নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রায়শ্চিত্ত

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৩

শরীফ খান তার জমজ ছেলে মেয়ের হিন্দুয়ানী নাম খুজে পাচ্ছেন না, এক বছর হয়ে গেল নাম রাখা হয়নি। মুসলিম নাম রাখলে বাচ্চা দুইটাকে কিছুতেই বাঁচানো যাবে না।ওদের খোকা, খুকু ডাকা হয়।খোকা খান, খুকু খান;কেমন বিদঘুটে শোনা যায়!
বিন্দুর বিয়েতে তিনি দাওয়াতে এসেছেন।সুযোগ পেলেই বিন্দুর বাবাকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিবেন হিন্দুয়ানী নাম।বিন্দুর বাবা পুরোহিত, শ্যাম শংকর রায়।ধবধবে ফরশা ব্রাহ্মণের নাম শ্যাম কেন?

পলাশীর যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর এই এক অসুবিধা,মুসলমান জাত তাদের ধর্মকর্ম করতে পারে না।হারলো সিরাজ, বিপদে পরলো সারা দেশের মুসলমান! আচ্ছা, মীর কাশিম, জাফর ওরা কি তাদের বংশের বাচ্চাদের নাম আরবীতে রাখতে পারে?
মুক্তাগাজার রাজা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর কড়া আদেশ কোন আরবী নাম রাখা যাবে না।
দাড়ি,মোছ রাখা যাবে না, মসজিদ তৈরি করা যাবে না।দিতে হবে অতিরিক্ত কর।
১৭৫৭ সালে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী এদেশে আসার পর থেকেই এই নিয়ম। আরে ব্যাটা তুই মুর্শিদাবাদেই থাকতি, মুক্তাগাছা আসার দরকার কি?

আশার কথা এই যে, রাজবাড়ী এখান থেকে অনেক দূর। এতদূরের খবর নিয়ে রাজার মাথা ঘামানোর কথা না।শরীফ খানের কোন শত্রুও নেই।তিনি চালের মজুমদার, পাট ব্যবসায়ী ছিলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে তার তিনটা ট্রলার ছিল।এগুলা দিয়ে চাল, পাট ঢাকা পাঠাতেন।ছিল মাছের আড়ত, আর তিন ফসলি ২০০ বিঘা জমি।সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন, আর রাতে ফিরেই ঘুম।এখন অত ব্যস্ততা নেই।পাটের ব্যবসা বন্ধ, দেশে এখন পাট, ধান চাষ হয় না।রাজা শ্রীকৃষ্ণ আদেশ দিয়েছেন, সবাইকে নীল চাষ করতে হবে। উনার সব জমি রাজা শ্রীকৃষ্ণ দখল করেছেন।ট্রলারে করে এখন নীল হিন্দুস্তান যায়, ইংরেজরা এত নীল দিয়ে করেটা কি?

এক সময় তার আড়তে হাজার হাজার লোক কাজ করতো। নবান্ন উৎসবে তিনি সারা গ্রাম দাওয়াত করে খাওয়াতেন।সারা বছর বাড়িতে থাকতো ১০০ বান্ধা কামলা।এখন আর ঐসব নাই।তিনি মানুষকে সাহায্য করেছেন, সবাই তাকে সম্মান করে।প্রতিটি বিয়েতে তিনি বিয়ের শাড়ি উপহার দেন, যান না।তবে এই বিয়েতে এসেছেন। বিন্দু তার বড় মেয়ে রুবার সই।
তার বড় মেয়ে রুবার বয়স ১৪ বছর, আর ছোট দুইটার বয়স ১ বছর।বয়সের এত ব্যবধান কারণ, তিনি সময় পাননি। এখন তার অখণ্ড অবসর!
ছেলে হওয়াতে সবচেয়ে খুশি তার মা, বংশের বাত্তি রক্ষা হয়েছে।

