নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরাজিত জোছনায় অযথা একটা জীবন

ঘনিষ্ঠ হলে মানুষেরা অস্তিত্ব হারায়...

মি না

"তুমি হৃদয়ের যতই গভীর থেকে গভীরে স্থান নেবে, তার প্রতিবিম্ব হবে ততই পরিষ্কার ও ঝকঝকে।"

মি না › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক মুহূর্তের গল্প_

১৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২০

দুপুরে খাওয়া শেষ করে ছোট বোনের সাথে টিভিতে শাহরুখ খানের সিনেমা দেখছিল রিদসি এমন সময় কলিং বেল বাজল, দরজায় একটা ছোট-খাটো মাঝারি বর্ণের ছেলে আর বড় আপু।

দরজা খুলতেই আপু পরিচয় করিয়ে দিল, 'ওর নাম বাবু, নোমানের ছোট ভাই।' নাম আগে থেকেই শোনা ছিল কিন্তু আজ দেখা হল আর সময়টা এমন যে টিভির সামনে থেকে উঠতেই ইচ্ছা হচ্ছিল না। কিন্তু কি করার বোনের শ্বশুরবাড়ির মানুষ, অবহেলা করলে আবার শতকথা শুনতে হবে। তারাহুরা করে পেয়ারা কেটে আনল রিদসি। গাড়ি নিচে অপেক্ষা করছিল তাই হাতে একটুকরা পেয়ারা নিয়েই চলে গেল বাবু।

দিনচারেক পর বোনের বিয়ে... আর সবকাজ এত জলদি হচ্ছিল যে কিছু বুঝে উঠা মুশকিল ছিল। তারপর সব ঝামেলা পেরিয়ে বোনের বিয়েটা হয়েই গেল। বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তেও রিদসির বিশ্বাস হচ্ছিল না যে ওর বোন শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছে।

বিয়ের চারমাস পর... নোমান ভাইয়ার ভাইবোন আর রিদসি, সবাই মিলে একসাথে গেল ডিনার পার্টিতে। ঐদিনের পর আবার দেখা হল বাবুর সাথে রিদসির। হঠাৎ করেই বাবুর ফোন দিয়ে রিদসির ফোনে মিসকল দিল, আর তার কিছুদিন পর কল ও এসএমএস চালাচালি শুরু হল। তখন ওরা ক্লাস 9 এ পড়তো। ওদের ফোনে কথা বলার ব্যাপারটা বড়দের কাউকে বলা হল না।

ফোনে ওরা কিছুদিনের মধ্যে খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেল। বাবুর সব বন্ধুরাও রিদসির বন্ধু হল কিন্তু রিদসির বয়ফ্রেন্ড বাবুকে খুব একটা পছন্দ করত না। তাই রাতুলকে জানিয়ে খুব একটা কথা বলা হত না। কিন্তু রাতুলের সাথে যখন অনেক ঝগড়া হত তখন রিদসি বাবুকে ফোন দিত। বাবুও খুব সাহায্য করত রিদসির মন ভাল করতে কারন রাতুল অযথাই মেয়েটার সাথে খারাপ ব্যবহার করত আর অনেক বকাঝকা করত।

বোনের শ্বশুরবাড়ি খুব একটা পছন্দ না করলেও বাবুর জন্য রিদসি ঐখানে যেতে বেশ সাচ্ছন্দ বোধ করত। খুব ধার্মিক পরিবারের হওায় বাসায় গেলেও ওরা ফোনে কথা বলতো, সামনে খুব কমই আসা হত। এভাবে ৩ বছর গেল। আর রিদসি বিশ্বাস করতে থাকলো যে একটা ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে। কারন তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া কিছুই ছিল না। বন্ধুত্ব-হাসি-তামাশা আর কিছু দুঃখ কষ্ট ভাগাভাগি করে নেওয়া এই।

রিদসির বয়ফ্রেন্ডের সাথে কিছুদিন পর ওর বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এত ঝগড়া আর ভুল বুঝাবুঝির মধ্যে না পেরে একসময় রাতুল আর রিদসির সম্পর্ক ভেঙে যায়। রিদসি দিশেহারা হয়ে পড়ে। খুব কষ্ট পেতে পেতে অনেক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

যখন বাবু এগুলা জানতে পারে তখন ও আর ওর সব বন্ধু মিলে অনেক সময় আর অনেক গল্প করে রিদসিকে ঐ যন্ত্রনা থেকে বের করে আনে। ঐ সময়টায় বাবু না থাকলে যে রিদসি কি করত আল্লাহ্‌ ভাল যানেন।

হঠাৎ একদিন রিদসির বড় বোন জানল রিদসি আর বাবুর ফোনে কথা বলার কথা। এত দিন হয়তো জানলে কিছু হত না কিন্তু রাতুলের সাথে ব্রেক আপের পর কথাটা জানাতে পেরে ওর বড় বোন ব্যাপারটা ভাল চোখে দেখেনি। আর খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের হওয়াতে বাবুর পরিবারে সবাই ব্যাপারটা খুব নেগেটিভ ভাবে দেখল। আর সম্ভবত বাবু-রিদসির মধ্যে খানিক ভুল বুঝাবুঝি হয়। ওদের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। নোমান ভাইয়ার মা বোনেরা তারপর থেকে রিদসিকে অপছন্দ করে। রিদসি এখন ব্যাপারগুলা খুব ভালমত বুঝতে পারে, আগে হয়তো না বুঝেই অনেক কিছু নিয়ে এত ভাবত না।

রিদসি এখনও খুব কষ্ট পায়, খুব কাঁদে, বাবুর মত বন্ধু ওর নেই আর কোন ছেলের সাথেই এমন বন্ধুত্ব ওর হবে না। ও বলে 'বাবুকে খুব মিস করি। কিছু কথা শুধু বাবুর সাথেই শেয়ার করতে ভাল লাগে।'

আমার খুব খারাপ লাগে যখন রিদসি বলে, 'আগে কথা হত দেখা হত না কিন্তু এখন ওদের বাসায় গেলে বাবুকে দেখি কিন্তু কথা হয় না। কিন্তু আমার মনে হয় ও আমাকে কিছু বলতে চায়। আমারও ওর সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা হয় কিন্তু বলতে সাহস হয় না।'

সামান্য সৌজন্য বোধক কথাও ওরা বলে না। জানি না বাবু কি মনে করে তবে আমার মনে হয় রিদসি এখনও ওর বন্ধু হতে চায়। সেই বন্ধুত্ব যেখানে কোন স্বার্থ থাকবে না, থাকবে না কাউকে চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছা। কিন্তু সবাই কি মনে করবে আর ভাববে সেই ভয়ে এখনও রিদসির মধ্যে একটা সংকোচ। হয়তো বাবুর মনেও একই ভয়...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.