নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্মফল

২৫ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৬


১...
নিশুতি রাতের অন্ধকার চিড়ে এগিয়ে আসছে একটা কুপি বাতি।
করিমের মা'র আত্তা ছাৎ করে উঠলো, আরে আলোটা গোরস্তানের দিকে যায়। নিশ্চয়ই আগুইন্না পেততুনি। এই পেততুনি মুখে আগুন নিয়ে সারা রাত ঘুরে বেড়ায়, কাউকে একা পেলে আগুনে পুড়িয়ে গিলে ফেলে।
মিটিমিটি আলোটা বাশের ঝাড় পেড়িয়ে গোরস্থানে ঢুকে গেল। করিমের মা ভয়ে ঘরের দরজায় খিল দিয়ে শুয়ে পড়লেন।

পরদিন সকালে কাঠালিপাড়ায় তোলপাড়। কামরুলের ছোট মেয়েটাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। কামরুলের বৌ বারবার ফিট হচ্ছে। কামরুল অজ্ঞান, বালতি বালতি পানি দিয়েও ওর জ্ঞান ফিরে না।
কামরুলের বৌ বিলাপ করে,"ওরে আমার ফারিয়া মা, তুই কই গেলি!তুই কই গেলি মা!...."

কিছুক্ষণের মধ্যেই ভিড়ের একটা অংশ করিমের মাকে ঘিরে ধরে। তিনি পেততুনি ফারিয়াকে খেয়ে ফেলার রগরগে কাহিনী বলতে থাকেন। কামরুল একবার চোখ খুলে আবার ফিট হয়, কামরুলের বৌ গালমন্দ শুনতে শুনতে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পরে।

"জানোনি তুমরা, তহন নিশি রাইত।আমি উঠছি মুতপার। চাইয়া দেহি, কামরুলের মাইয়াডা বাইরে উডানে হাডে। ওর আতে একটা তেলের পিডা।
কামরুইল্লারে কত কইছি, বেডা, বাড়ি বেড়া দে। গোরস্থান থেইকা বাড়ি দেহা যায়। গেল না, গেল না তর ফুট ফুইট্টা মাইয়াডা।
মাগিও খারাপ আছে, তর মাইয়া বাইরে আর তুই গরে ঘুমাস কেমনে? মাইয়ার লগে বাইরে আইতে পারস না?
আর কি কমু, আগুইন্না পেততুনি মাইয়াডার ঘাড়ে কামড় দিয়া গোরস্তানের মিহি গেল গা।আহারে! মাইয়াডা চিক্কুরও দিবার পারলো না।"

আশ্চর্য! কেউ প্রশ্ন করে না। অমন অমাবস্যার রাতে করিমের মা এত কিছু দেখলো কেমনে? আর দেখলই যদি ফিরাইল না কেন? আগুইন্না পেততুনি মানুষ দেখলেই তো পলায়।

২...
ফুলমতি বুয়া পা ছড়িয়ে বসে আছে।তাকে নান্দাইল থেকে আনা হয়েছে। তার সামনে কাশেমপুড়ি পাতি জরদা, শাহজাদা গুল, মুক্তাগাছার বড় পান আর গোপালের মন্ডা থরে থরে সাজানো। উনি কিছুতেই হাত দিচ্ছেন না।
উনি গাল ফুলিয়ে বললেন,"অই কামরুইল্লা, এইডা কি শাড়ি আনছস! আমি কি ফকিন্নি নাহি! আমারে ভাবছস কি? আমি এক হজ দিছি, আরেকটা দিমু। আমার লেইগা আনলি সাদা কাপড়? নীল পাইড় সবুজ জমিনের একটা টাংগাইল্লা শাড়ি আনতে পারলি না!তর শাড়িতে আমি থু দেই।"

কামরুল একগাল হেসে বলে,"বুবু, তুমি কোকিলার কাছে গিয়া বহ, আমি অহন যাইতাছি তুমার লেইগা শাড়ি আনতে।"
কামরুল শাড়ি আনতে গঞ্জে চলে যায়।

