নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বলার কিছু নেই।মুগ্ধকরের ব্লগে আসুন,মুগ্ধকরকে চিনুন

মুগ্ধকর

যুদ্ধ জীবন নয়।ভালোবাসাই জীবনের মূলমন্ত্র

মুগ্ধকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃকিশোরটি একটি ভুল করেছিলো

২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৪

]


আমার এক বান্ধবী আছে। ওর নাম সাদিয়া । মানুষের বান্ধবী থাকতেই পারে কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এর কিছুটা ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। আমি আসলে মেয়েদের সাথে সেভাবে মিশতে পারি না। ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ অমিশুক প্রকৃতির ছেলে। তাই সবার সাথে সেভাবে মিশতে পারি না।আমার বন্ধু সংখ্যাও বেশ কম।সবাই কেন যেন আমাকে কিছুটা এড়িয়েই চলে। তারপরও কিভাবে কিভাবে যেন আমার সাথে সাদিয়ার বন্ধুত্ব হয়ে গেল।

কিছুদিন ধরে আমার উপর সাদিয়ার মেজাজ খারাপ।কারণ কী? তেমন কিছু না, আমি নাকি কথা খুবই কম বলি।এখন আমি কথা বলার কিছু না পেলে কি বলবো? অতঃপর আমার সাথে তার কথা বলা বন্ধ।

দেখলাম একজনই তো বন্ধু।এও যদি চলে যায় তাহলে তো আমারই বিপদ।রাগ ভাঙানোই শ্রেয়। একদম একা একা বন্ধু ছাড়া জীবনযাপন করা খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না ।তাছাড়া মেয়েটা আমাকে বেশ কিছু বিষয়ে সাহায্য করেছিল। বন্ধু ছাড়া বন্ধুর পথে কেই বা পাশে থাকবে?
তারপর এক রাতে সাদিয়ার সাথে ফেবুতে চ্যাটিং এ বসলাম।(আমি মোটেও ফেবু রোগী নই।মাঝে মধ্যে বসি আর কি।ফেবুকে আমি তেমন পছন্দ করি না)

আমি লিখলাম,একটা গল্প শুনবি?
সাদিয়া আমাকে লিখে পাঠালো, কি গল্প? নাম কি? কার লেখা? সব পাঠা। তারপর বিবেচনা করে দেখবো।
আমি আবার লিখলাম, আমার লেখা ।নাম এখনো ঠিক হয় নাই।


সাদিয়া ঃ ওও। তা কি বিষয়ে?প্রেম ভালোবাসা নাকি ভূত প্রেত?নাকি গোয়েন্দা?দেখ বাপু আমি কিন্তু এসব ভূত টূতের গল্প শুনতে পারবো না।খুব বিরক্ত লাগে।

আমিঃ মানে গল্পটার তেমন কোনো বিষয়বস্তু নেই।

সাদিয়াঃ কিহ? গল্পের বিষয়ই যদি না থাকে তাহলে সেটা গল্প হয় কিভাবে?
আমিঃ মানে আছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না

সাদিয়াঃ তোর কথার মাথামুন্ডু কিছুই বোঝা যায় না।তারচেয়ে গল্পটা শুরু কর।আমি নিজেই বুঝে নিব।

আমিঃ ঠিক আছে।আমি শুরু করি....দাঁড়া। আগে আমার গল্পের হিরোর একটা নাম দে।

সাদিয়াঃ নাম দে রমিজ ।

আমিঃ এই নাম? আচ্ছা যা ঠিক আছে। এটাই...
তো রমিজ বেশ সহজ সরল আর ভাল ছেলে।একটু লাজুক প্রকৃতির।তবে অনেক ভাল।সবাই ওকে পছন্দ করে।তবে ওর বান্ধবী নেই।বেশ লাজুক টাইপের ছেলে আর কি।তো রমিজ আবার ভাল ছবি আঁকতে পারত।ওদের স্কুলের ছবি আঁকার ক্লাবে ও একজন উঁচু স্তরের মেম্বার ছিল।একবার অকে ছবি আঁকা ক্লাবের সহসভাপতি করা হয়....... এবার আসল গল্প শুরু

তো রমিজ এর প্রিয় বন্ধু আফ্রিদি।। আফ্রিদি র সাথে মেয়েদের বেশ ভাল বন্ধুত্ব ছিল।তো একদিন একটা মেয়ে রমিজের কাছে আসলো...
রমিজ তখন ড্রইং ক্লাবে ছবি আঁকছিল
মেয়েটি নিজেকে আফ্রিদি র ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিল.. মেয়েটি র।নাম ----...মেয়েটি রমিজকে বল্লো.. "আমাকে ছবি আঁকা শেখাবে?"

