নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই মেঘ এই রৌদ্র

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৭

১...
দিলরুবা তার ননদকে একটা কুৎসিত গালি দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে বললেন। তুলি কোন কথা না বলেই ঘর থেকে বেড়িয়ে এল।ওর কিছু বলার নেই।কি বলবে ও?ওর অপরাধ, যে ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সে না করে দিয়েছে! কারণটা ও বুঝতে পেরেছে, ও যে কালো! যতটুকু কালো হলে,মেয়েদের আমরা শ্যামলা বলি, তার চেয়েও কালো।
ভালোই হয়েছে, ঐ ছেলেকে বিয়ে করার ইচ্ছেও ওর ছিল না।অবশ্য মা-বাবা মরা মেয়েদের ইচ্ছের কোন দাম নেই, তাই রাজি হয়েছিল।
যে ছেলে দেখতে এসেই কথা বলার ছলে গায়ে হাত দেয়, সে অত্যন্ত নগন্য মানুষ!

চান মিয়া ঘর থেকে সাগর, হাসান আর তুলির সব জিনিসপত্র ফেলে দিচ্ছেন। ওদের আর এ বাড়িতে থাকার জায়গা নেই। অরুণ, বরুণ একটু দুরেই দাঁড়িয়ে দেখছে।ওরা ঘুমিয়ে পরেছিল।জিনিসপত্র ফেলে দেবার শব্দে জেগেছে। অন্য সময় হলে, ওরা মাকে বকতে নিষেধ করতো। মা শুধু শুধু ফুপিকে বকছে। কিন্তু ওদের বাবাও চাচ্চু, ফুপিকে বকছে, তাই কিছু বলছে না।কিছু বললেই ওরা মার খাবে, এটা নিশ্চিত।
ওরা ওদের বাবাকে ভয় পায়, আগে অবশ্য পেত না।কয়েকদিন আগে থেকে খুব ভয় পায়।

সেদিন রাতে যেদিন দাদা মারা যাবার জন্য মানুষদের বাসায় দাওয়াত দেয়া হল, সবাই চলে গেলেই ঘরে এলেন মোক্তার মণ্ডল। ওদের বাবা, মা মোক্তার মন্ডলের সাথে কথা বলল, কিভাবে সব জমিজমা লিখে নেয়া যায়!অরুণ, বরুণ বিছানায় মটকা-মেরে শুয়ে ছিল, ঘুমায়নি। ওরা সাগরের সাথে ঘুমায়। সাগর প্রায় একমাস ধরে বাড়ি নেই,কোথায় গেছে কেউ জানে না।
ওরা সব শুনেছে।ওদের মা বলেছে, যদি সাগর, হাসান কোর্ট-কাচারী ঝামেলা তৈরি করে;তবে ওদের বড়পীরের পানিপড়া খাইয়ে পাগল বানিয়ে দিবে।ওদের বাবা যা বলেছে সেটা আরও ভয়াবহ।

ওদের ধারণা, সাগর কাকার মত মানুষ হয় না,সে শুধু ইন্টার পাস করতে পারছে না।ওদের ধারণা, ওরা যখন ফাইভে পরিক্ষা দিবে কাকা তখনো ইন্টার পাস করতে পারবে না।
আর হাসান কাকাতো সারাদিন বাইরে বাইরেই থাকে, মাঝেমাঝে বাড়ি আসে।কখন আসে, কখন যায় কেউ বলতে পারে না।কেবল তুলি ফুপি জানে!
হাসান কাকা গল্প লিখে, সেদিন প্রথম আলো'তে কাকার একটা গল্প ছাপা হয়েছে।ওখানে অরুণ, বরুণ নামও ছিল।আনন্দে ওরা কান্না করেছে, অথচ এমন একটা মানুষকে ওদের আম্মু আব্বু দেখতেই পারে না।ওরা নিশ্চিত, কাকাদের কাছে চাইলেই জমিজমা লিখে দিবে, জোর করে বা চুরি করে নিতে হবে না।

