নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুব কম জানি। জ্ঞানীদের থেকে জ্ঞান নিতে আগ্রহী, জ্ঞানপাপীদের থেকে দূরে থাকি..

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল

লেখালেখির ছোট্ট প্রয়াস..

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প হলেও সত্যি

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭



মিথিলার থমথমে চেহারাটা যেন যে কোনো মুহূর্তেই শুরু হতে যাওয়া ঝরের পূর্বাভাস। রেস্টুরেন্টে মুখোমুখো বসে থেকে ইফতি সভয়ে আড়চোখে তাকায়। মিথিলার মনের ভাষাটা বুঝার চেষ্টা করছে।

একদিকে রেস্টুরেন্টের নরম আলোয় গোলাপ হয়ে ফুটে থাকা মিথিলার মায়াকাড়া অভিমানী মুখ, আরেকদিকে মৃদু লয়ে বাজতে থাকা বাবুল সুপ্রিয়ের "ও যে মানে না মানা..." গানটি যেনো সমুদ্রের তীরে আছড়ে পরা ঢেউয়ের মতই ইফতির করুণ হৃদয়ে একটা শূণ্যতার হাহাকার তুলে দিচ্ছে থেকে থেকে। মনে মনে সে বলছে, "মিথিলা এইবারের মত আমাকে মাফ করে দাওনা প্লিজ, প্লিইইজ। জানোই তো আমি গুছিয়ে কিছুই বলতে পারিনা। বোকামো গুলো করে ফেলার পর বুঝতে পারি যে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ। অথচ দোষ স্বীকার করে নেওয়ার গুণটিও যে প্রচন্ড অভিমানী এই হতভাগার মধ্যে কখনোই গড়েই উঠেনি তুমি তো সেটাও বোঝো। কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি তোমাকে খুব খুউউব ভালোবাসি মিথিলা।"....

"এই যে এগুলো তোমার কাছেই রেখে দাও ইফতি। আমার আর দরকার হবে না।" মিথিলার কথায় সম্বিৎ ফিরে ইফতির। হাতব্যাগ থেকে ছোট্ট দুটো টেডি পুতুলের চাবির রিং বের করে টেবিলে রাখে মিথিলা। ইফতির ভেতরটায় আচমকা একটা ঘূর্ণি যেনো সমস্তটা লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। মিথিলাকে দেওয়া তার একমাত্র উপহার! হ্যাঁ, সাত বছরের প্রেমে এই একমাত্র উপহার যেটা নিতে মিথিলা কোনো আপত্তি করে নি। হাতের তালুয় এঁটে যাওয়া তুলতুলে এই পুতুল দুটি। কি অদ্ভুত মেয়েটা! উপহার দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারটাকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়নি এতটা দীর্ঘ সময়েও। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত কোনো উপহার নিতেই সে নারাজ। বিয়ের পর নাকি সুদে আসলে সবটা আদায় করে নেবে! মিথিলার কিছু কিছু ব্যাপার ইফতির কাছে বড্ড বাড়াবাড়ি মনে হয়। অথচ এই ব্যাপারগুলোই হয়ত কোনো না কোনো ভাবে ইফতির নিকট মিথিলাকে আকর্ষণীয় করে রেখেছে, খুব গোপনে।

মিথিলার আরেকটি গুণ হল সে সহজে রাগে না। তবে সঙ্গত কারণে যদি একবার রেগেই যায় তখন এই প্রচন্ড আত্মসম্মানি মেয়ের সামনে দাঁড়ানোটা ইফতির কাছে খুবই অস্বস্তিকর ব্যাপার হয়ে উঠে। মিথিলা চেঁচিয়ে রাগ ঝাড়ে না কখনই। তার সামনে চোখের জলও ফেলেনি কোনোদিন। কিন্তু স্থির দৃষ্টিতে যখন দৃড়ভাবে ইফতির দিকে তাকিয়ে থাকে, ইফতি সে চোখে চোখ রাখতে পারেনা। তখন তার ভেতরের সমস্ত অপরাধগুলো নির্লজ্জের মত অট্টহাস্যে তাকে তিরস্কার করতে থাকে যেন। ইফতির মনে হয় মিথিলা বুঝি সবটা দেখতে পায়।

