![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রোজ রোজই চড়ুইগুলো আলোচনায় মজে। ওদের আলোচনার উন্মাদনায় ঝাঁঝিয়ে ওঠে মন। মাঝরাতে যখন অন্ধকারের একাকীত্বতা ঘিরে ধরে চড়ুইগুলোকে খুব তীব্রভাবে অনুভব করি। আমি ছোটোখাটো মানুষের একটি ঘর যার আয়তনের তুলনায় বইয়ের সংখ্যা একটু বেশীই বেশী। তাই অনেক আপন হওয়া সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই পছন্দকে অগ্রাহ্য করে বয়স আর প্রয়োজনের ক্রম সাজিয়ে বইগুলোকে বেল্কুনির ওপরে ঠাঁই দিয়েছিলাম। বছরেরও বেশী সময় ধরে ওদের বাস ওখানে।
সবুজ প্রকৃতি সাথে প্রিয় আর অত্যন্ত আপন কিছু নিমগাছের চিরল চিরল পাতা ভেদ করে আসা দক্ষিণা বাতাসের স্নিগ্ধতায় মুখরিত থাকে ছোট্ট বেলকুনির পরিবেশ। পূর্ব আর দক্ষিণ দিকের জানালা ছাপিয়ে ছন্দময় বাতাস ছোট্ট এই কক্ষেও কেমন যেন এক শান্তির মূর্ছনা ছড়িয়ে দেয়। অত্যন্ত স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় ডাকতে থাকা কাকগুলো দুষ্টুমিতে দুলতে থাকে নিমগাছের ডালে ডালে। পরিবেশ বুঝে ভোরের সূর্য আর পূর্ণিমার চাঁদ প্রথমেই এই বেলকুনি আর আপন এই কক্ষে উঁকি দেয়। পর্দাবিহীন জানালা আমার। মাঝরাতে তীব্র চাঁদের আলো আমার ঘুমকাতুরে চোখ ভিজিয়ে দিয়ে আমাকে শূণ্য মহাবিশ্বের পূর্ণ আনন্দে স্নান করিয়ে দেবার সুযোগ থেকে যেন বঞ্চিত না হয় এবং ভোরের সূর্যের মিষ্টি কিরণের আশীর্বাদ হতে আমার তিন আঙুলে ছোটোখাটো কপালটি যেন বঞ্চিত না হয় সেকারণেই পর্দার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।
মোটের উপর বলতে গেলে ইট পাথরে খোদাইকৃত এই বিল্ডিং এ সুষ্ঠু প্রাকৃতিক স্বাদের কোনো অভাবই হয়না কখনো। আর সেই সুযোগেই রীতিমতো আঁখড়া গেঁড়ে বসেছে কিছু চড়ুইপাখি। কয়েক বছরে যেমন করে বেড়ে উঠতে উঠতে আমার ভার্সিটি জীবনের অবসান ঘটল, তাদের সংসারও ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনী নিয়ে বিশাল আকার ধারণ করলো। তারা বেল্কুনির উপরে আমার সাজানো বইয়ের সেই তাকে তাকে সুবিশাল এক রাজ্য গড়ে তুলেল। রাজা-প্রজাসহ তারা এতোই বেশী জনসংখ্যায় যে তারা নিজেদের অবশ্যই অনেক শক্তিশালী মনে করে।এর প্রমাণ পাওয়া যায়, আমি যখন জানালার পাশে শুয়ে-বসে পড়াশুনা করি মাঝে মাঝেই তারা কখনো একা কখনো সদলবলে এসে জানালার গ্রীলে ভর করে বসে। আমি প্রায়ই চিন্তায় পড়ে যাই যে, ওরা আমাকে দেখছে নাকি আমি ওদের! আবার, নিজেদের মাঝে কি সব আবোল-তাবোল বলাবলি শুরু করে দেয়। নিজেকে তখন এলিয়েন মনে হয়! অবশেষে আমিই চোখ নামিয়ে ফেলি হার মেনে।
বছরতিনেক আগে, খুব জরুরী একটি বই নামাতে গিয়ে একবার ডিমে হাত পড়াতে রাগে দুইদিন বাসায় ফেরেনি চড়ুই। খুব মন খারাপ হয়েছিল আর অপরাধী লাগছিল মনে মনে। বারবারই মনে হচ্ছিল আমি ওদের বাসা ভেঙ্গে দিলাম কিনা আর ওদের ফিরে আসা কামনা করতে লাগলাম গভীরভাবে।
অবশেষে ফিরে এলো। আমি আর কোনোদিন কিছু বলিনি ওদের।
