নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন অতিথি

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:২৮

নতুন অতিথি

- - - ফখরুল আমান ফয়সাল





"its my dream project, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্ঠা করেছি।” - এই, শুরুটা এইভাবে করতে চাচ্ছি, কেমন হয়?



তন্বী হাসে অভির কথা শুনে।



অভি - হাসির কি হল!

তন্বী - লাইনটা এই নিয়ে আমার সামনে কয়েকশ’বার বলে ফেলেছ! জ্বী ভাল হচ্ছে। এত ভয়ের কি আছে!

অভি - এই প্রযেক্টটা আমার সন্তানের মত।

তন্বী - কিহ! তাই না? আর যে আসছে সে কি???”



ছয় মাস হলো তন্বী গর্ভবতী। দু’জনের সংসার তাদের। অভির বাবা-মা কেউ নেই; তাই ছোট্ট এই সংসারটা গুছাতে একটু হিমশিম খেতে হয় দু’জনকে, কিন্তু কখনো ভালবাসার কমতি হয়নি। বাসায় কাজের লোক নেই, তন্বী অসুস্থ, ডাক্তার বলেছে তন্বী যাতে কোন ভারী কাজ না করে। তাই বউয়ের এই অবস্থায় যতটা সাপোর্ট দেবার সে দেয়। সকালের বেড টি থেকে বিকেলের স্ন্যাক্স অভি নিজ হাতে বানায়। দুপুরে শুধু একজন বুয়া এসে রান্না আর কাপড়-চোপড় ধোয়ার কাজ করে। তন্বীর মা থাকলে এই সমস্যা হতো না, কিন্তু তন্বীর বাবা প্যারালাইসড, অসুস্থ বাবাকে রেখে আসতেও পারছে না। অফিসে যতক্ষন থাকে অভি খুব টেনশনে থাকে তন্বীকে নিয়ে, কিছুক্ষন পর পর ফোন দেয়। কখনো কখনো তন্বী খুব বিরক্ত হয়ে যায়, বকা দেয় অভিকে। লাভ হয় না, একটু পরই আবার ফোন করে, “বাবু, ব্যাথা হচ্ছে?”



১ মাস বাকি থাকতে তন্বীর মা আসে, অভি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাষ নিতে পারছে এখন। প্রযেক্ট ডেডলাইনের সপ্তাহখানেক বাকি। অভির কাজের চাপ প্রচন্ড বেড়ে গেছে, তন্বীকে জানতে দেয়নি, টেনশন করবে বলে। ডাক্তার বলেছে তন্বীর প্রেসার লো, এই সময়টায় যাতে কোনরুপ স্ট্রেস না নেয়। তাই অফিসে যতই কাজের চাপ থাকুক, বউকে কিছু বলে না। বাসায় জলদি ফিরে আসে। আসার পথে বন্ধুদেরকে নিয়ে চায়ের দোকানে আর আড্ডাটা দেয়া হয় না। বন্ধুরা রাগ করে বলে, ‘কিরে বউপাগল হয়ে গেলি!’ অভি এসব নিয়ে তোয়াক্কা করে না। বউ প্রসবব্যাথায় একা কষ্ট পাবে, আর সে বাইরে চা-সিগারেটের ধোঁয়ার মধ্যে মেতে থাকবে, এটা হতে পারে না। সন্তানটা তাদের দু’জনের, অথচ মাকেই সব কষ্ট পোহাতে হয়; তাই তন্বীর ব্যাথাটা হয়তো ভাগ করে নিতে পারবে না, অন্তত সেই কষ্টের সময়টায় পাশেতো থাকতে পারবে।



হঠাৎ খুব ব্যাথা উঠেছে তন্বীর, আজকেই এমন হতে হলো! নাহ্ , অভিকে কিছুতেই কল দেয়া যাবে না। ১টা বছরের পরিশ্রমের পর আজ প্রেজেন্টেশন, ওকে কিছু বললেই বাসায় চলে আসবে। বলা যাবে না, কিন্তু ব্যাথাটা বাড়ছে, আর সহ্য হচ্ছে না। বাসায় মা নেই। তন্বী ফোনটা হাতে নিল, মাকে না, অভিকেই কল দিবে। কল করতে নিচ্ছিল, ব্যাথাটা তীব্রতর হল; কাতরাতে কাতরাতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। প্রেসার এত লো, জ্ঞান হারিয়ে ফেলল তন্বী। ঐদিকে অভির মিটিং শুরু হবে ১ ঘন্টা পরে, ওয়াশরুমে এসে বউকে ফোন দিল, রিং হচ্ছে, রিসিভ করছে না, ভাবল ঘুমাচ্ছে। মাকে ফোন করল। মা বলল, 'বাবা আমি উপরের তলায় এসেছি, তন্বীকে দেখেছি শুয়ে আছে, ঘুমাচ্ছে বোধ হয়।’ একটু বিরক্ত হল শাশুড়ীর ওপর। ‘মা, ওতো বাসায় একা, কখন যাবেন?’। ‘এইতো যাচ্ছি বাবা, তুমি চিন্তা কোর না।’ ফোনটা রেখে কনফারেন্স রুমে ঢুকল অভি। মাথায় তার টেনশন, কোন দরকার ছিল তন্বীকে একা রেখে যাওয়ার।



