![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্যক্তিজীবনে অহিংসায় বিশ্বাস করি। বুদ্ধের দর্শন গভীরভাবে ভাবায় আমায়। “আসক্তিই সকল দুঃখের কারণ, অধিকারবোধ থেকেই দুঃখের সৃষ্টি।” এই দুটো বাক্যের উপর অগাধ বিশ্বাস। কারো চিন্তা-চেতনাকেই ছোট করে দেখিনা। আমি বিশ্বাস করি যে মতবাদই হোক, তার গভীরে না ঢুকে সে সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিত না। যেকোন চরমপন্থা, হোক সেটা যেকোন ধর্ম অবলম্বন করে অথবা অন্য যেকোন মতবাদের উপর ভিত্তি করে, আমি ঘৃণা করি। শুরুতেই অহিংসা আর এখন ঘৃণা দুটো শব্দ পরস্পর বিরোধী হয়ে যায়। কিন্তু চরমপন্থার ক্ষেত্রে মানবজীবনের কোন মূল্য নেই। যে মতবাদের বাস্তবায়নে নিঃসংকোচে নির্দিধায় মানুষ হত্যা করা হয়, আমি যতটাই অহিংসতায় বিশ্বাস করি, ঠিক ততটাই ঘৃণা করি। সবার উপর মানুষের জীবন আর মৌলিক অধিকার সত্য, এর উপরে কিছু নাই। এটাই আমার জীবনের দর্শন। নিজে অসুস্থ হয়েও মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষগুলোর এবং তাদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজে মনঃচিকিৎসক হওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছি। প্রতিটি মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। সবসময় একটা মানবতাবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখি, যদিও জানি পৃথিবীতে হানাহানি কোনদিন শেষ হবেনা। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জীবন, প্রথম বিশ্বের একটা পোষা কুকুরের জীবনের মূল্যের থেকেও কম। এটা খুব ভাবায় আমায়। ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে উঠতে খুব ইচ্ছে করে। পারিনা, তবে চেষ্টা করে যায়। যেদিন SELF ACTUALIZATION আসবে সেদিন ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধে উঠে যাবো, এই ভাবনাই হৃদয়ের বাম অলিন্দে, মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে ধারণ করে যায়।।
বেশ কয়েকদিন ধরেই সামির মনটা ভাল যাচ্ছিল না। চাওয়া পাওয়ার অসম সমীকরণ মাথায় ভর করে সব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছিল। পেশায় চিকিৎসক হলেও লেখালেখি করতে তার ভীষণ ভাললাগে। এতেও মন বসছিলনা। বসে বসে শুধু শূন্যতার প্রহর গুনছিল। এমন দিন হরহামেশাই তার জীবনে এসেছে। তাই এ নিয়ে সে খুব একটা উতকন্ঠিতও নয়। ভাবছিল স্থিরতার এই জীবনে হয়তোবা নতুন কিছুর দেখা পাবে। হলোও তাই।
এমনই দিনে হঠাতই একদুপুরে আচমকা এক মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। সে জানে এসম্পর্ক এক দুপুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এর বেশি কিছু চাওয়ারও সুযোগ নেই। সিগারেটটা ছেড়ে দিয়েও সে ছাড়তে পারছিলোনা। মার্ক টোয়েনের মত সে ১০০ বারের অধিক সিগারেট ছেড়েছে অল্প কয়েক বছরেই। আসলে এক্ষেত্রে সামি মার্ক টোয়েনের চেয়েও এগিয়ে। টোয়েন হয়তো সারাজীবনে শতাধিকবার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে বিগত সাত বছরেই শতাধিকবার চেষ্টা করেছে। যখন বুঝতে পেরেছে সে সিগারেটে আসক্ত তখন থেকেই ছাড়ার চেষ্টা চলছে অবিরাম। সাফল্য যে আসেনি তা নয়। তিন মাসেরও অধিক সময় পর্যন্ত সিগারেট ছেড়ে থেকেছে। কিন্তু ভূল জীবন দৃষ্টির জন্য এখনো পর্যন্ত সফল হয়ে উঠতে পারেনি। সিগারেট ছাড়ার পর তার আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত তৈরী হয়। মনের মধ্যে অতীত জীবনের চিন্তা ভর করে। মনে হয় সে তার মাকে জিতিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই পরাজিত হয়েছে। কিছু অসম সম্পর্কের চিন্তাও মস্তিষ্ককে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