সাদিয়াঃ দাঁড়া দাঁড়া। মেয়েটার নাম কি?
আমিঃ ঠিক করি নাই।তুই একটা দিয়ে দে।
সাদিয়াঃ আচ্ছা ।মেয়েটার নাম রানু।
আমিঃবেশ...
মেয়েটার নাম রানু ু
... এদিকে রমিজ যে কিনা মেয়েদের সাথে কথাই বলে না তাকে একটা মেয়ে ছবি আকা শেখাতে বলেছে... ওর হাত পা কঁাপে।নিজের অজান্তেই বলে ফেলে.. " শেখাবো""
রানুর বর্ণনা দেই।খুব সুন্দরী না কিন্তু মায়াকাড়া চেহারা।।গাত্রবর্ণ শ্যামলা,, দুইটা বড় বড় চোখ।তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে আর কি... এমন একটা মেয়েকে রমিজ কিভাবে না করবে?
তো রমিজ যেমন চুপচাপ রানু তেমনি চঞ্চল। অনেক বেশি বন্ধুসুলভ। ওর অনেক বন্ধুবান্ধব... রমিজের ওকে ভালই লাগে।খুব অল্পদিনে ও রমিজকে আপন করে নিয়েছে।একমাসের মাথায় রানু ঘোষনা করে রমিজ অর বেস্ট না ভেরি বেস্ট ফ্রেন্ড।।
তো স্কুলের সবাই জানে রানু রমিজ বেস্ট ফ্রেন্ড। এদিকে রমিজ রানুকে সব কিছু বলে।সব কথা শেয়ার করে।কারণ রমিজ মন থেকে রানুকে অর বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে।ওর মনে কোনো প্যাচ নেই।ও ধীরেধীরে ওর পুরোনো বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে
এদিকে রমিজের মনে হতে থাকে রানু অর সম্পর্কে কিছু বলে না.... ও সব বিষয়এ কথা বলে কিন্তু নিজের সম্পর্কে কিছু বলে না।রমিজ বিষয় টা পাত্তা দেয় না।মেয়েরা সবকিছু বলবে এমন ভাবা উচিত না.... হয়তোবা রমিজের জানার প্রয়োজন নেই তাই বলছে না

রমিজ রানুকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসকরে
রমিজ জানে রানুর কোনো লাভার নেই।রানু নিজে কসম কেটে বলেছে।।রমিজ কিভাবে তা অবিসশ্বাস করে?? ও জানে রানু কখনো ওর সাথে মিথ্যা বলবে না
এদিকে রমিজ ধীরে ধীরে রানুর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়তে থাকে।রমিজের এক বন্ধু বিষয় টা জেনে রমিজকে বলে"" মেয়েটি র প্রতি নিজেকে উজাড় করে দিস না।।ও তোর মত না"" অন্যেরা মুখ টিপে হাসে... রমিজ বুঝতে পারে না।।বোঝার চেষ্টাও করে না।অর মাঝে শুধু রানু
রানু বিষয় টা বুঝতে পারে।মেয়েরা এসব বিষয় সহজে বোঝে।ও রমিজকে প্রশ্রয় দেয়।আগে রানু সপ্তাহে একবার মোবাইলে টেক্সট করতো।এখন প্রতিদিন ৩ বেলা টেক্সট করে
রমিজ একটা কাণ্ড করে বসলো। ওদের আর্ট ক্লাবের মাসিক পত্রিকায় ও রানুর ছবি আঁকলো।ক্যাপশনে রানুর নাম দিল
রমিজের মনে ভয় হয়।যদি রানু ঠিকভাবে না নেয়?? ও দুরুদুরু বুকে রানুর উত্ত্রের অপেক্ষা করত্র থাকে
তো রানু মেসেজ দেয়.......
Ranu:tui amr picture ekecis..oita khub sundor hoece..dekhe kno jeno khub valo laglo..thanks

রানুর কাছ থেকে এমন জবাব পেয়ে রমিজ তো খুব খুশী। ও ভাবলো রানু মনে হয় ওর..... বেচারা ভাববে নাই বা কেন? রানু যেমন ব্যবহার শুরু করেছে.... তারউপর রানু কসমকেটে বলেছে ওর কোনো বি.এফ নেই।তো আর কি... রমিজের মনে বসন্তের হাওয়া বইছে.... মাসটা ছিল বসন্তের মাঝামাঝি
আচ্ছা বসন্তের কোনো গান জানা আছে?

