![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেহের কোথাও অন্তরালে মনের ভেতরইতো মানুষের বসবাস; সুতরাং মৃত্যুটা তো ছোট গল্প বেঁচে থাকাটাই উপন্যাস।তবুও আমরা ছুটছি জীবনের পিছু.।
আত্মকথা—১
কখনও মেঘগুলো ফিরে ফিরে ডেকে বলে চলোনা সেই শৈশব কুড়াতে যাই ৷ শৈশব ফিরে পাওয়াতো সহজ নয় তবে স্মৃতিগুলোতে থাকে হাজারো অনুভবের ছোঁয়া৷
ছোট ছোট গল্পে স্মৃতির বেলকনিতে হাজারো অনুভূতিতে তোমায় খুঁজে পাই প্রিয় শৈশব৷
আমরা যত বড় হই ততই ভেতরের আনন্দের দুঃখের প্রকাশ টাও কমে যায়। সবটাই কেমন লুকাতে শিখে যায় সবাই আর চার দেয়ালে সে সব স্মৃতি গুমরে গুমরে কাঁদে৷
মনে আছে ছোটবেলায় বাবা যখন নতুন জামা কিনে দিত তখন আনন্দে লাফাতে লাফাতে মাকে দেখাতাম"মা দেখো আমার নতুন জামা। কি মজা! কি মজা"।
পাশের বাড়ির বান্ধবিগুলো(পান্না,সিমা,শিখা,শায়লা,পূর্নিমা,সোয়াদ,
ঝুমুর,রেখা,কল্পনা) কেউ বাদ যেতনা দেখানোর ৷কি যে কৌতুহল জামার রং টা কেমন হলো,ডিজাইন কেমন হলো বা দামে বেশি কম এতশত বুঝ আসতো না ৷
যখন আগামী কাল ঈদ হবে জানতাম । তখন আমাদের একটা মেহেদী গাছ ছিল।সেখান থেকে পাতা তুলে বেঁটে কাঠি দিয়ে হাতে লাগাতাম ৷ পাড়ার সব বন্ধুরা মিলে।বিকেল বেলা চলতো সব পাতা কুড়ানোর বৈঠক তারপর পাডা পুতোঁ দিয়ে পিষে পিষে মেহেদীর বাটতে হবে ।কত রকমের নক্সা ছিল যে যার মতো কলেমের কালি দিয়ে হাতে একেঁ নিতাম ।
সবথেকে বেশি আলোচিত কথা ছিল ,যখন আমার হাত দেখে বলত"কি সুন্দর রং হয়েছে! দেখবি তোর খুব ভালো বর হবে।"আমি কোন এক অজ্ঞাত সুদর্শন পুরুষ কে স্বামী কল্পনা করে লজ্জায় হাসতাম। মনে মনে সেই বিশ্বাসেই নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করেফেলতাম ৷
যখন দুষ্টামির পরিমানটা খুব বেরে যেতো ৷ মা যখন পিঠে আচ্ছা করে দিতো পাখার বারি বা লাঠির আঘাত ।ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাছে গিয়ে নালিশ করতাম । বাবা ভেতরে হাসি লুকিয়ে মাকে যখন মুচকি মুচকি হেসে বলত"তোর মাকে বকে দেব আচ্ছে করে ৷
"তখন মনে হতো পৃথিবীতে আর কেউ না থাকুক বাবা নামেহ মানুষটিতো সার্পোট দেওয়ার জন্য আছেই ৷ কাঁন্না ভুলে বাবার শান্তনাকে বিশ্বাস করে আঘাত নিমিষেই ভুলে উঠতাম ৷
আমি মনে মনে আনন্দ খুব আনন্দ পেয়ে বলতুম"ঠিক হয়েছে বেশ হয়েছে এবার বকনিতো খেয়েছো ৷
যখন মা পুরো বাড়ী মাথায় তেল দিয়ে চুল বাধঁবে বলে দৌড়াতো তখন মনে হতো খুব বিশ্রি কাজগুলো বুঝি মায়েদের স্বভাব ৷
তবুও জয় মায়েরি হতো আস্ত এক বস্তা তেল দিয়ে গাল শরিল সহ তৈলাক্ত করে ফেলতো ৷ মাথা বাধাঁর সময় লাল, নীল ,হলুব এর ফিতা দিয়ে শরিলের সকল শক্তি প্রয়োগ করে বেণী বাধেঁ দিতো ৷ যদি বলতাম,মা ওমা আমার চুল ছিড়ে যাচ্ছেতো ৷ তখন শান্তনা দিয়ে বলতো যত জোরালো বাধাঁবে ততই দ্রুত বড় হবে চুল ৷ এভাবে কতশত সয্য করতে হয়েছে চুলের রশির ফাঁশ ৷
