নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মফিজুল হক

মফিজুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

লেট করা সেই ট্রেনের অপেক্ষায়

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:২২

ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল নয়টা পঞ্চাশে। এখন বাজে এগারোটা। ট্রেন ছাড়া তো দূরের কথা ইঞ্জিন লাগানোর কোন নামগন্ধ নেই। ট্রেনের যাত্রীরা যে যার মত এদিক ঘুরাঘুরি করছে। তাদের সকলের চোখে মুখে অস্থিরতা।

কার্ত্তিক মাসের রাত। একটু ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা গরম আবার শেষ রাত্রিতে বেজায় ঠান্ডা। এ হলো কার্ত্তিক মাস। শহুরে জীবনে কেউ আর এখন বাংলা মাসের তারিখ মনে রাখেনা। আজকাল স্কুলের ছেলেমেয়েদের জিগ্যেস করলে হয়তো বারো মাসের নামও বলতে পারবে না। মুকিত বারো মাসের নাম বলতে পারে। তবে এটা যে কার্ত্তিক মাস সেটা হয়তো বলতে পারতো না। আজ স্টেশনে আসার সময় একটা খবরের কাগজের বিকালের সংখ্যা কিনেছিল। সেটাতেই চোখে বুলানোর সময় ধরা পড়েছে।

আজকাল কিছু কিছু নামসর্বস্ব কাগজ বিকেলের সংখ্যা বের করে। হকাররা ডেকে ডেকে রসময় করে কাগজ বিক্রি করে। এর বেশি ভাগই অশ্লিল ছবি ও বারাবারি রকমের গুজব সম্বলিত শিরোনাম বিশিষ্ট। তবুও কাগজটা একটা কাজে লেগেছে। বাংলা মাসটা তাকে মনে করাতে পেরেছে। কিন্তু তারিখটা সে ভুলে গেছে। এখন অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেনা। তারিখটাও হয়তো অন্যসব কথার মত স্মৃতি থেকে সরে গেছে।
খোলা প্লাটফরমের উত্তর পাশটা একেবারে ফাকা। চারিদিকে নিরবতা। মাঝেমাঝে দুই একটা হুইসেল নিরবতা ভেঙ্গে দিচ্ছে। একা ভাবতে ভাবতে মুকিত অনেকটা দূর চলে এসেছে। হঠাৎ সে তাকিয়ে দেখে গাড়িতে ইঞ্জিন লাগানো হচ্ছে। ট্রেন ছাড়ার প্রস্তুতির একটা অংশ। যাক দিরে হলেও ছাড়বে তো। তাতেই স্বস্তি। কেননা এখন না ছাড়লে কাল আটটার আগে সিলেট পৌছাতে পারবে না। দশটায় অফিস। সব এলোমেলো হয়ে যাবে।

সিলেটে নতুন চাকরি। সবে মাত্র তিনমাস হলো। প্রতি সপ্তাহেই এভাবে সে যাতায়াত করে। মা বাবা থাকে ঢাকায়। তাদের দেখতে আসতে হয়। প্রতি সপ্তাহে না আসলেও হতো কিন্তু না আসলে পরবর্তী সপ্তাহটা অনেক বড় মনে হয়। একবার অফিসের একটা কাজ পড়েছিল শনিবার। সে সপ্তাহে সে ঢাকায় আসতে পারেনি। তখন তার রবিবারের পর সোমবার আসে না। সোমবার আসলেও মঙ্গলবার তো আসেই না। ঐ দিকে না দেখতে পেয়ে অসুস্থ মায়ের কান্নাকাটি। নতুন চাকরি ছুটি নেয়া যাবে না। অনেক বড় একটা সপ্তাহ গিয়েছিল সেটা। মনে হয়েছিল একদিন তো নয় যেন এক বছর। তাই কষ্ট হলেও প্রতি সপ্তাহে আসা,যাওয়া করতে হয়।

এরকম আরো একদিন ট্রেন ছাড়তে দেরি করেছিল। সে বার রাত একটায় ট্রেন ছাড়লো। গার্ড কে জিগ্যেস করল যে ট্রেন আনুমানিক কয়টায় সিলেট পৌছাবে। সে যে উত্তর দিল, তা শুনে মুকিতের চোখ ছানাবড়া। ট্রেন নাকি সকাল দশটার আগেই পৌছাবে।

- সকাল দশটা বাজবে ?
-কেন কাল ট্রেন সাড়ে দশটায় সিলেট পৌছাইছে।
- কালকেও কি ছাড়তে দেরি করেছিল ?
- কুলাউড়ার পর ইন্জিনে কি যেন সমস্যা হয়েছিল, তাই একটু দেরি হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিনই দেরি করে।
-একটু দেরি! যে ট্রেন ছয়টায় পৌছানোর কথা, সেটা দশটায় পৌছালে একটু দেরি হয় বুঝি !