ফুলমতি কোকিলার কাছে যায়। কোকিলা ঘামছে, ফরশা গালে লালচে আভা। ফুলমতি বুয়ার বিয়ে হয়নি, সন্তান জন্ম দেবার কষ্টটা তবু্ও তিনি বুঝতে পারেন, কোকিলার পানি ভেঙেছে। সময় কাছাইয়া আসছে।
উনি কোকিলার হাত ধরে বলেন,"ওই মাগী, ডরাস কেন? আমি আছিতো। এই দুই আত দিয়ে ১৭০ ডা গেদা দুইন্নার আলো দেকছে। ১০১ টা গেদারে দুইন্নায় আনলেই এক হজ, আমার দুই হজ অইতে বেশি দেরি তো নাই। তুই একটু সবুর কর। আমার আতে একটা গেদাও মরে নাই।"

কোকিলা হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল, বললো,"আপনে আমার ধর্মের মা, আমারে মায়ের কাছে দিয়া আহেন। আমি মইরা যাবো গো। কতদিন আমার মায়রে দেহি না।মরার আগে মায়রে দেখবার চাই।"

কোকিলার এটা প্রথম সন্তান না। ফারিয়ার পরেও তার সন্তান হয়েছে, তিনটা শিশুপুত্র, দুইটা শিশুকন্যা। একজনও বাঁচে নাই।

৩...
কোটেরচর মাদ্রাসার পাশে ঝাকড়া তেতুলগাছের নিচে বাড়িটা কোকিলাদের।বাড়িটা একেবারে রাস্তার পাশে, কোকিলার চিৎকার শুনে পথচারী দাঁড়িয়ে যায়, আবার চট করেই হাটা দেয়।
কেবল আরফুজ পাগলা জিজ্ঞেস করে,"এই বাইতে চিক্কুর পারে কেডায়?আহারে!মাইয়াডার কত কষ্ট।"
আরফুজ পাগলা বাকিদের মত চলে যায় না। রাস্তার পাশে বসে যায়, মোনাজাত ধরে,"আল্লাহ, তুমি মাইয়াডার কষ্ট কমাইয়া দেও। আল্লাহ, তুমি রহমানুর রহিম।"

আশ্চর্য! একটা নগ্ন পাগল রাস্তায় মোনাজাত ধরেছে। এমন অদ্ভুত-দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য গ্রামে বারবার আসে না! আরফুজ পাগলার চারপাশে একদল মানুষ জমে যায় দ্রুত। আরফুজ পাগলা মোনাজাতে শব্দ করে কাঁদতে থাকে।
ফুলমতি বুয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে, এই নগ্ন, গায়ে আলকাতরা মাখা পাগলকে দেখে হকচকিয়ে যায়।
তিনি জিজ্ঞেস করেন,"এই পাগলা, তুই লেংটা ক্যা?"
"আম্মাজী, আমিতো লেংটা না। আমার শইলে সবুজ পাঞ্জাবি। চাইয়া দেহেন আমার চাইর দিগে কত লেংটা, এগুলারে আল্লায় লজ্জাও দেয় নাই। আমারে কয়, লেংটা পাগলা। আম্মাজী, আপনে গরে যান। আমার বইনডার পুলা হবে! ফকফইক্কা একটা পুলা।আপনে খাড়াইয়া থাইকেন না।"

ঘরে গিয়ে ফুলমতি সত্যিই অবাক হন। বাচ্চার মাথা বেড়িয়ে আছে, তবে নাড়ি প্যাচানো। উনি সাবধানে প্যাচ ছাড়িয়ে বাচ্চাকে টেনে আনেন।
ফুলমতি স্বস্তি পান না, বাচ্চাতো কান্দে না। ছেলে বাচ্চা আসমান জমিন ফাটাইয়া কাঁদবে, এইটাই নিয়ম।এই ছেলে কান্দে না কেন? তার হাতে মরা গেদা হইতেই পারে না! উনি বাচ্চাটাকে পিঠে চড় দেন, উল্টিয়ে ঝাকি দেন, মুখে দম দেন, কিছুতেই কাজ হয় না!
ফুলমতি অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন গর্ভফুল বেড়িয়ে আসবে?উনার ধৈর্য্য কুলোয় না, উনি ফুল টেনে বের করে যেইনা গরম পানিতে ছেড়ে দেন ছেলে গলা ছেড়ে চিৎকার দেয়।
ফুলমতি দরাজ গলায় ঘোষণা দেয়,"আমার আতে মরা গেদা অইতেই পারে না!"