মিটিং শুরু হবে, কোম্পানি হেড, কান্ট্রি ম্যানেজার, চেয়ারম্যান এসে পড়েছে। অথচ কিছুতেই মনযোগ দিতে পারছিল না অভি। টেনশন হচ্ছে খুব, ১০.৪৫, আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকি। মা গেল কিনা বাসায়, আবার তন্বীকে ফোন দিল, ফোন বেজেই চলছে। সময় হয়ে আসছে, শুরু করতে হবে, ঘামছে দুঃশ্চিন্তায়, কনফারেন্স রুমে ঢুকল। ৫ মিনিট বাকি, সবাই প্রস্তুত অভির dream project নিয়ে শুনতে। অভি মনে মনে ভাবছিল, ‘আমাকে আত্মবিশ্বাষী হতেই হবে'। এমন সময় মনে পড়ে গেল পুরনো কিছু কথা,



তন্বী - …..যত প্রস্তুতিই নিন না কেন, আপনি শুরুতেই ঘাবড়ে যাবেন জানি।

অভি - কেন কেন?

তন্বী - তুমি সবসময় শুরুতে খুব ভয়ে থাকো, আত্মবিশ্বাষটা একটু দেরীতে আসে।

অভি - অসুখটা যখন ধরে ফেললে, এবার মেডিসিনটাও দিয়ে দাও”

তন্বী - শুনো, প্রেজেন্টেশন শুরুর আগে দিয়ে আমি তোমাকে কল দিব, তখন মেডিসিন দিব।

অভি - কাজ হবেতো?"

তন্বী - আপনার বউ না, আমিতো আপনাকে চিনি, আর তাই জানি কিভাবে আপনাকে আত্মবিশ্বাষী বানাতে হয়।

অভি - আপনার ফোনের অপেক্ষা করব, ফোন না পাওয়া পর্যন্ত শুরু করব না, যত দেরীই হোক।

তন্বী - দেখবা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে আমি কল করেছি….



কই তন্বী ফোন করল নাতো, ১১টা বেজে গেল। ফোনটা আবারো দেখলো, না কোন কল আসেনি। তন্বী তাহলে ভুলে গেল ফোন দেয়ার কথা? খুব মন খারাপ করে অভি প্রেজেন্টেশন শুরু করল। খুব চেষ্ঠা করেছে মনযোগী হতে, আত্মবিশ্বাষের কমতি নিয়েই শেষ করল। এমন সময় ফোনে একটা কল আসলো… তন্বীর ফোন।



তন্বী - হ্যালো...

অভি - কি হয়েছে? তুমি ঠিক আছো? ব্যাথা বেড়েছে? ফোন রিসিভ করোনি কেন? মা কেন একা রেখে গেল?

তন্বী - এই শোন…

অভি - (অভি চুপ)

তন্বী - তোমার প্রেজেন্টেশনটার ভিডিও করেছোতো?

অভি - কি বলছো তুমি!

তন্বী - বল না।

অভি - হ্যা! করা হচ্ছে।

তন্বী - একটা কপি নিয়ে এসো, আমাদের মেয়ে বড় হলে দেখবে।

অভি - কি???

তন্বী - জ্বী, আপনার প্রথম সন্তান আপনার প্রযেক্ট না, এখানে আমার কোলে শুয়ে আছে।



অভির চোখে ততক্ষনে পানি চলে এসেছে।



তন্বী - এই নাও কথা বল তোমার মেয়ের সাথে ...



ফোনে কান্নার শব্দ, নতুন অতিথির, আর এখানে বাবার চোখ ভরে গেছে আনন্দের পানিতে।



ততক্ষনে অফিসের কারো বুঝতে বাকি রইল না, সবাই এসে লাউডস্পিকারে মেয়ের কান্নার শব্দ শুনতে চাইল। সবার চোখে-মুখে আনন্দ, অভি এবং তন্বীকে অভিনন্দন জানানো হল, মিষ্টিমুখ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল সবাই। আর অভি ততক্ষনে রওনা দিয়ে দিয়েছে নতুন অতিথিকে অলিঙ্গন করতে...

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:২৩

নিলু বলেছেন: লিখে যান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.