২...
তুলি বাড়ির পাশের জাম্বুরা গাছের নিচে বসে আছে।আকাশে চকচকে রূপালী চাঁদ, জাম্বুরা ফুলের ঘ্রাণে নেশার মত লাগছে।তুলি কখনো সন্ধ্যা মালতী ফুলের ঘ্রায় পায়নি, আজ এ ফুলের ঘ্রাণও আলাদা করে টের পাওয়া যাচ্ছে। দাদী সন্ধ্যা মালতী ফুল অনেক পছন্দ করতেন, তাই হাসান কবরে এই গাছই প্রচুর লাগিয়েছে।
অরুণ, বরুণের কান্নার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে, এখানে আসতে চাচ্ছে।ওদের মা আসতে দিচ্ছে না।

অন্য সময় হলে তুলি রবীন্দ্রনাথ সংগীত গাইতো।চাদের আলো, সন্ধ্যা মালতী ফুলের ঘ্রাণ, আচ্ছন্ন পরিবেশ রবীন্দ্রসংগীতের জন্য উপযোগী। এখন ওর ভয়ভয় লাগছে।একটু দুরেই গোরস্থান, ওখানে কয়েকদিন আগেই ঠাডা(বিদুৎ/বাজ) পরে মরে যাওয়া একজনকে কবর দেয়া হয়েছে। তুলি শুনেছে, ঠাডা পরে কেউ মারা গেলে ভূত হয়ে চাঁদনি রাতে ঘোরাঘুরি করে।

আজ একটা বিশেষ দিন।তুলির অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে।ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে ফার্স্ট হয়েছে, এই খবর শুনে সবচেয়ে খুশি হতেন বাবা।বলতেন,"আমি ইংরেজির শিক্ষক।আর আমার ছোট ছেলে ইংরেজিতে পাস করতে পারে না।অামার মেঝ ছেলে উচ্চ শিক্ষিত অপদার্থ।আমার মেয়ে ইংরেজিতে অনার্স করেছে!এই মেয়েই আমার ছেলে!"
বাবা নেই!থাকলে সারা গ্রামে মিষ্টি বিলানো হত।হাসান ভাইয়াও খুব খুশি হত।বিরক্ত হত সাগর, বলতো,"আপা, এই কঠিন বিষয়ে তুই কিভাবে পাস করলি।আমিতো প্রশ্নের দিকে তাকালেই অক্ষরগুলো নাচানাচি শুরু করে!"
বড় ভাই, ভাবীকে এ খবর দেয়া আর, না দেয়া একই কথা।
দূরে শিয়াল ডাকলো!তুলিকে এই ভয় থেকে উদ্ধার করতে পারে অরুণ, বরুণ, হাসান বা সাগর।ওরা কেউ নেই।সাগর ফেরার সম্ভাবনা নেই, হাসান ফিরবে কিনা কে জানে?
তুলি সারারাত কি গাছের নিচে বসে থাকতে পারবে?

দূরে একটা বৃত্তাকার আলো এগিয়ে আসছে, মনে হচ্ছে মটর সাইকেলের হেড লাইট।হয়তো মঈন আসছে।মঈন হাসানের বন্ধু, এবাড়িতে প্রায়ই আসে।আজকে আসলে তুলি অবশ্য লজ্জায় পরে যাবে।তুলি মঈন ভাইকে খুব লজ্জা পায়।এই লজ্জা কাটানোর জন্যই অদ্ভুত সব আচরণ করে। যেমন- সব সময় মঈনের সাথে কাটাকাটা কথা বলে ওকে অপমান করে।মঈন চলে গেলে, একা একা কাঁদে।

যেদিন ওর বিয়ে ঠিক হল, মঈন অরুণ বরুণকে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে ছিল।অত বড় ছেলে দুটোকে কোলে নিয়ে চুমু খাওয়ার কি আছে?
ছেলে দু'টা অন্যকেউ একটু আদর করলেই জড়সড় হয়ে পরে, কেবল মঈন আদর করলেই বেড়ালের মত গায়েগায়ে মিশে থাকে।তুলি ভেবে পায়নি, কি আছে এই মানুষটার মধ্যে?

ও নিজেও অপছন্দ করার অনেক কারণ খুজেছে, পায়নি!হাসানকে বলেছে, "মঈন ভাই আমার দিকে কেমন করে তাকায়!"
হাসান হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছে,"তুই ওর প্রেমে পরিসনি তো?তাহলে খুব বিপদ হবে, ও আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চাকরি করবো না।পায়ে হেটে তাজমহল দেখতে যাবো।"
তুলি লজ্জায় শেষ!

