নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশের দালাল

অদ্বিতীয়া অধরা

বাংলায় কথা বলি, বাংলার কথা বলি।

অদ্বিতীয়া অধরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাদ্রাসা শিক্ষাঃ কিছু প্রশ্ন

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৯

ঘটনা-১
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। আমার সামনে একটা ৭-৮ বছরের বাচ্চা আর একটা লোক যাচ্ছে। তাদের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলাম।
“তোর বাড়ির কথা মনে পড়ে না?"
“পড়ে তো। যখন পড়া না পারলে হুজুররা মাইর দেয় তখন মনে পড়ে।"
বুঝতে পারলাম বাচ্চাটা মাদ্রাসায় পড়ে।

ঘটনা- ২
কোন একটা স্কুলে বসে আছি। মালিকানা সূত্রে স্কুলটার হেডমিস্ট্রেস আমার মা। বছরের মাঝামাঝি সময়। এসময় সাধারণত স্কুলে বাচ্চা ভর্তি হয় না। কিন্তু সেদিন এক মহিলা এল। সাথে একটা বাচ্চা। এই বাচ্চাটার বয়সও ৭-৮ কিংবা খুব বেশি হলে দশ হবে। উদ্দেশ্য, বাচ্চাটাকে স্কুলে ভর্তি করানো। বছরের মাঝখানে বাচ্চা ভর্তি করানোর কারণ জিজ্ঞেস করায় মহিলা বলে বাচ্চাটা আগে মাদ্রাসায় ছিল। সেখানে বাচ্চাকে কথায় কথায় মারধোর করা হয়। ছেলে বাসায় এসে কান্নাকাটি করে। যেতে চায় না। তাই ছেলের বাবা ছেলেকে আর মাদ্রাসায় পড়াবে না। স্কুলে দেবে।

ঘটনা- ৩
আমাদের এলাকায় একটা মাদ্রাসা আছে। প্রতি রমজান মাসে এই মাদ্রাসার ছাত্রদের এলাকার মানুষদের ভাগ করে দেওয়া হয় তাদের তিন বেলা খাবারের জন্য। এবার আমাদের যে ছেলেটার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার নাম আব্দুল্লাহ। ১৪-১৫ বছর বয়স। হাফেজি পড়ছে। সে হিসেবে আমাদের সবার একটা আলাদা দৃষ্টি ছিল ওর উপর। একদিন ইফতারের সময় ছেলেটা খেতে বসেছে। সারাদিন রোজা রেখে আমরা সবাই ক্ষুধার্ত। ওর দিকে খেয়াল করি নি কেউই। হটাৎ দেখলাম ছেলেটা হাত দিয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছে। খাচ্ছে না কিছুই। জিজ্ঞেস করাতে বলল ওর নাকি মার জন্য খারাপ লাগছে। বাড়ি যেতে পারছে না তাই মন খারাপ। উল্লেখ্য, মাদ্রাসা থেকে তার বাসায় যেতে পাঁচ মিনিটও লাগে না।

উপরের তিনটা ঘটনার মূল বিষয়টা কিন্তু একই। বাংলাদেশে গুটিকয়েক মাদ্রাসা ছাড়া আর সব মাদ্রাসার চিত্র এমনই। যখন সরকার বলছে বাচ্চাদের মারা যাবে না, বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা যাবে না ঠিক তখন মাদ্রাসা গুলোতে নিয়মিত চলছে শিশু নির্যাতন। আমার ছয় বছরের ভাতিজি, গ্রামের এক মাদ্রাসায় পড়ে। এবার গ্রামে যেয়ে তার সাথে তার পড়ালেখার খোঁজখবর নিতে যেয়েই আমি সিদ্ধান্ত নেই এটা নিয়ে কিছু একটা লেখার। এদেশের মানুষ অসম্ভব ধর্মপ্রাণ। সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়ায়। কিন্তু তারা কী জানে কতটা অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে তার সন্তানের সাথে? আমি নিজে ছোটবেলায় যখন নানা বাড়ি যেতাম তখন খালাতো ভাই বোনদের সাথে সাথে আমিও যেতাম আলিফ- বা- তা- সা পড়তে। এবং আমার সেই অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর ছিল না। আমি বুঝি না ছোট ছোট বাচ্চাদের মা- বাবা, ভাই- বোন থেকে আলাদা করে মোটামুটি জেলখানার মত একটা জায়গায় আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেটা কি আরেকটু মানবিক হতে পারে না?


