নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কোথায় সে কর্মহীন একান্তে আপনে লীন ...

দূরে থাকা মেঘ

দূরে থাকা মেঘ তুই দূরে দূরে থাক, যতটুকু পারা যায় সামলিয়ে রাখ।মন, মন, মন, সেতো কত কথা বলে; তার কথা শুনে কেউ ঝাঁপ দেয় জলে...

দূরে থাকা মেঘ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোথায় যাচ্ছি? কেন যাচ্ছি? আরো তো অনেকটা পথ বাকি...।

১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯

আজকাল বাসায় বাবার সাথেই সময়টা কাটে, খুনসুটি, দুইজনের ঝিমানো আড্ডা আর দিনের দীর্ঘ সময়টা পালা করে চা বানিয়ে আর রাজনীতির বিচ্ছিরি কচকচানিতে। মা ফিরে এলে মনে হয় ফাগুনের হাওয়া এলো!



সামনের পাঁচতলা বাসার তিনতলায় দুটো ছোট ছেলের কান্ডকারখানা আমার খুব ভালো লাগে দেখতে। ছোট ভাইটা হয়তো কাগজ কুটি কুটি করে পুরো ঘর, বারান্দা নোংরা করেছে, বাবা এসে শাসন করছে বড় ছেলেটিকে, 'যাও, পরিষ্কার করো। এভাবে করলে মারবো ধরে'। ছেলেটি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়েও ব্যর্থ- 'আমি করিনি। ও ছিঁড়েছে। ওকে বলো পরিষ্কার করতে'; বাবার উত্তর, "তুমি তো বড় বাবা, যাও, তুমি করো,তোমাকে দেখে শিখবে ও। " বাবাটা চলে যায়, বড় ছেলেটি একটা ঝাড়ু হাতে বারান্দা থেকে ঝাড়তে শুরু করে, বাতাসে কাগজের টুকরোগুলো ভাসিয়ে নেয়। ও চেষ্টা করে যায়। বার বার। তারপর একটা ন্যাকড়া দিয়ে জড়ো করতে শুরু করে।



আমি অবাক হই। সব বাবা একরকম, আমি এখন বড় হয়েছি, ওর মতো বয়েসে আমরা সবগুলো ভাইবোন ঝগড়া করতাম তিনজন একসাথে,বাকি একজন অন্যদিকে। একজনের সাথে বাকি তিনজনের কথা কাটাকাটি। ঘর নোংরা করে একজনের ঘাড়ে পরিষ্কারের দায়িত্ব পড়তো। একটু প্রতিবাদের চেষ্টা করলেই বাবা ডেকে বোঝাতেন,'বড়দের ছাড় দিতে হয়। তবেই তো বড় হয়। ঝাল খেয়ে বড় হয়না।" তখন ঝাল খেতে পারতাম না বলে খাওয়ানোর জন্য বলতো, ঝাল খেলে তাড়াতাড়ি বড় হবে!

কেউ হয়তো মুখ ফসকে একটা কথা বলে ফেলেছে, আমাকে বলা হতো সহ্য করো, মুখের উপর কথা বলতে যেওনা। মন থেকে বাদ দাও। সহজ হও। কিন্তু কেন? কারণ তুমি বড়।



বাবার সব 'কেন' গুলোর উত্তর হলো "কারণ তুমি বড়"

বড়দের কি করতে হয়? মাটি হতে হয়। সবার কিলগুলো পিঠে নিয়ে ওদের ভালোবাসতে হয়। সত্যিকার ভালোবাসা। কেউ যদি জানতে চায় কাকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হবে? কিছু না ভেবেই উত্তরটা হবে, পরিবারকে। আলাদা করে বলতে পারবেনা, মা, বাবা অথবা ভাইবোনদের কারোর নাম। কারণ আগে কারোর নাম বললেই তাকে বেশি ভালোবাসো বোঝা যাবে! তখন ঠিক বড় ছিলাম কিনা জানিনা, তবে এখন ঠিক বড় হয়েছি। এখন বুঝি। কিন্তু আমি এই বড় তো হতে চাইনি যেখানে বাবা আমাকে একগাদা উপদেশ দিয়ে কারণ জানতে চাইলে বলবেনা, "কারণ তুমি বড়"। এই বড় হতে চাইনি যেখানে আমার ছোটবেলার মধুর ঝগড়া থাকবেনা, ছোটবোন ঝালচানাচুরের কাঁচামরিচ বেছে আমার জন্য আলাদা করে রাখবেনা, ভাই বাজার থেকে আসার সময় বলবেনা, 'আমি কেন একলা ব্যাগ ধরবো?তুই ও ধর', অথবা চারজনের একসাথে দূরের কোন মাঠে গিয়ে আমাকে একলা ফেলে দৌড় দিবেনা, চাইনি এমন সন্ধ্যা যেখানে মুরগি তুলতে গিয়ে আমার উপর মুরগি একটা ছেড়ে বলবেনা, 'ও সরি,তোকে তো দেখিনি!'