সাদিয়াঃ আহা আজি এই বসন্তে......
আমিঃ এতেই চলবে। গানটা মনে পড়ছিলো না। রমিজের মনের অনুভূতি বোঝানোর জন্য গানটা ব্যবহার করলাম।

রমিজের মনে হতে থাকে ওর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় চলছে।তারপর আর কি হয়... রমিজ নিয়মিত রানুর খোঁজ নেয়া শুরু করে.. রানুও রমিজের সাথে ভালো ভাবেই কথা বলে.. ওকে দিয়ে টুকটাক কাজ করায়।রমিজ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিজের মনের কথা বলে... সেটা শুনে রানু হাসে আর মজা করে... কিন্তু নিষেধ করে ....।রমিজ ভাবে মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। যেহেতু ও নিষেধ করছে না তারমানে ও নিশ্চই আমাকে পছন্দ করে.... এর মাঝে একটা ঘটনা ঘটলো
রানুর এক বন্ধু... ছেলে.. নাম শাহী... ও রমিজের ও বন্ধু। ও রমিজকে বললো রানু ওকে বলেছে যে ও রমিজকে পছন্দ করে... কোথায় বলেছে? ফেসবুকে.....

রমিজ সবাইকে বিশ্বাস করে। ও ভাবে জগতে সবাই ওর বন্ধু। সবাই নিষ্পাপ। সবচেয়ে বেশি নিষ্পাপ রানু।ও শাহীর কথা বিশ্বাস করল
রমিজের মনে কোনো সন্দেহ রইলো না
রমিজ তো বুঝে গিয়েছে রানু এখন ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।রমিজ প্রতি রাতেই রানুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে......
রানুর অতীত সম্পর্কে রমিজ একটু ঘাটাঘাটি করেছে... ওর আবার এসব বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ... হবে নাই বা কেন... যাকে ও জান দিয়ে দিয়েছে.... তা হোক না টিনেজ ভালোবাসা... আর টিনএজ ভালোবাসা মিথ্যা হয় এটা কে বলেছে? বরং এটাই সত্যি.. অন্যগুলো মিথ্যে..
রানু সম্পর্কে বেশি কিছু জানতে পারে নি। যা জেনেছে তা হল রানুর সাথে আগে কিছু ছেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল কিন্তু কি কারণে তারা যেন ওর সাথে তেমন যোগাযোগ রাখে না।রমিজ ভেবে পায় না এত ভাল একটা মেয়েকে ছেড়ে ওর বন্ধুরা চলে যাবে কেন? রানুর এক বড় বোন আর এক বড় ভাই আছে।দুজনেই উচ্চশিক্ষিত,ভাল চাকরি করে,ওর বড় ভাই ইঞ্জিনিয়ার। ওদের এলাকায় ভালই প্রভাব আছে।ওরা বেশ ক্ষমতাবান
এই হলো রানু। এদিকে রমিজ প্রতি দিবসে নিয়মকরে রানুকে মেসেজ করে, এদিকে রানুও মেসেজ দেয়, এক জনএর দু:খে অন্যজন স্বান্তনা দেয়..... এভাবেই চলছে... খুব সুন্দর এক একটা স্বপ্নিল দিন যাচ্ছে
রমিজ স্বম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।এবার রমিজ স্বম্পর্কে বলা যাক
রমিজ স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। সবার আদরের।একটু বেশিই আদুরে
যা চায় তাই পায়।ওর বাবা ওকে সবকিছু কিনে দেয়।একদম বাচ্চাববয়স থেকে শুরু করে এই কিশোর বয়সে এসেও ওর আদর এতটুকু কমেনি।দু:খ কি জিনিস সে সম্পর্কে ওর ধারণা সীমিত
যা বলেছিলাম। রানুর সাথে রমিজের মূলত মোবাইলে কথা হত।রমিজ ফেসবুক ঘৃণা করে আর রানুও ফেসবুকেতেমন বসে না... কিন্তু সেদিন রমিজ কি মনে করে অনেকক্ষণ ফেসবুকে ছিল...
ওর মাথায় কি ভূত চাপলো কে জানে... ও রানুর অ্যাকাউন্ট ঘাটা আরম্ভ করলো
রানুর অ্যাকাউন্ট এ তেমন কিছু নেই।ওর বন্ধু সং্খ্যা কম
হঠাৎ রানুর একটা পোস্টে একজনের কমেন্টে ওর চোখ আটকে গেলো
মেসেজ টা আহামরি কিছু ছিল না।তারপরও রমিজ আ্যকাউন্ট টাতে যায়... চেক করে। ওর মন কেমন যেন করতে থাকে। তারপর হঠাৎ একটা পোস্ট চোখে পড়ে। ওর মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়।ওর হাত কাঁপতে থাকে...
ও রানুকে তখন ফোন দেয় কিন্তু রানু ফোন তুলছিল না।কি আর করবে।ও ঘামতে থাকে
তারপর সেদিন বিকেলের দিকে ও রানুকে ফোন দেয়।টুকটাক ফাজলামো করার পর ও রানুকে জিজ্ঞাস করে- " তোর সাথে কি ওই ছেলেটার কোনো সম্পর্ক আছে?"

