![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১৯৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে লেখা এই রচনাটি। এটা পড়ে দয়া করে কেউ যেন আমাকে আবার 'শিবিরকর্মী' বা 'হরকাতুল মুজাহিদ' ভেবে বসবেন না! ইদানীং ধর্ম নিয়ে কিছু বলতেও ভয় লাগে। আমার নামের শেষে আবার 'খান' আছে। আমি খুব 'ধার্মিক নই, কিন্তু সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করতে পারি না। ধর্মকে বিশ্বাস করি নিজের মত করে (এখানেও একটু সৃজনশীল হই , হাজার হোক স্থপতি তো।) আবারও ক্ষমা চেয়ে নিই এই অপরিপক্ক লেখার জন্য।)
প্রথম সবকিছুই স্মৃতিপটে আকাঁ থাকে। শৈশব স্মৃতির পাতা উল্টালে যে স্মৃতিসমূহ আমাকে বেশি আলোড়িত করে, যেগুলো আমাকে ধর্মের প্রতি আরো বেশি অনুরক্ত করে তোলে, জীবনের প্রথম রোজা রাখার স্মৃতি সেগুলোর মাঝে অম্লান হয়ে আছে আজ ও।
আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী, বয়স সাড়ে সাত হবে। মাহে রমজান এল। আমার রোজা রাখার খুব ইচ্ছে। কিন্তু বয়স কম বলে বাবা-মা দিতে চাইতেন না। ছোটবেলায় যে মক্তবে আরবী পড়তাম সেখানকার হুজুর ছিলেন খুব রাগী, তারঁ মতে, সাত বছর হলেই নামাজ-রোজার অভ্যেস করতে হবে। তাই মাহে রমজানের রোজা রাখার জন্য সবাইকে আদেশ করতেন। মনে পড়ে, রোজা না রাখলে তিনি বকা-ঝকা এমন কি মারধর ও করতেন।
যাক, সে বছর আমি রোজা রাখব বলে প্রতিজ্ঞা করলাম। প্রথম রোজার দিন ভোরে উঠলাম। সেই সময়ে এত ভোরে কীভাবে কারো সাড়া ছাড়া জাগতে পেরেছিলাম তাও এখানে বলে রাখি। তাজ্জব ব্যাপার হল শুধু সেই দিন নয়, সেই সময় প্রতি ভোরে সেহ্রীর সময়ে আমি স্বপ্ন দেখতাম, সবাই সেহ্রী করছে, শুধু আমি বাদ পড়েছি। আর তখন ই ঝটপট করে উঠে যেতাম। থাক সে কথা, সেহ্রীর খাওয়া-দাওয়া শেষ হল। ফজরের আযান দিলে নামাজ পড়লাম। বাবা বললেন, 'রমজান মাসে কোরআন নাযিল হয়েছে, তাই এই মাসে কোরআন পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম'।তাই কিছুক্ষণ কোরআন পড়ে ঘুমুতে গেলাম।
সকালে উঠে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করলাম। রমজান মাসে মক্তবে আমাদের বেলা এগারটা থেকে পড়ানো হত, দশটার দিকে গোসল সেরে ওযু করে মক্তবে পড়তে গেলাম। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন কারা রোজা রেখেছে। আমার চেয়েও বড় যারা রোজা রাখে নি তাদের গালমন্দ করলেন আর আমি ছোট হয়েও রোজা রেখেছি বলে আমার প্রতি প্রসন্ন হলেন আর আমার জন্য দোয়া করলেন। সে সময় আমার যে কী ভাল লাগছিল তা বলে বোঝাতে পারব না।
যোহরের আযানের পূর্বে আমাদের ছুটি হল। বাসায় এসে যোহরের নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ কোরআন পড়লাম। বিকেলে কিছুক্ষণ অঙ্ক করে আসরের নামাজের পর ইফতার তৈরীর কাজে মা আর বড় বোনকে সাহায্য করলাম।
এভাবেই দিন কেটে গেল, ইফতারের সময় হল। সবাই একসঙ্গে ইফতার করলাম। সারাদিন রোযার পর একসাথে বসে ইফতার করে যে শান্তি ও তৃপ্তি পেলাম তা কখনো ভোলার নয়।
ঐ দিন রোযা রেখে আমি মনে হয় আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন কাটিয়েছি। সারাদিন আমার একটুও ক্লান্তিবোধ হয় নি। চোখে-মুখে আনন্দ বিরাজ করছিল। আর সারাদিন রোযা রেখে ইফতারের সময় কী যে ভাল লাগছিল! আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস আর ভালবাসায় আম্র মন পরিপূর্ণ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম ইসলামের মাহাত্ম্য।
