নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিখতে জানতে ও ছড়িয়ে যেতে চাই।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আমি বাপ্পী। জন্মস্থান বরিশাল। বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম।

মোঃ জোবায়ের বাপ্পী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের নামঃ আড়ালের সত্য।

২৭ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৯

গল্পের নামঃ আড়ালের সত্য।
লেখকঃ মোঃ জোবায়ের বাপ্পী

আয়নায় এক নজর তাকিয়ে চুল, জামা ঠিক করে সার্টিফিকেট গুলো হাতে নিলো আসাদ। পাশে বসে থাকা তার স্ত্রী নূরী বলল, “চাকরির জন্য আর কিছুদিন পরে নামলে হতো না? মাত্রই তো সুস্থ হলে।”
- অনেক হয়েছে। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময়।
নূরী কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। সে জানে আসাদকে বুঝিয়ে লাভ নেই। সে আর বসে থাকবে না। চারটা বছর তো বসেই ছিল। একটা সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকটাই পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল আসাদ। দীর্ঘ চারটা বছর বিছানা আর হুইল চেয়ারেই কাটিয়েছে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছে। এতদিন ছেলে সহ তিনজনের এই ছোট সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নূরী একাই বহন করেছে। সংসার ছোট হলেও নূরীর আয়ের তুলনায় ব্যয় কম ছিল না।। আসাদের ঔষধ পত্র ও তিনজনের পেট চালাতেই মাস শেষে খেয়ে দেয়ে সমান সমান। ভবিষ্যতের কোনো ঠিকানা নেই। তারওপর একমাত্র ছেলে ইরফানকে সদ্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছে। খরচ বেড়ে গেল। কিন্তু আয় বাড়েনি। তাই তো সুস্থ হতেই আসাদ নেমে পড়লো চাকরির খোঁজে।

একে অপরকে ভালোবেসে পালিয়ে বিয়ে করেছিল আসাদ-নূরী। তখনই তাদের পরিবার তাদেরকে বর্জন করেছিল। এমনকি দুর্ঘটনার সময়ও পরিবারের কেউ এগিয়ে আসেনি। নিজের এই ব্যর্থ জীবনে নূরীকে রাখতে চায়নি আসাদ। দুর্ঘটনার কিছুদিন পরেই নূরীকে বলেছিল, “আমি আর ভালো হবো না। আমার জন্য তুমি তোমার জীবন শেষ করো না। তুমি আবার করে নতুন করে সবকিছু শুরু করো। আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাম।” সেদিনই নূরী প্রথম আসাদকে থাপ্পড় মেরেছিল। বলেছিল, “তুমি এটা কিভাবে বললে? আমাদের সন্তানের কি হবে তা কি একবারও ভেবেছ? আজ তোমার স্থানে যদি আমি হতাম তবে তুমি কি আমাকে ছেড়ে যেতে? এই বুঝি আমাদের ভালোবাসা?” অতীত মনে করতেই আসাদের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। ঠিক তখনই ইন্টারভিউর জন্য তার ডাক পড়লো।

চাকরিটা হয়ে গেল। ঘরে আনন্দের মিছিল বইয়ে গেল। নূরীকে জড়িয়ে ধরে আসাদ বলল, “এবার দুজনে মিলে ইরফানের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবো।” নূরীও বেশ খুশি হলো। দুজনে মিলে নতুন ভাবে জীবন রাঙানোর স্বপ্ন দেখতে লাগল। চারটা বছর নূরী ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই এখন আসাদ তার অবসর সময়টা নূরীর সাথে অতিবাহিত করে। দুজনে মিলে রাতে জোসনা বিলাস করে, বাসায় ফেরার সময় আসাদ একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আসে। বিয়ের সময় যে স্বপ্ন গুলো নূরী দেখেছিল তা এখন আসাদ ধীরে ধীরে পূরণ করে যাচ্ছে।

