নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উঠন্ত মুলো পত্তনে চেনা যায়।

ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।

রাকিব জাভেদ মিন্টু

জ্ঞান অর্জন করাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য।

রাকিব জাভেদ মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত তৈরি করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে, অন্যথায় নয়

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:৩২

মিথ্যা একটি চারিত্রিক ব্যাধি। যার মধ্যে মনুষ্য রুচিবোধ কিংবা সুস্থ প্রকৃতি বিদ্যমান সে কোনক্রমেই এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করতে পারে না। আর না করাই হচ্ছে স্বাভাবিক মনুষ্য ধর্ম। সকল ধর্মেই এর প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়েছে।

‘পক্ষান্তরে সত্য পৃথিবীর স্থায়িত্বের একটি মূল ভিত্তি। প্রশংসাযোগ্য বস্তু, নবুওয়তের অংশ ও তাকওয়ার ফল। এ সত্য না থাকলে শরিয়তের বিধানসমূহ অকেজো হয়ে যেত। মূলত মিথ্যা বলার দোষে দুষ্ট হওয়ার অর্থ হচ্ছে মানবতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া। কারণ, কথা বলা মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য আর কথা সত্য না হলে তার কোন অর্থই থাকে না।’ (মুহাম্মদ আল-খাদেমি: বারীকাতুন মাহমূদিয়া, ৩/১৮৩)



আমাদের পবিত্র দীনে ইসলামে এর সামান্যতম আশ্রয়-প্রশ্রয় নেই। কুরআন, হাদিস এবং উম্মতের ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত যে এটা হারাম, এটা নিষিদ্ধ ও গর্হিত। যে মিথ্যা বলে তার পরিণাম দুনিয়া ও আখেরাতে খুবই নিন্দনীয়।

নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলার কোন অবকাশ নেই। এ মিথ্যার মাধ্যমে কারো অধিকার হরণ করা যাবে না, কাউকে হত্যা করা যাবে না এবং কারো ইজ্জত সম্মানে আঘাত হানা যাবে না। বরং কাউকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কিংবা দু’জনের মধ্যে ছিন্ন সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করার জন্য অথবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত তৈরি করার জন্য এ মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে, অন্যথায় নয়।

ইসলাম ধর্মে এমন একটি মুহূর্ত কিংবা দিন-ক্ষণ নেই যার মধ্যে মিথ্যা বলা বৈধ বা মানুষ যা চায় তা বলার জন্য সে স্বাধীন।





মিথ্যার পরিণাম খুবই ভয়াবহ ও মারাত্মক। মিথ্যা সম্পর্কে মহানবী (সা.) সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা মিথ্যা মানুষকে পাপের দিকে নিয়ে যায়, আর পাপ নিয়ে যায় জাহান্নামের দিকে।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)

আর কোনো ব্যক্তি ক্রমাগত মিথ্যা বলা ও মিথ্যার পথ অন্বেষণ করতে থাকলে একসময় আল্লাহর কাছে সে ‘মিথ্যুক’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়।





ইসলামে মিথ্যা পরিত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সত্যবাদিতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে সর্বদা সত্য কথা বলা, সত্যকে আঁকড়ে থাকা, সত্যের ওপর অবিচল থাকা এবং সর্বাবস্থায় সত্যতা রক্ষা করে চলার নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআন মজিদে ঘোষণা করেন, ‘হে ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো আর সর্বদা সত্য কথা বলো।’



অন্যদিকে প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদিতা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস করে।’ মহানবী (সা.) স্বয়ং ছিলেন সত্যবাদিতার জীবন্ত আদর্শ। তাঁর সত্যনিষ্ঠার জন্য চরম শত্রুরাও তাঁকে আলামিন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘রাহ্মাতুলি্লল আলামিন’ প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যখন মিথ্যা বলে, তখন রহমতের ফেরেশতা এক মাইল দূরে সরে যান তার মিথ্যার ভয়ানক দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য।’ (তিরমিজি শরিফ)



মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, মিথ্যা এবং বিশ্বাস ভঙ্গ ব্যতীত অন্য অনেক দুর্বলতাই মুমিন চরিত্রে থাকতে পারে। (আহমদ-বায়হাকি) অর্থাৎ মিথ্যাচার এবং বিশ্বাস ভঙ্গের স্বভাব ইমানের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইমানের সঙ্গে এ দুটি বদভ্যাস একীভূত হওয়া অসম্ভব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিথ্যা হলো সব কবিরা গুনাহের মা।’ কারণ একটি মিথ্যাকে ঢাকতে বা মিথ্যাকে বৈধ করার জন্য শত মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। আল্লাহ তায়ালা মিথ্যাকে জুলুম বা অত্যাচার বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন, ‘অতঃপর যারা আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করেছে, তারা অত্যাচারী।’ তিনি আরো বলেন, ‘মিথ্যা তারাই বলে, যারা আল্লাহর আয়াতে ইমান রাখে না।’ (সুরা-নাহল, আয়াত-১০৫)





