![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"তুমি হৃদয়ের যতই গভীর থেকে গভীরে স্থান নেবে, তার প্রতিবিম্ব হবে ততই পরিষ্কার ও ঝকঝকে।"
“কেউ কথা রাখেনি” __সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।
মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর
তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো
সেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে!
নাদের আলী, আমি আর কত বড় হবো? আমার মাথা এ ঘরের ছাদ
ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায়
তিন প্রহরের বিল দেখাবে?
একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনো
লাঠি-লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্করবাড়ির ছেলেরা
ভিখারীর মতন চৌধুরীদের গেটে দাঁড়িয়ে দেখেছি
ভিতরে রাস-উৎসব
অবিরল রঙের ধারার মধ্যে সুবর্ণ কঙ্কণ পরা ফর্সা রমণীরা
কত রকম আমোদে হেসেছে
আমার দিকে তারা ফিরেও চায়নি!
বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও…
বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই
সেই রয়্যাল গুলি, সেই লাঠি-লজেন্স, সেই রাস-উৎসব
আমায় কেউ ফিরিয়ে দেবেনা!
বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে!
ভালোবাসার জন্য আমি হাতের মুঠেয়ে প্রাণ নিয়েছি
দূরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীল পদ্ম
তবু কথা রাখেনি বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ
এখনো সে যে-কোনো নারী।
কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটল, কেউ কথা রাখে না
সেই কবে থেকে জ্বলছি
জ্ব‘লে জ্ব‘লে নিভে গেছি ব‘লে
তুমি দেখতে পাও নি ।
সেই কবে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছি
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাতিস্তম্ভের
মতো ভেঙে পড়েছি ব‘লে
তুমি লক্ষ্য করো নি ।
সেই কবে থেকে ডাকছি
ডাকতে ডাকতে স্বরতন্ত্রি ছিঁড়ে
বোবা হয়ে গেছি ব‘লে
তুমি শুনতে পাও নি ।
সেই কবে থেকে ফুটে আছি
ফুটে ফুটে শাখা থেকে ঝ‘রে গেছি ব‘লে
তুমি কখনো তোলো নি ।
সেই কবে থেকে তাকিয়ে আছি
তাকিয়ে তাকিয়ে অন্ধ হয়ে গেছি ব‘লে
একবারো তোমাকে দেখি নি । ღ
–হুমায়ুন আজাদ
'এক জন্ম'
–তারাপদ রায়
অনেকদিন দেখা হবে না
তারপর একদিন দেখা হবে।
দুজনেই দুজনকে বলবো,
‘অনেকদিন দেখা হয় নি’।
এইভাবে যাবে দিনের পর দিন
বত্সরের পর বত্সর।
তারপর একদিন হয়ত জানা যাবে
বা হয়ত জানা যাবে না,
যে তোমার সঙ্গে আমার
অথবা আমার সঙ্গে তোমার
আর দেখা হবে না।
~তৃষিত স্বপ্নচারী~
—ফাল্গুনী আলম
আমি তো চাইতেই পারি-
হঠাৎ সেলফোনটা বাজুক;
কেউ একজন বলুক-
“দেখো,কী সুন্দর চাঁদ আকাশে!
ঠিক তোমার মতো।”
পরক্ষণেই আবার অপরাধী সুরে বলুক-
“না,না,তোমার থেকে কম!”
ওর নিরব ছেলেমানুষীতে আমি ঠোঁট
চেপে হাসবো।
এরপর আমি-
“আমার জানালায় গন্ধরাজের লুটোপুটি!
তোমার পকেট মেলে ধরোনা।”
হয়তো ও তড়িতে সরাবে রুমালখানা,
ওর আধময়লা রুমালের স্থান কেড়ে নেবে-
আমার একমুঠো ঘ্রাণ!
একথা-সেকথা-খুনসুটিতে রাত
গড়াবে মধ্যরাতে;
তারপর খেয়াল হবে ডিনারের কথা!
হয়তো ততক্ষণে ওর ডাইনিং বন্ধ!
আমিও নাহয়...
