নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহীরুহ

২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৬


১...
জমাটবাধা কুয়াশা, একহাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই সকাল জীবনানন্দের সকাল!
বাজার জমতে এখনো অনেক সময় বাকি। দোকানীরা দোকান খুলতে শুরু করেছে মাত্র। সরকার হোটেলের সামনে ছালা গায়ে বসে আছে শাপলা। একমনে গান করছে...
"আগুন লাগাইয়া দিলো কনে, হাছন রাজার মনে
নিভে না দারুণও আগুন, জ্বলে দিল-জানে...
ধাক ধাক কইরা উঠলো আগুন
ধরলো আমার প্রানে
সুরমা নদীর জল দিলে, সুরমা নদী..র জল দিলে
নিভে না সে কেনে....."
শাপলার গান মোটর সাইকেল থেকে নামা পুলিশকে মোহিত করলেও, শিশু কিউপিডকে কিছুতেই মোহিত করছে না। সে হুটহাট হামাগুড়ি দিয়ে দূরে চলে যেতে চাচ্ছে। নগ্ন নাদুসনুদুস ফরশা বড়বড় চোখের এই শিশু পুত্রের সাথে শিশু কিউপিডের পার্থক্য একটাই, তার পিঠে পাখা নেই! তবে অদৃশ্য তীর হয়তো আছে!যে তীরে বিদ্ধ হয়েছে আরিফুজ্জামান পুলিশ।
শিশু কিউপিড একটু দূরে চলে যাচ্ছে আর শাপলা তার পায়ে টেনে কাছে নিয়ে আসছে।

আরিফুজ্জামান পুলিশ পরম মমতায় শিশুটিকে কোলে নিতে গেলেন।শাপলা চিৎকার করে উঠলো,"ছুইবিনা, ছুইবিনা আমার পোলারে। তর হাত ময়লা, তুই ঘুষ খাস। ছুইবি তো মরবি, এক কুপে তর কল্লাডা কাইট্টা ফালামু!"
শাপলা তার ধারালো অদৃশ্য অস্ত্র উঁচিয়ে রাখলো।
আরিফুজ্জামান পুলিশ লজ্জা পেল কিনা ঠিক বোঝা গেল না। পুলিশ আর রাজনীতিবিদদের লজ্জা থাকতে নেই। এর আগে এই এলাকার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোনায়েম সরকার একই লজ্জার মধ্যে দিয়ে গেছেন!

মাজহারুল মাস্টার সাইকেল থেকে নামতেই শাপলা তাকে ঘিরে ধরলো।
"ও মাস্টার, মাস্টার! আমার পুলাডারে নিবা? ফিরিতে দিয়া দিমু, ফিরিতে বাপ হইয়া গেলা!কেমুন মজা।তুমিতো বিয়া করবা না। নেও মাস্টার, আমার পোলাডারে তুমি নেও।কতা দিলাম, আর জীবনে তোমার কাছে খাওন চাইতাম না।"
মাজহারুল মাস্টার বিপদে পরলেন। শাপলা পাগলী উনার শার্ট ধরে আছে। এটা প্রথম না, যত পাগল, অসহায় লোক মাস্টারকে প্রায়ই এমন বিপদে ফেলে।কিছু মানুষ থাকে যাদের দেখেই মনে হয়, উনার মনে অনেক মায়া।
মাজহারুল মাস্টার চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।

"মাস্টার নিয়া যাও, দেহ দেকতেও তুমার লাহান। ফকফইক্কা ফরশা!কুনো নটির পুতের ক্ষেমতা আছে, যে কইতে পারবো এইডা তুমার পুত না। নেও মাস্টার, পুলারে তুমার মত মানুষ বানাইয়ো!" শিশুপুত্র ততক্ষণে মাজহারুল মাস্টারের পা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

২...
রাঈদ অনেকক্ষণ ধরে টয়লেটে বসে। আব্বা স্কুলে চলে গেলেই বের হবে, এর আগে না। ও আজ স্কুলে যাবে ন। কিছুতেই যাবে ন।
ওকে এজন্য মিথ্যা কথা বলতে হবে।আব্বা জিজ্ঞেস করলেই বলবে, আমার পেট খারাপ।
অবশ্য আব্বা কতক্ষণ পেপার পড়বে ঠিক নেই। আজ বৃহস্পতিবার, আজ আব্বার অংকের ক্লাস নেই।
ভূল হয়েছে, স্কুলে যাবার ঠিক আগে টয়লেটে ঢুকে গেলেই হত। আব্বা কখন স্কুলে যাবে, আল্লাহ জানে।
অবশ্য আব্বাকে বললেও আব্বা রাগ করবে না। কাল একটা ঘটনা ঘটেছে, সে খুব লজ্জা পেয়েছে!