কামরুল ততক্ষণে বাড়ি ফিরে বৌকে, ফুলমতি বুয়াকে না দেখে রাগে আত্মহারা।হুটহাট শ্বশুরবাড়ি এসে দেখে আরফুজ পাগলা বাড়ির পাশে রাস্তায় মোনাজাত ধরেছে। ওর রাগ বেড়ে যায় কয়েকগুণ! কামরুল হাতের কাছে বাশের লাঠিটা হাতে তুলে নেয়, পাগলাকে যেইনা বাড়ি দিবে তখনই ছেলের কান্না শুনে। কামরুল মাথা ঘুরে পরে যায়।

৪...
কামরুলের বাড়ি আজ লোকে গমগম করছে।সে দশকাঠা জমিন বিক্রি করেছে, সারা গ্রামের লোক দাওয়াত করেছে। গরু জবাই করেছে তিনটা, হিন্দুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, তিনটা খাসি কাটা হয়েছে। সবই পালা গরু,খাসি। লোকজন তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে, তবে শিশুপুত্রের মুখ দেখার সৌভাগ্য কারও হয় নাই।

কামরুল অত্যন্ত বিরক্ত। সে নিজেও পুত্রের মুখ দেখতে পারে না। ওর পকেটে একটা সোনার চেইন, পুত্রের মুখ দেখে পড়িয়ে দিবে। যদিও মুসলমানের অলংকার পড়া হারাম। তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, আল্লাহ ক্ষমা করবেন!
তাও হচ্ছে না। কোকিলা ঘোষণা করেছে, পুত্রের মুখ আরফুজ পাগলা না দেখা পর্যন্ত কেউ দেখতে পারবে না। তবে কামরুল ফুলমতি বুয়ার কাছে শুনেছে, তার পুত্র সাক্ষাৎ রাজপুত্র, একেবারে ফকফইক্কা!
আরফুজ পাগলার খোঁজে লোক পাঠানো হয়েছে। এখনো ফিরে নাই।

ঘোর সন্ধ্যায় আটজনের দল আরফুজ পাগলাকে বেধে আনল।সে কিছুতেই থাকবে না, এখনি চলে যাবে।
কোকিলা দৌড়ে বাইরে এল। ঘোমটা টানা কোকিলাকে দেখেই পাগলা শান্তভাবে বললো,"ভালা আছ, বইনে?"
গঞ্জ থেইকা নাপিত এনে পাগলার চুল, দাড়ি কেটে দেওয়া হল। তাকে সাদা চেকের লুঙ্গি আর টকটকে লাল শার্ট দেয়া হল। সে কিছুতেই পড়বে না। তার গায়ে সবুজ পাঞ্জাবি, তার অন্য পোশাকের দরকার কি?
কোকিলা বললো,"ভাইজান, সবুজ পাঞ্জাবি খুইলা দেন। আমি ধুইয়া দেই। আপনে এই পুশাক পিন্দেন, আমি দেহি। আপনেরে কেমুন দেহা যায়!"
পাগলা আর আপত্তি করে না!

কোকিলা সোনার চেইন আরফুজ পাগলার গলায় পড়িয়ে দেয়। কামরুলের রাগ হয়, তবে কিছুই বলে না। আরে, পাগলারে সোনার চেইন দেওনের কাম কি?
কোকিলারে কইষ্যা চড় দিতে পারলে ওর শান্তি লাগতো। কিন্ত ও প্রতিজ্ঞা করেছে, কোকিলাকে আর মারবে না। ওর সাথে রাগ করবে না। কোকিলা ওকে পুত্র দিয়েছে!