রুবা আর বিন্দুর এই সই সম্পর্ক খান সাহেবের মা, বিন্দুর বাবা একদম সহ্য করতে পারেন না।হিন্দু, মুসলমান আবার সই হয় কেমনে?রুবার দাদি বিন্দুকে দেখলেই বলে,"ওই ছেমরি তরে কইছি না,এই বাইতে আইলে গোসল কইরা আইবি।তর গায়ে পাঠার মত গন্ধ, ধুপের গন্ধ, দূরে যা মাগী।"
বিন্দুটাও বেশ পাজি, সে দাদির গালে চুমু দিয়ে বলে,"গোসল করেনা তোমার নাতনী রুবা।আমি পুজা দিতে প্রতিদিন সকালে,সন্ধ্যায় গোসল করি।আর আগর বাতির গন্ধতো নবীজি (সাঃ) পছন্দ করতেন।"
দুই সই হেসে গড়াগড়ি খায়।খান সাহেবের দেখে শান্তি লাগে।পিছনে তার মা বিন্দুকে অভিশাপ দিতে থাকে,"মালাউন মাগী, তর জামাই মরবো।তুই পতিত থাকবি।"
দুই সই ভ্রুক্ষেপহীন, ওরা হেসেই যায়।ওদের সাথে যোগ দেয় খোকা, খুকু। ওরা না বুঝেই হাসে।ওরা বিন্দু, রুবাকে বুবু ডাকে।কখন কাকে ডাকে ঠিক বোঝা যায় না।

রুবা বিন্দুর গলাগলায় ভাব দেখে চূড়ান্ত বিরক্ত হন শ্যাম শংকর রায়।তিনি রুবাকে দেখতেই পারেন না।একবার কি হল, বিন্দুর মা পোয়া পিঠা(তেলের পিঠা) ভাজছেন। চারপাশ পিঠার গন্ধে ম.ম করছে। রুবা আর বিন্দু বাইরে কুতকুত খেলছিল।বিন্দু রান্না ঘরের দিকে গেল।রূবাও গেল, শ্যাম কাকা বাড়ি নেই।এখন ওদের ঘরে যাওয়া যায়।কাকার নিষেধ, রুবা ওদের ঘরে যেতে পারবে না।
রুবা পিড়িতে বসে যেই না গরম পিঠায় কামড় দিয়েছে অমনি শ্যাম শংকর উপস্থিত। "অধর্ম! অধর্ম!গেলরে, আমার জাত গেল!" চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুললেন।সারা বাড়িতে গোবর ছিটানো হল।সারা বাড়ি নতুন মাটি দিয়ে লেপা হল, সব খাবার ফেলে আবার রান্না করা হল।বিন্দুকে তিনি মারতে শুরু করলেন। রুবা রাগে কাপছিল," কাকা, আপনি যদি সইকে আর একবার মারেন আমি আপনাদের ঠাকুর ঘরে গিয়ে বসে পরবো।"
শ্যাম শংকর মেয়েকে আর মারলেন না।

রুবা বাড়ি এসে খুব কাঁদলো, বাবাকে সব বললো।খান সাহেব বললেন,"মাগো, যার যেমন ধর্ম সে সেভাবে পালন করবে।তুমি কেন তাদের পাক ঘরে গিয়েছ,আর যেও না।"
মেয়ের কান্না তবু থামে না।এই অবুঝ মেয়েকে তিনি কিভাবে মানুষ করবেন!

শ্যাম শংকরের সে কট্টর অবস্থান এখন নেই, এখন অবস্থা বদলেছে।সারা ভারতে মন্বন্তর চলছে।ঘরে ঘরে খাবার নেই।লাখে লাখে নাকি মানুষ মারা যাচ্ছে।যাবেইতো, দেশে ধানের চাষ নেই, নীল চাষ করা হয়। নীল খেয়ে কি আর খিদে মেটে।
পুজা পাঠ করে শ্যাম শংকর যা পেত তাই দিয়ে বেশ চলে যেত।দেশে খাবারই নেই,মানুষ সৃষ্টিকর্তার নাম নিবে কখন?তার প্রয়োজন, পসার কমে গেল।

ওদের ঘরে খাবার নেই, বিন্দু লুকিয়ে রুবার সাথে খেয়ে যায়।বলে,"ব্রহ্মা সব জানে,তিনি বুঝতে পারেন।পেটার খিদার কি জ্বালা!"
ওরা খিলখিল করে হাসে।রুবার দাদিও আর বিন্দুকে দেখে প্যাচাল পারে না। এখন ঘোর বিপদের দিন।বিপদের দিনে ধর্মের কড়াকড়ি টেনে আনা অন্যায়।

