![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেরিনার
প্রায় সব দলের মধ্যে একটা না একটা করে এই ধরনের নামের মানুষ থাকে। অনেক দলের গফুরেরা হয়তো অনেক স্মার্টও হয়। কিন্তু আমাদের দলের গফুর ছিল আসলেই নিপাট গফুর। গফুর ও মহেশ গল্পের গফুরের কথা মনে পড়লে যেমন একটা দুঃখী মানুষের ছবি ভেসে উঠে মনে আমাদের গফুরের কথা মনে হলেও তেমনটি হত।
গফুরের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে। জাহাজ থেকে গিয়ে তখন আমি যশোরে বসবাস শুরু করেছি। সে তখনও যশোরেই থাকে। একদিন সন্ধ্যায় ওকে আসতে বললাম। দড়াটানা মোড়ে আমাদের দেখা হল সেটাও প্রায় দুই বছর পরে। ওর মাথার চুল গুলো সুন্দর করে কাটা। শেষবার যখন দেখেছিলাম তখন মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল ছিল। ওর মেসে গিয়ে দেখেছিলাম ও সুন্দর সুর করে বাঁশের বাঁশি বাজাচ্ছে। আমি অবাক হতে গিয়েও হইনি। গফুরকে দিয়ে এটা সম্ভব। বেশ কিছুদিনের তপস্যায় সে বাঁশের বাঁশি বাজানো শিখেছে। এযুগে আমরদের হাতে যখন স্মার্টফোন তখন গফুরের হাতে বাঁশের বাঁশি। ঝাঁকড়া চুলের বাঁশের বাঁশি হাতে গফুরকে দেখে মনে হচ্ছিল না সে একটা মাস্টার্স পড়া ছেলে। মনে হচ্ছিল কোন এক বাউল।
সেদিন দড়াটানা মোড়ে আমরা খুব বেশী সময় একসাথে থাকতে পারিনি। আমরা চত্তরে বসছি মাত্র রাজনৈতিক গোন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করলে আমরা একটা লাইব্রেবির মধ্যে ঢুকে পড়ি। পরিবেশ একটু শান্ত হবার পরেই সেদিন সেখান থেকে চলে এসেছিলাম। তার পরে আর গফুরের সাথে মিলিত হবার প্রগ্রাম করতে পারিনি।
ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার সময় গফুরের সাথে ঘনিষ্টতা হয়েছিল আমার। আমরা মার্চ মাস থেকেই স্কুলের বোর্ডিং এ থাকতাম স্পেশাল কেয়ারের জন্য। গফুরের মা মারা গেছিল সেই ছোট বেলায়। বাবা গ্রাম্য কৃষক। দৈন্যতার মধ্যে বেড়ে ওঠা গফুরের মধ্যে একটা জড়তা কাজ করতো বলে তখন মনে করতাম কিন্তু পরেও দীর্ঘ কাল ওর ঐ নির্লিপ্ত জীবন যাপন দেখে বুঝেছিলাম ওটা নিপাট ভাল মানুষী ছাড়া আর কিছুই ছিল না। গফুরের জীবন যাপন কথা বার্তা এমন ছিল আমরা অনেকস সময় ওকে গফুর চাচা বলে সম্বোধন করতাম। ওর মধ্যে কখনো কোন লোভ দেখিনি, দেখিনি কাউকে নিয়ে জেলাস হতে। দেখিনি কোন উচ্চাকাঙ্খা।
এবার দেশে থাকার সময় ওর খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম ঢাকাতে থেকে চাকরীর চেষ্টা করছে। হঠাৎ একদিন ফেসবুকে আবিস্কার করলাম ওকে। আমাদের কেউ একজন বলল, ফেসবুক ক্ষ্যাত হয়েছে নাকি গফুর স্মার্ট হয়েছে কে জানে?
ফেসবুকে ওর ছবি দেখলাম টাক মাথায় খালি গায়ের ছবি। বুঝলাম ওর মধ্যের বাউল ভাব তাহলে যায়নি এখনো। তবে ও চাকরি তে জয়েন করেছে জানতাম না। জানলাম কালকে। ওর চাঁদপরে পোষ্টিং ছিল। একজন কলিগের সাথে মোটর সাইকেলে কোথাও যাচ্ছিল ও। এটুকু শুনলেই আমি বলতাম, গফুর মোটর সাইকেল চালানো শিখলো কবে??????