পেটের ক্ষুধা মনের
আকুতিতে মেটাবো দু'জনে।
বইয়ের হাজারো পাতায় আবদ্ধ এ মন,
স্বপ্নেরা তবু বাসা বাঁধে চোখে।
আমিতো চাইতেই পারি-
সে স্বপ্ন ছড়িয়ে পড়ুক
অন্য দু'চোখেও!
মৃত্যুদন্ড
—শামসুর রাহমান
বেকসুর আমি তবু আমাকেই মৃত্যুদন্ড দিলে!
কী করে তোমার কাছে অপরাধী, এখনও জানি না;
কস্মিনকালেও আমি শত্রুতা সাধিনি, শুধু বীনা,
অলৌকিক, প্রেমময়, বাজিয়েছি। সেই সুরে ছিলে
মিশে তুমি বসন্তের পাতার গভীরে, শান্ত ঝিলে,
শস্যক্ষেতে নীলিমায়। এই কি আমার অপরাধ?
আমার সর্বস্ব দিয়ে রাত্রিদিন একটি নিখাদ
প্রেমস্বপ্ন গড়ি, তা-ও ভেঙ্গে যায় কী কর্কশ ঢিলে।
আমাকে পাঠালে নির্বাসনে, দিলে দন্ড ভয়ংকর।
তোমার সান্নিধ্য থেকে, অমন দৃষ্টির থেকে দূরে,
বহুদুরে চকিতে সরিয়ে দিলে- এই শাস্তি, বলো,
মৃতের চেয়েও বেশি, ঢের বেশি নয় কি কঠোর?
তুমি কি দেখতে চাও সর্বদা আমার ছলছল চোখ?
চাও আমার হৃদয় খাক কীট কুরে-কুরে?
'সেসব কিছুই আর মনে নেই'
—মহাদেব সাহা
আমার কাছে কেউ কেউ জানতে চায়
পৃথিবীর কোন নারীকে আমি প্রথম ভালোবাসি,
কেউ কেউ জানতে চায় কাকে আমি প্রথম
চিঠি লিখি,
কেউ বলে, প্রথম গোপনে কোন
নামটি আমি লিখে রেখেছিলাম;
প্রথম আমি কী দেখে মুগ্ধ হই, প্রথম কার
হাত ধরি
আমার প্রথম স্মৃতির এই সব
প্রশ্নে আমি ঠিক কিছুই
বলতে পারি না, বোকার
মতো চেয়ে থাকি।
প্রথম অশ্রুবিন্দুর কথা কার মনে থাকে,
তারপর এতো বৃষ্টি এতো বর্ষা
মাটির শ্লেটে প্রথম যে অক্ষর
লিখেছিলাম আমি
তা আর কিছুতেই
কারো কাছে বলা যাবে না,
প্রথম কবে সেই রাজহাঁসটিকে বুকের
মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিলাম
সেই শিহরণ কবে বাতাসে মিশে গেছে,
পুকুরপাড়ের ঘাটলার সিঁড়িতে যে নাম
প্রথম খোদাই করেছিলাম আমি,
এতোদিনে চোখের জলে তার
কোনো চিহ্নই আর নেই
আমি সেই আদ্যক্ষর কী করে দেখাব?
আমি কী করে দেখাব প্রথম স্বপ্ন
দেখে আমি
কীভাবে সারারাত কেঁদেছিলাম,
ভালোবাসা কথাটা প্রথম
বলতে গিয়ে কত লক্ষবার
মুখ ঢেকেছি আমি,
প্রথম কবে আমি বর্ষণ দেখলাম
পৃথিবীতে
কবে প্রথম পাখির ডাক শুনলাম,
সন্ধ্যাতারা দেখলাম
না, না, সেসব কিছুই আর আমার মনে নেই
কারোরই মনে থাকে না।
কবে কে আমার হাতে লুকিয়ে
একটি গোলাপ ফুল দিয়েছিল
বইয়ের ভাঁজে রেখে দিয়েছিল
একখানা লাজুক চিঠি,
কে বলেছিল কানের কাছে কোকিলের
মতো মাতাল করা একটি শব্দ!
