![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Reality show দেখবেন ভাই?
আরে না না AXN, MTV national geography, Discovery কিংবা Animal planet এর না real reality show!
বাংলাদেশের যে কোন News channel দেখেন বুঝতে পারবেন অসহায় মানুষ কিভাবে স্বজন-হারানোর বেদনায় আর্তনাদ করে, একটা দুর্বল অপুষ্ট মানব দেহ কি করে ভারি Ciment slab এর নিচে চাপা পড়ে গোঙাতে পারে, একটা মানুষের অঙ্গ কেটে কি করে তাকে ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করে আনা হয়! কিভাবে প্রসব যন্ত্রণায় সন্তান সম্ভবা মা বেঁচে থাকে সেই সাথে সন্তান জন্ম দেয়!কিভাবে তাদের আর্ত চিৎকার আমাদের কানে বাজেঃ
ক) ভাই আমার মাকে বইলেন,আমাকে মাফ করে দিতে,আমার বাড়ি পিরোজপুর,হুলার হাট।ভাই আমি মারা গেলে লাশ টা বাড়িতে পাঠাইয়েন…
খ) ভাই দরকার হলে আমার পা কেটে বের করেন,তবুও আমাকে বাঁচান,আমি আর এই যন্ত্রনা সইতে পারি না।
গ) ভাই আমাকে একটা হাতুড়ি দেন,আমি নিজেকে বের করতে পারব…
ঘ) শ্বাস নিতে পারছিনা, লাশের গন্ধে মারা যাবো, ভাই একটু অক্সিজেন আনতে পারবেন।
ঙ) ভাই আমাকে এখান থেকে বের করেন,আমার একটা ২ বছরের ছেলে আছে,ওর জন্য আমাকে বাঁচান, ওরে দুধ খাওয়াতে হবে।
চ) কারো হাতে রক্তাক্ত চিঠিতে লেখা ‘আম্মা-আব্বা আমারে মাফ কইরা দিও । তোমাগোরে আর ঔষুধ কিনে দিতে পারবনা। ভাই তুই আম্মা আব্বার দিকে খেয়াল রাখিছ’ …
এগুলো রানা প্লাজার ভেতরে আটকা পড়া কিছু অতি সাধারন মানুষের বাঁচার আকুতি....
ওরা কোটি টাকা,বাড়ি ও গাড়ি চায় না।
শুধু প্রিয় মুখ গুলোর কাছে ফিরে যেতে চায়!
আমরা কি আগামীতে ও এই দৃশ্য বার বার দেখার অপেক্ষায় আছি.…(বক্তব্য গুলো সংগৃহীত)
এমন আর কোথাও দেখতে পাবেন না সম্পূর্ণ আবেগ কান্না জড়ানো কণ্ঠের আকুতি...
এই ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ তাই আমাদের জীবনের মূল্য অনেক অনেক কম কিনতে চান??? যদি জীবন কিনতে চান ২০০০০ টাকা মাত্র আর যদি আহত করতে চান অথবা অঙ্গ হানি করতে চান তবে ৫০০০ দিলেই চলবে!আমাদের ক্ষমতাশালী গণ তো আরও এক কাঠি সরেস তাঁরা বলেন জিনিষ পত্র সরানোর জন্য নাকি সেখানে মানুষ গিয়েছিলেন! ৩০০০-৪০০০ মানুষ সেখানে জিনিষপত্র সরানোর জন্য গিয়েছিলেন! আরেকজন তো বলেই বসলেন যে হরতাল কারীদের ধাক্কাধাক্কিতে নাকি এই ভবনটি ধ্বসে পড়েছে! হয়তো তাঁরা নিজেকে এই বলে আত্মতৃপ্ত হচ্ছেন যে পৃথিবীর আর কোন দেশে ১০ মিনিটের মধ্যে উদ্ধার কাজ আরম্ভ হওয়ার নজির নেই!!! ব্যাপার টা ঠিক এরকম যে আমি কারোর পা অথবা হাত কেটে ফেলে তারপর তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম আর বললাম দেখেছ আমরা কতটা তৎপর কতটা সচেতন!
সেই সাথে তিনি এতটাই দায়িত্ব শীল যে এটাও বললেন আগে উদ্ধার পরে বিচার!
বিরোধীদল তোমাদের তৎপরতায় তো বলহারি যাই তাঁরা দিনের পর দিন হরতাল করে যেমন কোমল-মতি শিশুদের শিক্ষা জীবন ক্ষতি গ্রস্থ করছেন দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার উৎপাদন শীলতাকে বিঘ্নিত করছেন, অবশ্য করবেন না ই বা কেন এই দেশ তো তাঁদের ই পৈত্রিক সম্পত্তি, আমরাই তাঁদের সেই অধিকার করে দিয়েছি। তাঁদের জন্য আমাদের ছুটির দিনেও কাজ করতে হয় আর কোন কারণ ছাড়াই কাজের সময় আতঙ্কে রাস্তায় বের হতে হয় বাসের জ্বলন্ত আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার সম্ভাবনায়। তাঁরা কি কোন ভাবে এই দায় এড়াতে পারেন, অস্বীকার করতে পারেন যে ওই অসহায় মানুষগুলোর এই রকম মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য তাঁরা প্রত্যক্ষ্ কিংবা পরোক্ষ ভাবে দায়ী নন, হরতালের জন্য shipment এ দেরী হবে বলেই তাঁদের order fulfillment এর এত তাড়া আর এই তাড়াহুড়োর কারণে মৃত্যু কূপে ঠেলে দেয়া হয়েছে অসহায় দরিদ্র সহজ সরল শ্রমিকদের। তাতে কি তেনারা তো নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন at least দেখতে তো গিয়েছেন!