গার্ড চেয়ে থাকে। একটু মুচকি হেসে চলে যায়। মুকিত তো চিন্তায় অস্থির। যদি আজও দেরি করে। স্টেশন থেকে বাসা যেতে লাগে আধঘন্টা, বাসা থেকে অফিস প্রায় একঘন্টা। তার মানে সাড়ে আটটার আগে সিলেট পৌছালেই কেবল স্বস্তি। বাসে আসা যাওয়া নিষেধ। মা বাবার কড়া আদেশ ট্রেনেই চলাচল করতে হবে। বহুবার বুঝিয়েছে, লাভ হয়নি। অগত্যা সমস্যা হলেও তাকে ট্রেনে যাতায়াত করতে হয়।

সেইবার ট্রেন পৌছালো নয়টায়। বাসা যাওয়া হয়নি।সরাসরি অফিস। সারারাত ট্রেন যাত্রার পর সারাদিন ঘুম চোখে অফিস। গোছল, সকালের নাস্তা সবই সেদিন ছুটি নিয়েছিল শুধু আমার ছুটি হয়নি। অসহ্য রকমের একটা দিন ছিল। মনে মনে দোয়া করে মুকিত এমন দিন যেন তার জীবনে আর না আসে।
আজও মনে হয় ঐ রকম কিছু হতে চলেছে। এখন বাজে রাত এগারোটা চল্লিশ। ইতোমধ্যে প্রায় দুই ঘন্টা লেট।তার মানে সিলেট পৌছাবে সকাল আটটায়। ওহ! আর আধ ঘন্টার মধ্যে যদি ট্রেনটা ছেড়ে দিত। ভাবতেই হুইসেলের শব্দে হুশ এলো। “উপবন এক্সপ্রেস” কিছুটা নড়ে উঠলো। সবাই ট্রেনে উঠার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করে দিয়েছে। সেও উঠে নিজের সিটে বসলো। যেমনটা চেয়েছিল, ঠিক তেমনি। জানালার পাশে। ঠান্ডা বাতাস আসছে। একমুহুর্তেই শরীরটা জুড়িয়ে গেল।

রাত বারোটা বাজে। এখন বোধহয় ট্রেনটা ছাড়বে। গার্ডের বাশিঁর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। ট্রেন নড়েচড়ে উঠেই আবার থামলো। সবাই অবাক আবার হলো কি। মুকিতও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মনটা ফের বিষন্ন হয়ে গেল। এভাবে কি হয়। আর পারা যায়না। পরেরবার ঢাকা আসলে বাসে যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। এভাবে আর বেশি চলাচল করা যাবে না। মনের ভেতরকার সুপ্ত জেদ যেন তার চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসছিল তখন।

হ্যা, হ্যা এই সিটটাই। সি-৩৮। এক মাঝবয়সী ভদ্রলোকের কথা শুনে সে হুশ ফিরে পায় মুকিত। সাথে ছোট ছোট দুইটা লাগেজ। উপরে তুলল। মুকিত একটু এদিক তাকিয়ে আবার জানালা দিয়ে বাইরের দিকে একবুক হতাশা নিয়ে তাকিয়ে রইলো। লোকটা তার লাগেজগুলো উঠানোর শেষে কাকে যেন বসতে বলল।

-বস, মা। বসে পড়। রাত জেগে ট্রেনে বসে পড়বে না। খিদে লাগলে খাবারটা খেয়ে নিও।আমাদের জন্য চিন্তা করো না আরো কত কি।
তার কথা শুনে মুকিত এদিক তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে তার পাশে বসে আছে। একটু ইতস্তত। লোকটা সম্ভবত তার বাবা। মেয়েটা মনে তার বড় মেয়ে, আদুরে কথা শুনে মুকিতের মনে হলো। লোকটা তাকিয়ে আছে মুকিত এর দিকে। কিছু একটা বলবে মনে হয়। না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে।