রাঈদ কাল প্রথম স্কুলে গিয়েছে। যাবার সময় কোন সমস্যা হয়নি।ও আর নিহান একা একাই স্কুলে গেছে। ঠিক বড় কড়ই গাছটার নিচেই বসে ছিল শাপলা পাগলী। সবাই পাগলীকে দেখলেই "লাঊ আর ইছামাছ" বলে চেচায়। রাঈদ কখনো চেচায়নি।
পাগলীটা রাত হলেও ওদের বাসার কাছে বসে একমনে গান গায়....
"খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দিবো কিসে......"
রাঈদের ঘুম পেয়ে যায়। রাঈদের মা নেই, মা থাকলে নিশ্চয়ই ওকে এমনি গান গেয়ে ঘুম পাড়াতো!

কিন্তু সমস্যা হল স্কুল থেকে ফেরার সময়। ছেলের দল কড়ইগাছ তলে এসেই 'লাউ আর ইছামাছ" বলে চেচাতে লাগলো!পাগলী গেল রেগে, পুলাপানরে দিল দৌড়ানি!
রাঈদ খেয়াল করলো পাগলী কারও পিছনে ছুটছে না, ছুটছে ওর পিছনে!কেন? কে জানে? ওতো পাগলীকে কখনো "লাউ আর ইছামাছ" বলেনি।
ছোটছোট পায়ে রাঈদ বেশিদূর যেতে পারেনি। ঠিক মিশুকদের দোকানের সামনে এসে থেমে গেল, ভাবলো কেউ না কেই ওকে বাঁচাবে। পাগলী ওকে ধরেই মুখে দুদু গুজে দিল, বললো,"খাও খাও বাবু, দুদু খাও।"
দোকানে বসা সবাই দাঁত বের করে হাসলো। কেউ ওকে বাঁচাতে এলো না!
এরপর আর স্কুলে যাওয়া যায় না।পাগলী যে আজ ধরবেনা, কে বলবে?

"কিরে ব্যাটা, স্কুলে যাবি না?"
"বাবা, আমার পেট খারাপ।"
"শাপলাকে ভয় পাস? কড়ই গাছের রাস্তায় না গিয়ে গোলাম হুজুরের পুকুর পাড়ের রাস্তা দিয়ে যেতে পারিস না।বেড়িয়ে আয় আজকে আমি তোকে স্কুলে নিয়ে যাই।"

রাঈদ বেড়িয়ে এল, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেল। দেখলো আব্বার হাতে একটা শাড়ি, গাঢ় বেগুনি শাড়ি। রাঈদ দেখেছে, পাগলীটার কাছে পাঁচটা শাড়ি লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, নীল রঙের! আব্বাই দিয়েছেন। এইটা দিলে ছয়টা হবে।পাগলীটা শাড়িগুলো সবসময় কাছে রাখে, পড়ে না।

৩...
পাগলী শাড়িটা উল্টাপাল্টা করে দেখছে।
"মাস্টার, একটা আসমানী রঙের শাড়ি দিয়ো।তাইলে রামধনুর সাত রঙ পূরন হউবো।সবগুলা জমাইতাছি, পুলার বৌয়েরে দিমু।"
মাজহারুল মাস্টার খাবারের বাটিটা এগিয়ে দিলেন। শাপলা আগ্রহ করে খাচ্ছে।
"শাপলা, রাঈদ তোমাকে ভয় পায়। তুমি ওকে ভয় দেখাও কেন?"
"ও মাস্টার, কও কি?পুলা মাইনশের আবার ডর কি?ওই পোলা, আয় আমার কাছে আয়।"
শাপলা কোছায় গোজা দুইটা পেয়ারা আর একটা মজা জলপাই রাঈদের দিকে এগিয়ে দিল।
"নেও, নেও। ডরাও কেন? তুমার কি সুন্দর নাম "রাঈদ"! রাঈদের নামের মানে জানোনি? আলো!মাস্টার সুন্দর নাম রাকছো!"
রাঈদ বাবার পিছনে লুকিয়ে গেল।

শাপলা কিছুটা মন খারাপ করলো। বললো,"মাস্টার, আসমানী রঙের শাড়ি কবে দিবা? তাড়াতাড়ি দিয়ো কইলাম।"
স্কুল থেকে ফেরার সময় রাঈদ পাগলীকে কোথাও দেখলো না। ও বড় কড়ই গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে
গোলাম হুজুরের পুকুর পাড়ের রাস্তায় খুজেছে। পাগলীকে দেখতে পায়নি। রাঈদ খুশি হবে, না কষ্ট পাবে; বুঝতে পারছে না!