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬

দরবেশমুসাফির বলেছেন: বর্তমানে যে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রচলিত তাকে ধর্মীয় শিক্ষা বলতে আমি রাজি নই। ছোট বাচ্চারা ছিল নবিজি সাঃ এর খুবই প্রিয়। ছোট বাচ্চা দেখলেই আদর করতেন। সেই নবীর প্রচারিত ইসলাম শিক্ষা দেয়া হয় এভাবে!!!!!!!

ইসলামের স্বর্ণযুগে মাদ্রাসায় সত্যিকার ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যা, গনিত, আলোকবিদ্যা, আলকেমি ( তখনকার কেমিস্ট্রি ) শেখান হত, উচ্চতর গবেষণারও ব্যবস্থা ছিল। আজ হতে ৮০০ - ৯০০ বছর আগে নিজামিয়া মাদ্রাসা, নিশাপুর মাদ্রাসায় সুদুর ইয়োরোপ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসত।

সেগুলই ছিল সত্যিকারের মাদ্রাসা। এখনকার মাদ্রাসাগুলো বেশিরভাগই গোঁড়ামি আর ধর্মব্যবসা শেখানোর জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়।

২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০২

রাতুলবিডি৪ বলেছেন: ভাই সরকার , বিভিন্ন সংস্হা , ধনী ব্যক্তিদের উচিত কমপক্ষে একটি মানবিক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা ।
অথবা এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যেটা মানবিক আবার ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্হাও থাকবে ।
আপনিও এ বিষয়ে একটা উদ্দোগ নিতে পারেন । দেশে মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন লোকের সংখা কম না । এদের অনেকে প্রতিষ্ঠিতও আছেন । ধনীরা তো আছেন ই ।

দেশের মানুষ ধর্মান্ধ, তাই সংবিধান সেকুলার হলেও দেশটা এখনও পুরাপুরি সেকুলার হয়ে ওঠেনি । ধর্ম শিক্ষার চাহিদা আছে । আর মানুষও মাদ্রাসায় যাচ্ছে , যাবে । আপনারা ( উদ্বিগ্ন শ্রেণী ) 'মানবিক মাদ্রাসা' টাইপ কিছু একটা করতে পারলে লোকের অটোমেটিক 'অমানবিক মাদ্রাসা' ছেড়ে দিবে ।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৩৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:


সরকার ভুলেও ঐদিকে চোখ দিবে না। দিলে তো মোল্লারা নাখোস হয়ে যাবে।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৮

কাজী কামরুজ্জামান বলেছেন: লেখাটা পড়ে খুব ভাল। লাগল একই সাথে বেদনা। পুরনো কিছু স্মৃতি মনে পরে গেল।
জীবনের প্রায় ৫ টা বছর এই কউমি মাদ্রাসায় আমি কাটিয়েছি। যতই দূর থেকে দেখা হোক, সরাসরি না দেখলে মাদ্রাসার ছাত্রদের কষ্টটা বোঝা অনেক শক্ত। সেই দিনগুলোর কথা এখনো মনে পরে। মাগরিবের আজান শুনলে বুকের মধ্যে এখনো কেপে উঠে। ভোর ৪ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ক্লাস চলত। মাঝে ২ ঘন্টা ঘুম, নামাজ আর খাওয়ার ছুটি। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত কেবল নিস্তার। তারপর আবার শুরু।
হাফেজি পড়েছিলাম আমি। প্রতিদিন সকালে ছবক দিতে হত। পড়া সামান্য ভুল হলে সে কি মার! বহুবার মাদ্রাসা পালিয়েছি। কত রাত কেটেছে কাদতে কাদতে বিছানা চোখের জ্বলে ভিজিয়ে তার ইয়ত্তা নেই। এভাবেই মাদ্রাসার দিনগুলো কাটত। অবশেষে সেই দূর্বিষহ স্থান থেকে নিস্তার পেলাম আর ক্লাস ফোরে স্কুলে ভর্তি হলাম।
আমরা সকলেই চাই মাদ্রাসা শিক্ষা বিজ্ঞানসম্মত হোক আর এর আধুনিকায়ন করা হোক।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:১৮

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সেটা কি আরেকটু মানবিক হতে পারে না? agree

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.