সেদিন তুলি মঈনকে একটা চিঠি লিখে ফেলল।
মঈন ভাই,
জানেন, আমি এই বিয়েটা করবো না।আমার কাছে ১৩টা শুকনো ধুতুরা ফুল আছে।বিয়ের দিন আমি ওগুলো খাবো।তবে আপনি যদি বলেন, তুলি ওগুলো আমায় দিয়ে দে।আপনাকে দিয়ে দিবো।আপনাকে কথা দিতে হবে,আপনি হেটে তাজমহল দেখতে যাবেন, আমাকেও নিতে হবে!নিবেন আমাকে?
ইতি,
তুলি

ও চিঠি দিতে বারান্দায় গিয়ে দেখে অরুণ, বরুণ খেলছে।মঈন ভাই নেই।ও চিঠি কুটিকুটি করে ছিড়ে ফেললো।আশ্চর্য! টুকরো কাগজগুলো সাদা শিউলি ফুলের মত দেখাচ্ছিল।

৩...
"কিরে মাঝরাতে বাইরে বসে আছিস কেন?আর তোর দেহরক্ষী কমরেড অরুণ, বরুণ কই?চাঁদ দেখছিস বুঝি!চাঁদ দেখতে হয় দুজনে মিলে।বিপরীত লিঙ্গের কেউ হলে ভালো হয়, হাত ধরে বা কাধে মাথা রেখে..... "
"চুপ করুন।মনে হয়, কত দুজন মিলে চাঁদ দেখেছেন?আর আপনি কি ভেবেছেন, আপনি বলবেন আর আমি আপনার হাত ধরে ফেলবো?অাপনার লজ্জা নেই! চলে যান, হাসান ভাইয়া বাড়ি নেই।"

"সাগর ফিরেছে?তোকে পেত্নীর মত লাগছে কেন, সারাদিন কিছু খাসনি মনে হয়!যাহ বাড়ির ভেতর যা, একটা চা করে নিয়ে আয়।আমি তোর বদলে চাঁদকে সঙ্গ দিচ্ছি।যা, তাড়াতাড়ি যা।চায়ের সাথে টাও নিয়ে আসিস।"
"এহ, আসছে জমিদার। আমি কি আপনার কাজের মেয়ে? আপনার জন্য চা করে আনবো কেন!যান ভাগেন!"
তুলির খুব ইচ্ছে করছে, চা নিয়ে মঈনের সাথে গল্প করতে। কিন্তু ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই ভাবি চা বানাতে দেবে না।তুলি কান্না গিলে ফেলার চেষ্টা করছে।কেঁদে ফেললে বিপদ হবে, মঈন ভাই খেপাবে!সবাইকে বলে বেড়াবে, লোকটার একদম লজ্জা নেই যে!

"আচ্ছা, যাহ চা লাগবে না।তোর কাপড়চোপড় নিয়ে আয়, সব মনে হয় বাইরেই পরে আছে।তুই যাবি, না আমি যাবো? তাড়াতাড়ি যা, ইতি তোর চেয়ে ছোট, ওর জামা-কাপড় তোর হবে না।আর ও পরে সব টাইট জামা, তুই পরিস হ্যামেলিনের বাশিওয়ালা টাইপ বেঢপ আলখাল্লা।যাহ, তোকে দশ মিনিট দিলাম।আর যদি বলিস, এখানে বসে মশার কামড় খেয়ে ডেঙ্গু বাধাবি, তবে থাক।আমি গেলাম।"

তুলি ওদের জামাকাপড় ব্যাগে ভরছে।না তাকিয়েও বুঝতে পারছে, অরুণ বরুণ জানালার ফাক দিয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা ঘুমায়নি।
আশ্চর্য! সব জামা,শাড়ি আছে কেবল নীল শাড়িটা নেই।
ও যেদিন নীল শাড়িটা পরে বেড়াতে যাচ্ছিল, মঈন বাড়ির পিছনে বসেছিল।অরুণ, বরুণকে গল্প বলছিল। লোকটা এত মিথ্যা গল্প জানে!
ও নীল চুড়ি পরেছিল, কপালে টিপটাও ছিল নীল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ওর মনে হল, ওকে শাকচুন্নীর মত লাগছে।শাকচুন্নিকে নীল শাড়ি, চুড়ি,নীল পাথরের নেকলেস, নীল টিপে এমনই লাগতো।ও টিপ আর পরেনি।
মঈন ওকে দেখেই বললো,"এই তুলি, তোকে নীল শাড়িতে একদম সম্রাজ্ঞীর মত লাগছেরে!শুধু নীল টিপের একটু ঘাটতি!"
তুলি ঐ দিনের ম্যাচিংকরা সব তুলে রেখেছিল।ওগুলো কিছুই খুজে পেল না!