রাতে রাঈদের আর ঘুম আসে না। একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হল, পাগলীটা আজ বাড়ির পাশে এলো না কেন? ওকে তো রাতে এখানে গান গাইতে নিষেধ করা হয়নি! জানা কথা, বাবা বলবে, তুমিই পাগলীকে ভয় পাও আবার তারই গান শুনতে চাও!এটা কেমন কথা?
বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে, রাঈদের কিছুতেই ঘুম এলো না।
ও শুনেছে রানু মণ্ডল নামে এক বিচ্ছিরি সুরের মহিলাকে হিমেশ শিল্পী বানিয়ে দিয়েছেন। মহিলার গান একদম ভালো না। বাংলাদেশে নিশ্চয়ই এমন কেউ নেই! তাহলে পাগলীটাও শিল্পী হয়ে যেত।
তখন অবশ্য পাগলীটাকে মা ডাকা যেত।শিল্পীকে মা ডাকা যায়, পাগলীকে যায় না।

৪...
আজ শুক্রবার। বাবা আজ সারাদিন ছাত্রদের পরিক্ষা নিবেন। ছুটিরদিন বাবা রাঈদকে পড়াতে বসে না। আজ সারাদিন কি করা হবে তা আগেই ঠিক করা; প্রথমে পাগলীকে এক পাতা শ্যাম্পু দিয়ে আসবে, পাগলী সারাক্ষণ মাথা চুলকায়। নিশ্চয়ই উকুন হয়েছে! তারপর রাব্বিকে সাথে নিয়ে গোলাম হুজুরদের বাগানে গিয়ে ঘুঘুর বাসা দেখে আসতে হবে, ঘুঘু সাত দিনে বাচ্চা ফোটায়।তারপর গোলাম হুজুরের পুকুরে ঝাপাঝাপি। এটাও সমস্যা, রাঈদ ভালোমত সাতার পারে না।আর রাব্বিটা ওকে পুকুরে চুবানি দেয়!

রাঈদ শ্যাম্পুর পাতা হাতে নিয়ে পাগলীকে কোথাও খুজে পেল না। কড়ই গাছ, পুলের উপর, গোলাম হুজুরের পুকুর পাড়; কোথাও নাই! যেন উধাও হয়ে গেছে।
ও কোটের চড় মাদ্রাসা মাঠের মাঝখান দিয়ে ফিরে আসছিল।
নতুন দোতলা বিল্ডিংয়ের সামনে ঠিক কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে পাগলীটক। একটা কুকুরের বাচ্চা ওর চারপাশে কুইকুই করে চক্কর কাটছে। শাপলার চুল, কাপড়, হাতে কামড় দিয়ে টেনেটেনে ওকে উঠানো চেষ্টা করছে!মানুষ অন্য ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারে না, আর কুকুরের বাচ্চাতো নচ্ছার।
শাপলার হুস নাই!
ওর চারপাশে ছড়িয়ে আছে উচ্ছিষ্ট খাবার, বমি আর জমাট বাধা রক্ত। রক্তে ওর কোমড় থেকে নিচের দিকটা ভেজা।

রাঈদ কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেল। কুকুরের বাচ্চাটা চক্কর কাটা থামিয়ে রাঈদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ও দৃশ্যটা দেখেই চিৎকার জুড়ে দিলো,"ও আল্লাহ!আল্লারে! পাগলী মরে গেছে!" এক দৌড়ে বাড়ি পৌছে গেল।

সাহীন ডাক্তার শাপলার নাড়ি পরিক্ষা করলেন, স্যালাইন দিলেন। মাঠে অনেক মানুষ জমে গেছে। ভীড় ঠেলে রমিছা দাই এগিয়ে গেল। শাপলার মুখ,চোখ দেখে বিড়বিড় করে বললো,"দেখছ মাগীর কারবার! মাগী আবার পেট বাজাইছে।"
মাজহারুল মাস্টার ডাক্তারের দিকে তাকালেন।ডাক্তার কিছুই বললেন না, একদৃষ্টে ঊনার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
শাপলার হুস ফিরেনি, সে কয়েকটি শাড়ি শক্ত করে ধরে ধরে আছে। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনি রঙের শাড়ি!

