নির্ঘুম রাত

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৮

রাত তিনটা বাজার সংকেত শোনায়

ডিজিটাল ঘড়িগুলো। বয়স হয়েছে অনেক

তবু বেশ সচেতন খামছে ধরে আছে

মরচে পড়া পেরেক। জেগে আছি একা

নির্ঘুম এলোমেলো। পাশে

হাত পা ছড়িয়ে বধু ঘুমে মগ্ন

ঘনঘন ঠোঁট নাড়ে স্বপ্নের ঘোরে

হাজারো কথার মালা যাচ্ছে গেঁথে।



স্বপ্ন ভূবন থেকে সহসা ফিরে আসা

আমার কাম্য নয় তার দীর্ঘ সুখ

বিরতিহীন নিদ্রা আমার প্রার্থনা।



মাঝরাতে প্রতিদিন ঘুমুতে যাই

বধুয়া ঘুমায় আগে কখনো বিষন্ন

কখনো বা ঠিকঠাক তানপুরায় সুর

বেজে চলে টুংটাং কখনো ছটফট

কখনো বা অচেতন ছাদ পানে তাকিয়ে

ঘড়ির কাঁটায় চলে খলখল হৃদয়।



মাঝরাতে প্রতিদিন ঘুমতে যাওয়া আমার

ছেলেবেলার অভ্যাস আজো হয়নি বদল।



চিৎ হয়ে শুয়ে আছি ঘুমের দেখা নেই

তরতর বয়ে যায় ক্লান্ত সময়

বেদনার নোনা জল দুচোখ বেয়ে

গড়িয়ে পড়ছে বুকে। ইদানীং আমার

এভাবেই কাটে রাত আক্রান্ত আমি

এক অজানা অসুখে।



রাতের শেষ প্রহর পৃথিবী নিরব

ফ্যানের শব্দ ছাড়া জেগে নেই কেহ

শুধু জেগে আছি আমি দুচোখ বুজে

ভাবছি বাবার কথা। মনে পড়ে রাত

এগিয়ে গভীর হলে অসুখী বাবার

ঘরময় পায়চারি আঙ্গুলের কড়া গুনে

বিড়বিড় কথা বলা। বাবাও

আক্রান্ত ছিলেন এক নির্ঘুম অসুখে।



বাবার ছিলো না জমি বাবা ছিলেন

ভূমিহীন এক চাষা জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে

জীবনের শেষ বেলা মজুরের খাতায়

লেখালেন তার নাম জীবনের জন্য

জীবন বিসর্জন । আমি তার

অক্ষম সন্তান দুঃখ ছাড়া

কিছুই পারিনি দিতে ।



কেমন আছেন বাবা আঁধার দুনিয়ায়

সুখের ঘুমে মগ্ন নাকি কেবলই

কষ্টে ভারাক্রান্ত জানি না আমি আমার

জানতে ইচ্ছে করে ।



বিদায় নেবার কালে বাবা ছিলেন দিন মজুর

ঘুমের অসুখ তার সারেনি কখনো ।

(মফিজুল ইসলাম খান)

৬ টি +০/-০