নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘ ছুঁয়ে দেখো.........আমি বৃষ্টি হবো......

নাম ছিলনা স্বপ্ন গুলোর........প্রতিবিম্বিত অবয়ব তাড়িয়ে বেড়ায় নিজেকে।

মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন রেজা নাদিম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি বি এ করছি।অবসরে কিছু লিখার চেষ্টা, ভার্সিটি, পড়া , পড়ানো.........সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে মুহূর্ত গুলো।।

মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন রেজা নাদিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানবতার সেবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:১১



সাভার দুর্গতদের পুনর্বাসনের লক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাণিজ্য অনুষদের কনফারেন্স হল এ মোট ৫২ টি পরিবারকে সেলাই মেশিন, রিক্সা ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয় গত বুধবার (১৫ইমে, ২০১৩)।

“মানবতার সেবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” শিরনামের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ফলে যে কোনো ধরনের দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি হয়। এই ক্ষতি কিভাবে কমানো যায় তা নিয়ে স্থপতি, প্রকৌশলীদের চিন্তা করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ঢাবি প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডঃ শহিদ আখতার হোসাইন বলেন, আমরা সবাই মিলে যদি বানিজ্য অনুষদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি তবে তাদের(ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের) দুঃখ থাকবে না। ঢাবি ট্রেজারার অধ্যাপক ডঃ মোঃ কামাল উদ্দিন মানুষ মানুষের জন্য এই উক্তি উল্লেখ করে বলেন, জাতীয়তাবাদের চাইতে মানবতাবাদকে প্রাধান্য দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই সামান্য সাহায্য ক্ষতিগ্রস্তদের তেমন কোন উপকারই হবে না তবে অন্ততপক্ষে তারা সাহস পাবে যে তাঁদের পাশে সবাই আছে। রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব অবহেলিতের অধিকার রক্ষা করা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজনেস স্টাডিস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়েতুল ইসলাম।

সাভারের রানা প্লাজার হত্যাকান্ডের ভয়াবহতা নিয়ে নতুন করে কিছু বলে দীর্ঘসূত্রিতায় যাচ্ছি না। ১১২৭টি লাশের ভার বহনের চেয়ে বড় ভার হলো এই ঘটনায় যারা জীবিত আছে তাদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের প্রায় ৭০ জনের একটা দল হিসেবে নাদিম, সজিব, তানভির, অন্তু, শোভন সহ বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী শুরু থেকেই সেই কাজটি করার চেষ্টা করেছে কয়েক সপ্তাহ ধরে। সেই সাথে সম্পূর্ণ কাজটি তত্ত্বাবধায়ন করেছেন Accounting ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষক মোঃ জামিল শরিফ।

রানা প্লাজার হত্যাকান্ডের পরপরই তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়া, শাহবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সবকটি মার্কেট, আশেপাশের পার্ক চষে বেড়িয়েছে । এখান থেকে তোলা এবং বিদেশী বন্ধুদের পাঠানো অর্থ থেকে পাঁচ লাখ (৫,০০,০০০) টাকা এবং বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষকদের প্রদত্ত (ডীন ফান্ড) পঞ্চাশ হাজার (৫০,০০০) টাকা সহ মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা (৫,৫০,০০০) তুলতে সক্ষম হয়েছে। এই অর্থদিয়ে তারা ৩১টি সেলাই মেশিন, ১২টি রিকশা, ২ টি ভেন কিনেছে । পাশাপাশি তাদের আরেকটি টিম সাভার দূর্গতদের মধ্য থেকে ৫২ জন মানুষকে চিহ্নিত করেছে। যাদের মধ্যে ৩১জনকে সেলাই মেশিন ও ৫০০০ টাকা দেয়া হয়, ১২ জনকে রিকশা ও ৩০০০ টাকা, ২ জনকে ভেন ও ২০০০ টাকা এবং বাকী ৭ জনকে নগদ অর্থ দেয়া হয় । এছাড়াও ২ টি পরিবারকে আগামী ৪ মাস ৩৮৫০ টাকা করে দেওয়া হবে যেন তারা তাদের সন্তানের লেখা পড়া চালিয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ৫২ টি পরিবারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাভার বাস রুট “হেমন্ত” তে করে সাভার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয় এবং বিকেল ৩ টায় তাদের আবার সাভার এ পৌঁছে দেওয়া হয়।