৫...
একটা বড়গাছ, বোঝার উপায় নেই এটা কি গাছ!পরগাছা ঝেকে বসেছে। প্রকৃতির কবি William wordsworth বলেছেন, ঈশ্বর আর গাছের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।দুটোই নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করে যায়।মানুষ ঈশ্বরকে দূয়ো দেয়, গাছ কেটে ফেলে; দুটোই নীরব থাকে!
এখানে গাছের সাথে একজনকে শক্ত করে বাধা। উচ্চতা পাঁচ ফুট চারের বেশি হবে না, ফরশা মুখ, ছোটছোট করে কাটা খাড়া ছুল আর গোল মুখে দাড়ি নেই।ছোটছোট নীল চোখে তাকে অনেকটা যুবক যীশুর মত লাগে।
গায়ের নীল শার্ট ছিড়ে ফেলা হয়েছে, পড়নে ছিন্নভিন্ন প্যান্ট কোন মতে তার লজ্জা ঢেকে রেখেছে! উনি মাজহারুল মাস্টার!

শিক্ষক হতে হলে আত্মত্যাগ আর আত্মসংযম থাকতে হয়। একটা মুখোশ পড়ে থাকতে হয়। চাইলেই দুটো বাজে শব্দ ব্যবহার করা যায় না, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে চা, সিগারেট খাওয়া যায় না, পার্কে,নদীর ধারে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায় না, সিনেমা হলে সিনেমা দেখা যায় না, চলতি-আধুনিক চুলের কাট দেয়া বা হাল ফ্যাশনের কোন পোশাকও পড়া যায় না।অথচ কেউ কেউ এগুলো খুব পছন্দ করে।
মাজহারুল মাস্টারকে মারা হয়েছে, চোখ ফুলে গেছে, ঠোট কেটে টপটপিয়ে রক্ত পরছে। কারও মনে পরছে, এই লোকটি তাদের সন্তানকে ফ্রিতে পড়ান, বিপদে এই লোকটি টাকা ধার দিয়ে কখনো ফেরত চেয়েছেন, এমন নজির নেই।
মাজহারুল মাস্টার গাছ নন, কোন সর্বংসহা অতিমানব নন।উনি কেন, প্রতিবাদ করছেন না।আল্লাহ জানে!খাড়া চুলের মানুষের নাকি খুব রাগ থাকে, ইনার রাগ নেই কেন?

মোনায়েম সরকার, হেড মাস্টার সিরাজ পায়ে পা তুলে বসে আছে। সবচেয়ে চিন্তিত রফিকুল মিয়া, তিনি কালো মুখ করে মজলিশের এমাথা-ওমাথা হাটাহাটি করছেন। মাস্টার বলেছিল মেয়ের বিয়েতে একটা শাড়ি কিনে দিবে, গত হাটেই নিয়ে নেয়া উচিত ছিল। নেয়া হয় নাই!
এমন ভালো মানুষটা কেমন করে পাগলীর পেট বাজাইলো!রফিকুল মিয়ার বিশ্বাস হয় না! রফিকুলের পাঁচ মেয়ে, তিনটাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। মাস্টার প্রতি বিয়েতে শাড়ি আর টাকা দিয়েছে! আবার তার অবিশ্বাসও হয় না, আল্লার দুনিয়ায় সব সম্ভব। নইলে এই মানুষটা বিয়া করে না কেন, আর পাগলীর আগের পুলাই বা পালবো কেন? রফিকুল কিছু বলতে চেয়েও চুপ করে থাকে!

