নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহজ সরল শাদামাটা মন

যে নদীর গভীরতা বেশি, তার বয়ে চলা স্রোতের শব্দ কম।

মোজাম্মেল প্রধান

নারায়ণগঞ্জের ছেলে।গ্রাফিক ডিজাইনার । স্বপ্নবাজ এক যোদ্ধা।অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখি কিন্তু অলসতার কারণে কিছুই করা হয় না।

মোজাম্মেল প্রধান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনানন্দ দাশ এর ৬ বনলতা সেন রিপোস্ট

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০৫





জীবনানন্দ দাশ। নামটি শুনলেই কবির চেহারার আগে প্রথম যে ছবিটি হৃদয়ে ভেসে ওঠে, সেটি বনলতা সেনের। অথচ কী অদ্ভুদ ! এটি একটি চরিত্র। জীবনানন্দের অসামান্য বর্ণনা, চুল তার কবেকার ... কিংবা পাখির নীড়ের মত...।

প্রেমিক হৃদয়ের স্বপ্নে বুদ হয়ে থাকা এক নায়িকার নাম বনলতা সেন।

আমার জানা মতে, জীবনানন্দ দাশ তাঁর বনলতাকে নিয়ে ৬টি লেখা লিখেছেন। তার একটি গল্পে এবং পাঁচটি কবিতার মধ্যে বনলতা সেনকে পাওয়া গ্যাছে। বন্ধু ! এই পোস্ট থেকে খুঁজে নিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত বনলতাকে।



বনলতা-১

(কারুবাসনা, রচনাকাল-১৯৩৩)



দক্ষিণ আকাশের সে-ই যেন দিগবালিকা, পশ্চিম আকাশেও সে-ই বিগত জীবনের কৃষ্ণমণি, পুব আকাশে আকাশ ঘিরে আছে তারই নিটল কাল মুখ। নক্ষত্রমাখা রাত্রির কাল দিঘির জলে চিতল হরিণীর প্রতিবিম্বের মতো রূপ তার-প্রিয় পরিত্যক্ত মৌনমুখী চমরীর মতো অপরূপ রূপ। মিষ্টি ক্লান্ত অশ্র'মাখা চোখ, নগ্ন শীতল নিবারণ দু'খানা হাত, ম্লান ঠোঁট, পৃথিবীর নবীন জীবন ও নবলোকের হাতে প্রেম বিচ্ছেদ ও বেদনার সেই পুরনো পল্লীর দিনগুলো সমর্পণ করে কোনো দূর নিঃস্বাদ নিঃসূর্য অভিমানহীন মৃত্যুর উদ্দেশ্যে তার যাত্রা।



সেই বনলতা-আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত। কুড়ি-বাইশ বছর আগের সে এক পৃথিবীতে...আচঁলে ঠোঁট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কি যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিরকির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুক-গুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ায় ভিতর দিয়ে চলেগেল সুনিবিড় জামরুল গাছটার নিচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।



অনেকদিন পরে সে আবার এল; মনপবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি পরে, চিকন চুল ঝাড়তে ঝাড়তে আবার সে এসে দাঁড়িয়েছে; মিষ্টি ঠাণ্ডানির্জন দুখানা হাত, ম্লান ঠোঁট, শাড়ির ম্লানিমা। সময় থেকে সময়ান্তর, নিরবিছিন্ন, হায় প্রকৃতি, অন্ধকারে তার যাত্রা।



বনলতা-২

(একটি পুরনো কবিতা)



আমরা মৃত্যু থেকে জেগে উঠে দেখি

চারদিকে ছায়া ভরা ভিড়

কুলোর বাতাসে উড়ে ক্ষুদের মতন

পেয়ে যায়-পেয়ে যায়-অণুপরমাণু শরীর।



একটি কি দুটো মুখ-তাদের ভিতরে

যদিও দেখিনি আমি কোনো দিন-তবুও বাতাসে

প্রথম গার্গীর মতো-জানকীর মতো হয়ে ক্রমে

অবশেষে বনলতা সেন হয়ে আসে।







বনলতা-৩

(বাঙালি পাঞ্জাবি মারাঠি গুজরাটি)



বনলতা সেন

তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে

মাথার উপর জলন্ত সূর্য তোমার,

অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুরের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ

তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনো দিন

কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনো দিন মৃত হয় না

আমরা পথ থেকে পথ চলি শুধু-ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে-

আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই;

তুমি আর আমি।



কখনো বা বেবিলনের সিংহের মূর্তির কাছে

কখনো বা পিড়ামিডের নিস্তব্ধতায়

কাঁখে তোমার মাদকতাময় মিশরীয় কলসি

নীল জলের গহন রহস্যে ভয়াবহ

মাথার উপর সকালের জ্বলন্ত সূর্য তোমার, অসংখ্য চিল,

বেগুনফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ।



বনলতা সেন-৪

(শেষ হল জীবনের সব লেনদেন)



শেষ হল জীবনের সব লেনদেন

বনলতা সেন।



কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা

মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা

শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা

উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,

তুমি নাই বনলতা সেন।



তোমার মতন কেউ ছিল না কোথাও?

কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।

কেন যে সবের আগে তুমি

পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি

(কেন যে সবের আগে তুমি)

ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,

কবেকার বনলতা সেন।



কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশ,

কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,

কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে,

হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,

নিশুথির (নিশুতির) বনলতা সেন।



বনলতা সেন-৫

(মূল এবং শ্রেষ্ঠ বনলতা সেন)



হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশিথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

আমারে দু'দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটরের বনলতা সেন।



চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের 'পর

হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'

পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটরের বনলতা সেন।



সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।







( বনলতা সেনের চোখ নিশ্চয়ই এর চেয়েও বেশি দৃষ্টিনন্দন ছিল !)





বনলতা সেন-৬

(হাজার বছর শুধু খেলা করে)



হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো:

চারিদিকে চিরদিন রাত্রির নিধান (/পিরামিড-কাফনের ঘ্রাণ);

বালির উপরে জ্যোৎস্না-দেবদারু ছায়া ইতস্তত

বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার (/এশিরিয়);-দাঁড়ায়ে রয়েছে মৃত, ম্লান।

শরীরে ঘুমে ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন;

মনে আছে? শুধাল সে-শুধালাম আমি শুধু 'বনলতা সেন?'



এই বনলতা সমগ্রটি বন্ধু হাসান রাউফুন এর সহযোগিতায় তৈরি। তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।



মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +২২/-১

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:১১

মারুফ হোসেন বলেছেন: ভালো।
আমার প্রিয় কবি।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৩২

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: থ্যাঙ্কস !

২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৩৮

ওয়ার হিরো বলেছেন: ভাইরে খুব উপকার করলেন। খুব..

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৩২

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: খুব ?

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:২৯

প্রাকৃত বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!!!!!

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৩৩

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: স্বাগতম।

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:২২

সুমন আহমাদ স্বাধীন বলেছেন: আমার দেশি ভাইয়ের লেখা নিয়া
পোষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৩৪

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: অই মিয়া, দেশটা কি তোমার একার ? ভাইটাও কি তোমার একার নাকি ?
ধন্যবাদ তোমাকেও

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৩৭

চাঙ্কু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
সুন্দর ১টা পোষ্ট দিছেন ।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:৪৫

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: এই দু:সময়ের মাঝে একটু প্রস্বস্তি দেয়ার প্রচেষ্টা।

৬| ০১ লা মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:০৫

আব্দুল্লাহ অপু িসকদার বলেছেন: ভাই এই সংকলন আন্নে কেন্নে কইল্লেন!
বালা অইছে, খুব বালা অইছে!
এরুম্মা লেখা আরো বেশি বেশি লেইক্কেন কিন্তু

৭| ০১ লা মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:১১

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: এরিও নোয়াখাইল্ল্যা বাই, হইড়তে হইড়তে শিখি গ্যাছি।

৮| ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ৯:২২

শত রুপা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টের জন্য।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৬

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৯| ২৭ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:১৫

প্রিয়স্রোত বলেছেন: আহ পরান ভইরা গেলো।
বছরের ষেড়া লেকা।
সেলাম সেলাম।
মারহাবা মাড়হাবা

প্রিয়স্রোতের প্রিয়তে+

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৭

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: থ্যাঙ্কস।

১০| ১৮ ই জুন, ২০০৯ রাত ২:৩৩

হুমায়রা হারুন বলেছেন: খুব সুন্দর পোস্ট।+

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৭

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: থ্যাঙ্কস।

১১| ২৬ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ১০:০৪

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য বলেছেন: ++

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৮

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন: থ্যাঙ্কস।

১২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ২:২৪

কৃষ্ণ তরুণ বলেছেন: +++++

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন:
থ্যাঙ্কস।

১৩| ২৬ শে মে, ২০১০ সকাল ৯:০৯

শাহেদ খান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে....

০৯ ই জুন, ২০১০ সকাল ১১:৩০

মোজাম্মেল প্রধান বলেছেন:
আপনাকেও বস।

১৪| ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ১১:০৬

শত রুপা বলেছেন:
তোমার মতন কেউ ছিল না কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।

১৫| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৩

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

আশা করি এমন পোস্ট আগামীতেও পাব

১৬| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: দারুণ দারুণ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.