এক চিলতে উঠোনে ক্রিকেট খেলছে বাকিরা,আমি জানালা দিয়ে দেখছি, ওরা ডাকছে, আমি ভয়ে যেতে পারছিনা। কখন বল এসে আমার উপর পড়বে! ওদের ক্লান্তিহীন ডাকাডাকি আমার কানে এসে পৌছুবেনা এটা ভাবিনি' কাঞ্চন ফুলের গাছের উপরে তুলে দিয়ে নিচের চেয়ার আর টেবিলটা সরিয়ে বলবেনা, 'লাফ দে!'..... আমি ওমন বড় হতে চাইনি।

একঘেয়ে লাগেনা পুরোন কথাগুলো ভাবতে। ঝলমলে দিন মনে হয় আজও। নাহ,আমার একঘেয়েমি খুব কমই এসেছে। আমি সব খুব ভালোবেসেছি। মুগ্ধ হয়েছি।আর তাই হয়তো ওই দুটো ছেলে আমার শৈশব ফিরিয়ে দিয়েছে আজকে আবারও। ওরা জানেইনা ওসব কথা। অদ্ভুত লাগছে।



আজ কদিন ধরেই দেখছি বিকেলটায় এক অশীতিপর বৃদ্ধ বসে আছেন পাশের একটা বাসার দোতলার বারান্দায়। কী ভাবছেন বুঝতে পারছিনা। আশেপাশের মানুষ দেখছেন? নাহ,তা কী করে হবে, এত বয়েসে উনি সামনের গ্রিলগুলো দেখতে পাবেন হয়তো, কিন্তু এত দূরে.... তাছাড়া তাঁর চোখে তো চশমাও নেই। হয়তো ভাবছেন তাঁর ফেলে আসা দিন গুলো। কতটা ঝড় না জানি কাটিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন এই বয়েসে। ভাবছেন হয়তো আর তো কটা দিন, কাটিয়ে দেই এভাবেই। হয়তো তাঁর এতটা উত্তেজনা নেই বিশ্বকাপের, নেই সংসারের প্রতি আর কোন দায়িত্ব অথবা মৃত ধর্মপত্নির অভাবের সেই অনুভূতি, আছে কেবল স্মৃতি-বিস্মৃতির মাঝে তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর মধ্যবয়েসের সংসারের ঘানি টানার পুরোন কথা। তিনি কি খুব অাশাবাদী ছিলেন তাঁর জীবন নিয়ে? কোথাও কি যেতে মন চাইছে তাঁর? তাঁর নিজের বাড়িতে?আদৌ কি কোন বাড়ি তাঁর আছে? নাকি তাঁর ছেলের এই ফ্ল্যাটটাই কেবল? তাঁর কি কোনো বিশেষ খাবার খেতে মন চাইছে? মাগুর মাছের ঝোল? নাকি ঘি দিয়ে গরম ভাত? নাকি তাঁর ব্লিচিং মেশানো জল ভালো লাগছেনা? এতোটা সময় উনি একটা বারান্দায় বসে কাটান কেমন করে?





আমার বাবা আর আমিও হয়তো একসময় উনার মতন বৃদ্ধ হবো, হয়তো তখন কিছুটা হয়তো বুঝতে পারবো উনি কি ভাবছিলেন।





বাবা কি তখন আমার পছন্দের গান শুনে প্যারোডি বানিয়ে সুর বিকৃত করে গাইবেন আমাকে রাগানোর জন্য? চেষ্টা করবেন আমাকে রান্না শেখাতে? নাকি বিশ্বকাপের সময় আমাকে জেগে থাকতে বলে ঘুমিয়ে পড়বেন? গরম চা বানানোর চেষ্টা করতে পারবেন কি? চিপস এনে আমাকে হয়তো দিতে চাইলেও পারবেন না। হয়তো বাসে বসে পাল্লা দিয়ে পেয়ারা খাওয়ার মত সুযোগ নাও হতে পারে। হয়তোবা আমাকে বলবেন না, তোর স্যুপটা ঠান্ডা হয়ে যাবে,'খেয়ে নে' অথবা বলবেনা, 'একটু লেবুর আচার খাবো।'...







ভয় লাগছে, কেউ শৈশব ফিরিয়ে দেয়। কেউ আগামী দেখায়। কার কাছে যাবো আগামী তে? কাকে বলবো সিদ্ধান্তহীনতার সময়? কে প্রশ্ন করে করে আমার প্রশ্নের উত্তর আমাকেই খুঁজে নিতে সাহায্য করবে? কোথায় যাবো আমি?





মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৪৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:



জীবন এমনই :(


কেমন আছেন?

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১:৩৬

দূরে থাকা মেঘ বলেছেন: হুম,এমনই।

আমি ভালো,আপনি কেমন আছেন আমিনুর ভাই?অনেকদিন পর

৩| ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আমি ভালো আছি। হুম অনেকদিন পর ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.