গার্ডের বাশিঁ ফের বেজে উঠে। মোবাইলে দেখে, এখন সময় বারোটা দশ। লোকটা নেমে যাবার জন্য তাড়াহুড়া করছে। মেয়েটা ইশারায় তার বাবাকে কিছু একটা বলল। মুকিত ও মাঝবয়সী লোকটার চোখে চোখ পড়তেই মুকিত চোখ ফিরিয়ে ওপাশ ফিরে আছে। ভদ্রলোক কিছুটা অনুরোধের স্বরে বলল,
-আপনার যদি কোন কষ্ট না হয় তবে কি আমার মেয়ে জানালার পাশের এ সিটটায় বসতে দিবেন ? মানে এক্সচেঞ্জ।

এমন সময় মেয়েটাও মুকিতের দিকে তাকিয়ে।কি বলব বুঝতে পারছে না। ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে। ভদ্রলোক নেমে যাবে। উত্তরের আশায় ছটফট করছে। মুকিত বলল,
-ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে, আপনি যান। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি।
লোকটা নেমে গেলেন। জানালা দিয়ে মেয়েকে শেষ বারের মত বিদায় দিয়ে গেলেন।
-সুমনা, চিন্তা করোনা মা। ক্লাস বন্ধ দিলেই চলে এসো। আমাদের জন্য কোন চিন্তা করোনা। ফোন দিও।
লোকটাও ট্রেনের সাথে কিছুক্ষণ ছুটলো। আশ্চর্য ব্যাপার এতক্ষণ মেয়েটার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হলো না। বাবা এত কথা বলল। মেয়ে একটা উত্তরও দিল না। বোবা নাকি ?

ট্রেন ছুটছে। তাড়া খাওয়া কুকরের মত ছুটছে। মুকিত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।এতক্ষণ কিছুটা শীত শীত করছিল। এখন তেমনটা মনে হচ্ছে না। ঠান্ডা বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। মনের ভেতর এক প্রশান্তির পরশ ছুয়ে গেল। রুক্ষ মনটা এতক্ষণে শান্ত হলো। গ্রীষ্মের কাঠফাটা পতিত জমি একটু বৃষ্টি তে যেমন সিক্ত হয়, প্রাণ পায় মুকিতের মনটা তেমন হয়ে গেল।

অনেকক্ষণ পর হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে দেখে মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে আছে। ট্রেন ছুঁটে চলছে। বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়েছে অনেক আগেই। মেয়েটাকে দেখে তার বাবাকে দেয়া কথাটা মনে পড়ে গেল। ছিঃ ছিঃ সে একেবারেই ভুলে গিয়েছে। তবে টিকিট কাটার সময় সে কাউন্টার হতে জানালার পাশের সিটটা চেয়ে নিয়েছিল মুকিত। একটু আরাম করে যাবে বলে। এখন পূর্ণিমা। ভরা পূর্ণিমা। কার্ত্তিক মাসের পূর্ণিমা রাত। দেখলেই মন ভরে যায়।আকঁশটা পরিস্কার।চাঁদ আর মুকিতের মাঝখানে কউ থাকবে না। কত কিছু ভেবে এসেছে।ছোটবেলা কতই না রাত চাঁদ দেখে দেখে কাঁটিয়ে দিয়েছে সে। এখন তো শহুরে পরিবেশে চাঁদ দেখার সময় কই ?

কিন্ত আর কি করার আছে। অগত্যা সে দাড়িয়ে এপাশে এসে মেয়েটিকে ইশারায় দিল, সে জানালার পাশের সিটটাতে যেন বসে। মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে এমন একটা ভাব করলো যে খুব বাধ্য হয়ে তাকে বসতে হচ্ছে। ঐ সিটটায় না বসলে তার মৃত্যু অনিবার্য। তাই বসছে। মুকিত পাশের সিটটায় বসলো। মেয়েটা একটা ধন্যবাদও দিল না।অভদ্র নাকি।

চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলো মুকিত। এমন সময় সুমনার মোবাইল বেজে উঠে। শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। সম্ভবত তার বাবা ফোন দিয়েছে। সে শুধু হু,হা জাতীয় উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। বুঝা গেল যে বোবা না। কিছুক্ষণ পর মোবাইল রেখে ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলো। অনিচ্ছাকৃত ভাবেই মুকিত বইটার কভার পেজে তাকিয়ে বুঝলো এটা মেডিকেলের বই। তার মানে কি মেয়েটা মেডিকেলে পড়ে।

সুমনা গভীর মনোযোগে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম মুকিত সুমনার মুখের দিকে তাকালো। পাতলা ফ্রেমের চশমা চোখে, একপাশ থেকে সৌন্দর্য তেমনটা বুঝা যাচ্ছে না। চুলগুলো তখনো ভেজা। পিংক রঙের সিল্কের থ্রিপিস পড়নে। মধ্যবিত্ত ঘরের পড়ুয়া মেয়েরা যেমন হয়, ঠিক তেমনি। জীবনের একটা স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায় তারা। পারিপার্শ্বিক কোন অবস্থাই তাদের টলাতে পারে না। প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব তাদের জীবনের সাথে একদম মানাতে পারে না। মানে মেনে নিতে পারে না। ব্রিলিয়ান্ট মেয়েগুলো একরোখা টাইপের হয়।

সুমনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কখন যে মুকিত ঘুমিয়ে পড়লো, বুঝতে পারেনি। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। স্বপ্নেরা তার ঘুমে এসে ঝেঁকে বসলো। সে অচেনা এক নদীর ধাঁর দিয়ে হাঁটছে। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট নৌকা দেখা যাচ্ছে। ইন্জিনহীন বড় নৌকাগুলোকে দাঁড় বেয়ে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন লোক। মুকিত অবাক, এসময়ে মানুষ কেন দাঁড় বেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে সব কিছুই যখন স্বয়ংক্রিয় তবে এত কষ্ট করে কেন দাঁড় বেয়ে নৌকা নিয়ে যাচ্ছে। মুকিত চিন্তায় পড়ে যায়।

নৌকার ভেতরে কয়েকজন লোক জড়োসরো হয়ে বসে আছে। তাদের পেছনে একটা মেয়ে লম্বা ঘোমটা পড়ে মাথা নিচু করে আছে। দেখে মনে হচ্ছে নতুন বৌ।বিয়ে করে বরযাত্রী যাচ্ছে মনে হয়। সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে হোঁটতে হাঁটতে একটা ঘাটের কাছে এস দেখে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নদীতে ঝাঁপাঝাঁপি করছে। আহ! কি মনোরম দৃশ্য।দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।গাঁযের বউয়েরা মাটির কলসি ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছে।কয়েকজন কিশোরী ভেজা কাপড়ে জযোসড়ো হয়ে লাজুক পায়ে হেঁটে যাচ্ছে।আর আড়চোখে এদিক তাকাচ্ছে। মুকিত নিজের অজান্তেই পিছু নিল।মেয়েগুলো মাঝেমধ্যে পেছনে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।মুকিত মুখ ফিরিয়ে নেয়।আস্তে আস্তে মেয়েগু্লো একটা বাগানের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। মুকিত পিছু নেয়।খুঁজতে থাকে।বাগানটা নানান ফুলে ভরপুর।অপরুপ সুন্দর চারপাশ।

হঠাৎ একটা মৃদু মিষ্টি ঘ্রাণে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় । চোখ মেলে দেখে সুমনা তার ভেজা চুলগুলো খুলে দিচ্ছে। বাতাসের ঝাপটায় শ্যাম্পু করা ভেজা চুলের ঘ্রাণে তার এত সুন্দর একটা স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। প্রথমে একটু বিরক্ত হলো। পরক্ষণেই মিষ্টি ঘ্রাণে ভুলে গেল তার মন । সুমনা বাইরের দিকে তাকিয়ে বারবার হাতের চিকন আঙ্গুলগুলো দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করছে আর তার সুভাস ভেসে আসছে মুকিতের নাকে। মন্দ লাগছে না। একটা মেয়ের চুলের ঘ্রাণে এত নেশা থাকতে পারে আগে কখনো ভাবতে পারনি সে।

সে চোখ বন্ধ করে তার নাক’কে সুমনার চুলের ঘ্রাণ পাহারায় বসালো। সুমনার দিকে তাকালো না। সেদিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে এ সুবাস আর কভু না ফুরাতো।