পুত্রের মুখ দেখে কামরুল অত্যন্ত আনন্দিত হয়।আহারে!কি সুন্দর মুখখান। ও কোলে নিতে ভয় পায়, এত ছোট পুত্র যেন বিলাইয়ের ছাও।কোকিলা জোর করে কোলে দেয়! কামরুল আনন্দে কেঁদে ফেলে।

কোকিলা পুত্রের ডাক নাম রাখে আরিফ, কামাল উদ্দিন আরিফ! আরফুজ পাগলার সাথে মিলিয়ে নাম আরিফ।
কামরুলের রাগ হয়, মন চায় দেয় কোকিলার গালে এক চড়। এক চড়েই পাগল ভাইজানের প্রতি দরদ ছুইটা যাইব! পাগলারে নিয়া এত মাতামাতির কি আছে?
কামরুল কিছুই বলে না, আগেই প্রতিজ্ঞা করেছে। পুরুষ মানুষের এক জবান!

৫...
আরিফও হয়েছে বিরাট বাপ নেওটা। বাপ যেখানে যায়, সেখানে তার যাওয়া চাই-ই চাই। বৈশাখের ঠাঠা পরা রোদে ও বাপের সাথে মাঠে যায়!বাপে কাধে নিয়ে হাল চাষ করে, ওকে মইয়ে বসিয়ে ক্ষেত মই দেয়।
কামরুলের খুব রাগ হয়, আবার আনন্দও হয়। প্রথমে ও ভাবতো ছেলে রইদে কালা হয়ে যাবে। এখন দেখা যায়, ছেলে রইদে একটু লাল হয়। তবে ছায়ায় আসলে আবার ফরশা রঙ ফুটে উঠে!

ছেলে কাকে ভালোবাসে এইটা নিয়ে কোকিলার সাথে ওর মন কষাকষি হয়ে যায়। কোকিলা বলে,"পারলে রাইতে আপনের কাছে নিয়া দেহেন তো!"
কামরুল সত্যিই আশ্চর্য হয়। সারাদিন ছেলে তার সাথে থাকবে, তবে সন্ধ্যা হইলেই এমন করে যেন বাপকে চিনেই না। বাপকে দেখলেই চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে থাকে। কাছে গেলেই লাথি,কিল মারে, থুতু ছিটিয়ে দেয়। সারাক্ষণ কোকিলাকে জড়িয়ে রাখে।

এজন্য কামরুল, কোকিলা আলাদা ঘুমায়। কত দিন কামরুল কোকিলাকে কাছে পায় নাই, ভূলেই গেছে!
সেদিন মাত্রই কোকিলার বুকে মুখ গুজেছে আর তাকিয়ে দেখে ছেলে হাতে বটি দাউ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আরিফের ফরশা মুখে লাল চোখ দুটো জ্বলছে!

আবার ভোর হলেই ছেলে অন্য রকম। বাপে না খাইয়ে দিলে খাবে না। বাপের পিছু পিছু এখানে সেখানে যাবে।
কামরুল অনেকবার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছে,"অই বাপধন, তুই রাইতে আমার লগে অমন করস কেন?"
"কি করি, আব্বা!"
"আমারে মারস, ছ্যাপ দেস, দাউ নিয়া কুপাইতে আসস। আমারে চিনসই না।"
আরিফ খুব অবাক হয়, কিছুই মনে করতে পারে না। বলে,"কি কও আব্বা!তুমারে মারমু ক্যা?তুমি আমার আব্বা না!"
আরিফ বাপকে জড়িয়ে ধরে। কামরুল রাতের দুঃখ ভুলে যায়।

৬...
এভাবেই চলতে থাকে। আরিফের এই আশ্চর্য আচরণের সাথে কামরুল, কোকিলা মানিয়ে যায়। তবুও শেষ রক্ষা হয় না। সৃষ্টিকর্তার মনে কি চলে, কে জানে?