কিন্তু শুধু এই খবরটি আমার কাছে এসে পৌছায়নি। খরবটি এসেছে আরো এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাথে। গফুরের মোটর সাইকেল টি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পাশের আইল্যান্ডের সাথে ধাক্কা খায়। পড়ে গিয়ে মাথায় পচন্ড আঘাত পেয়ে ঘটনা স্থালেই প্রান ত্যাগ করে আমার বন্ধু গফুর।
আর কিছু লেখার মতো হার সরছে না। জ্ঞান বুদ্ধি হবার পরে এত কাছ থেকে মিশেছি এক কাউকে হারালাম এই প্রথম। কেমন যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে মাথার ভেতর টা। বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি তো নিজের চোখে কিছু দেখিনি। আমাদের বন্ধু গফুর, ফেসবুক বিহীন গফুর, মোটসাইকেল চালাতে না জানা গফুর ঝাঁকড়া চুলে কোন এক অজানা নদীর ধারে বসে হয়তো বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলছে এখনো। জাহাজ থেকে নেমেই খুঁজে পাবো ওকে।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২২
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: দোয়া করবেন ভাই ওর জন্য।
২| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৫১
সুমন কর বলেছেন: আপনার বন্ধুর আত্মার শান্তি কামনা করি।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২৩
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমীন। দোয়া করবেন ভাই।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেল।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২৫
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: বেদনাদায়ক কিছু কিছু কথা সকলের মন খারাপ করে দেয়। দোয়া করবেন।
৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩২
দীপংকর চন্দ বলেছেন: দুঃখজনক ভীষণভাবে!
যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক, অকালমৃত্যুতে বেদনা আরো বেশি!
প্রার্থণা করি, অপূরণীয় এই শোক কাটিয়ে উঠুক মানুষটির স্বজন-বন্ধুরা!
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৩০
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ছোট বেলা থেকেই গফুর ছিল দুঃখী। মা হীন সংসারে বেড়ে উঠেছিল অনাদরে। সংসারে দৈন্যতা ও ছিল। এই ঘটনার পর থেকে ওর বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনছি। জানিনা ওর বাবা এই অবস্থা কিভাবে সামাল দিবে?? তার পাশে দাড়ানোর কেউ নেই এখন।
৫| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১১
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: খুবই দুঃখজনক ঘটনা, আল্লাহ্ গফুরকে পরকালে শান্তি আর জান্নাত নসীব করুন।
(লেখার শুরুতে মনে হচ্ছিল যেন কোন অনুবাদ গল্প পড়ছি, কিন্তু শেষটা এতোটা বেদনাদায়ক হবে ভাবতে পারি নাই।)
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৫৭
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমাদের জীবনের সত্যি গল্প গুলো অনেকসময় গল্প থেকেও ট্রাজেডীময় হয়।
দোয়া করবেন ওর জন্য।
৬| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৩১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: গল্প মনে করেই পড়া শুরু করে শেষে এসে থমকে গেলাম।। নির্ভেজাল বন্ধুত্বের আহাজারি।। দোয়া করছি আপনার বন্ধুর জন্য।।
১২ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৫৯
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: এমন একজন বন্ধুকে হারানোর বেদনা খুব সহজে মন থেকে মুছে ফেলা যায় না। দোয়া করবেন ওর জন্য। এবং ওর পরিবারের জন্য।
৭| ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
আমিনুর রহমান বলেছেন:
আল্লাহ তায়ালা আপনার বন্ধুকে বেহেস্ত নসীব করুন।
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:২১
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আমীন। আপনাদের সকলের দোয়া কাম্য।
৮| ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
আমি স্বর্নলতা বলেছেন: সুন্দর করে উপস্থাপন করলেন। লেখাটা মন ছুয়ে গেল। আপনার বন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
১৬ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:২৩
মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া করবেন। এমন মন ছুয়ে যাওয়া লেখার বানিয়েই লেখা যায়। এর জন্য যেন বাস্তবতার খেসারত দিতে না হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:৪৬
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা আপনার বন্ধুকে বেহেস্ত নসীব করুন।