নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গ্রাম আমার দেশ আমার মা; এখানে বিলিয়ে দিলাম আমার ভালবাসা

সবার আগে দেশপ্রেম

মিজানুর রহমান (মিজান)

সবার আগে দেশপ্রেম

মিজানুর রহমান (মিজান) › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষক তুমিই প্রমান করো তুমি নির্দোষ। আর না হয় তোমার ফাসি চাই

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫

লাইক করুন ফেইসবুকের সামাজিক আন্দোলনের পেইজ "আমরা মানুষ"



একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রমাণ লাগবে। বেশ ভালো কথা। ধর্ষণের শিকার মেয়েটি কি তার শরীরে প্রমাণ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে? ধর্ষিত মেয়েটিকে কি কীভাবে তিনি ধর্ষিত হয়েছিলেন, সেই বর্ণনাটি বারবার দিতে হবে? একবার চিকিৎসকের কাছে দিতে হবে, একবার পুলিশের কাছে দিতে হবে, একবার আদালতে দিতে হবে, তারপর শুরু হবে উকিলের অসভ্য ও অশ্লীল জেরা! মুমূর্ষু দামিনীকে অন্তত ১০ বার পুলিশের কাছে তাঁর ঘটনার বর্ণনা দিতে হয়েছিল। হায় সমাজ, হায় বিচারব্যবস্থা, যে মেয়েটি ধর্ষিত হয়ে শারীরিক নির্যাতন ও চরম অপমানের শিকার হয়েছে, সেই ঘটনার দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করার চেয়ে ধর্ষিত মেয়েটিকে আরও বেশি হয়রানি ও মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতেই কি সমাজ ও বিচারব্যবস্থার সব আয়োজন?

প্রচলিত ফৌজদারি ন্যায়বিচার-ব্যবস্থার নীতি অনুযায়ী, ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণের জন্য আলামত চাই। অকাট্য প্রমাণের জন্য চিকিৎসকের সার্টিফিকেট চাই, দোষী ব্যক্তিদের ব্যাপারে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন চাই। আর ধর্ষণের ঘটনাটি প্রমাণ করতে হবে স্বয়ং অভিযোগকারীকেই। আমরা কি ধর্ষণের ব্যাপারে নারীবান্ধব নীতিমালা বানাতে পারি না, তৈরি করতে পারি না নতুন ও কার্যকর একটি আইন? ওই নীতিমালা ও আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তাহলে প্রাথমিকভাবেই ধরে নেওয়া হবে যে ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা দোষী। ওই ব্যক্তি এবং ব্যক্তিদেরই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি বা তারা নির্দোষ। অর্থাৎ ওই ধর্ষণের সঙ্গে তারা জড়িত নয় এবং এ ধর্ষণের অভিযোগ হবে অজামিনযোগ্য। প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিদের দিতে হবে মৃত্যুদণ্ড।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘদিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে ছিল। এ তিনটি দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থা ব্রিটিশ কমন ল ব্যবস্থার শ্রেণীভুক্ত। আমাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের কার্যধারা এবং নীতিমালাসমূহ ব্রিটিশ কমন ল-এর কার্যধারা ও নীতিমালা দ্বারা প্রভাবিত এবং ওই প্রধান বিশ্ব আইনব্যবস্থার অনুগামী। ব্রিটিশ কমন ল ব্যবস্থার ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম বা ফৌজদারি ন্যায়বিচার-ব্যবস্থার একটি প্রধান নীতি হচ্ছে যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে অভিযোগ করবে, তাকে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা আদালতে তার অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে। আর অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলেই কেবল তাকে শাস্তি প্রদান করা যাবে। ফৌজদারি ন্যায়বিচার-ব্যবস্থার এই শতাব্দীপ্রাচীন নীতির কারণে ধর্ষণের শিকার নারীকে সীমাহীন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের নীতির কারণে ধর্ষিতাকে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। ধর্ষণকারীদের শাস্তি প্রদান করার জন্য ধর্ষণের শিকার নারীকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে হয় যে কারা তাকে ধর্ষণ করেছিল এবং কীভাবে ধর্ষণ করেছিল।

বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষণ যেভাবে মহামারির আকার ধারণ করেছে, তাতে কবে ধর্ষণের ‘প্রমাণের দায়’ বা ‘বার্ডেন অব প্রুফ’, বিচার-প্রক্রিয়া ও ফৌজদারি ন্যায়বিচার-ব্যবস্থার নীতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে। সময়ের দাবির কথা বলি, কিংবা ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার কথাই বলি, পরিবর্তনটা যৌক্তিক ও জরুরি এবং প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা দরকার যে পৃথিবীর অনেক সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে ওই নীতিমালা ও বিচার-প্রক্রিয়া বিদ্যমান। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ ইউরোপের অধিকাংশ রাষ্ট্রে যে আইনব্যবস্থাটি প্রচলিত, তাকে বলে সিভিল ল সিস্টেম, এটি অন্যতম প্রধান বিশ্ব আইনব্যবস্থাও বটে। ওই সিভিল ল ব্যবস্থার অনেক দেশে কোনো নারী ধর্ষিত হলে, যে বা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তাদেরই প্রমাণ করতে হয় যে তারা নির্দোষ। ধর্ষণের ক্ষেত্রে এ নীতিকে আমরাও গ্রহণ করতে পারি। এ নীতি গ্রহণ করা হলে ধর্ষণের শিকার নারীর হয়রানি ও মানসিক নির্যাতন অনেকটা কমে যাবে। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রে পুলিশের তদন্ত, তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান, বিচার-প্রক্রিয়া দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে শেষ করে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় নীতিনির্ধারকেরা ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীবান্ধব নীতিমালা, আইন ও বিচার-প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবেন বলে প্রত্যাশা করি।

বর্তমান বাস্তবতায় আরও কিছু বিষয়ে নীতিনির্ধারক, সুশীল সমাজ ও নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমাদের বোধ হয় অবিলম্বে স্কুল-কলেজে যৌনশিক্ষা বা ‘সেক্স এডুকেশন’ চালু করা উচিত। ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও সামাজিক ‘ট্যাবু’র কথা বলে একবিংশ শতাব্দীতে এ ব্যাপারে উদ্যমহীন হয়ে বসে থাকাটা বিবেচকের কাজ হবে না। দুই. প্রতিটি থানায় ‘রেপ ভিকটিম সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ওই সেন্টারে চিকিৎসক, মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা, সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা থাকবেন, যাঁরা ধর্ষণের শিকার নারীকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবেন। তিন. সম্ভাব্য ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলার জন্য মেয়েদের জন্য কুংফু ও কারাতেসহ নানা রকম শারীরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। চার. পেশাগত প্রয়োজন, শিক্ষা বা অন্য কোনো কারণে যেসব নারীকে প্রত্যুষে বা অনেক রাতে বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, তাঁরা সঙ্গে ‘রেপ-কিট’ রাখবেন। বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নারী এখন সতর্কতা হিসেবে ‘রেপ-কিট’ সঙ্গে রাখেন। এতে অপরাধী শনাক্ত ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদান অনেক সহজ হয়ে যায়।

ধর্ষণের প্রতিকারের চেয়ে আমরা অনেক বেশি মনোযোগ দিতে চাই শিকড় থেকে সমস্যাটিকে নির্মূলের ব্যাপারে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি, তবে তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে নারীরা নির্ভয়ে ও নিঃসংকোচে আত্মসম্মান ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবেন। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে আমাদের নারীরা, শিশুরা ও বৃদ্ধরা হবেন সুরক্ষিত ও সম্মানিত। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে প্রতিটি পরিবার থেকে মেয়েদের সম্মান করতে শেখানো হবে, যে সমাজে ধর্ষণ হয়ে উঠবে একটি অসম্ভব ঘটনা। আর যদি ঘটনাটি ঘটেই যায়, তাহলে ধর্ষককেই মাথা হেঁট করে চলতে হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে লুপ্ত করে দিতে হবে তাঁর জীবনের অধিকার।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: আসলেই দুঃখ লাগে আবার স্বাধীনতার ডাক দিতে হবে , আবার
অস্ত্র তুলে নিতে হবে নব্য সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশকে , এহেন
বর্বরতা থেকে জাতীকে উদ্ধারে ।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৮

মিজানুর রহমান (মিজান) বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.