৪...
হাসান বেড়-শিমুল গাছটার নিচে বসে আছে।প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে গাজার আসর বসতো।এখন দিনের বেলাতেও বসে, মাজারে গাজা খাওয়ার অনুমতি আছে।অন্য কোথাও খেলে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।পুলিশ কখনো মাজারে মাদকাসক্তদের ধরতে আসে না, পীর আউলিয়াদের এ বিষয়ে হাত থাকতে পারে!
বড়ফুপু, মেঝফুপু, ছোটকাকা, বড়মামা সবার বাসায় খোজ নেয়া হয়েছে। তুলিকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি।অরুণ বরুণ বাড়ি থাকলেও জানা যেত তুলি কার সাথে, কোথায় গেছে।ওরা মামার বাড়ি চলে গেছে।
মঈনদের বাসায় যাবার প্রশ্নই আসে না, তুলি মঈনকে দেখতেই পারে না!
অরুণ, বরুণের মামা বাড়ি যাওয়া যায়।তাতেও সমস্যা, ছেলে দু'টো কথা বলবে না।ওদের দু'ভাইকে নিয়ে গল্প লিখার কথা, লিখা হয়নি।

বড় ভাইয়ের প্রতি হাসানের কোন ক্ষোভ নেই।হাসান প্রতিজ্ঞা করেছে, বড় ভাই যাই করুক তার সাথে খারাপ আচরণ করবে না,ঝগড়া করবে না।
কিছু মানুষ ভাইবোনকে ভালোবাসার বিরল ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়, চান মিয়া তাদের একজন। তেমনি ছেলেদের বদলে ফেলার অসীম ক্ষমতা নিয়ে মেয়েরা জন্মায়, দিলরুবা ভাবি ভাইয়ের প্রতি সে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করেছেন!চান মিয়াকে বদলে ফেলেছেন। চান মিয়া এখন সম্পত্তি,টাকা পয়সা ছাড়া কিছুই বোঝেন না।ওরা বাকি ভাইবোন সম্পত্তি-টাকার ভাগিদার!

ওদের মা ছোটবেলায় মারা যায়।তখন বড় ভাই তাদের গোসল করিয়েছে, খাইয়ে দিয়েছে। রাতে ঘুম না আসলে ভাইবোন মিলে জাম্বুরা গাছের নিচে হারিকেন জ্বালিয়ে সাপলুডু খেলেছে। খুব বেশি আগের কথা নয়, মাঝরাতে খিদে পেলে চান মিয়া হলুদ-মরিচ, আতপচাল, ঘি, ডিম, আলু দিয়ে পাতলা খিচুড়ির মত কিছু একটা রান্না করে ওদের খাওয়াতো। হাসানের এখনো ঐরকম মাঝরাতে রান্না করে খেতে ইচ্ছে করে, বড় ভাই রান্না করবে আর ওরা সবাই চারপাশে গোল করে বসে থাকবে।ভাইকে বলা হয় না!

সেবার হাসান ফাইভে বৃত্তি পরিক্ষা দিবে।ওর সিট পরেছে ব্রহ্মপুত্রের ঐপাড় চড় অষ্টধর।খুব সকালে নদীতে নৌকা ছাড়ে, একবার না ধরতে পারলে আসতে যেতে ২ ঘন্টার মামলা।হাসান নিশ্চিত পরিক্ষা মিস করবে, এই চিন্তায় হাসানের ঘুম আসে না।বড় ভাই ওকে ডেকে বললেন,"হাসান, তুই ঘুমা।আমি জেগে আছি, তোকে ভোরে নিয়ে যাবো।" হাসান বেঞ্চে ভাইয়ের কোলে আরামে ঘুমিয়ে পরলো।চান মিয়া জেগে রইলো।