এরপর থেকে আমি রোযা রেখে আসছি। কিন্তু এবার প্রথম রোযায় ইফতার করার সময় একটা অযৌক্তিক ও নৃশংস ঘটনা আমার মনকে বিষন্ন করে দিল। ইসলাম যে সাম্য, মৈত্রী ও শান্তির ধর্ম তা বুঝতে চায় না বা পারে না বলেই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে বিমান ও রকেট হামলা করে মানবিকতার প্রতি এরকম চরম অবজ্ঞা প্রদর্শণ করতে পেরেছে। বোমা নিক্ষেপের আগে একজন পাইলট সেই বোমার গায়ে ‘এই নাও রমজানের উপহার’ লিখে পশ্চিমা বিশ্বের ইসলামের প্রতি যে বিদ্বেষ তাই পুষ্পস্তবকের মত করে ছদ্মাবরণ দিয়ে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। খবরটি পড়ে আমার কাছে বিজেপির বাবরী মসজিদ ধ্বংসের চেয়েও কম নির্মম মনে হয় নি। এই বিশ্বের সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, শুধু থাকবেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ। অতএব ‘এই নাও রমজানের উপহার’ বলে যারা স্পর্ধার অমিতবিক্রম দেখাবার অভিলাষী একদিন অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা তাদের অমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাবেন।
(পশ্চিমা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর প্রতি হামলা যেমন মর্মান্তিক, ইসলামী জংগী দলগুলোর জিহাদের নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলাও এক ই রকম ঘৃণ্য কাজ। ইসলাম যে শান্তির কথা বলে তা যদি মুসলিমরা না বোঝে, যারা মুসলিম নয় তাদের কাছ থেকে তার স্বীকৃতি আশা করাও ঠিক নয়। আমরা তো শুধু মুসলিম- by birth, ইসলামকে হৃদয়ে ধারণ করতে কতটুকু পেরেছি!!)
০৫ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৫
আহাদিল বলেছেন: হুমম...
সত্যিকারভাবে যদি কেউ ধর্মকে ধারণ করতে পারত, তাহলে আমরা আজ এমন অবস্থায় এসে দাঁড়াতাম না।
২| ২০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৫০
জেবাল বলেছেন: দারুন লিখেছেন তো আপনাকে প্লাস না দিয়ে পারলাম না
২০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ১১:২৭
আহাদিল বলেছেন: ধন্যবাদ।
আমার ব্লগে স্বাগতম আপনাকে।
৩| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৮
কাউসার রুশো বলেছেন: আমরা তো শুধু মুসলিম- by birth, ইসলামকে হৃদয়ে ধারণ করতে কতটুকু পেরেছি!
১০০ ভাগ সত্য।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১০:২৭
আহাদিল বলেছেন: হুমম......
৪| ৩০ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:৩৫
নস্টালজিক বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়া শেষ করে!
এই উপলব্ধি আমারও।
প্রথম রোজায় আপনি শান্ত একটা সুন্দর সময় কাটাইসেন, আর আমি সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান করসি আম্মাকে এটা-ওটা বানাতে বলে আর সব ইফতারী বেশি বেশি দিতে বলে। যদিও ইফতারীতে সব খেয়ে শেষ করতে পারিনি।
রমজান মাস প্রায় কাছে চলে আসছে।
আল্লাহ পাক আপনাকে তার রহমতের শুশীতল ছায়ায় থাকবার তওফিক দান করুন।
০১ লা জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৩৫
আহাদিল বলেছেন: হু, রমজান মাস চলে এসেছে প্রায়! এ সময়টা আমার বেশ ভালো কাটে, খাওয়া-দাওয়ার ঝামেলা নাই, শান্তিতে কাজ-কর্ম করা যায়!
অনেক ধন্যবাদ রানা ভাই!
সুশীতল বানান ভুল হইসে!
৫| ৩০ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:৩৮
নস্টালজিক বলেছেন: ভালো লাগলো লেখা শেষ করে!
