নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোকা:একজন বিচারক

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:৫৭

জামান সাহেব মাথায় একটা পোকা নিয়ে ঘুরছেন।
ঘুরছেন বললে ভুল হবে,,ঘুরবেন!কারণ পোকাটা এইমাত্র তার মাথায় প্রবেশ করল।প্রবেশ করালো এক অতি নগন্য -নিকৃষ্ট ব্যক্তি।

জামান সাহেব আজ খুশিই ছিলেন।আগামী শুক্রবার মেয়ের বিয়ে,জামাইও তার মত বিজ্ঞ বিচারক! বিজ্ঞ বলা কি ঠিক হল?তার মেয়ের হবু জামাই এবার সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পেল।

এইসব চিন্তা করে,তিনি নিজেকে পৃথিবীর সুখি মানুষদের একজন ভাবছিলেন।তিনি সুখিই তো,,সারা জীবন সততার সাথে বিচারকার্জ পরিচালনা করেছেন।কখনো আপোস করেন নি।তবে এই সততার জন্য তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।এখন অবসর নিয়েছেন,,,

ঠিক এই সময়,তার সাথে দেখা করতে এলো কামাল উদ্দিন।

:আপনাকে চিনতে পারলাম না!
:আমি কামাল উদ্দিন,,,

:ওহ আচ্ছা,,কামাল উদ্দিন,সেই মহান লোক! যে কিনা তিনটা এতিম খানা চালায়,দুইটা কলেজ আর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন!আপনাকে দেখে ভালো লাগল।
:আপনি আমাকে ভালো ভাবে চিনতে পারেন নি,,,এটা আমার ভদ্র পরিচয়,,,আপনি আমারে এই পরিচয় দিয়েছেন।

:কি যে বলেন,,আপনার মত ভালো মানুষ কয়টা আছে?আমি আপনার নাম শুনেছি এই প্রথম দেখলাম!এমন মানুষ দেখাও সোয়াব।

কামাল চশমাটা খুলল।এইবার জামান সাহেব চমকে গেলেন।

:তু,তু,তুমি,,,বিরানি কুদ্দুস!
:এইবার চিনতে পারছেন!আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

জামান সাহেব ঘামছেন।
তার সব মনে পড়েছে।কেস টা ছিল ১৯৯৫ সালের,একটা মেয়ে, শায়লা অপহৃত হয়েছিল।পরে বলৎকার করে মেরে ফেলা হয়।মামলাটা তার কোর্টে ছিল।তিনি প্রমাণের অভাবে বিরানি কুদ্দুসকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন।

:আমার কাছে কেন এসেছ?
:আহা,আপনি আমাকে সফল মানুষ হবার,সমাজের উপকার করার সুযোগ দিলেন।কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না।

:......
:জানেন মেয়েটার বয়স ছিল ৯ বছর।খুব মায়াবি ছিল।
এই মেয়ে এখন থাকলে রূপবতী হত।

:যদি তাই হয়, এমন একটা মেয়ে হত্যা করলেন কিভাবে?
:বাহ,,আপনি অনেক বুদ্ধিমান হয়েছেন।তখন ছিলেন না।তাহলে আমি গাড়ি করে ঘুরে বেড়াতে পারতাম না।

জামান সাহেব অপমানবোধ করলেন।
:আমি ৭০ লাখ চেয়েছিলাম।৫০ লাখ দিল তার বাপ,,তারপরেও ফেরত দিতাম।কিন্তু পুলিশ ঝামেলা করল।

:তারপরেও ফেরত দিতে পারতে,,মেরে ফেললে কেন?
:কি করব,আমি পুরুষ মানুষ! মেয়েটার কাপড় বদলাতে গিয়েই হল ঝামেলা।

জামান সাহেব উত্তেজিত হয়ে পড়লেন,মোটামুটি চিৎকার করলেন
:কাপড় পরাতে গিয়ে মেরে ফেললে?!
:না,,মেয়েটা অনেক জোর-জবরদস্তি করল।কিছুতেই কিছু করতে দিবে না।আমি তখন আধাপগল!হে হে হে,,,

:তাই বলে অতটুকু মেয়েকে?!একটা শিশু,,
:হেইডা আপনের কাছে,, আমার কাছে না।
কাজ শেষ করে দেখি মেয়েটা নাই,মইরা গেল।আর কি করব?

:,,,,,(জামান সাহেব কাঁদছেন)
:পুলিশ সামলাইতে কিছু টাকা গেল।আপনারা সামলাইতে কিছুই লাগে নাই,,,আপনি আমার চোখের পানিতেই কাইত!হা হা হা,,,,

:হ্যা,আমি ভুল করেছি।তোমার অসহায়-আচরণ আমাকে দূর্বল করেছিল।সরকারি উকিলের কাছে কোন প্রমাণ ছিল না।
:হা হা হা,,সব টাকা খাইছিল।

:,,,,(জামান সাহেব অঝোরে কাঁদছেন)
:আপনাকে বলছি,,আপনি সারা জীবনে একটা ভুল বিচার করেছেন। এইটা আপনার জানা উচিত।হা হা হা,,,,

:আমি তোমাকে ফাসিতে ঝোলাবো, কেস রি-ওপেন করব।
:হি হি হি,,ঐদিন কি আর আছে?আমি এখন দেশের বিখ্যাত ব্যবসায়ী,সমাজসেবক।

:তোমার সমাজ সেবার খ্যাতা পুড়ি,,,,তুই একটা খুনি,,ফাসি হবে তোর!
:পারবেন না,,আমি এখন যে অবস্থায়,সেটা আপনার দূর্বলতায়!আমার অনেক ক্ষমতা!

:,,,,,,,!
:আমি যাই।দেখেন, কি করতে পারেন।আমার সাহায্য লাগলে বলবেন।আমি আপনের লোক,,আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন।

জামান সাহেব চোখ-মুখ ছোট করে তাকিয়ে রইলেন।তিনি হতবাক।একটা অপরাধী তার সামনে এভাবে কথা বলছে!

তিনি এখন চিন্তিত,,,তিনি কি সারা জীবন এরকম বিচার করে এলেন?নিজেকে নিকৃষ্ট পোকা মনে হচ্ছে,গোবরে পোকা।

পোকা হলেও ভালো হত,গোবরে ঢুকে যেতে পারতেন!
এই পোকাময় অনুভূতি তাকে বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে!?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.