পাড়ার কারও ঘরে ভাত রান্না হয় না।সপ্তাহে একদিন শনিবার জল দেবতার পুজা শেষে রাজা শ্রীকৃষ্ণ আটার গোলা বিলিয়ে দেন।পানিতে আটা,লবণ গুলে সিদ্ধ করা হয়,তারপর ছূড়ে মারা হয় জমা হওয়া প্রজাদের মধ্যে। গত সপ্তাহে পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলে ১০ জন!
রাজা শ্রীকৃষ্ণ নাকি লগ্নি দিচ্ছেন, লগ্নির শর্তের সাথে আরেকটা শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, উর্বশী মেয়েকে তার রাজবাড়ীতে রেখে আসতে হবে।লগ্নির নিয়ম এমনেই কড়া, এক কাঠা ধানের বদলে পরের মৌসুমে দিতে হবে ৪ কাঠা ধান।এরপরে আবার নিজের কুমারী মেয়ে!
তবুও লোকজন যাচ্ছে মুক্তাগাছা, ধান এনে দিয়ে আসছে নিজের উর্বশী মেয়ে।পেটের জ্বালা বড় জ্বালা!

এটা গেল, যাদের মেয়ে আছে। আর যাদের মেয়ে নেই?তারা শাপলা, শালুক, হেলেঞ্চা, কলমি লবণ ছাড়া সিদ্ধ করে খাচ্ছে।
খান সাহেবের অভাব নেই।তার বাড়িতে তিনবেলাই ভাত রান্না হয়।কেউ ভাত চেয়ে পায়নি, এটা এখনো শোনা যায়নি!মুক্তাগাছার অষ্টধর এলাকার খান বাড়ির এজন্যই বেশ নাম ডাক, প্রতিদিন এখানে অনেক লোকের রান্না হয়।নানা জায়গা থেকে মানুষ ভাত খেতে আসে। রুবা, বিন্দু, খোকা, খুকু ওদের ভাত, ডাল, মরিচ ভর্তা এগিয়ে দেয়।বাড়িতে লোকের অভাব নেই, তবু ওরা একাজ করবেই।

সেদিন বিন্দু ভাত দিতে গিয়ে দেখলো চাদর মুড়ি দিয়ে খেতে বসেছে তার বাবা।রুবা তাকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলো। শ্যাম শংকর ঘরে বসে কই মাছের ঝোল, ব্রহ্মপুত্র নদের কাতলা মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা ডাল দিয়ে আরাম করে খেলেন। পাশের ঘর থেকে রুবার দাদি বলছিলেন,"কিরে শ্যাম, অহন তর জাত যায় না?হেদিন আমার নাতনী তর পাক ঘরে গেছে দেইখা বেইজ্জতির চুড়ান্ত করছস।অহন খাইতে বইয়া তর শরম লাগে না।মালাউনের জাত!"
শ্যাম শংকর কিছু বললেন না।তবে প্রতিদিন ভাত খেতে আসতেন।
রুবা, বিন্দু একসাথে বেনি দুলিয়ে পাড়ার টোলে যায়।টোলে সংস্কৃত পড়ানো হয়, খোকা, খুকুও ওদের সাথে যায়।শরিফ খান কিছু বলেন না, দুর্দিনে ছেলেমেয়ে আনন্দে আছে,থাকুক।

শরিফ খান বিয়ের খাবার খেলেন, বেশির ভাগই মিষ্টান্ন। মুসলমানরা বিয়েতে হিন্দুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে, এখানে মুসলমানদের জন্য তা করা হয়নি।
সনাতন ধর্মের লোকেরা মিষ্টিটাই দারুণ বানায়।
শ্যাম শংকর মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, আসলে বিয়ে দিচ্ছেন বলা যায় না।বিক্রি করে দিচ্ছেন, ৭০ বয়সী বুড়ার কাছে টাকার বিনিময়ে বিয়ে। এই সময় সব সনাতন ধর্মী লোকজনই সুবিধাজনক অবস্থানে, তবে সুনীল দেবনাথ একটু বেশিই।নয়তো হিন্দুরা একই এলাকায় মেয়ের বিয়ে দেয় না, শ্যাম শংকর দিলো কেন?
সে কত টাকা দিয়ে বিন্দুকে বিয়ে করল শ্যাম শংকরকে জিজ্ঞেস করা যায়, শরীফ খান ঝামেলায় গেলেন না।একটা লোক যদি এই দুর্দিনে নিজের মেয়েকে বিক্রি করে টিকে থাকে তাতে দোষের কিছু নেই।সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছে!