এবার আসুন “মানবতার সেবায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” এর পিছনের গল্পটা শুনি -



২৪-০৪-২০১৩ ; ভেঙ্গে পড়ল সাভারের রানা প্লাজা। বাসা টা রানা প্লাজার একদম কাছাকাছি হওয়ায় একদম কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল লাশের মিছিল। ওই দিন বিকেলে এনাম মেডিকেল এ রক্ত দিতে যাই। এনাম থেকে বের হয়ে আসি একদল বীভৎস লাশ এর উপর দিয়ে (পিছনের গেট যেখানে লাশ গুলো রাখা হয়েছিল)। মনের ভেতর খারাপ লাগার অনুভুতি আমি বুঝাতে পারি না কখনও। শুধু মাত্র "আমাকে কিছু করতে হবে বা করা উচিৎ" এমন একটা অনুভুতি ছিঁড়ে খাচ্ছিল।

পরের দিন ক্যাম্পাসে যাই। আমার এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল।আমি সজিব কে বললাম, "দোস্ত, কিছু করা উচিৎ"। তানভির ও ছিল সেখানে। সবাই বুঝলাম কিছু করা উচিৎ কিন্তু কি করা উচিৎ টা আর বুঝলাম না। মোটামুটি কিছু টাকা দরকার এতটুকু মনে হল। পরের দিন ছিল মিড পরীক্ষা। তাই কোন ডিশিসন না নিয়েই বাড়ি ফিরলাম।

ওই দিন রাতে সজিব ফোন দিল," দোস্ত, কাল থেকেই টাকা তুলবো। তুই Volunteer যোগার কর।" রাত তখন প্রায় ১০ টা। কিভাবে কি করব বুঝতে পারলাম না। FBS এর প্রায় সব Department এর বন্ধু দের ফোন করে বললাম, পরের দিন যেন ১০ টায় Faculty তে থাকে। আর ওরা যেন Junior Batch এ এই খবর টা বলে দেয় যে Volunteer দরকার। এইদিকে টাকা পয়সার বেপার, তাই Technical কোন Problem আছে নাকি তা জানতে Al Amin Sir কে ফোন দেই। Sir বললেন, Dean Sir এর কাছ থেকে অনুমুতি নিতে। এতো রাতে Dean Sir কে ফোন দেওয়ার সাহস হল না, FB তে একটা Inbox করলাম Sir কে। Dean Sir রাত ১ টায় reply করে বললেন যে Officially টাকা তোলার Permission দেওয়া সম্ভব না, কিন্তু আমরা Unofficially করতে পারি।

পরের দিন ১০ টায়। বেশ কিছু Volunteer আসল। আমরা তাদের নাম লিস্ট করলাম। সবাই চিন্তা করছিল যা টাকা উঠবে টা Instant সাভার এ পাঠিয়ে দিবে Instant Support দেওয়ার জন্য। কিন্তু সাভার এ তখন চিত্র টা ভিন্ন। Instant Supports তখন প্রয়জনের চেয়ে বেশি ছিল সাভারে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এক সপ্তাহ টাকা কালেকশন করবো। তারপর সাভারে লিস্ট করে, Prime Needy পরিবার গুলোকে এমন ভাবে সহায়তা দিবো যেন তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এটা হতে পারে ১ টা পরিবার, কিন্ত এটাই কম কি? ৫০০ টাকা করে সব পরিবারকে না দিয়ে, অন্তত ১ টা পরিবারকে নতুন করে স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্ন নিয়ে শুরু হল যাত্রা।

