![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টাকার অভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাড়ির ভাড়া দিতে পারছেন না’- মর্মে একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই সংবাদকে সাবেক বিরোধী দলের নেতার ‘হাস্যকর নতুন নাটক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সরকারের দুই প্রভাবশালী নেতা কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
সোমবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ওই দুই নেতা বলেন, নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকতে কালো টাকা সাদা করেছেন, গুলশানের আলিশান বাড়ি ভাড়া দিয়ে ৩ লাখ টাকা মাসিক ভাড়া পান, দুই পুত্রের ১৫ কোম্পানিসহ দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা রয়েছেÑ তাঁর (খালেদা জিয়া) বাড়ি ভাড়া দেয়ার টাকা নেই- এটা নতুন নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশবাসীর প্রশ্ন- খালেদা জিয়ার এত টাকা কোথায় গেল? ’৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর যেমন গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে তাঁকে ‘দরবেশ’ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই নাটকের মতোই এবার খালেদা জিয়াকে ‘সৎ’ প্রমাণের জন্যই নতুন এই নাটকের অবতারণা করা হয়েছে। এর পর জাতির সামনে খালেদা জিয়া আমার কোন্ নাটক সামনে নিয়ে আসেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
স্পীকার শিরীন শারমিনের সভাপতিত্বে অনির্ধারিত এ বিতর্কে অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, টাকার অভাবে খালেদা জিয়ার বাড়ি ভাড়া দিতে না পারা আজকের (গতকাল) টক অব দ্য টাউন। টাকা না থাকার এই প্রচারে মনে হচ্ছে, এটা তাঁর আরেকটি নতুন নাটক। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁকে যেমন ‘দরবেশ’ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই নাটকের মতো এবার খালেদা জিয়াকেও হয়ত ‘সৎ’ প্রমাণের জন্যই এই নাটকের অবতারণা। এর পর আবার নতুন কোন্ নাটক তিনি সামনে নিয়ে আসেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়। অথচ ’৭৪ সালে মানুষ যখন না খেয়ে মারা যাচ্ছে, তখন জেনারেল জিয়া ঢাকায় ১০ কাঠা জমি কিনেছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ছেলেদের টিভি চ্যানেল, ড্যান্ডি ডায়িং ও কোকো-১ সহ অনেক লঞ্চ এবং ১৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার নাকি বাড়ির ভাড়া দেয়ার টাকা নেই! তিনি যখন সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হন, তখন তাঁর দামি আসবাবপত্র, অলঙ্কার ও শাড়িসহ কোটি কোটি টাকা সম্পদের বাহারের চিত্র সবাই দেখেছে। আবার শুনেছি, তিনি নাকি এখন যে বাড়িতে থাকেন, সেটির পানি-বিদ্যুতের বিলও দেন না। এই বিল না দেয়ার উদ্দেশে ভাড়ার টাকা না থাকার প্রচারের অংশও হতে পারে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া তাঁর আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি। তাঁর আয়করের ফাইল এখনও ক্লিয়ার নয়, আমি দায়িত্ব নিয়েই এটা বলছি।
মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর গুলশানে সুন্দরভাবে সাজানো ৬ তলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছিল। তিনি এখনও এর ভাড়া পাচ্ছেন। বাড়িতে তিনি একা, দুই সন্তান দেশের বাইরে থাকেনÑ তবুও নাকি তাঁর সংসার চলে না! আদালতের নির্দেশে তিনি মাসে ব্যাংক থেকে আড়াই লাখ টাকা তুলতে পারেন। বাড়ি ভাড়া ৩ লাখ টাকা পান। এর পরেও তিনি নাকি চলতে পারেন না। তিনি বলেন, গুলশানের ওই বাড়িটি খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছিল ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য। তাঁর দুই ছেলে কদমআলী ডাক্তারের মতো, যাঁদের কোন ডিগ্রী নেই। সরকার থেকে বিপুল পরিমাণ ভাতার টাকা নিলেও দুই ছেলে লেখাপড়া করেনি। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড যখন খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করেছিল, সেদিনও তিনি অনেক নাটকের অবতারণা করেন। যেই বাড়িতে খালেদা জিয়া একা থাকতেন, সেই জায়গায় এখন ১৫০ সেনা কর্মকর্তার আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, মিথ্যা দিয়ে আরেকটি মিথ্যা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। দেশবাসী একদিন ঠিকই খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব নেবে।
এর আগে বিষয়টির অবতারণা করে পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে থাকাবস্থায় খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছিলেন। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে এটা করতে পারলেন? জাতির জন্য এটা লজ্জার। তাঁর কাছে কত টাকা ছিল? খালেদা জিয়া এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী মরহুম সাইফুর রহমান ও আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদও আয়কর দেননি, যা পরে ধরা পড়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বলা হয়েছিল ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া তিনি কিছুই রেখে যাননি। পরে দেখা গেল কোকো-১, ২, ৩, ড্যান্ডি ডাইংসহ আরও কতকিছু। তাহলে এখন এত টাকা কোথায় গেল?
পূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৮১ সালের ১২ জুন মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাড়িটি দেয়া হয়। যা ১০১ টাকায় রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল। বর্তমান বাজারে ওই বাড়ির মূল্য ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। আর খালেদা জিয়ার গুলশানের ওই বাড়িতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির এমডি ভাড়া থাকেন, তিনি খালেদা জিয়াকে মাসে ৩ লাখ টাকা করে ভাড়া দেন। অগ্রিম হিসেবে খালেদা জিয়া তাঁর কাছ থেকে নিয়েছেন ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১৫ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর ভাড়ার চুক্তি রয়েছে। এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার ৮টি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট রয়েছে। এত কিছুর পরেও তিনি নাকি টাকার অভাবে বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না!
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার সময়ের ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামেই ছিলেন না। আমরা ওই সময় চট্টগ্রামে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও মেজর জিয়া আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। বরং মেজর জিয়া কক্সবাজারের দিকে পালিয়ে গিয়ে বোয়ালমারিতে আত্মগোপনে ছিলেন। ২৭ মার্চ তাঁকে ধরে আনলে প্রথমে মেজর জিয়া বিভ্রান্তমূলক ভাষণ দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি তিনি পাঠ করেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর হঠাৎ করে মা-ছেলে কোথা থেকে পেলেন জিয়া প্রথম রাষ্ট্রপতি? বিএনপির ওয়েবসাইটেই রয়েছে জিয়া সাত নম্বর রাষ্ট্রপতি। আর জিয়াউর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় কখনও নিজেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি বা স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি।
©somewhere in net ltd.