আরিফের ৫ বছর পরতেই ও কি একটা রোগে আক্রান্ত হয়। ওর ফরশা শরীর আরও সাদা হয়ে যায়। শুকিয়ে যেতে থাকে দিন দিন, খাবার কোন রূচি নাই। হাটু, বুক শুকিয়ে হাড়ের সাথে প্রায় লেগে গিয়েছে,গাল ভেঙে গেছে,কুচকুচে কালো চোখ কোন মতে কোটরে আটকে আছে। কেউ দেখলে আঁতকে উঠে!
কে বলবে, এই ছেলেকে দেখে পাড়ার ইমাম সাব বলেছিলেন,"সুবহানাল্লাহ, এই শিশুপুত্রের রূপ ইউসুফ নবীর চাইতে কোন অংশে কম না!ইউসুফ নবীকে দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, এই ছেলেকে দেখে চোখ শান্তি পাইল। সুবহানাল্লাহ!"

কামরুল, কোকিলা পাগল প্রায়!সারাদিন কামরুল ছেলেকে কোলে নিয়ে বসে থাকে, রাতে কোকিলা বসে থাকে! আরিফ আব্বা,আম্মাকে প্রশ্ন করে,"আমার কি অইছে? আমি কি মইরা যামুগা?"
ওরা দুজন শব্দ করে কেঁদে ফেলে।

কামরুল চেষ্টার কোন ত্রুটি করে না। ডাক্তার, বদ্যি, কবিরাজ কিছুই বাদ যায় না। যে যাই বলে চিকিৎসা করে, কিছুতেই কিছু হয় না। পিজি হাসপাতালের বড় ডাক্তার বলেছে,"ছেলের শরীরে কোন রোগ নাই। আমি কিসের চিকিৎসা করবো?"
কামরুল রেগে যায়, ডাক্তারকে বিচ্ছিরি গালি দেয়,মারতে যায়, চিৎকার করে,"আপনে আমার চ্যাটের ডাক্তর! এই শিশুপুত্রের রোগ ভালা করবার পারেন না, আপনে গু খাইয়া পড়ালেহা করছেননি?"
রাগারাগি, কুদাকুদি করলে কি আর ছেলে ভালো হবে? পরক্ষণেই বুঝতে পারে। চুপ করে যায়, ডাক্তারের কাছে মাফ চায়।

৭...
সেদিন কামরুল মাদ্রাজ থেকে ফিরছে। তারাও কিছু করতে পারে নাই। গ্রামে ফিরতে ফিরতে নিশুতি রাত, ঘোর অমাবস্যা।
কে জানে, কামরুলের মনে কি চলছিল। কামরুল পুরাতন গোরস্তানের কাছে এসেই পাগলের প্রলাপ জুড়ে দিল।
উজ্জ্বল-তীব্র চাঁদের আলোই কেবল মানুষকে পাগল করে দেয় না, মাঝেমধ্যে ঘোর অমাবস্যাও এই অসাধ্য সাধন করে!

"বুঝলা কোকিলা, সব আমার পাপের শাস্তি! আমি একটা খুন করছি। মাইনশেরে মারি নাই। আমার মাইয়াডারে খুন করছি, ফারিয়ার কতা মনে আছেনি তুমার? ওরে আগুইন্না পেততুনি খায় নাই, আমি জ্যাতা মাডি দিছি।ঐযে গোরস্থানে!"
কোকিলা হাটা থামিয়ে কামরুলের দিকে তাকিয়ে থাকে, কোলে আরিফ মাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!কোকিলা কি বলবে বুঝতে পারে না।

"হেই দিনও আছিল অমাবস্যা নিশুতি রাইত। তুমি ঘুমে, আমি মাইয়াডারে খুড়মা দেওনের কতা কইয়া ঘুম থেইকা তুইলা বাইরে নিয়া আহি। একটা ছুডু কব্বর আগেই খুইদ্দা রাখছিলাম।"
"কি কও তুমি এগুলা?"
কোকিলার গলা জড়িয়ে আসে।