ভোরে ভাইকে কাধে নিয়ে চান মিয়া দৌড়ে ঘাটে গিয়েছে। চান মিয়া নৌকায় ঘুমিয়ে পানিতে পরে গেছে। বাবা বলেছেন," বাড়িতে ফিরে যা চান মিয়া, আমি হাসানকে নিয়ে যাই।"
তবুও ফিরে আসেনি, ভেজা কাপড়েই ভাইয়ের সাথে গিয়েছে। কাপড় ভেজায় একটা সুবিধা হয়েছে, আর ঘুম আসেনি।

যেদিন বৃত্তির রেজাল্ট দিয়েছে, সেদিন সারা পাড়া হাসানকে কাধে নিয়ে ঘুড়িয়েছে, চিৎকার করে তোলপাড় করেছে,"আমার ভাইয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাইছে! তোমরা কে কোথায় আছো, দেখে যাও!এমন শিক্ষিত আর জীবনে দেখবার পারবানি!"

সেই ভাই আর এই ভাইয়ে অনেক তফাৎ। এই ভাই সব সম্পত্তি জাল করে লিখে নিয়েছে, সাগরকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে, বোনকে রাতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সে কি জানেনা, সাগরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া আর তুলিকে বের করে দেয়া এক না!মেয়েদের জন্য দুনিয়া কত কঠোর, নিকৃষ্ট!
তবও হাসান ভাইকে মাফ করে দিয়েছে।

৫...
কামারপট্টির সবচেয়ে সুন্দর, আলিশান বাড়িটা মঈনদের।
হাসান বাড়ির গেটে দাঁড়িয়েই তুলি আর ইতির হাসির শব্দ শুনতে পেল।'মা ছেলেকে খাওয়ান' এর ইংরেজি ইতি বলেছে,'Mother eats the child.'
ওকে দেখেই তুলি দৌড়ে এল।
৫ দিনপর ভাইবোনের দেখা।তুলির ভাইকে জড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হল।ওর ভাইটা এমন শক্ত, বাবা মারা গেল তবুও একটু কাঁদেনি!

মঈন বাসায় নেই।ইতি, মঈনের মা-বাবা হাসানকে ঘিরে বসে আছে।মঈনের বাবা এসে হাসানের হাত ধরলেন, বললেন,"বাবা, তোমার বোনকে আমাদের ঘরে দাও।"
হাসান কিছু বুঝতে পারলো না।সবার দিকে শুন্য দৃষ্টিতে তাকালো।
ইতি বললো,"আমি বলি বাবা, তোমার এই কথা ভাইয়া বুঝতে পারেনি!হাসান ভাই, মঈন ভাইয়া তুলি আপুকে ভালোবাসে।আপনি কি মনে করেন, এই জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারছে না।সে ঘোষণা দিয়েছে, প্রয়োজনে বিয়ে করবে না তবু বন্ধুত্ব ভাঙবে না।হাহা....এখন আপনি কিছু বলুন।"

মঈনের আম্মু হাসিহাসি মুখে বললেন,"না করলে মানবো না।তুলি আমাদের বাসায়, আমরা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিব।"
হাসান আমতা-আমতা করে বললো,"কিন্তু তুলি মঈনকে একটুও পছন্দ করে না।ওকে শুধু কথায় কথায় অপমান করে।"
একথা শুনে ইতি, মঈনের বাবা-মা জোরেশোরে হাসতে লাগলেন।

৬...
মঈন, তুলি সিল্কসিটি ট্রেনে বসে আছে।মঈনের চাকরি হয়েছে, রাজশাহীতে অফিস।
গতপরশু ওদের বিয়ে হয়েছে, বিয়ের পর থেকেই মঈন তুলিকে মোহিত করার সব রকম চেষ্টা করছে।
একবার তুই করে, আবার তুমি করে বলছে।তুলি কিসে খুশি হচ্ছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না!
তুলির রজনীগন্ধা ফুল খুব পছন্দ, সে রাতে তুলিকে একটা রজনীগন্ধার মালা দিয়েছে। তুলি হাতে নিয়ে বলেছে, তার বেলি ফুলের মালা পছন্দ। মঈন বাইরে বেড়িয়ে দেখে ওদের বেলি ফুল গাছে একটা ফুলও নেই।আশ্চর্য!সারা বছর গাছে ফুল থাকে। আজ নেই!