আর এতো বছরে সেই সুযোগে বিশাল বংশ বিস্তার করে সুন্দর এক সংসার হয়েছে চড়ুইদের। কত যত্নে আর আদরে মা চড়ুই তার বাচ্চাকে ঠোঁটে তুলে খাবার খাওয়ায়! কত ভালোবাসাময় এই চড়ুই সংসার! অন্যের ঘরে নিজেদের কেমন সুন্দর আশ্রয় খুঁজে নিয়ে সব একসাথে সুখে বসবাস করছে। রোদবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝায়ও কতো নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ থাকে একে অন্যের প্রতি খড়-কুটো দিয়ে বানানো এই সংসারে।
এবছর যখন প্রচন্ড শীত পড়ল তখন শুধু কম্বল দিয়ে আর ঠান্ডাকে নিজের কাছে আসতে বাঁধা দিতে পারছিলামনা। এদিকে বেল্কুনির উপরে শিমুল তুলোর দুটি সিঙ্গেল লেপ একসাথে জোড়া বেঁধে রাখা হয়েছিল অনেকদিন আগে। ভাবলাম এবার ওগুলোর সঠিক ব্যবহার করতে হবে। তাই বেল্কুনিতে উঠে গেলাম। পাশেই ছিল ওদের বাসা তাই অতি সাবধানে হাত দিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখি কিছু বাচ্চা চড়ুই চেঁচাতে লাগল। ওমা! এ কী কান্ড! শীতে তারা স্থান বদল করে লেপের মাঝে এসেছে! আমি যতো এগোই ততোই তারা গলা উঁচিয়ে চেঁচানোর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।
বুঝলাম, নিজেদের আর পুরো সংসারটিকে রক্ষার জন্যই তাদের এই চিৎকার ,আহাজারি। কি জানি কি বলছিল ওরা। পশুপাখির ভাষা বুঝলে হয়ত প্রতিটা কথা বুঝতে পারতাম। তবে, টিকে থাকতে দেবার আকুতি সেখানে অবশ্যই ছিল। আমি সেই আকুতিতে ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে নেমে এলাম।
হঠাৎ মনে হল, টিকে থাকবার ক্ষমতা যদিও মানুষের বেশী কিন্তু এর অধিকার মানুষের চেয়ে এই চড়ুইদেরই বেশী। মানুষ যা পারেনা, ওরা তা পারে। চড়ুই এর ঘরে জন্ম নিয়ে ওরা কিন্তু চড়ুই-ই হয়ে উঠছে অথচ মানুষের ঘরে জন্ম নিলেই মানুষ হয়ে উঠছেনা। মানুষ হবার গ্যারান্টি নেই যেন!
আধুনিক গোলোক ধাঁধাঁময় মরিচীকার প্রতিই বেশী লালায়িত এই সমাজের মানুষেরা। ইট-পাথর আর অত্যাধুনিক সাজসজ্জাময় ঘর বানাতে মানুষ এতো বেশী মোহিত যে , এসব মোহের ভীড়ে পড়ে কখন তাদের মনের ঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে সেদিকে যেন কোনো খেয়ালই নেই। অথচ, এই ঘরেই সুখ নামক শুকপক্ষীর বাস! অতি আধুনিক মরীচিকাময় চাহিদাগুলো যেন ঘুণপোকা! ঘুণ ধরিয়ে দিচ্ছে এই ঘরে। তাই, অতি সহজেই চিতার মতো জ্বলে ওঠে যেকোনো সময়।
আজ মানুষের ঘরে ঘর তুলে সংসার গড়ে চড়ুই আর মানুষ নিজের ঘরে বাস করে সংসার ভাঙ্গে, বিচ্ছেদ হানে। আজকাল মানুষের মনে, দেহে, ভালবাসায়, চিন্তা, চেতনায়ও ধরেছে ঘুণপোকা। অসামাজিক কাজগুলো সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্টিত হচ্ছে। আর যা কিছু প্রকৃত সামাজিক তা নিতান্তই অসামাজিক। সামাজিক সুরুচিপূর্ণ কাজ নেহাতই সেকেলে। আজ আমার সমাজ কতোইনা আধুনিক। একটি একদিনের ভালোবাসা দিবসে কতো জুটি তাদের ভালবাসা অন্যদের সামনে জাহির করবার জন্য প্রকাশ্যে চুমু আদান-প্রদানের উৎসব আয়োজন করছে। আর বছরের অন্য তিনশত চৌষট্টি দিন খুব একান্তেই ভাঙনের গানে অবেলার রোদ পোহাচ্ছে। সেকালে নাকি প্রকাশ ছিল কম, বন্ধন ছিল বেশী। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সীমিত, পারস্পরিক টান ছিল হাজার বছর দেখতে না পাওয়ার অস্থির উন্মাদনায় ভরা। অবশ্য, এসব এখন খুব সেকেলে।