সেসব কিছুই আর আমার মনে নেই,
মনে নেই।
♥———————————————♥
'সাহস থেকে প্রেম'
–নির্মলেন্দু গুন
আমার শুধু ইচ্ছে করে
সঙ্গে বসে থাকি ।
হঠাৎ করে তোমার গায়ে
গোপনে হাত রাখি ।
রাখতে রাখতে সাহস হবে
সাহস থেকে প্রেম,
বুঝবে আমি শিকড়গুলো
কিভাবে ছড়ালেম ।
আমার শুধু ইচ্ছে করে
সঙ্গে ভেসে যেতে,
ভাসতে ভাসতে সবটা নদী
বুকের কাছে পেতে ।
এমনি করেই সাহস হবে
সাহস থেকে প্রেম,
তখন তুমি বুঝবে না যে
কিভাবে জড়ালেম ।
——————————————
তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই
—মহাদেব সাহা
তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই দেখো আমি
সব কাজে মনোযোগহীন
সবখানে খাপছাড়া ;
তাই বহুদিন কবিতাও পড়ে আছে অসম্পূর্ণ
একটি পঙক্তি মেলানো হয়নি আর
তুমি ফিরে তাকাওনি বলে,
কতো প্রগাঢ় ইমেজ ঝরে গেছে তোমার
সামান্যতম স্নেহের অভাবে ।
তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে
কিভাবে যে ক্ষয়ে গেছি অন্তরে-বাহিরে
কিভাবে যে হয়ে গেছি নিঃস্ব, রিক্ত, উদ্দামহীন
শুধু তোমার উপেক্ষা পেয়ে উৎসাহে পরেছে ভাটা,
পরাজয় মেনেছি এভাবে
সব প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে নিজেই
নিয়েছি তুলে লজ্জার মুখোশ ।
ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে গেছি সকলের
অজ্ঞাতসারেই,
কাউকে বলিনি কিছু, বুঝতে দেইনি এই গোপন
ব্যর্থতা
শুধু আমি জানি তোমার করুনাধারা ছাড়া
এ জীবনে ফুটবে না মুগ্ধ কিশলয়
মাথায় উঠবে না কোনো জয়ের শিরোপা,
আমার গলায় কেউ পরাবে না গৌরবের মালা ;
তোমার সযত্ন পরিচর্যা ব্যতিরেকে
বলো নিরাময় হয়েছে কখন কার ক্ষত?
তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে রৌদ্রদগ্ধ হয়ে গেছে
হৃদয়ের ঘন বনাঞ্চল
বর্ষণ-অভাবে সেখানে দিয়েছে দেখা ব্যধি ও মড়ক,
একমাত্র তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে
এই গ্লানি এই পরাজয় ।
দিনরাত্রি হয়ে গেছে উসকো-খুসকো,
এলোমেলো, সঙ্গতিবিহীন
কিছুই মেলে না আর
সবখানে থেকে যায় একটা না একটা ছেঁড়া তার ;
তাই আমাকে বেড়াতে হয় দেশে দেশে
কান্না ছাড়া আর কোন ঠিকানাও নেই ।
শুধু তুমি মুখ তুলে তাকাওনি বলে রয়ে গেছি সবার
পশ্চাতে
কোথাও পাইনি ঠাই,
সকলের কাছে উপেক্ষিত;
এমনকি যতটা হেঁটেছি পথ,
বিপদের মুখে ভেঙ্গেছি চড়াই
সে কথাও কেউ কখনো বোঝেনি ।
একমাত্র তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই
ভিতরে-বাহিরে এই অপার ব্যর্থতা
শুধু তুমি মুখ তুলে চাওনি বলেই
মরুভূমি গ্রাস করে এখন আমাকে।
———————————————
রুমালী ডানায় আবেদন
—জিহান আল হামাদী
আমি তো মেঘ ছুঁতে চেয়েছিলাম
কেন তুমি হাত বাড়ালে ?
ছুঁয়ে গেলাম তোমাকে, নমনীয় মাঝরাতে;
তুমি আমার মেঘ হবে ?
আমি তো কেবল জল ছুঁতে চেয়েছিলাম
তুমি কেন ডুবিয়ে দিলে ?
ডুবে তোমার হোলির খেলায়, ছুঁয়ে গেলাম রঙ-বেরঙে
তুমি আমার জল হবে ?
ছুটেছিলাম আমি রোদ পোহাতে
কেন পথ হারালে ?
হারানো পথের সঙ্গী হয়ে, সূর্য হলে শেষ দুপুরে
তুমি পথ হবে ?