তখনও পযর্ন্ত আনন্দ কান্না গুলোও কি ভীষণ স্বাধীন ছিল। তারা কষ্টের মাঝেও হাসতে ভুলতো না ৷
তারপর যে কি হল।শৈশবের স্মৃতিগুলো কালের সাথে সাথে হারাতে শুরু করলাম ৷ একফোঁটাও জল পড়ল না ঠিকই এসব টুকরো টুকরো স্মৃতি হত্যায় ৷একদিন বাগানে রাস্তা করার জন্য শিউলি গাছটা ও চলে গেল।নানুর পানধানি টা রয়ে গেলো নানু হারিয়ে গেলো ৷সেদিন ও চোখ থেকে জল পড়েনি একটুও না । সবার কাঁন্না অবাক হয়ে শুধু দেখেছি ৷কেন কাঁদে বা কি জন্য এতশত আয়োজন হচ্ছে কবর দেওয়ার ৷ তাও মাথায় ঠুকছিল না ৷ সেই প্রথম বোধয় বুঝেছিলাম মানুষ মরে গেলে আর ফিরে আসতে পারেনা হারিয়ে যায় ৷
প্রতি রাতে যখন বালিশ চেপে কাঁদি তখন বুঝেছি এই তো এই তো আমি বড় হয়ে যাচ্ছি। কেউ দেখতে পায়না আমার কান্না। আমি লুকোতে শিখে গেছি।
যখন মেহেদী রং দেখে কেউ বলে উঠে তোর স্বামী আদর করবে তখন আর তেমন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না ৷তার মানে আমি বড় হয়েছি অন্যের কতশত কথায় আমার অনুভবে আলোড়ন আসে না ৷
একবার একটা বড় ধরনের অপরাধ করেছিলাম পাড়ার দুষ্টছেলেটির মাথায় ইটের টুকরো ছুরে ফাঁটিয়ে দিয়ে নানুর বাসায় ভেগেছিলাম ৷ হয়তো সেদিন থেকেই অপরাধবোধটাও বুঝে উঠেছিলাম ৷কারন তাকে দেখলে এর পর মায়া হতো কি ব্যাথাটাই না দিয়েছিলা তবুও বাড়িতে বিচার নিয়ে যায়নি ,এমনটা ভেবেও বোধয় বুঝেছিলাম কাউকে আর কষ্ট দিবো না প্রতিজ্ঞিও করে ছিলাম৷ তার সাথে সাথে শৈশবের ছোট ছোট দুষ্টামির ছলে অপরাধ গুলো ভুলতে শিখে গিয়েছিলাম ৷সেদিন থেকেই দুষ্টমির আনন্দ গুলোও সময়ের সাথে সাথে ঢোক গিলতে শিখে যায় ।
নতুন জামা কিনলে আর আনন্দ হয়না। উৎসব গুলো আর আনন্দের আমেজে কাটেনা । বিয়ের বাড়ির সুর আর আনন্দের মনে হয় না বরং প্রিয় কাউকে হারানোর বিষার সুর তোলে ।
বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে বাড়ি তৈরী হয়েছে অহরহ ৷আমি কাঁদিনি ৷ খেলার মাঠগুলো বড় বড় দালানে ছুঁয়েছে আকাশটাকে তবুও কষ্ট পাইনি ৷পুকুরের মাছ গুলো পিষে বালুর চাপায় পরে কতশত বাড়ি তেরি হয়েছে তবুও কাঁদিনি ৷
পোষা বেড়াল টাকে কে গাড়ি চাপা দিয়েছে। তবে সে দিন খুব কেঁদেছিলাম মা হারা সন্তানের মতই তবুও মনে রাখিনি ৷
বারান্দা উঠোন দেওয়া বাড়ি ছেড়ে আমি ফ্ল্যাট এ থাকার পরও সেই মাটি ঘেরা উঠোনের জন্য কাঁদিনি ৷আমি কাঁদিনি ৷ শুকিয়ে যাওয়া খাল—বিলে আর ডুবাতে পারিনি বলে আমি কাঁদিনি। আমার পাড়ার ভাই টা ক্যান্সারে মারা গেল চোখের সামনে।সেদিন আমি কাঁদিনি লোকে কি ভাববে ভেবে তখনও বুঝতে পেরেছি আমি বড় হয়েছি৷
কারন আমি বড় হয়েছি কষ্টকে লুকিয়ে হাসার অভিনয়টা হয়তো শিখেছিলাম ৷ আর বড় হবার সাথে সাথে শৈশব হারিয়ে ফেলি আর হাসি ,কাঁন্নার অনুভূতিগুলো খুব সহজে লুকাতে শিখে যাই৷ প্রিয় শৈশব রয়ে যায় শুধুই স্মৃতিতে আজীবন ৷
———————moon
©somewhere in net ltd.