![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ভবঘুরে, আমি দুর্বার; আমি অসৎ এর সাথে, অগ্নিল স্ফুলিঙ্গাকার । আমি কোমল, আমি দুর্বোধ্য; আমি হিংস্র, করি অসুরের দ্বার রুদ্ধ ।
রাত ১০:৪৫
আবিরের ফোন বেজে উঠলো । সিন্থিয়ার কল এসেছে । কল টা রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে........
- তোমাকে না কত বার বলছি, পড়ার সময় ফোন বন্ধ রাখবা..
রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো সিন্থিয়া... আবির কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, আবারও সিন্থিয়ার উচ্চস্বর
- পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেসবুক আর হোয়াট'সএপ এ চ্যাট হচ্ছে, তাই তো ? তুমি যে কি ? আমার কথার কোন দাম নাই তোমার কাছে ? তোমার যা ইচ্ছা তাই করো ফেইল করলে তুমি করবা.. তাতে আমার কি ??
আবির লক্ষি ছেলের মতো কথাগুলো হজম করলো, তারপর সিন্থিয়া কে বুঝানোর জন্য কোন রকমে একটা যুক্তি দাড় করালো..
- না মানে শোনও, আসলে হয়েছে কি, টাইম টা দেখার জন্য মোবাইল অন করেছিলাম । মনে হলো অনেক্ষণ থেকে পড়তেছি, তাই.....
- ওহ আচ্ছা, টাইম দেখার জন্য মোবাইল অন করছিলা ? আমাকে তুমি এত বোকা ভাবো ? তোমার ঘড়ি নাই ? অন্য কারো কাছ থেকে টাইম দেখা যায় না ??
- সরি রে বাবা, মাফ চাইছি
- ক্যান, সরি ক্যান ? এইটা তোমার লাইফ, তুমি তোমার মত চলবা । আমি এখানে বলার কে ?
- লক্ষিটি, শোনও না, আর কক্ষনও এমন হবে না...
শোনছো ??
সিন্থিয়া কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে থাকে, তারপর..
- হুমম, বলো
- আগামীকাল আমরা দেখা করছি তো ?
- আগামীকাল এটা ছাড়া ও আরো একটা টপিক ছিলো, মনে আছে তোমার ??
- আবার জিগায় !!
- কি বললা ??
- নাহ, কিছু না । বলতেছি মনে আছে, আগামীকাল আমার সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষা । আর পরীক্ষা দিয়েই তোমার সাথে দেখা করবো, ইয়াহু !!
- এত্ত খুশী হওয়া লাগবে না, শর্ত টা নিশ্চয়'ই মনে আছে ? আমাদের দেখা হবে, যদি তোমার পরীক্ষা ভালো হয়
- পরীক্ষা তো ভালো হবেই
-মনে আছে আগের সেমিস্টারের রিজাল্ট ??
- লজ্জা দিচ্ছো কেন ?
- লজ্জা না, মনে করিয়ে দিচ্ছি । এইবার যদি ভালো না করো, তবে আর........
এই আব্বু চলে আসছেন, আমি রাখি । নিজের খেয়াল রাইখো আর প্লিজ সব কিছু রিভাইজ দাও
- এখন ই রেখে দিবা ? আরেকটু...
- আব্বু চলে আসছে তো । ভালো থেকো, লাব্বিউ...
আবির কিছু বলতে গিয়ে ও পারেনি, তার আগেই লাইন টা কেটে গেলো...
সিন্থিয়া - লাবণ্যময়ী এই মেয়ে'টা নিয়েই আবিরের স্বপ্ন ঘুড়ির দিগিন্ত পানে ছোটে চলা - মেয়ে টি ভীষণ সিরিয়াস আর বাস্তব'বাদী । আবির শান্ত স্বভাবের ছেলে । পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফেসবুক আর ব্লগে এক আধটু লেখা লেখি করে, তবে লেখা লেখির চাইতে ঘোরা ঘোরি টা'ই হয় বেশী !! আগামীকাল তার সেমিস্টার ফাইনালের শেষ পরীক্ষা । পরীক্ষা দিয়েই সে তার হৃদয় রাজ্যের
রাজকন্যার সাথে দেখা করতে যাবে..