ঠিক যখনই ভেবেছিলাম ছুঁয়ে দেব অসীম রাত্রি
তখনি কেন কান্না হলে ?
গ্রিলের ফাঁকে চাঁদ দেখিয়ে ছুঁয়ে দিলাম তোমাকে
তুমি কি আমার রাত্রি হবে ?
রুমালি, আমি তো সব ছুঁতে চেয়েছিলাম
কেন তুমি চোখ রাঙালে ?
শ্রাবণের ঝর্নার মত ভিজিয়ে গেলে
আমার সব হবে ?
♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥ —♥
অমীংমাসিত
—সামারা তাহসিন তাশফি
ধরো...
হুট করে কোন ছুট বিকেলে, আবার
যদি মুখোমুখি পড়ে যাই তুমি আর আমি
পালিয়ে যাবে বুঝি?
মুখ লুকিয়ে তক্ষুনি হবে কি ফেরারী??
অথবা...
কোন আবেগী অমানিশায় যদি মুঠোফোনে হঠাৎ
আমার কন্ঠ ওঠে জেগে, তুমি কি বলে উঠবেনা গাঢ়
অভিমানে-- ''এতদিন কোথায় ছিলে হারিয়ে??''
কিংবা...
এভাবেই যদি ভুলে থাকি, অনন্তকাল. . . . .
করি তোমার জন্য মৃত্যুকামনা, কি করবে তুমি--
অভিশাপ দেবে?
নাকি বুকের বাঁ পাশটায় তীব্র ব্যথা নিয়ে পাশ
ফিরে শুয়ে পড়বে??
♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥
প্রেম এবং প্রতিফলন
—ফাল্গুনী আলম
তোমার আকাশে যদি জমে মেঘমালা-
জেনে নিও সেক্ষণেই আমি উতলা!
হঠাৎ কখনো হাসি ঢাকে কালোছায়া,
জানো নাতো, এ চোখে ঝরে জল-মায়া।
হেঁটো নাকো এক পা-ও বিষন্ন ভঙ্গিতে,
করুণ রাগীনি বাজে মোর মন সংগীতে।
মায়া মায়া চোখ দুটো কখনো না কাঁদে,
তোমার অজান্তে শেল এ বুকেই বিঁধে!
দিতে পারো সব ব্যথা দ্বিধাহীন হয়ে,
আমিও তো তোমারি,তাই সব যাবো বয়ে।
একবার দেখো তুমি-হেসে হয়ে সারা,
আমার ভুবন ভরে কতো চাঁদ-তারা!
জানিনা এ প্রেম নাকি বিধাতার ছল,
সব ব্যথা,হাসি কেন হয় প্রতিফল!!
♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥
এবারই প্রথম তুমি
—নির্মলেন্দু গুণ
ভুলে যাও তুমি পূর্বেও ছিলে
মনে করো এই বিশ্ব নিখিলে
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না
ছিলে না আকাশে, নদী জলে ঘাসে
ছিলে না পাথরে ঝর্ণার পাশে।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি কিছুতে ছিলে না।
ফুলেও ছিলে না, ফলেও ছিলে না
নাকে মুখে চোখে চুলেও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি এখানে ছিলে না
এর আগে তুমি সেখানে ছিলে না
এর আগে তুমি কোথাও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
রাতের পুণ্য লগনে ছিলে না
নীল নবঘন গগনে ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
এর আগে তুমি তুমিও ছিলে না।
এবারই প্রথম তুমি।
—————————————
তুমি চলে যাবে বলতেই
----মহাদেব সাহা
তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের মধ্যে
পাড় ভাঙার শব্দ শুনি-
উঠে দাঁড়াতেই দুপুরের খুব গরম
হাওয়া বয়,
মার্সির কাঁচ ভাঙতে শুরু করে;
দরোজা থেকে যখন এক পা বাড়াও আমি
দুই চোখে কিছুই দেখি না-
এর নাম তোমার বিদায়,
আচ্ছা আসি, শুভরাত্রি,
খোদাহাফেজ।
তোমাকে আরেকটু বসতে বললেই তুমি যখন
মাথা নেড়ে না, না বলো
সঙ্গে সঙ্গে সব মাধবীলতার ঝোপ
ভেঙে পড়ে;
তুমি চলে যাওয়ার জন্যে যখন
সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকো
তৎক্ষণাৎ পৃথিবীর আরো কিছু বনাঞ্চল উজাড়
হয়ে যায়,
তুমি উঠোন পেরুলে আমি কেবল
শূন্যতা শূন্যতা
ছাড়া আর কিছুই দেখি না
আমার প্রিয় গ্রন্থগুলির সব
পৃষ্ঠা কালো কালিতে ঢেকে যায়।
অথচ চোখের আড়াল অর্থ কতোটুকু যাওয়া,
কতোদূর যাওয়া-
হয়তো নীলক্ষেত থেক বনানী,
ঢাকা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট..
