নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশের দালাল

অদ্বিতীয়া অধরা

বাংলায় কথা বলি, বাংলার কথা বলি।

অদ্বিতীয়া অধরা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কোটাধারীর জবানবন্দি

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯

আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টা আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ বিব্রত করে। বিব্রত হওয়াটা খুবই যুক্তিযুক্ত। কারণ হল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। আমি সারাজীবন শুনে আসছি আমাদের ভবিষ্যতে অনেক সুযোগ সুবিধা আছে। আমরা চাকুরিতে সুবিধা পাবো, ভর্তিতে সুবিধা পাবো ব্লা ব্লা ব্লা। ইদানিং বিষয়টা এমন দাঁড়িয়েছে যে বাবা মুক্তিযোদ্ধা শুনলেই মানুষের চোখ আপনা আপনিই বাঁকা হয়ে যায়। অনেকেরই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। দীর্ঘশ্বাসটা যোদ্ধার সন্তান হতে না পারার দীর্ঘশ্বাস নয়। আমার ঝকঝকে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু কেউ আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করে নি এটা নিয়ে আমি কী ভাবি। জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও বোধ করে নি। তাই আমি নিজেই আমার ভাবনা গুলো লিখছি। পড়া না পড়া আপনার ব্যাপার।

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোটা ব্যবস্থার ঘোরতর বিরোধী। সাধারণত কোটা ব্যাবহার করা হয় পিছিয়ে পড়া মানুষকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। যেমন, আপনারা সবাই একসাথে দৌড় শুরু করলেন। সবাই এগিয়ে গেল। একজন তার প্রতিবন্ধকতার জন্য পিছিয়ে পড়ল। আপনারা একটু থেমে তাকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিলেন। কিন্তু আমার তো কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। আমার জন্য অন্যরা কেন জায়গা করে দেবে? কিংবা কেউ যদি দেশের প্রতি কোন বড় অবদান রাখে তাহলে তার জন্য একটা কোটার ব্যবস্থা করাই যায়। আমার বাবা দেশকে স্বাধীন করেছেন। পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে কেবল মাত্র ভাগ্যের জোরে ফিরে এসেছেন। তিনি আজীবন বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সবার আলাদা শ্রদ্ধা এবং সম্মানের দাবিদার। তিনি একটা কেন, একশ টা সুবিধা পেতে পারেন। কিন্তু আমি কেন পাবো? আমি কী করেছি? জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করা তো দূরের কথা, রাস্তা দিয়ে চিপস খেতে খেতে হেঁটে যাই। তারপর চিপস শেষ হলে চিপসের প্যাকেটটা রাস্তার পাশেই ছুঁড়ে মারি। এই আমার কোন অধিকার নেই আলাদা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। এই আমার কোন অধিকার নেই আলাদা কোটায় সরকারি চাকুরি করার। এই আমার কোন অধিকার নেই কম যোগ্যতা নিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। আমার বাবা যুদ্ধ করেছিলেন একটি বৈষম্যহীন দেশ গড়ার জন্য। এখন তার ছেলে মেয়েকেই ব্যাবহার করা হচ্ছে বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে। এই কোটা আমার বাবা চান না। এই কোটা আমি চাই না। এই কোটা আমার বাবার অপমান। এই কোটা আমার লজ্জা।

আমার কোটার দরকার নেই। আপনারা আমার বাবাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। দেশের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা যেন সম্মান নিয়ে বাকিটা জীবন বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন। আর কোন মুক্তিযোদ্ধা যেন না খেয়ে মারা না যায়। যোদ্ধার সন্তানদের মাথায় তুলে নাচতে হবে না। তাদের যোগ্যতা আছে। সেটা প্রমাণের সুযোগ দিন। যে দেশে মুক্তিযোদ্ধারা রিকশা চালিয়ে জীবনধারণ করে সেদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা একটা উপহাস। আগে যোদ্ধাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করুন। তার সন্তানদের খাওয়া পড়ার জন্য যেন তাদের ভিক্ষা না করতে হয় এতটুকুই তার সন্তানরা আপনাদের কাছে চায়। কোন আলাদা কোটা নয়।

একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি গর্ববোধ করতে চাই। আমাকে সেই সুযোগ দিন। দোহাই লাগে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০

ধমনী বলেছেন: এটা যদি আপনার বিবেকপ্রসূত জবানবন্দি হয়, তবে আপনি আমার শ্রদ্ধার পাত্র।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

অদ্বিতীয়া অধরা বলেছেন: আমি সেটাই লিখি যেটা আমার বিবেক বলে। ধন্যবাদ।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩০

উস্তাদ শেখ নূরু-জ্বী বলেছেন: ভালো বলছেন

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬

কেউ নেই বলে নয় বলেছেন: অনেককিছুর সাথেই সহমত। প্রশাসনে নানা দুর্নীতির কারন এই কোটা পদ্ধতি। এই কোটা পদ্ধতিই নানা পর্যায়ে দলীয় লোকদের সুযোগ দেয়ার সবচেয়ে মসৃন পথ। এই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার হুয়া দরকার। উপজাতি কোটা একই রাখা, আর জেলা কোটার শতকরা হিসেব আরো কমিয়ে সবচেয়ে মেধাবীদের সুযগ দেয়া উচিত সবক্ষেত্রে। এই মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা সুবিধা নেয়ার জন্য কতজন খুঁজে পাওয়া যাবে সেটাও প্রশ্ন। কারন সার্টিফায়েড মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখের বেশি হবার কথা না। এতো বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধা কোটার শতকরা হার কমানো দরকার এবং কয়েক বছর পর বাদ দিয়ে দেয়া উচিত। সর্বক্ষেত্রে জোর দেয়া উচিত মেধা আর সামগ্রিক যোগ্যতার দিকেই।

শুভকামনা রইলো। :)

৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮

৭১৫০ বলেছেন: এবারে বিসি এস এ যা হয়েছে, যোগ্যতা ছাড়া মুক্তি যোদ্ধা কোটাও চান্স পায়নি।

৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৩

তুষার কাব্য বলেছেন: চমৎকার ভাবনা । আপনার বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.