আবির মনে মিনে প্রতিজ্ঞা করেছে, এই সেমিস্টারে তাকে খুব ভালো করতেই হবে । অন্তত সিন্থিয়াকে খুশী করার জন্য ।
পরদিন পরীক্ষা শেষ করেই আবির আর অপেক্ষা করতে পারলো না ।
দুলাভাইর গিফট করা শার্ট পরেই বের হয়ে গেলো । পিচ্চি একটা মেয়ে ফুলের মালা বিক্রি করছিলো, বেলি ফুলের মালা । আবির তাকে ডেকে আনলো, একটা মালা কিনে নিলো তার রাজকন্যার জন্য...
টিএসসি চত্বরের সেই চিরচেনা জায়গাতেই সিন্থিয়া বসে আছে । আজ সিন্থিয়া কে একটু ব্যাতিক্রম দেখাচ্ছে । কারণ আগে কখনও তাকে শাড়ি পরতে দেখেনি আবির । বেলি ফুলের জন্য ১০ টাকা খরচ করা বৃথা যায়নি, চিন্তা করে একটা মুচকি হাসি দিলো সে ।
-তুমি চলে আসছো ? আমি আরো ভাবছিলাম, আজও দেরি করবা । পরীক্ষা কেমন হইছে তোমার ??
সিন্থিয়ার দিকে এক দৃষ্টি'তে তাকিয়ে ছিলো আবির
- ও হ্যা, পরীক্ষা ? হুমম.. ভালোই হইছে
- তাই যেন হয়
সিন্থিয়া কে একটু চিন্তিত মনে হলো
- এই দাড়িয়ে আছো কেনো ? পাশে এসে বসো..
আবির সিন্থিয়ার পাশে গিয়ে বসলো । তার মুগ্ধতা এখনও কাটেনি । শাড়ি পড়লে মেয়ে দের ভালো লাগে, কিন্তু সিন্থিয়া কে মনে হয় একটু বেশী ই ভালো লাগছে... লাল আর কালো'র মিশেলে এই শাড়ি তে, তাকে ভীষণ মানিয়েছে ।
- আজ হঠাৎ শাড়ি পরে ?? যখন এই মালা টা কিনি, তখন ভাবতে ও পারিনি, তুমি শাড়ি পরবা । কি অদ্ভুত মিল !! আর তোমাকে না শাড়ি তে এত্তগুলা কিউট লাগছে, মনে হচ্ছে যেন স্বর্গ থেকে কোন এক অপ্সরি ধরণির বুকে নামে এসেছে... যে বসে আছে আমার পাশেই । মনে হচ্ছে....
- হইছে আর লাগবেনা
আবির কে মধ্যখানেই আটকে দেয় সিন্থিয়া । তবে তার ঠোটের কোণে ফোটে উঠা হাসি, আবির ঠিক ই দেখতে পায়...
- আবির, তোমাকে আমি কেন ভালোবাসি জানো ? কারণ তুমি অনেক ভালো আর শান্ত একটা ছেলে ।
নিজেই উত্তর দিলো সিন্থিয়া..
- কিন্তু তুমি পড় না কেনো ??
- এইবার অনেক পড়াশোনা করছি
- প্রতিবার এক ই কথা বলো, তুমি জানো না, তোমার রিজাল্ট ভালো হওয়ার জন্য আমি কত.........
কিছুক্ষণ থেমে সিন্থিয়া আবারও বলতে লাগলো
- গত দুই'টা সপ্তাহ, তোমার সাথে আমি মাত্র ক'টা মিনিট কথা বলেছি । তোমার কি মনে হয়, আমার কষ্ট হয় নি ?? কিন্তু শুধু তোমার এক্সাম টা ভালো হওয়ার জন্য......
রাহাত কে পড়ায়ে যে হুজুর আসেন, উনার কাছ থেকে জানলাম, তাহাজ্জুদের নামায পড়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি কবুল করেন..
বিশ্বাস করো, এই কটা দিন, আমি রাত জেগে নামায পড়তাম আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম.. তুমি যেন পড়া শোনায় মন দাও, তোমার পরীক্ষা যেন ভালো হয় ।
বলতে বলতে আবিরের হাত চেপে ধরে সিন্থিয়া, আর আবির অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সিন্থিয়ার দিকে...
- আমি কেন এমন করি জানো ?? কারণ আমি কিছুটা সময় কাটানোর জন্য তোমায় ভালোবাসি নি । ভালোবেসেছি সারা জীবনের জন্য, ভালোবেসেছি প্রতিটা সুখে-দু:খে, প্রতিটা সময় তোমায় পাশে পাওয়ার জন্য । ভালোবেসেছি একই ছাদের নিচে থাকার জন্য । আর এ স্বপ্ন পূরণের শত বাধা পেরুতে, আবির তোমাকে যে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে...