তবু তুমি চলে যাবে বলতেই বুকের
মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে
সেই থেকে অবিরাম কেবল পাড় ভাঙার শব্দ শুনি
পাতা ঝরার শব্দ শুনি-
আর কিছুই শুনি না।
ইচ্ছে ϟ ϟ ϟ
—সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে
দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি
পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট
যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি
কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায়
ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি।
ইচ্ছে করে দুপুর রোদে ব্লাক আউটের হুকুম দেবার
ইচ্ছে করে বিবৃতি দিই ভাঁওতা মেলে জনসেবার
ইচ্ছে করে ভাঁওতাবাজ নেতার মুখে চুনকালি দিই।
ইচ্ছে করে অফিস যাবার নাম করে যাই বেলুড় মঠে
ইচ্ছে করে ধর্মাধর্ম নিলাম করি মুর্গীহাটায়
বেলুন কিনি বেলুন ফাটাই, কাঁচের চুড়ি দেখলে ভাঙি
ইচ্ছে করে লণ্ডভণ্ড করি এবার পৃথিবীটাকে
মনুমেন্টের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলি
আমরা কিছু ভাল্লাগে না।।
ღ————————————————————ღ
ফুলেরা জানতো যদি
– হেনরিক হাইনে
অনুবাদঃ হুমায়ুন আজাদ
ফুলেরা জানতো যদি আমার হৃদয়
ক্ষতবিক্ষত কতোখানি,
অঝোরে ঝরতো তাদের চোখের জল
আমার কষ্ট আপন কষ্ট মানি ।
নাইটিংগেল আর শ্যমারা জানতো যদি
আমার কষ্ট কতোখানি-কতোদুর,
তাহলে তাদের গলায় উঠতো বেজে
আরো ব হু বেশী আনন্দদায়ক সুর ।
সোনালী তারারা দেখতো কখনো যদি
আমার কষ্টের অশ্রুজলের দাগ,
তাহলে তাদের স্থান থেকে নেমে এসে
জানাতো আমাকে স্বান্তনা ও অনুরাগ
তবে তারা কেউ বুঝতে পারেনা তা-
একজন,শুধু একজন,জানে আমার কষ্ট কতো;
আমার হৃদয় ছিনিয়ে নিয়েছে যে
ভাংগার জন্য-বারবার অবিরত ।
ღ———————————————————— ღ
যদি ভালবাসা পাই
—রফিক আজাদ
যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেব
জীবনের ভুলগুলি;
যদি ভালবাসা পাই ব্যাপক দীর্ঘপথে
তুলে নেব ঝোলাঝুলি।
যদি ভালবাসা পাই শীতের রাতের
শেষে
মখমল দিন পাব;
যদি ভালবাসা পাই পাহাড় ডিঙ্গাবো
আর সমুদ্র সাঁতরাবো।
যদি ভালবাসা পাই আমার আকাশ হবে
দ্রুত শরতের নীল;
যদি ভালবাসা পাই জীবনে আমিও পাব
মধ্য-অন্ত্য মিল।
যদি ভালবাসা পাই আবার শুধরে নেবো
জীবনের ভুলগুলি;
যদি ভালবাসা পাই শিল্প-দীর্ঘ পথে
ব’য়ে যাবো কাঁথাগুলি।
♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥—♥
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
ফাল্গুনী আলম বলেছেন: বিখ্যাত এবং প্রিয় কবিদের কবিতার মাঝে নিজের কবিতা দেখে আনন্দ হলো খুব!!