার মনে হলো আমার তৃষ্ণা লেগেছে, কেন ছুটে চলে গেলা পানি আনতে, আর আসলে না। আর ওরা আমাকে নিয়ে নিলো। কই আসলেনা যে পানি নিয়ে? তুমি আসবে ভেবে পানি খাই নি কত দিন! অপেক্ষা করেছি তোমার আনা কয়েকটা কথার ফোটার জন্যে। অপেক্ষা করেছিলাম জানতে কি হয়েছিলো সেদিন তোমার, কেন দেরী হচ্ছিলো, কারা ওরা, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে? তুমি আসলেনা, আর সব প্রশ্নের উত্তর আমার নগ্ন শরীর দিয়ে দিলো কিছুদিন পর।



তুমি বলেছিলে আসবে, বলেছিলে নিয়ে যাবা তুমি আমাকে, তাই এখনো মরিনি, তুমি এসো, নিয়ে যেও আমাকে… যাচ্ছি, ওরা ডাকছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.