ওই দিন Mid ছিল। কিছুই পড়া হয় নাই। ভাগ্য ভালো, কিভাবে যেন Mid টা ওইদিন Cancel হয়ে যায়। আসলে কত টাকা উঠবে, বা আদৌ কি আমরা কিছু করতে পারব কিনা, এটা নিয়ে যখন আমরা চিন্তিত, আমাদের স্বপ্নকে নতুন আলোর পথ দেখালো আমার বড় ভাইয়ার ফোন। Md Moniruzzaman ভাইয়া USA থেকে ফোন করে বলল, উনি USA, CANADA, AUSTRALIA থেকে কিছু কালেকশন করে আমাকে পাঠাবেন। সাহস টা অনেক বেড়ে গেল। শুরু করলাম পূর্ণ গতিতে কাজ।

পরের দিন, ১৫ টা বক্স বানালো হল। ১২-১৫ টা পয়েন্ট ঠিক করলাম। প্রায় সব Department থেকেই Volunteer আসল। আমরা তাদের ৩-৪ জনের টিম করে নির্ধারিত পয়েন্ট গুলোতে পাঠাই। প্রথম দিন ই কালেকশন হল ৫০০০০ টাকা। যদিও টাকা তুলতে গিয়ে Volunteer দের অনেক রকম বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়েছে, তবুও আমার প্রিয় ভাইবোন রা তা হাসিমুখে Handle করেছে। হটাত মনে হল টাকা গুলোর Securityর কথা। আমরা দেখা করি, Jamil Sharif Sir এর সাথে। Sir কে বলি আমাদের পরিকল্পনা। Sir রাজি হলেন আমাদের Treasurer হিসেবে কাজ করতে। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যা কালেকশন হয়, Sir কে দিয়ে আসি। এভাবে চলে এক সপ্তাহ।

দেশ এবং বিদেশ থেকে প্রায় ৫,১৫,০০০ টাকা কালেকশন হয়। তারপর শুরু করি সাভার লিস্টিং অভিযান। প্রখর রোদে প্রায় ৩০০ টা পরিবারকে লিস্ট করি। যেহেতু অর্থ সীমিত, তাই এখানেই লিস্ট করা বন্ধ করে দেই। লিস্ট করার সময় আমরা তাদের প্রশ্ন করেছিলাম, কি হলে তারা আবার নতুন করে চলতে পারবে। কেউ বলেছে সেলাই মেশিন, কেউ রিক্সা, কেউ ভেন, কেউ গাভী এবং আরও অনেক কিছু।

এরপর শুরু হয়, সাধ এবং সাধধের সমন্বয়। ১১০ টি পরিবারকে Prime Needy Family হিসেবে বাছাই করি। Sir এর সাথে কথা বলি কিভাবে আমরা সীমিত টাকা দিয়ে হেল্প করব। Sir কতগুলো Criteria Set করে দেন। এর ভিত্তিতে আমরা খুজে পাই ৫২ টি পরিবারকে যাদের আমরা সাহায্য করতে পারবো।

সম্পূর্ণ ব্যাপারটি তে স্বচ্ছতা থাকা উচিৎ। তাই আমরা DEAN Sir কে অনুরোধ করি যেন Sir নিজে থেকে Support গুলো প্রদান করেন। তারপর বাকি কাজটা Dean Sir এবং Jamil Sir সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দেন।

Hemonto বাসের Joint Secretary হিসেবে আমি কমিটি কে অনুরোধ করি, ১৫ তারিখে ১ টা ট্রিপ বন্ধ করে ট্রিপটি যেন এই ৫২ টি পরিবার কে আনা নেওয়ার কাজে দেওয়া হয়। কমিটি তা মেনে নেয়।

বাকি টুকু তো সবাই জানেন। আমার খুব ভালো লাগতো যদি সবাইকে Support দিতে পারতাম। কিন্তু কি করার আছে ? সাধ অনেক, উপায় সীমিত।

ধন্যবাদ দিয়ে কাওকে ছোট করব না। শুধু এইটুকু ই বলব, মানবতা যত দিন বেঁচে থাকবে, ততদিন আমরা বেঁচে থাকব। হোক মানবতার জয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.