বেশ সুখেই যাচ্ছিলো তাদের জীবন। কিন্তু একদিন সব এলোমেলো হয়ে গেল।
নূরীকে নিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে ডিনার করার খুব ইচ্ছে হওয়ার কারণে আসাদ একটা হোটেলে এলো আগাম কথাবার্তা বলতে। নূরীর জন্য কিছু সারপ্রাইজ প্রস্তুত করতে। হোটেলে এসে আসাদ দেখতে পেল নূরী এক পরপুরুষের সাথে ডিনার করছে। বেশ কিছুক্ষণ আড়াল থেকে আসাদ সব দেখে গেল। ডিনার শেষে নূরী লোকটার সাথে হোটেলের উপরে একটা রুমে চলে গেল। অশ্রুশিক্ত চোখে আসাদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর বাসায় চলে এলো। ঘণ্টাখানেক পর নূরীও ঘরে ফিরে এলো। রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারা শুয়ে পড়লো। নূরীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে ক্লান্ত বলে এড়িয়ে গেল। আসাদও চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়লো। মধ্যরাতে সেই চিরচেনা শব্দ শুনে আসাদের ঘুম ভেঙে গেল। ঘরের কোণে নূরী হু হু কাঁদছে। যদিও খুব স্বল্প স্বরে। তবুও রাতের নির্জনতায় সেই শব্দগুলো আসাদের কানে ভেসে আসছে। তবে নূরীর এই কান্না সবসময় শুনা যায় না। মাসে ৪/৫ দিন এই কান্না শুনা যায়। বিগত চারটা বছর ধরে এটা আসাদের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছিল। নূরী সবসময়ই আসাদের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতো। কিন্তু মাসে ৪/৫ দিন এমন হতো যে, নূরী তার কাছে আসতো না। সে দিনগুলোতে রাতে সে নীরবে কাঁদতো। তখন আসাদ ভাবতো হয়তো নূরী তার জন্য কাঁদে, সংসারের চাপ সামলাতে না পেরে কাঁদে, কিছু স্বপ্ন ভাঙার জন্য কাঁদে। তবে আজ আসাদ বুঝলো যে এই কান্নার পেছনে অন্য রহস্য লুকিয়ে আছে।

বেশ কিছুদিন পর,
আজ আসাদের সাপ্তাহিক ছুটি। তবে নূরীর অফিস খোলা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই নূরী বাসায় চলে এলো।
- কি ব্যাপার আজ এতো তাড়াতাড়ি?
- অফিসের এমডিকে কারা যেন খুন করেছে। তাই অফিস কিছুদিন বন্ধ থাকবে।
আসাদ হুম বলে ইরফানের সাথে খেলা করতে লাগল। কাঁধের ব্যাগটা রেখে নূরী বলল, “চলো, আজ কোথাও ঘুরতে যাই।” ইরফান লাফিয়ে উঠলো, “ইয়ে, মজা হবে। ঘুরতে যাবো।”

অতঃপর তারা ঘুরতে বের হলো। সারাটা দিন এদিক সেদিক ঘুরতে লাগল। নূরী যেন আজ মুক্ত পাখি। তার মাঝে আজ সেই পুরানো প্রেমিকাকে দেখতে পাচ্ছে আসাদ। প্রাণ খুলে হাসছে, মন খুলে কথা বলছে। যা দেখে আসাদেরও ভালো লাগছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। রাস্তাঘাট সোডিয়ামের আলোতে নতুন রূপে সেজে উঠেছে। দিনের প্রখরতা ছেড়ে প্রকৃতি শান্ত হয়ে এসেছে। পাখিরা তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে নূরীরাও। সারাটা দিন ঘুরাঘুরি করে ইরফান ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পরম নির্ভরতার সাথে সে তার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। নূরীও নির্ভরতার সাথে আসাদের কাঁধে মাথা রেখেছে।

বাসায় এসে ইরফানকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আসাদ। তারপর জামাটা খুলতে লাগল। হঠাৎ পেছন থেকে নূরী এসে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। আসাদও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাপা কান্নার মাঝে নূরী বলল, “চলো দূরে কোথাও চলে যাই। এই শহরে আর থাকবো না। নতুন শহরে সবকিছু নতুন করে সাজাবো।” নূরীর কপালে ভালোবাসা এঁকে দিয়ে আসাদ হুম বলল।

ভোরের আলো উঠতেই আসাদ-নূরী সবকিছু গুছিয়ে নতুন নীড়ে চলতে লাগল। সবকিছুর আড়ালে একটা সত্য রয়ে গেল। যা নূরীও জানে, আসাদও জানে। জানে না শুধু এই পৃথিবী। সেদিন হোটেলে নূরীর সাথে যাকে দেখেছিল সে ছিল নূরীর অফিসের এমডি। নূরীর প্রতি আসাদের অগাধ বিশ্বাস ছিল। তাই তো সেই রাতে নূরীকে কোনো প্রশ্ন করেনি। কেননা এই মেয়েটা চাইলে অনেক আগেই সংসার ছেড়ে চলে যেতে পারতো। কিন্তু সে এমন করেনি। আসাদের পাশে থেকেছে। নূরী না থাকলে হয়তো আসাদ অনেক আগেই পৃথিবী ত্যাগ করতো। নূরীর অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তার অফিসের এমডি এতদিন ধরে তাকে শোষণ করে যাচ্ছিল। শুধু নূরীকেই নয়‚ অফিসের আরও অনেক মেয়েকেই সে শোষণ করে যাচ্ছে। তাই একদিন আসাদ সুযোগ বুঝে এমডিকে কুপিয়ে মেরেছে। এটা নূরীও বুঝতে পেরেছে। কেননা সেদিন হোটেলে আসাদকে দেখে ফেলেছিল নূরী। তারপর প্রায় সময়ই অফিসের বাইরে মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখতো। কিছু সত্য জেনেও সামনে আনতে নেই। তাই তো আসাদ-নূরী নিজেদের সত্য জেনেও আড়াল করে রেখেছে। নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.