আমাদের garment মালিকগণ দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছেন, লাখ লাখ ডলারের ব্যবসা তারা করছেন কিন্তু একটা শ্রমিককে ১০০ ডলার দিতে গেলে তাঁদের ব্যবসা লাটে উঠবে। কিন্তু অন্যদিকে তাঁদের স্নেহের সন্তান যখন কোটি টাকার BMW গাড়ি দেখে বায়না ধরে সেটা কিনে দিতে তিনি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করেন না, বরং তাঁর সন্তানের উঁচুদরের রুচি-বোধের প্রশংসায় আবেগ আপ্লুত হন। একটি বারও কি তাঁদের বিবেক কে তাঁরা প্রশ্ন করেছেন কাদের শ্রমে-ঘামে তাঁদের আজকের এই ঠাট-বাট।
এবার আসি আমাদের মতো কিছু অকালকুষ্মাণ্ড অতি আঁতেলদের কথায় আমরা কি করছি? একটা মর্মস্পর্শী দুর্ঘটনায় জ্বালাময়ী কিছু Facebook status দিচ্ছি এই blog থেকে ওই blog এ ঘুরে ঘুরে নিজেদের আঁতলামী-পূর্ণ সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করছি আর কিছুদিন পর??? ভুলে যাচ্ছি। আর এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে তো কথাই নেই আমরা নাস্তিক আমরা মুরতাদ! কেন ওই এলাকায় কি শিক্ষিত মানুষ জন আগে অনেক ভদ্র ছিল! সন্ধ্যার পর free mixing এর নামে ওখানে কি হয় রাস্তার ধারে ধারে কারা কিভাবে বসে সময় কাটায় সেই কাহিনী কি কারও অজানা?তাই বলে আমি এটা বলছি না যে সবাই এক কিন্তু ওখানে সবাই যে ধোয়া তুলশী পাতা তেমন কিন্তু নয়।নাস্তিকতা যে ওখানকার উচ্চ শিক্ষিত কতিপয় শিক্ষকদের কাছে একটা fashion সেটা নিশ্চয়ই কারো অজানা নয়!
তবে যে সব উদ্ধার কর্মীরা দিনরাত তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহত মানুষ গুলোকে উদ্ধার করছেন তাঁদের নিয়ে আমি গর্বিত, সেই সব ফেরেশতার মতো স্থানীয় সাধারণ মানুষ দের আমি স্যালুট জানাই যারা লাশের স্বজনদের নানাভাবে সহায়তা করছেন, ত্রাণ সংগ্রাহক সকলকে আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা যারা দিনরাত এক করে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছেন ক্লান্তিকে ছুটি জানিয়ে, আমরা বীরের জাতি।
আমি এনাম মেডিকেলের এই সহমর্মিতা দেখে নতুন করে আন্দোলিত হই যে তারাই সেবার বার্তা বহন কারি অমরাবতীর আলোক অভিযাত্রী যারা বিশ্বাস করে সেবাই মানব ধর্ম। আমি সেই সব সংবাদ কর্মী ভাইবোনদের অনেক ধন্যবাদ যারা দিনরাত অবিরতভাবে আমাদের জীবন্ত মানুষ উদ্ধারের সুসংবাদ দিচ্ছেন, ওই মৃত্যু কূপে একটি জীবিত প্রাণ মানেই নতুন আলোকদিপ্তি! আমি তাঁদের কথা ভেবে শিহরিত হই আর পরম পরিতৃপ্তি অনুভব করি যে আমি কিছু ফেরেশতার মতো মানুষের দেশে বসবাস করি আমি কাপুরুষ মুখোশ পরে থাকি আমি সুবিধাভোগী কিন্তু তাঁরা নন। তাঁরা একে অপরের উপকারে সদা প্রস্তুত, নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও তাঁরা অন্য একজনকে বাঁচাতে জানেন!
রাষ্ট্র যন্ত্রের সব নিয়ামক আসলে পচে যেতে পারে না আসলে আমাদের শাসক শ্রেণী এত বেশি নির্লজ্জ যে তাঁদের এই নির্লজ্জতার পরিপূরক হয়তো আমাদের দেশের এই সোনার মানুষগুলো, আমি বাংলাদেশে থাকি আমি বাংলাদেশি এটাই আমার পরিতৃপ্তি সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করবার জন্য।
আজ তাই এটাই হয়তো আমার সার্থকতা!!!
©somewhere in net ltd.