সুরা হজ্জে মহান আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘এবং মিথ্যা কথাবার্তা পরিহার করো।’ (সুরা-হজ্জ, আয়াত-৩০)। মিথ্যাচার সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, ‘যারা মুমিন তারা মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করে না।’ (সুরা-ফুরকান. আয়াত-৭২)। ‘যে মিথ্যাবাদী ও কাফির আল্লাহ তাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা-যুমার, আয়াত-৩)। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, এক ব্যক্তির পক্ষে মিথ্যাবাদী পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যা লোকমুখে শুনে তাই প্রচার করতে শুরু করে। (বুখারি শরিফ)। অর্থাৎ সত্যাসত্য যাচাই না করেই লোকমুখে শোনা কথা প্রচার করতে থাকলেও সে ব্যক্তি মিথ্যার দায়ে দায়ী হবে।







হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলূল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন সততা নেক কাজের প্রতি ধাবিত করে, আর নেক কাজ জান্নাতে নিয়ে যায়। বান্দা সত্য কথা বলতে বলতে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা গুনাহের প্রতি ধাবিত করে আর গুনাহ জাহান্নামে নিয়ে যায়। বান্দা মিথ্যা কথা বলতে বলতে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী রূপে চিহ্নিত হয়ে যায়। (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। মিথ্যা শপথ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিথ্যা কসম করে অন্য মুসলমানের সম্পদ দখল করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে যে আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট থাকবেন।’ অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কসমের মাধ্যমে অন্য মুসলমানকে তার হক থেকে বঞ্চিত করে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করেছেন এবং জান্নাত হারাম করেছেন।’

হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাপ-দাদার কসম খেতে নিষেধ করেছেন। যার কসম খেতে হয়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম খায়; নতুবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম) হজরত নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলে দুই বিবদমান দলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করে সে মিথ্যাবাদী নয়, বরং সে কল্যাণ বৃদ্ধি করে এবং কল্যাণের কথা বলে।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)। মিথ্যা বলা ও মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের তিনটি বড় কবিরা গুনাহের কথা বলছি- ১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করো না। ২. পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ো না। ৩. মিথ্যা বলো না এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না।’ (বুখারি, মুসলিম)। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া মারাত্মক অপরাধ। এটা শিরকের চেয়েও জঘন্য। প্রিয়নবী (সা.) বলেন, ‘একবার মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া তিনবার শিরক করার সমান অপরাধ।’ অপর হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার ঠিকানা হবে জাহান্নামে।’ (আবু দাউদ শরিফ, তিরমিজি)। মহানবী (সা.) অপর এক হাদিসে বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার জন্য জাহান্নামের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত সে এক পাও নড়তে পারবে না।’ মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা মূলত চারটি বড় গুণাহে লিপ্ত হয়।

প্রথমত, সে মিথ্যা ও মনগড়া কথা বলে। দ্বিতীয়ত, সে যার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় তার ওপর জুলুম করে। তৃতীয়ত, সে যার পক্ষে সাক্ষ্য দেয় তার ওপরও জুলুম করে (সে তার জন্য হারাম অর্জনের ব্যবস্থা করে দেয়, ফলে তার জন্য জাহান্নাম অবশ্যম্ভাবী হযে পড়ে)। এবং চতুর্থত সে মিথ্যা সাক্ষ্যর মাধ্যমে একটি নিষিদ্ধ সম্পদ প্রাণ বা সম্ভ্রমের ওপর অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ বানিয়ে দেয়। অতএব মিথ্যা সাক্ষ্য দান হারাম ও কবিরা গুনাহ। মিথ্যা বংশগৌরব প্রকাশ করাও কবিরা গুনাহ। যেমন- কেউ সৈয়দ বংশীয় না হয়েও নামের সঙ্গে সৈয়দ পদবি যুক্ত করা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতৃপরিচয় জাল করে সে জাহান্নামি হবে। (মুসলিম শরিফ)সুতরাং আসুন আমরা সকলেই মিথ্যাকথা বলা পরিহার করি এবং নিজেকে জাহান্নামের কঠোর শাস্তি হতে হেফাজত করি।(আমীন)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৩২

ব্যতীপাত বলেছেন: নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত মিথ্যা বলার কোন অবকাশ নেই। এ মিথ্যার মাধ্যমে কারো অধিকার হরণ করা যাবে না, কাউকে হত্যা করা যাবে না এবং কারো ইজ্জত সম্মানে আঘাত হানা যাবে না। বরং কাউকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কিংবা দু’জনের মধ্যে ছিন্ন সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করার জন্য অথবা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল-মহব্বত তৈরি করার জন্য এ মিথ্যার আশ্রয় নেয়া যাবে, অন্যথায় নয়।[/si
-আপনার উপরের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নীচের হাদিসটি ব্যখ্যা করুন।
‘ক্বাব বিন আশরাফ নামে এক কবি রসুলকে উপহাস করে কবিতা লিখতেন ।রসুল তাকে হত্যা করার আহ্বান জানালেন তার বিশ্বস্থ সাহাবাদের কাছে। ক্বাব এর এক সৎ ভাই হত্যা করতে রাজী হলেন –কিন্ত এক বিশেষ শর্তে ।
-কি সেই শর্ত?’ রসুল জিজ্ঞেস করলেন
-আমাকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে হবে ।
-তথাস্তু ।মুহাম্মাদ রাজী হলেন । (সহি বুখারি)

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

রাবার বলেছেন: আমাকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে হবে । B:-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.