শুক্রবার ক্লিনিকে বেশ কিছু আল্ট্রাসাউন্ড হয়। যথারীতি এলোমন নিয়ে সে আল্ট্রাসাউন্ড করছিলো। আগের গাইনি চিকিৎসক আসা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ পাশের উপজেলা থেকে ইয়াং একজন গাইনি চিকিৎসক নিয়ে আসে। সদ্য বিসিএসে জয়েন করা এবং সদ্য গাইনিতে পার্ট-১ করা। অনেক্ষণ পর তার সাথে সামির পরিচয় হয়। বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। মেয়েটা ওসমানী থেকে পাশ করা তার ইমিডিয়েট জুনিয়র। সামির বদঅভ্যেসগুলোর মধ্যে একটা হলো মেডিকেলের কোন জুনিয়রকে খুব বেশিক্ষণ আপনি করে বলতে পারেনা। কিছুক্ষণ কথা বলার পর থেকেই তুমি করে বলা শুরু করে। মেয়েটা নম্র, ভদ্র, মাথায় স্কার্ফ পরে। যদিও সে মোটেও ধার্মিক নয় তারপরও মেয়েটির ধার্মিকতা তাকে মুগ্ধ করে। মেয়েটি যোহরের নামায আদায় করে। তারপর আবারও কথা হয়। দেখতেও মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দর। এ পর্যন্ত ওর প্রতি সামির কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয়নি। সে ধরেই নিয়েছিল মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কারণ মেয়েটি ২০১১ তে পাশ করেছে। এরই মধ্যে বিসিএস এফসিপিএস হয়েছে। তাই সামির মনে হয়েছে বিয়ে না হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। তাই সে অবচেতন মনেই জিজ্ঞেস করে বসে, "আপু তোমার হাসবেন্ড কি করে?" তার সকল ধারণা স্তব্ধ করে দিয়ে মেয়েটি জবাব দিল তার বিয়ে হয়নি। সে স্তম্ভিত হয়ে গেল। সম্বিত ফিরে আসতেই বললো, "আসলে আমি অনেক আগেই বিয়ে করেছিতো তাই তোমার ক্ষেত্রে একই রকম ভেবেছিলাম।"
হঠাতই সে অনুভব করল মেয়েটির প্রতি একটা প্লেটোনিক ভালোবাসা তার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে। জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো সামির মনে হলো সে-ই তার বউ হওয়ার মত একমাত্র মেয়ে। একমুহূর্তের মধ্যে ভাবনার ডালপালা তৈরী হল। সে বিয়ে করেছে চার বছরেরও বেশি আগে। অনেক টানাপোড়নের মধ্যেও সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছে শুধু মেয়েটির কোন দোষ নেই বলে। সম্পর্কোচ্ছেদ করলে তার মা পরাজিত হবে সেটাও একটা কারণ অবশ্য।
সবকিছু ভেবে ভাবনার পাখা গজানোর আগেই সামি তার মুন্ডুপাত করলো। মেয়েটিকে নিয়ে সে খেতে গেল। কি ভেবে যেন মেয়েটিকে ভাত নিজ হাতে বেড়ে দিল। তারপর তরকারি এবং সবশেষে গ্লাসে পানিটাও ভরে দিল। মনে হল এ সময়টুকুই তার জীবনের সেরা সময়। এরকম সময় আর কখনো আসেনি, আর আসারও সম্ভাবনা ক্ষীণ। খাওয়া শেষে একসাথে ক্লিনিকে ফিরে এলো।
মেয়েটি ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে গেল। কিন্তু বারবার শুধু সামির তার কথাই মনে পড়তে থাকলো। মনে হলো ওর চেয়ে ভাল মেয়ে পৃথিবীতে আর হয়না। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস কিছুই করার নেই। মেয়েটি চলে যাওয়ার পর থেকে শুধু সেই সময়টুকুর আবেশ তাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখলো। অজান্তেই মনের মধ্যে আইয়ুব বাচ্চুর 'এক বিকেলের মেয়ে' গানটির কথা বাজতে শুরু করে। বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে সে দেখে গানের সাথে সবকিছুই মিলে গেছে। মেয়েটি সামির এক দুপুরের মেয়ে। তাকে নিয়ে ভেবে কিছুই হবেনা। শুধু তাকে কাঁদিয়েই যাবে। শুধু বিপন্ন বিস্ময় আর সংশয়ই খেলা করবে। অণুগল্পের মত রয়ে যাবে আজীবন-যার কোন সমাপ্তি রচিত হবেনা। সে কোনদিন জানবেও না- তাকে নিয়ে কেউ এতোটা গভীরভাবে ভেবেছে।
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৪
মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু।। সত্যিই বলেছেন- অণুগল্পের মতো অনুভবগুলোই জীবনের টনিক।।
২| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ভাল লেগেছে । এত্ত এত্ত +++++++++++
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৬
মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ লায়লা আপা। এত্ত এত্ত + এবং ভালোলাগার জন্য এত ভালো লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবোনা।।
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫
অন্যসময় ঢাবি বলেছেন: এক পশলা বৃষ্টির মত ভালো লেগেছে
১২ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১৭
মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ।। মন্তব্যটি অসাধারণ।।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
প্লাবণ ইমদাদ বলেছেন: হুমমম
২১ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৭
মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: হুমজ...
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনগুগল্পের মতো অনুভব গুলোই জীবনের টনিক!
+++++++++++++++++