ইফতি জানে তার আর কিছুই করার নেই। মিথিলা ঝোঁকের বসে তাকে ছেড়ে যাবার মেয়ে নয়। সে যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে তবে অনেক ভেবেই নিয়েছে। আর তাই আজ সরাসরিই এখানে ডেকেছে। আজ ইফতির শত অনুরোধও হয়ত আর ফেরাতে পারবে না তাকে। হয়ত এইবার ইফতি একটু বেশিই করে ফেলেছে। হয়ত এইবার আর ইফতিকে ক্ষমা করতে পারেনি মিথিলা। ইফতিকে প্রায়ই মেয়েটা রোবট বলে সম্বোধন করলেও এই মুহূর্তে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ইফতি বুঝতে পারে তার ভেতরটায় তীব্র একটা কষ্টের অনুভূতি বারবার পাক খেয়ে উঠছে। একটা অস্বস্তিকর যন্ত্রণায় তার চোখ দুটি জ্বালা করছে। সে মিথিলাকে কোনোভাবেই হারাতে চায়না। অথচ মিথিলা তো খুব সহজেই সব হিসাব নিকাশ মিটিয়ে দিচ্ছে। পুরোনো স্মৃতিগুলো ইফতির হৃৎপিন্ডে পাথর অনুভব হয়ে চেপে বসে। তার এত কষ্ট হচ্ছে অথচ সে মিথিলাকে একবারের জন্যেও 'স্যরি'ও বলতে পারছেনা। নিজের এই স্বভাবটা ইফতিকে খুবই অবাক করে মাঝে মাঝে। এখন এই দুঃখের মাঝেও নিজের অসহায়ত্বে হাসি পাচ্ছে তার।

"নাও এটা পড়"। টেবিলে রাখা ইফতির হাতের কাছে একটা চিঠি ঠেলে দেয় মিথিলা। "বাহহ আর কি লাগে!" মনে মনে নিজেকে আবারো উপহাস করে ইফতি। সে জানে এই চিঠি দেওয়াটা ভালো কোনো লক্ষণ নয়। মিথিলা ইফতিকে সরাসরি কোনো কথা বলে কষ্ট দেয়নি আজ পর্যন্ত। খুব রেগে গেলে মাঝে মাঝে ফোনে কিছু টেক্সট করে। সেসব টেক্সটের সরল ভাষায়ও কোথায় যেন একটা নিষ্ঠুরতা লুকানো থাকে। ঠিক ঠান্ডা মাথার খুনিদের মতই মিথিলা যেন ১৬ আনা প্রতিশোধই নিয়ে নেয় তখন। এখন তো আর টেক্সট করার সময় নয়। তাই হয়ত এই চিঠিটা দিচ্ছে, যেটায় লিখা আছে ঠিক কি কি কারণে ইফতিকে আজ এই মাশুল দিতে হচ্ছে। বা মিথিলাকে ছেড়ে সুখে থাকার জন্যে লাইন দুয়েক পাষাণ শুভকামনা। অথবা ইফতি নিজের প্রতি খেয়াল রাখার জন্যে কিছু নির্মল উপদেশ যেটা এখন পড়ে দেখা ইফতির পক্ষে কোনোভাবেই আরামদায়ক নয়। সে যাই হোক, এই মুহূর্তে চিঠিটা খুলতেও ইচ্ছে করছে না ইফতির। সব যখন শেষই হয়ে যাচ্ছে তবে আর কাটা ঘাঁয়ে নুনের ছিটে খেয়ে কি লাভ?

তবুও কি মনে করে ইফতি খামটা হাতে নেয়। সত্যিই অদ্ভুত এই মেয়ে! ইচ্ছে করেই শেষ চিঠিটাকে, যেটা কিনা কোনো একটা হত্যার সাক্ষী হয়ে আছে, সুন্দর করে বানানো নীল খামে মুড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে মিথিলার সারল্যের পেছনেও পৈশাচিক ভাবটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একেই বলে প্রতিশোধ! ইফতি আড়চোখে একবার তাকায় মিথিলার দিকে। হুম, মেয়েটার স্থির দৃষ্টিতে এখন একটা শান্ত খুনীর ছাপ স্পষ্ট। খাম খুলে চিঠিটা বের করে ইফতি। নিজের অজান্তেই একটা তিরস্কারের হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটে। চিঠিটা গোলাপী কাগজে লিখা। "নাও নাও... বেশি করেই মজা নাও মিথিলা" ইফতির অভিমানী সত্ত্বা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে।

সব অস্বস্তি চেপে রেখে চিঠির ভাঁজ খোলে ইফতি। সেখানে রঙিন কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা-
"এই যে গাধা, আমার ট্যাঁও ট্যাঁও গুলার বাবা হবে তো তুমি? তাহলে বলো কবে বিয়ে করছ?"