হেড মাস্টার সিরাজ একদলা থুতু ফেলে বললো,"আমি আগেই বুঝছি, এই অমায়িক চরিত্রের পেছনে কিছু আছে।তখন বিশ্বাস কর নাই,এখন দেখলা! মাজহারুল মাস্টার আগেও পাগলীর পেট বাজাইছে, সে ছেলেই সে এখন পালে। এই মাস্টার আমি আমার স্কুলে রাখবো না।আপনারা হেরে শাস্তি দেন, এমন শাস্তি যাতে আর কোনদিন কোন মেয়ের সর্বনাশ না করতে পারে।"
"চেয়ারম্যান সাব, হের ধন কাইটা গলায় ঝুলাইয়া দেন। পরে হারা গেরামে ঘুরাইয়া আনি।বেবাকতে দেখুক, কোন জিনিস দিয়া কি করছে!এইডাই উচিত বিচার। ৭১এ দেখলেন না, মারামারি খুনাখুনি কইরা দেশ স্বাধীন করলাম।মারামারি, খুনাখুনি ছাড়া বিচারের উপায় কি!"
কথাটা বললেন মুক্তিযোদ্ধা আনসার উদ্দিন।
মাওলানা রেজাউল বললেন,"আমরা মুসলিম দ্যাশ।বিচার হইবে হাদিস,কোরআনের নিয়মে। চুরি করলে হাত কাটা, আর জেনা করলে ইটা ঢিলাইয়া মাইরা ফেলা, এই নিয়ম। ইটা আনেন, সবাই ঢিলাইয়া হেরে মাইরা ফেলি।"
মাজহারুল মাস্টারের ঐদিকে খেয়াল নেই। তিনি ঢলে পরেছেন, যেন ফলবতী গাছ!

মাজহারুল মাস্টারের ছাত্ররা একে একে চলে যাচ্ছে। শিশুরা ঈশ্বরের আরেক রূপ। এরা নিয়তি বদলাতে পারে না।
উন্মুক্ত বুক, ভেজা চুল, আর টকটকে লাল শাড়ি পড়া শাপলা সখিনার মত লাগছে। হোসাইন ইবনে আলীর কন্যা সখিনা!
মাটিতে ছেচড়ানো আঁচল দিয়ে কোনমতে বুক ঢেকে সে মজলিশের মাঝখানে এল। মাজহারুল মাস্টারকে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলো।
"মাস্টার, ও মাস্টার কি হইছে তোমার?"
সবার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,"তুমরা হেরে মারছনিগো, মারছনি হেরে!হেরে মারছ কেন? মারলে সিরাজরে মার, মোনায়েম সরকাররে মার
হেগর লগেতো পারবা না।হেই ক্ষেমতা তুমগর নাই। হেরা রাইতে আমারে খাওনের কথা কইয়া ডাইকা নিয়া বুনি ছানাছানি করে, যাইত্তা দরে। সিরাজে তুমরার মাইয়াগরে জ্বালায়, হেরে মার। আহারে!এই ভালা মাস্টাররে মারলা কেন?এইডা কেমন বিচার।
মাস্টার, ও মাস্টার। চাইয়া দেহ, আমি তোমার নাল শাড়ি পিনছি।মাস্টার, ও মাস্টার!"

কেউ পাগলীর কথার গুরুত্ব দিল না। পাগলে কি না বলে!তার কথা গুরুত্ব দিতে নেই।এটাই নিয়ম।
পাগলী একনাগাড়ে কথা বলেই যাচ্ছে,"মাস্টার, পুলাও খাওয়াইবানি!ইলশা মাছ দিয়া পুলাও খাইতে মুন চায়। তুমিতো আসমানি শাড়িও দিলা না।সামনের হাটে দিয়ো।নাল শাড়ি পিইন্দা পুরান কইরা ফালাইছি, আরেকটা নতুন কিইন্না দিয়ো। মাস্টার, ও মাস্টার, কতা কও।আমার দিগে চাও।"
পাগলেরা বকবক করে যাবে, তাতে কার কি আসে যায়?

(ব্লগ ব্যাগাজিনে প্রকাশিত)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মুগ্ধকর লিখনশৈলি ।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ। আশাকরি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:৫৫

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি ভালো লেগেছে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো লাগলে দায় আপনার, বাজে লাগলে দায় একান্তই লেখকের!

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর জীবনের গল্প।

অনেকদিন পর আপনার পোষ্ট পেলাম।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩১

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: হ্যা, অনেকদিন পর৷প্রতিদিন ভাবি লিখব, সময় করতে পারি না।
"ক্রাচের কর্নেল" পড়ছি, অসাধারণ লিখা। একটু পড়ি, একটু লিখি!কোনটাই আগায় না।

পরীরা কেমন আছে?

৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:০৫

মা.হাসান বলেছেন: বহুদিন পরে লিখলেন। জাদু চালাতে থাকুন।

২৮ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: যাদু শেষ প্রায়। যতই পড়ি,দেখি এসব আগেই লিখা হয়ে গেছে। লিখে কি হবে?
আর ইদানীং কেউ এসব লিখা পড়েও না।
সবাই কি ভয়ানক সময় পাড় করছে।

আপনার পুরো নাম কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.