আমার উপলব্ধি -ও একই।
প্রথম রোজার স্মৃতি আসলেই সুন্দর।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে তার রহমতের শুশীতল ছায়াতলে রাখুন।
শুভ ভোর।
০১ লা জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৫১
আহাদিল বলেছেন: এই পোস্টে কমেন্ট এক্কেবারে নেই, তাই এই মহামূল্যবান কমেন্টখানা মোছা গেল না!
বাদল দিনের সাঁঝের শুভেচ্ছা, রানা ভাই!
ভালো থাকুন সব সময়!
৬| ৩০ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:৫৬
সুপান্থ সুরাহী বলেছেন:
আপ্নার উপলব্দির সাথে একমত...
আমি আবার রোজা রাখতে পারতামনা...ছোট বেলা থকেই মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ার কারণে... রোজার তথা ফরজের বিধানটা জানতাম... ফলে রোজা নিয়ে বেশি ভাবতামওনা...অবশ্য আরেকটা কারণও ছিল... তা হল আমাদের বাড়ীতে আমিই একমাত্র পাবলিক যে কিনা রমজান মাস ছাড়া খেলার সুযোগ পাইনি... বাবা আমাকে মাদ্রাসায় পড়াতেন আবার স্কুলের সিলেবাসেও আপডেট রাখতেন...ফলে আমার জীবনে খেলার সুযোগ কমই পেয়েছি...
তো হঠাৎ এক রমজানের আগে বাবা আর মা আমাকে নিয়ে বসলেন । বললেন সাইফ তোর তো এবছর থেকে রোজা রাখা ফরজ হইছে... রোজা রাইখ্যা তো অভ্যাস করলিনা এহন কী করবি?
আমি বললাম পারব... সেই বছর রোজা রেখে খেলা-ধুলা তেমন করিনি... কিন্তু রমজানের পর মাদ্রাসা খোলা হলের বাবা মাদ্রাসার সব হুজুরদের কাছে আমার সব রোজা রাখার খবর বললেন। বড় হুজুর বললেন বাবা তোমারে তো একটা হাদিয়া দেওন দরকার ...কী চাও...?
আমি মরিয়া হয়ে বললাম হুজুর আমি বৈকালে একটু খেলার অনুমতি চাই...এর পর তিনি সব টিচারদের সাথে পরামর্শ করে আমাদের কয়েকটি বল কিনে দেন... আহ!!! সেই দিনের অনুভুতির কথা বলতে হলে আরেকটা পোস্ট দিতে হবে...
এর পর অসুস্থতা ছাড়া আমি আর কখনো রোজা ভাঙ্গিনি...
আয় হায় কত বক বক করলামরে!!!! আপু মাফ কইরা দিয়েন...!!!!
০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ১২:০০
আহাদিল বলেছেন: বাহ!
সুন্দর মন্তব্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা সুপান্থ!
এটা নিজেই একটা পোস্ট হতে পারে!
ভালো থাকুন সব সময়!
৭| ০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২৬
রাইসুল জুহালা বলেছেন: এটা পড়ে দয়া করে কেউ যেন আমাকে আবার 'শিবিরকর্মী' বা 'হরকাতুল মুজাহিদ' ভেবে বসবেন না! ইদানীং ধর্ম নিয়ে কিছু বলতেও ভয় লাগে।
২০ বছর বয়সে লেখা ৮ বছর বয়সের স্মৃতিচারন পোস্ট করতেও এত বড় ডিসক্লেইমার দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে হল! কি অবস্থা ব্লগের! কিছু অসভ্য অ্যাটেনশন সিকার নাস্তিক লেখালেখির জায়গা ব্লগটাকে নরক বানিয়ে ফেলেছে, লোকে আজকাল রোজা রাখার কথা বলতেও ভয় পায়।
যাইহোক, ভাল লাগল আপনার স্মৃতিচারন পড়ে।
০২ রা জুলাই, ২০১১ রাত ১:২০
আহাদিল বলেছেন: এটা আসলে চৌদ্দ বছর বয়েসে লেখা, কোন একটা জাতীয় রচনা প্রতিযোগীতায় প্রথম পুরস্কার পাওয়া!
লেখা ভালো লাগায় ধন্যবাদ!
ব্লগ নিয়ে কিছু বলতে চাই না!
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:১০
জামিনদার বলেছেন: আর তাই আমরা মুসলিমরা তাদের তন্ত্র, মন্ত্র, বাদ, ইজম, গিলে গিলে খাচ্ছি।
আপনার মননশীলতাকে শ্রদ্ধা জানাই।