আবির কিছু বলার চেষ্টা করে, কিন্তু ভাষা খোজে পায় না, এই পাগলি মেয়ে টা তাকে নিয়ে এত ভাবে.. তার জন্য এত কিছু করেছে !!
- আমার কথা শুনছো ?
- তুমি.. তুমি আমার জন্য এতো কিছু করলা ? তুমি এতও ভালো ক্যান ?? সত্যি তুমি...... -
হুমম.. আমি জানি, আমি অন্নেক সুইট একটা মেয়ে । এইটাই তো বলতে চাইছিলা ??
সিন্থিয়ার মুখে হাসি ফোটে উঠে
- আমি আজ শাড়ি পড়েছি কেন জানো ? একবার তুমি বলছিলা, আমাকে কখনও শাড়ি পরতে দেখোনি, তাই ভাবলাম তোমায় একটা সারপ্রাইজ দেই । আর এই বেলি ফুলের জন্য তোমায় এত্তগুলা ভালোবাসা...
আবারও হেসে উঠে সিন্থিয়া..
- কিন্তু আমার রেজাল্ট যদি খারাপ হয় ??
এক অজানা আতঙ্ক ভর করে আবির কে । তার চোখের কোণে জমা হয় দু'ফোটা অশ্রু..
সিন্থিয়া আবিরের হাত আরও জোরে চেপে ধরে, আর হাসি মাখা মুখে বলে.....
- না, খারাপ হবে না ।
আমার বিশ্বাস, তোমার রিজাল্ট এবার ভালো হবেই হবে ।
আবির সাহেব, এবার একটু হাসেন তো...
আবির হেসে উঠে, হেসে উঠে সিন্থিয়া..
শেষ বিকেলের সূর্য্য, তখন রক্তিম আলোয় তার স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে । ক্ষণিকের এ বাঁধণ ছেড়ে, ফিরে যেতে হবে দু'জন কে । তবে ভালোবাসার ঐ অদৃশ্য বাঁধণ, অটুট থাকবে চিরকাল...
-আজ আবিরের রিজাল্ট ।
রাতে সে ঘুমাতে পারেনি । এক অজানা আতঙ্ক তাকে ঘিরে আছে । যদি রিজাল্ট ভালো না হয়, সে কি জবাব দেবে সিন্থিয়াকে । তার চাইতে ও বেশী কষ্ট পাবে মেয়েটি...
শুধু তার জন্য কত কষ্টই না করলো সিন্থিয়া, রাত জেগে.........
আর এখন হয়তো ফোন হাতে বসে আছে, আবিরের উচ্চস্বিত কণ্ঠে রিজাল্ট ভালো হইছে, এই কথা শোনার জন্য ।
এইসব ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির দিকে পা বাড়ায় আবির ।
ডিপর্টমেন্টে ঢুকার পর, মনে হলো.. সবাই কএমন অন্য রকম দৃষ্টি তে, তাকিয়ে আছে তার দিকে । তার মনে গেঁথে যাওয়া আতঙ্ক আরও বেড়ে গেলো...
আবির মাথা নিচু করে এগিয়ে গেলো নোটিশ বোর্ডের দিকে ।
সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে, মনে করলো
সিন্থিয়ার হাসি মাখা মুখে বলা সেই কথাটি..
"আমার বিশ্বাস, তোমার রিজাল্ট এবার ভালো হবেই হবে"
হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো আবিরের
নোটিশ বোর্ডে তাকিয়ে নিজের রোল খোজতে লাগলো সে । খুব বেশী খোজতে হলো না...
রোলের পাশে রেজাল্টের ঘরে চোখ পড়লো তার ।
অত:পর..
নিজের অজান্তেই চিৎকার করে উঠলো আবির । আর তার হাত চলে গেলো প্যান্টের পকেটে রাখা মুঠোফোনের দিকে । শহরের অন্য প্রান্তে কোন এক জন, এই আনন্দের খবর টা শোনার জন্য অপেক্ষা করছে । হয়তো চিন্তিত মুখে বসে আছে অথবা প্রার্থনা করছে বিধাতার কাছে.. তার মুখে যে হাসি ফোটাতেই হয় ।
----------------------------------------------------------
©somewhere in net ltd.