তুলি বাসর ঘরে মন খারাপ করে শুয়ে ছিল।মঈন জিজ্ঞেস করলো,"তুলি, তোর, ইয়ে মানে তোমার কি মাথা ধরেছে?আমার পকেটে নাপা এক্সট্রা আছে।খাবে?"
তুলি হেসে ফেলল, বললো,"মাথা ধরেনি।সাগরের জন্য খারাপ লাগছে।একটা মিষ্টিপান খেতে ইচ্ছে করছে।আপনার পকেটে আছে নিশ্চয়ই!"
মঈন ঠিকই পকেট থেকে মিষ্টিপান বের করে দিয়েছিল।

তুলি এই মানুষটার নিপাট ছেলেমানুষীতে খুব আমোদিত হচ্ছে।রাতে দুধ খাবার পর, মঈন ঠোঁটে দুধ লেগে আছে বলে হাত দিয়ে মুছে দিল।আজব!ঠোঁট ধরার ইচ্ছে হলে এমনেই ধরবে, বাহানা লাগবে কেন?
তুলি যদিও মঈনের সাথে কথা বলছে, মঈন লজ্জায় লাল হয়ে আছে।ওর লজ্জাটা হাসান আশেপাশে থাকলে আরও বেড়ে যাচ্ছে।

ট্রেন ছাড়তে এখনো অনেক দেরি।হাসান, সাগর চাইলেই তুলি-মঈনের সাথে গল্প করতে পারে, তা করবে না।ওরা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।হাসান পরেছে গাঢ় বেগুনি পাঞ্জাবি, সাগরের গায়ে নোংরা পোশাক, ওকে কুৎসিত লাগছে!সাগরকে কাল রাতে মঈন কোথা থেকে যেন খুজে এনেছে, সাগর তুলির সাথে কথাও বলেনি।
যেহেতু ভাইদের সাথে কথা বলার সুযোগ নেই, তুলি মনেমনে কথা বলার চেষ্টা করছে।

"ভাইয়া, দেখিস একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।তোর চাকরি হবে; আমি,তুই, বড় ভাইয়া, সাগর, অরুণ, বরুণ, আর আমার ছেলেমেয়ে মিলে হেটে না, প্লেনে করে তাজমহল দেখতে যাবো। কোন চাদনি রাতে আবার ভাইয়া ওর অখাদ্য খিচুড়ি রান্না করবে, আমরা চারপাশে গোল করে বসে থাকবো;মাঝরাতে আমরা ব্রহ্মপুত্রে পা ডুবিয়ে বসে থাকবো।
মঈনকে নিবো না।ও হেটেই যাবে!
ও ভালোবাসার অত্যাচার করে আমার জীবন অতিষ্ট করে ছাড়বে, দেখিস!আমার ছেলেমেয়ে তোকে মামা করে বিরক্ত করবে, তুই বলবি," তুলি ছেলেমেয়ের অত্যাচারে তোর বাসায় আর আসা যাবে না!"
ভাইয়া, মাফ চাই, কানে ধরি।আমি তোর ডাইরি পড়ে ফেলেছি!"

"সাগর শোন, আমাদের বাবা ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন দেখে তোকেও ইংরেজির জাহাজ হতে হবে এমনতো কথা নেই!তুই ঠিকই সামনের বার পাস করে যাবি, যদি তুই চাস।তোর ১০০ নাম্বার দরকার নেইতো!
তুই আমার সাথে কথাও বললি না।আমি সেদিন তোকে মারার সময় ভাইয়াকে ফিরাইনি বলে? ভাইয়া অমনি, ভাবির সাথে রাগ ঝারতে পারে না দেখে তোকে ওভাবে মেরেছে!তুই আর ও বাড়ি যাবি না।ছোট ভাইয়া যেখানে যাবে, ওর সাথেসাথেই যাবি।দেখবি, ওর গল্প লেখালেখির ভূত শেষ, তোর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য হলেও চাকরি করবে।
তোরা ভালো থাকিস, আমি ভালো থাকবো।মঈন ভাইকেতো চিনিসই, অমন একটা লোকের সাথে ভালো না থেকে পারা যায়!"