চোখ মেলে চেয়ে দেখে সুমনা তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ ফিরিয়ে নিল। তাহলে কি সে বুঝতে পেরেছে। কি লজ্জার ব্যাপার ! সে যদি বুঝতে পারে কেমন বিশ্রী ব্যাপার হবে। ভাবতে ভাবতে মুকিত আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

মানুষের শব্দে মুকিতের ঘুম ভেঙ্গে গেল। আধো খোলা চোখে মোবাইলের দিকে তাকয় সে । ছয়টা পঁয়ত্রিশ। বাইরে তাকিয়ে দেখে সিলেট স্টেশন। এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো। সুমনা তার লাগেজগুলো নামানোর চেষ্টা করছে, পারছে না। মুকিত কিছু জিগ্যেস না করেই লাগেজগুলো নামানোর জন্য হাত বাড়ালো। সুমনা বাধা দিলনা। একটা লাগেজ মুকিত নিল আরেকটা নিল সুমনা। তারা দুজন নেমে আসলো। সুমনার একহাতে লাগেজ, কাঁধে ব্যাগ, অপর হাতে মোবাইল।

স্টেশনের বাইরে এসে মুকিত একটা সিএনজি অটোরিকশা নিল, সিলেট মেডিকেল।
- আপনি কিভাবে জানলেন আমি সিলেট মেডিকেলে যাবো ?
এই প্রথম তার মুখ নিসৃত কথা শুনতে পেল মুকিত। এত সুন্দর কন্ঠ! মনে হলো একটা পাখি প্রভাতি গান গেয়ে গেল। তার প্রতিধ্বনি ভেসে আসছে ।মুকিত সেই প্রতিধ্বনির অপেক্ষায় আছে।
- আমি এমনিতেই বুঝতে পেরেছি। ঠিক আছে তো ?
- হ্যা, ঠিক আছে । কিন্তু কিভাবে বুঝলেন ?
- থাক না সেসব কথা।
লাগেজগুলো উঠিয়ে দিয়ে সুমনাকে বিদায় জানালো মুকিত।

অটোরিকশা চলা শুরু করলো। পেছনে তাকিয়ে আছে মুকিত। সেও হাটছে। কিছুদূর গিয়ে অটোরিশাটা থেমে গেল। বের হয়ে আসলো সুমনা। মুকিতও সামনে এগিয়ে এলো।

- ছেলেদের এত মুডি ভালো লাগেনা!
সুমনার কথা শুনে মুকিত অবাক। কে মুড দেখালো, কে মুডি। কোন কথা বলেনা সে। শুধু একটু হাসে।
- সুমনা, ফার্স্ট ইয়ার। মুড ভাঙ্গলে আসবেন।

বলেই সে চলে গেল। মুকিত ভাবলো মোবাইল নাম্বার টা চেয়ে নিবে। হয়তো মুকিত মোবাইল নাম্বারটা চাইবে এবং তার নাম্বার টাও দিবে ভেবে সর্বক্ষণ সুমনার হাতে নোকিয়া-৫১৩০ এক্সপ্রেস মিউজিক ফোনটা শোভা পাচ্ছিল। মুকিত চায়নি, সুমনাও দেয়নি।
মুকিত হাঁটতে থাকে। ক্বীন ব্রীজটা আজ বেশি ঢালু মনে হচ্ছে। সে কিছুতেই কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এগুতে পারছেনা। আগে তো কখনো এমন হয়নি। আগেও তো ট্রেন লেট করে এসেছে। ব্যাগ টা অনেক ভারি মনে হচ্ছে নাকি অন্য কিছু। কিছুই ভাবতে পারছে না মুকিত। আচ্ছা, আগামী সপ্তাহেও কি ট্রেন লেট করে ছাড়বে ? সেই লেট করা ট্রেনে সুমনা কি আসবে ?পাশের সিটটায় বসবে। তখনো কি জানালার পাশে বসার জন্য একটু।অনুনয় করবে?

অটোরিকশাটা দ্রুত বেগে সরে যাচ্ছে সামনে থেকে। পেছনে তাকিয়ে আছে মুকিত। সে এখন কিছুই ভাবতে পারছে না। এসময় কিছু ভাবা যায় না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.