নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যখন খুব আনন্দে থাকবেন তখন কোন কথা দিবেন না আর যখন খুব রাগান্বিত থাকবেন তখন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না, এতে পরবর্তীতে পঁচতাতে হয়,ধৈর্য ধরুন আর ক্ষমা করতে শিখুন।

এম এল হাসান

যাযাবর

এম এল হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুশ্রম ও সরকারের দায়ভার

৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩


জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ ও আমাদের দেশের শিশু আইন ২০১৩তে ১৮ বছরের নিচের সকল শিশু-কিশোরকে শিশু বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই শিশুদের যেকোন ঝুঁকিপূর্ণ নিয়োজিত করাই হল শিশুশ্রম। যা পৃথিবীর সকল দেশে আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুশ্রমের ভয়াবহ চিত্র দেখলে বুঝার কোন উপায় নেই আমাদের আইনও শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধ বলে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় মালিকপক্ষ জানেনই না শিশুকে কোন কাজে নিয়োজিত করার ব্যাপারে রয়েছে নানা বিধি-নিষেধ। জানেন না শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগদাতাদের জন্য দেশের আইনে রয়েছে শাস্তির বিধান। জানবেনই বা কিভাবে ? কারণ আমাদের সরকারকে শুধু আইন প্রণয়ন করতে দেখা যায়। কিন্তু আইন প্রয়োগের ভূমিকায় তো আর তাদের দেখা মিলে না। আবার দেখা যায় যেসব মালিকপক্ষ সচেতন, অপবুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে ‘শিশু শ্রমিক নেওয়া হয় না’ এমন মুখরোচক ব্যানার টানিয়ে ভেতরে কাজে লাগাচ্ছেন কোমলমতি শিশুদের। শিশু আইনে বলা রয়েছে কোন শিশুকে একান্ত প্রয়োজনে অভিভাবকের ইচ্ছায় রেজিস্টার্ড ডাক্তারের শারীরিক সক্ষমতার সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট কিছু কাজে তাদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া দূরহ। বরং ক্ষেত্রবিশেষে এসব শিশু-কিশোরকে জাহাজকাটা কারখানা থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিং কারখানা, এসি, রেফ্রিজারেটর মেরামত কারখানায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ কাজগুলো অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এ ব্যাপারে যেন মাথাব্যথা নেই কারো।
প্রচলিত শিশু আইন বলে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ এবং শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নিয়জিত ব্যাক্তি দন্ডিত হবেন অর্থদণ্ডে এমনকি কারাদন্ডেও। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ শিশুই কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত। তবে হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার হলো, তাদের অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধির অন্তরায়ই নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যাবহার করে এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। আবার অনেক সময় শ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিকও জুটে না এসব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ভাগ্যাকাশে।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু। আর এই শিশুদের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বাস করে দারিদ্র সীমার নিচে। দেশে বর্তমানে মোট শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কারোই জানা নেই। কয়েকটি বেসরকারী সংস্থার হিসেব মতে দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়জিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সারা দেশে একটি শিশু মতামত জরিপ চালায় জাতিসংঘের নারী ও শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ শিশুর মতামত, “শিশুরা ভোটার নয় বলে রাজনৈতিক দলগুলো শিশুদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট নয়”। শিশুশ্রম যখন প্রতিনিয়ত কেঁড়ে নিচ্ছে শিশু অধিকার। আর সরকার যখন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বদা নিরবের ভূমিকায়, তখন জরিপে অংশ নেওয়া শিশুদের মতামত যে যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য তাতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।
মূলত শ্রম আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আমাদের দেশের শিশু-কিশোররা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সম্পৃক্ত। উন্নত বিশ্বে শিশুশ্রম বন্ধে কড়াকড়ি থাকলেও আমাদের দেশে এ আইন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। ফলে প্রতিবছর বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শিশু-কিশোররা মৃত্যুমুখে পতিত হলেও মিলছে না কোনো প্রতিকার। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও দেখতে চাই, শিশুশ্রম বন্ধ হয়ে আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শৈশব ও কৈশোরটা হবে উৎকণ্ঠা ও শঙ্কাহীন। যেখানে শিশুদের প্রাপ্য সব সুযোগ-সুবিধা সরকার পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত করবে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগও দরকার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.