তিনি খেতে খেতেই ছেলেমেয়ের নাম ঠিক করে ফেললেন, ছেলের নাম আরাফ, আর মেয়ের নাম আকিকা।খাটি আরবি নাম, মুসলমানদের নাম হবে আরবি।আরাফ আল কোরআনের একটা সূরার নাম, আকিকা বাদশাহ হুমায়ুনের কন্যার নাম।কি হবে পরে দেখা যাবে!হায়াত মওতের মালিক আল্লাহ। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি আর চুলও কাটবেন না,লম্বা চুল নবী(সাঃ)'এর সুন্নত।

বাড়ি ফিরে খোকা,খুকুকে তাদের নাম জানানো হল।ওরা বেজায় খুশি। আকিকা ভাইকে আরাম, আরাম ডেকে নাজেহাল করছে।আরাফও কম যায় না, সে বোনের নাম দিল 'কাইক্কা মাছ', আকিকা থেকে কাকিকা, কাকিকা থেকে কাইক্কা!এখন কেউ কাউকে অন্য নামে ডাকছে না। খান সাহেবের মা বেশ রাগলেন,"ও শরীফ বলদা, তুইতো তর বাপের চাইতে বলদ।জানস না, রাজা শ্রীকৃষ্ণ নিষেধ করছে।আরবি নাম নিষেধ, তুই কি আমার নাতিডারে মারবার চাসনি!ওই হারামি, কথা ক।কথা কস না কেন?আমি তর আরবি নামে ছ্যাপ দেই!ওয়াক থু....তুই নাম রাখবি রাধা আর রাম।মাইয়া পোলার দিকে তর মায়া নাই?"

রুবা আস্তে করে ঘরে ঢুকে বাবার পাশে ঢুকলো, বলল,"আব্বা, আমারেও কি তুমি বিক্রি করে দিবা?পাড়ায় সবাই টাকার জন্য মেয়ে বিক্রি করছে।সইরে শ্যাম কাকা হাজার টাকায় বিক্রি করে দিছে।তুমি সইরে দেখছো, সইরে সুন্দর লাগছিল না!আমি আগেই কইছি, বৌ সাজলে সইরে সুন্দর লাগবো। আমি দেখতে গেছি, আমারে দেখতে দেয় নাই!"
রুবা কাঁদছে।
শরীফ খান মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,বললেন,"আমি তোমারে বিক্রি করবো কেন, আম্মা!আমার কি খাওনের অভাব আছে?তুমারে ডাক্তার ছেলে দেখে বিয়ে দিব।"
আরাফ, আকিকা একসাথে বললো,"আব্বা, আমারে বিয়া দিবানা?"
শরীফ খান, রূবা, ওদের দাদি হাসতে শুরু করলো।

ছয় মাস চলে গেল।শরীফ খানের চুল বড় হয়ে গেছে।এবার ফসলটাও রাজা শ্রীকৃষ্ণের সৈন্যরা কেটে নিয়েছে। তাকে দুবার খবর দেয়া হয়েছে, তিনি রাজবাড়ি যাননি।
এখন ঘোর বরষা, একবার শুরু হলে আর থামার নাম নেই।নইলে দেখা যেত রাজার সৈন্য, লাঠিয়াল বাহিনী এবাড়িতেই হাজির হত।
ঘরে জমানো ধান, চাল প্রায় শেষ!হয়তো তাদের চলবে,কিন্তু প্রতিদিন একদল লোক খেতে আসে, তারা খেলে দশদিনও যাবে না!
তিনি খাবার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।লোকজন বলাবলি করে, শরীফ খান পীরের তরিকা ধরছে। সে আর হিন্দুদের খাওন দিব না।সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেবল মুসলমানদের খাওন দেয়।এ এলাকা যে হিন্দুর গা!দিনে দিনে অসন্তোষ বেড়ে গেল।এখন দিনে রাতে চালে ঢিল পরে।তার মা একস্বরে সবাইকে অভিশাপ দিয়ে যান।
এ খবর নিশ্চয়ই রাজা শ্রীকৃষ্ণ পেয়েছেন। রাজাদের অনেক চোখ, অনেক কান।তারা সব দেখে, সব শোনে।