প্রচন্ড স্নায়ুচাপে ভুগতে থাকা ইফতি বেচারার অনুভূতিটা তখন কেমন হয়েছিল আর মন মত শোধ তুলতে পেরে মিথিলাও কতটা পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছিল তা নাহয় পাঠক নিজেরাই ভেবে নেবেন। ;)



ছবি সূত্র- ইন্টারনেট

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪০

খায়রুল আহসান বলেছেন: একদিকে রেস্টুরেন্টের নরম আলোয় গোলাপ হয়ে ফুটে থাকা মিথিলার মায়াকাড়া অভিমানী মুখ, আরেকদিকে মৃদু লয়ে বাজতে থাকা বাবুল সুপ্রিয়ের "ও যে মানে না মানা..."[/si-- কি চমৎকার করে ছবিটা এঁকে গেলেন! খুব সুন্দর হয়েছে।
বা মিথিলাকে ছেড়ে সুখে থাকার জন্যে লাইন দুয়েক পাষাণ শুভকামনা--- দারুণ!
"এই যে গাধা, আমার ট্যাঁও ট্যাঁও গুলার বাবা হবে তো তুমি? তাহলে বলো কবে বিয়ে করছ?" -- :) -- ইফতিরই মত যেন পাঠকও এখানে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে!
দিনশেষে নারীরা মায়াবতী থেকেই যায়! খুব ভাল লেগেছে আপনার এ ছোট গল্প!
প্রথম মন্তব্য, প্রথম প্লাস!

২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: অন্তত একজন পাঠকেরও(যিনি কিনা নিজেই বড় মাপের লেখক) যে এতটা ভালো লাগলো তাতেই গল্প লিখা সার্থক :)
সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণ এবং প্রথম মন্তব্য ও প্রথম প্লাসে অনেক অনেক অনুপ্রাণিত হলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: আসলেই কি গল্পটা সত্যি?

২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৯

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: হাহা... থাকুক না এইটুক ধাঁধা ;)

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: নারীরা ধাঁধা ভালবাসে! :)

২০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: আংশিক সত্য। তবে গল্প লেখকরা ধাঁধা ভালবাসে, এটা পুরোপুরি সত্য ;)

৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

সালমা অক্তার বলেছেন: খুবই সুন্দর লিখেছেন

২০ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:৫৭

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:১৮

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: সিলেক্টিভলি সোশ্যাল

সুন্দর লিখেছেন!


প্লাস!:)

২১ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:২৮

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে এত্তগুলা ধন্যবাদ ভাইয়া।

প্লাস পেয়ে তো আরো গদগদ :D

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:১৩

কবীর বলেছেন:
সুন্দর লিখেছেন +

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:১৭

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: মন্তব্য করে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যে অসংংখ্য ধন্যবাদ।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনার সব লেখা আমার পড়া শেষ! :)
এমন কথা এই ব্লগে খুব সম্ভব এই প্রথম কাউকে বলা সম্ভব হলো! :) :)
সুতরাং, নতুন কিছু লিখুন! :) :) :)

২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১৭

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: হাহাহা... আমি কিন্তু শিশু ব্লগার। এটা ভুলে গেলে চলবে না :P

নতুন লিখা যে নেই তাও কিন্তু নয়। কিন্তু আমার মত চুনোপুটি ব্লগারের পোস্ট প্রথম পাতায় যায় না বলেই পোস্ট করার আগ্রহ কম। তারচেয়ে অন্যদের পোস্ট পড়াই উপভোগ করি :)

আপনার মত বিশাল মাপের ব্লগার যে নিয়মিত আমার লিখা পড়ে দেখেন, মন্তব্য করেন, এবং আরও লিখার জন্যে অনুপ্রেরণা দেন সেটা আমার চাওয়ার বাইরেও অনেক বেশি পাওয়া। অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানবেন।

৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: আবার লিখুন, নতুন কিছু নিয়ে।

৯| ১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:১৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি কেমন আছেন? আশা (অনুমান) করি নতুন নতুন অতিথি এসে আপনাকে অনেক ব্যস্ত রেখেছে।
সম্ভব হলে নতুন একটা পোস্ট দিবেন (যদি এখনও ব্লগে আসা যাওয়া করে থাকেন)।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.