মঈন তুলির দিকে তাকিয়ে বললো,"এই তুলি দেখ, গরম জিলাপি ভাজছে, খাবে?তুমি বোস, আমি নিয়ে আসি।এই যাবো, এই আসবো।"
তুলি শক্তকরে মঈনের হাত ধরলো। "আপনাকে কোথাও যেতে হবে না।"
"তুলি, আমাদের সাথে সাগরকে নিয়ে যাই।ওখানে বাসায় একা থাকতে তোমার কষ্ট হবে।"

সাগর কোন কথা না বলেই ট্রেনে উঠে বসলো। মঈন সাগরের জন্য ট্রেনের টিকেট কাটতে ছুটোছুটি করছে।তুলি মনে মনে বললো,"মঈন, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।"

ট্রেন চলতে শুরু করেছে।তুলির হাত ধরে হাসান এগিয়ে যাচ্ছে, কোন কথা বলছে না।তুলির কান্না পাচ্ছে, ভাইয়া কাঁদলে তুলিও কেঁদে ফেলবে।
হাসান শব্দ করে কেঁদে ফেলল, তিন ভাইবোন অনেকদিন পর একসাথে কাঁদছে।মা মারা যাওয়ার পর, চার ভাইবোন গলা জড়িয়ে কাঁদতো।এখানে বড় ভাই চান মিয়াই কেবল নেই!
ট্রেন জোরে চলতে শুরু করেছে, হাসান বোনের হাত ছাড়েনি।
তুলি, সাগর, মঈন হাসানকে এড়িয়ে পেছনে তাকিয়ে আছে। ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে চান মিয়া, উনার পিছনে অরুণ, বরুণ!উনার হাতে নীল শাড়ি, সেদিন তুলি এই শাড়িটাই খুজে পায়নি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আরে এটা তো আমার আইডি নেইম । সব জায়গাতেই আমি এই নামে ব্লগিং করেছি। ফেবুতেও এই নাম ছিলো কিন্তু জাকারবার্গ রাখতে দেয়নি আসল নামে আছি। হাহাহা

এই নামে একটা বইও আছে আমার

গল্প অবশ্যই পড়বো । অফিস ছুটির টাইম তো তাই মন্তব্য দিয়ে ফার্স্ট হয়ে গেলাম ভাইয়া

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫০

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: সব সময় রবীবাবু, শরৎবাবু, সুকান্তবাবু আর জীবনবাবুর থেকে নাম চুরি করি। আপনিই বাদ থাকবেন কেন!একটা নাম চুরি করলাম! হা হা....

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪২

মা.হাসান বলেছেন: আজকের গল্পটায় মন খারাপের চেয়ে মন ভালোর উপাদান বেশি ছিল। খুব ভালো লেগেছে। জীবনে কষ্টের সাথে আনন্দও আছে, শুধু কষ্ট না ফুটিয়ে আনন্দটা ও একটু বেশি করে ফুটিয়ে তুলুন। গল্প খুব ভালো লেগেছে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: একটা নিখাদ আনন্দের গল লিখার চেষ্টা করছি, তাও অনেক দিন। পারছি না।
মানুষজন বলে আমি নাকি কষ্ট, খুন, খারাপি ছাড়া কিছ দেখতে পাই না!
ধন্যবাদ!

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

ইসিয়াক বলেছেন: আজ আমি কিছু বলবো না। বুঝে নিতে হবে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: স্বাগতম। আশা করি, ভালো আছেন।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:০০

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার গল্প। লেখার ভঙ্গিমা সুন্দর।

এই মেঘ এই রৌদ্র এই নামে রবীন্দ্রনাথের একটা ছোট গল্প আছে।
হুমায়ূন আহমেদের একটা উপন্যাস আছে।

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪০

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের নাম "এই মেঘ এই রৌদ্র ছায়া"।
আপনি ভালো আছেন নিশ্চয়ই।
ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৫:৪৬

বলেছেন: জীবনের গল্প.. +++

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ!

৬| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ২:১৪

আনমোনা বলেছেন: গল্পটা খুব সুন্দর হয়েছে।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করছি আরকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.