তার মায়ের হাপানি বেড়েছে, সারা রাত কাশেন।কিছুই খেতে পারেন, সব বমি করে দেন। সদরে বদ্যির কাছে যাবার জন্য ট্রলার দরকার। রাজার লোক দিবে না, জানা কথা। উনি সিদ্ধান্ত নিলেন, চুল দাড়ি কেটে ফেলবেন।তারপর যাবেন রাজা শ্রীকৃষ্ণের কাছে।

এগুলার সমাধান হবে, শরীফ খান এগুলা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন।তিনি সকাল থেকে চিন্তিত এই নিয়ে যে, বিন্দুর স্বামী মারা গেছে।আজই স্বামীর সাথে বিন্দুকে শ্মশানে পোড়ানো হবে।তার মেয়ে রুবা খবর পেলে কি করবে, আল্লাহ জানেন।তিনিও কিছু করতে পারবেন না।সতীদাহ প্রথা হিন্দুদের প্রাচীন প্রথা, দেখা যাবে বিরোধিতা করলে লোকজন তাকেই মেরে বসবে।তার এতদিনের উপকার ভুলে যাবে।সব কিছু ঠিক আছে, কেবল ধর্মের কথা বললেই লোকজন আলাদা হয়ে যায়।কি দরকার ছিল এই ধর্মের, যেটা মানুষকে আলাদা করে দেয়?

তিনি বাড়ি ফিরেই দেখলেন, উঠোনে আরাফ, আকিকা রস কস সিংগারা বুলবুলি খেলছে।তাকে দেখেই রুবা বললো,"আব্বা, বিশ্বাস কর সই আমাদের বাড়ি আসেনি।"
এর মানে বিন্দু এবাড়িতে লুকিয়ে আছে!তাহলে কি ঘটনা ঘটবে, বলা দায়!
হয়তো সুনীলকে আগুনে পোড়ানোর সময়ে বিন্দু পালিয়ে এ বাড়িতে এসেছে।শ্যাম শংকর রয় নিশ্চয়ই প্রথমে এ বাড়িতেই খুজতে আসবে!

একদল লোক বাড়িতে এল।তারা হইহই শুরু করলো, তারা বিন্দুকে চায়।নইলে অধর্ম হবে, ঘোর অধর্ম! শ্যাম শংকর নরকে যাবে।সে মুসলমানের অন্য খেয়েছে, অন্নপাপ করেছে।এলাকার আর কেউ না জানুক, স্বয়ং ঈশ্বর জানেন।মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে সে ধর্ম উদ্ধার করবে, পূন্য কামাবে।তার পূণ্য খুন দরকার। এতে কেউ তাকে আটকাতে পারবে না।
শ্যাম শংকর পাগল হয়ে গেলেন।
নিজে ঘরে গিয়ে বিন্দুকে চুল ধরে বের করে আনলেন।লাগিয়ে দিল কয়েকটা কিল,চড়, ঘুষি।
আফিম, ভাং খাওয়ানো বিন্দু জ্ঞান হারালো।

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।শ্মশান প্যাচপেচে কাঁদায় ভরে গেছে।সুনীলকে পুড়িয়েই আগুন শেষ, আবার নতুন উদ্যমে আগুন জ্বালানো শুরু হল।বৃষ্টির জোরে আগুন কিছুতেই জ্বলবে না।ঢেলে দেয়া হল তারপিন।দাউদাউ করে ভেজা কাঠ জ্বলছে।
বিন্দুকে দড়ি দিয়ে টেনে আগুনের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।শ্যাম শংকর মেয়েকে বাশ দিয়ে গুতিয়ে আগুনের দিকে পাঠাচ্ছেন।

একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছেন শরীফ খান, রুবা, আরাফ আর আকিকা।রুবাকে তিনি জোর করে ধরে রেখেছেন। ভীড় থেকে একজন বললেন,"আরে মুসলমানের জাত এখানে কেন?এদের বিদেয় কর।অমঙ্গল হবে না!"
খান সাহেবের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।তিনি এক গ্লাস পানি বিন্দুকে খাইয়ে দিলেন। বললেন,"দেখ, মেয়েটা মুসলমানের হাতে পানি খেয়েছে। ওর ধর্ম গেছে, ওকে দিয়ে আর কি ধর্ম রক্ষা হবে!মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।"
কেউ কথা শুনছে না।গত কয়েক মাস তারা সবাই শরীফ খানের বাড়ির ভাত খেয়েছে, তাদের আবার অন্নপাপ কি? এই মেয়েটাকে পুড়িয়েই ধর্ম উদ্ধার করতে হবে।শরীফ খান সবার সাথে তর্ক করতে লাগলেন।আশ্চর্য! এরা সবাই কোন না কোন সময় তার কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছেন, তিনি কাউকে ফিরিয়ে দেননি।আজ কেউ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

কতই বা সময় গেল।হঠাৎ সবাই তর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেললো। কেউ তার কথার পিঠে কথা বলছে না,সবার চোখ চিতার দিকে নিবদ্ধ।তিনিও পেছেন তাকালেন।
বিন্দুকে কোথাও দেখা গেল না।তিনি এদিকওদিক খুজলেন রুবা, আরাফ আর আকিকাকে।আশ্চর্য! ওরাও কোথাও নেই।
তিনি আগুনের কুন্ডলীর দিকে তাকালেন, ওখানে চারটা মানুষের মত অবয়ব জ্বলছে।অনেকটা শীতের দিনে খড়ের আটি জ্বালালে যেমনটা জ্বলে।

চিতার দুপাশে ভ্রুক্ষেপহীনভাবে চার পাঁচজন লোক লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, জীবিত সতী মেয়েলোককে পোড়ানোর সময় থাকতে হয়, নয়তো মেয়েটি ছুটে পালায়। এখানে এদের কিছুই করতে হচ্ছে না।মেয়ে দুটি, শিশু দুটি কোন নাড়াচাড়াই করেনি।কেমন গলা জড়িয়ে রেখেছিল।কারও গলা জড়িয়ে রাখলে কষ্টটা কম লাগে!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৫৯

আমি ০০০ বলেছেন: কি সাংঘাতিক একটা সময়।চোখের পানি ধরে রাখা দা্য়।আসমান জমিনের ফেরেস্‌তারা এগুলো সহ্য করেছে কিভাবে?

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ১১৭৬ (ইংরেজি ১৭৭০) সালের দূর্ভিক্ষে এমন ভয়াবহ অবস্থাই হয়েছিল। তবে সতীদাহ প্রথার ঘটনাটা আমি যোগ করেছি।

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:০০

ইসিয়াক বলেছেন: পড়ব........আসছি।

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩৯

ইসিয়াক বলেছেন: ভালো লেগেছে

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:১২

রাজীব নুর বলেছেন: গল্পের মুল সমস্যা এখন আর নেই।
এখন মানুষ আধুনিক হয়েছে। অনেক কুসংস্কার দূর করতে সক্ষম হয়েছে।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: এখনো হিন্দু মুসলিম বন্ধু হয়, পরিবারের লোকজন তাদের আলাদাভাবেই দেখে। এখনো মুসলিম লোক ওদের রান্না ঘরে প্রবেশ করলে নতুন করে রান্না হয়, হিন্দু মেয়ে/ছেলেটিকেও মুসলিম পরিবারের লোকজন পছন্দ করে না।
এখনো ধর্মের প্রশ্নে দুই বন্ধু আলাদা হয়ে যায়।
কিছু পরিবার বেশ আধুনিক, তাদের দেখে ভালো লাগে। দুনিয়া বদলাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.