"আগে আমারে শেষ করবার দেও।
আমার পিলেন পানির মতন সোজা, মাইয়াডারে গলা টিইপ্পা মাইরা কব্বর দিয়া দিমু।
গলায় চাইপা ধরছি, মাইয়া কিন্তু আমার কান্দে না, চোখ বড় বড় কইরা কয়," আব্বা, আমারে মার ক্যা?আমিতো কিছু করি নাই। দুধ খাইছি, মক্তবেও গেছি। আইজকা আলহামদু সূরা মুহস্থ করছি!তুমি হুনবানি?.....আব্বা, আগে খুরমা দেও, খাইয়া লই।পরে সুরাডা তুমারে হুনাই।"
আমিতো পাষাণ আমার দয়া লাগে না। আমি আরও জোরে গলা চাইপা মাইয়ারে কব্বরে নামাই।
মাইয়া তাও কান্দে না।
আত বাড়াইয়া আমার শইল ঝাইরা দেয়, কয়,"আব্বা,তুমার জামাতে বালু লাগতাছে।"
এই হইল মাইয়া মানুষের বুদ্ধি, তুই মইরা যাইতাছস হেইডা না, তর চিন্তা আমার জামাতে বালু লাগে!
পরে কি করমু, তাড়াতাড়ি জ্যাতা মাডি দিয়া ঘরে আইসা পরছি।
অত মায়া দেহাইলে চলে না।"

কোকিলা ছেলেকে মাটিতে নামিয়ে রাখে, কামরুলের কলার চেপে ধরে পাগলের মত হয়ে যায়।
"কেন করলেন এমুন! আমার মাইয়াডারে মাইরা ফালাইছেন, কেমনে পারলেন? মাইয়াডা বাইরে খেলতে গেলেও ফিইরা আইসা কইত," আম্মা, আব্বা আইছেনি? মনে অয়, আব্বারে কত দিন দেহি না।"
একটা কিছু খাইতে দিলেও আধ খান আপনের লেইগা রাইখা দিত।ভাত না খাইয়া আপনের লেইগা বইসা থাকতো, আপনের লগে খাইব। এমুন মায়াধারী মাইয়াডারে আপনে মাইরা ফালাইছেন, আপনে কি মানুষ না!"
"কি করমু কও, মাইয়া মানুষের অপরাধ অইল বুক আর যোনী।এই দুইটা ছাড়া মানুষ আর কিছু দেহে না।
তুমার কতাই চিন্তা কর, তুমারে কত মারছি। তুমার বাপের কাছতে কত জমিন লেইখা নিছি, তাও তোমারে বাপের বাড়ি যাইতে দেই নাই।
মাইয়া বেটি মানেই ঝামেলা, হের লেইগা মাইরা ফালাইছি।ঝামেলা শেষ করবার চাইছি!"

"শেষ অইছে আপনের ঝামেলা? মাইরা তো নিজেও বাঁচতে পারলেন না।আপনের পাঁচ পাঁচটা পুলাপান জন্মের সময় মরছে। অহন আরিফও মইরা যাইবো। আল্লায় আপনেরে শাস্তি দিতাছে।আপনের উপরে আল্লার গজব পড়ছে।আপনের লেইগা আমার দুধের শিশু কষ্ট পাইতাছে!"
করিম চিৎকার করতে থাকে,"আল্লাহ, আমি বিরাট অপরাধ করছি, আমার মাইয়াডারে খুন করছি। তুমি আমারে শাস্তি দেও, আমার পুলাডারে বাঁচাইয়া রাখ। ও আল্লাহ, ইয়া খোদা! আমার পুলাডারে আর কষ্ট দিও না।"
ওর চিৎকারে মানুষ জমা হতে থাকে।

খুব ভোরে পুলিশ কামরুলকে বেধে নিয়ে যায়।
একটু পরেই আরিফ মাথা তুলে, বলে,"আম্মা, পানি খাবো। আমারে ভাত দেও।খিদায় তো মইরা গেলাম।
আম্মা, আমার আব্বা কই? মনে অয়, আব্বারে কত দিন দেহি না।আমার আব্বা কই?"
কোকিলা কি বলবে ভেবে পায় না, মেয়ে হওয়া সত্যিই ঝামেলা!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: ঈশ্বর আমাকে স্বপ্নঘোরে পরম সত্য উপলব্ধি করার দিব্যজ্ঞান দান করেছেন।

২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

২| ২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: যেমন কর্ম তেমন ফল। সময় থাকতে সাবধান হই।

২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৪৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: কাজ করার আগে ভেবে নিই।

৩| ২৫ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:২৭

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: পড়বাম

২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৬

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: পড়ে জানাবেন, কত বাজে হয়েছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.