আর এসব নিয়ে কথা বলার আমি কে? হ্যাঁ, তাই এবার চড়ুই প্রসংগ।
চড়ুই কতো দূর হতে খাবার এনে বাচ্চাকে খাওয়ায়। এতো ছোট্ট একটি পাখি হওয়া স্বত্বেও কতো যত্নে বড় করে তুলছে সন্তানদের। আর, মানুষের ঘরে শিশু কাঁদে, রাস্তায় পড়ে থাকে অনাদরে, অনাহারে। আবার, হাজার ভোগবিলাসিতার মাঝে থেকেও কেঁদে ওঠে শিশুমন। আধুনিক, সব অতি আধুনিক- মা-বাবা এবং তাদের ভালবাসা, পরিবার এবং তাদের বন্ধন। এসব মনুষ্য ছাঁচে গড়া বাবা-মা বেশী ভালো খাবারের সন্ধানে গিয়ে নিজেরাই একসময় হারিয়ে যায়। তাদের আর বাবা-মা হয়ে ওঠা হয়না।
-তাই, মানুষের ঘরে টিকে থাকে শুধুই চড়ুয়েরই সংসার। মানুষের ঘরে হয়না মানুষের সংসার। আমি তাই শীত নিবারণের অন্য উপায় খোঁজ করলাম। চড়ুই পরিবারকে শান্তিতে বসবাস করবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করলামনা আর। কারণ, যে সংসার এই ঘরে আমি-আপনি-আমরা গড়তে পারিনা, সে সংসার ওরা গড়েছে। তাদের সংসার ভাঙার অধিকার আমার নেই। আজ থেকে এ ঘর চড়ুই এর ই।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ কথা কিছু কিছু কাল্পনিক ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ সমস্যা ছাড়ছেনা পিছু- মানসিক ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
***সবাইকে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপলে চলবেনা। মানব-বন্ধন, ভালবাসা এতোকিছুর মাঝে আজও টিকে আছে,থাকবে। আর কখনো যদি এমন দিন চলে আসে যখন ভালোবাসা-বন্ধনের সকল অণু-পরমাণু ছিটকে ছিটকে ক্রমেই দূর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তখন বুঝতে হবে পৃথিবীর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে এসেছে। তাই, সালাম যাদের জন্য এখনো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়নি।***
ভালোবাসা ভালো থাকুক।মনুষত্ব টিকে থাকুক।
সবাইকে ফাল্গুনের শুভেচ্ছা.।.।.।.।.
ছবিঃ অ্যামাজান এবং গুগল
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
মিহির মিহির বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভ্রমরের ডানা ভাইয়া।বরাবরই আপনার অনুপ্রেরণায় আগের চেয়ে অনুপ্রাণিত প্লাস!!
আপনার জন্য শুভকামনা++++++++++^~~~~~~~~
ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৫
আরজু পনি বলেছেন:
মানুষের ঘরে হয়না মানুষের সংসার...খুব কঠিন একটা সত্যি লিখেছেন।
আপনার লেখা পড়ে বেশ ভালো লাগলো ।
ছবিটিও বেশ সুন্দর দিয়েছেন।
শুভ ব্লগিং ।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩০
মিহির মিহির বলেছেন: মন্তব্যে ভালোলাগা এবং ধন্যবাদ রইল।
কঠিন শব্দটা খুব সহজ হলেও অর্থটা সহজে মানা যায়না।
শুভ ফাল্গুন।
শুভ ব্লগিং ।।
অনুপ্রাণিত হলাম।।।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৩
ভ্রমরের ডানা বলেছেন: চড়ুইদের মতই মানুষের ভালবাসার বুনন হোক আরো সুচারু। সেই কামনায়---
সুন্দর গোছানো লেখায় প্লাস। চলুক।