-"কোন ছেলে? "

-"ওইযে হাবিব নাম..."
রানু একথা সেকথা বলে কাটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু রমিজ আজ কথা বের করিয়েই ছাড়বে।অবশেষ এ রানু স্বীকার করে নিল সব
রমিজের মাথায় বাজ পড়লো...

"আগে বলিসনি কেন?"

"বলার প্রয়োজন হয় নি।এসব ভেবে মাথা খারাপ করিসবনা। রাখি।ব্যস্ত আছি"
রানু লাইন কেটে দেয়
তারপর রমিজের কি অবস্থা তা বলে বোঝানো যাবে না।ও অসহায় ভাবে ঘরের কোনে বসে থাকে।কাউকে মুখফুটে কিছু বলতেও পারে না।প্রায় সময় মসজিদে বসে থাকে,ছাদে বসে থাকে.... কারোর সাথে তেম্ন কথা বলে না
ছেলের এই পরিবর্তন কেউ না লক্ষ্য করলেও রমিজের মা লক্ষ্য করলেন।উনি রমিজকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন কিন্তু রমিজ কোনো কিছুর উত্তর দিল না।রমিজের মা বিষয় টা আন্দাজ করলেন।
উনি রমিজকে বল্লেন- "পৃথিবীতে নিখুঁত কোনো মানুষ নেই। সবারই কিছু না কিছু খুঁত আছে। এখন এত সব ভুল মানুষের ভীরে আসল মানুষকে খুঁজে বের করাটা অনেক কষ্ট কিন্তু এটাই প্রকৃত সাহসী মানুষের বৈশিষ্ট্য। কেউ যদি তোমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকে,করুক।তুমি হয়তোবা ভুল মানুষকে বাছাই করেছিলে।ভুল মানুষ করে।তুমি ভুল করেছো সেও করেছে।তুমি হাসিমুখে ভুল বরণ করে নাও।ওকে ক্ষমা করে দাও। দেখবে সেও একদিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে আসবে।এটাই স্মার্ট ছেলের বৈশিষ্ট্য "
কিন্তু বলা সহজ কাজ করা কঠিন
রমিজ বিষয়টা মানতে পারছে না
এক বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে ওর আর রানুর বন্ধুত্ব। কিন্তু রানু এত বড় মিথ্যা কেন বললো? কেন রানু ওর সাথে ছেলেমানুষি খেলা খেললো? হায়রে।রমিজ উত্তরটা জানে না

সাদিয়াঃ কাহিনীটা ইন্টারেস্টিং।
আমিঃ শেষ হয় নাই।
সাদিয়াঃ বুঝেছি বলে যা।
আমিঃ
এদিকে রমিজ রানুর সাথে সামনাসামনি কথা বলবে ঠিক করলো
রানুর জন্মদিনে রানুর জন্য একগাদা ফুল নিয়ে ও রানুর বাসার নীচে হাজির।ফুল বিক্রেতা রমিজের মত গাধা টাইপ ছেলেকে পেয়ে ইচ্ছেমত ঠকিয়ে নিয়েছে।যাইহোক রমিজ রানুর বাসার নিচে দাঁড়িয়ে রানুকে ফোন দিল..
"" একটু নীচে নামবি?""
""কেন?""
""তোর জন্য ফুল নিয়ে এসেছি।""
"" ওও, বাসার নীচে রেখে চলে যা।এখন নামতে পারব না""
এই উত্তর শুনে রমিজ হতভম্ভ।এভাবে কেউ বলে? ও বাসার নীচে ফুল ছূড়ে দিয়ে লজ্জায় সেখান থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো। ওই অপমানের পর আর রমিজ ওখানে যায় নি
এভাবেই দিন যায়।রমিজ কিন্তু তারপরও রানুর নিয়মিত খোঁজ নেয়।রানুর সাথে এতদিনের বন্ধুত্ব কে সে অস্বীকার করতে পারে না।আর রানু রমিজের সাথে তেমন কথা বলে না।এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
এমন সময় অপ্রত্যাশিত ভাবে রমিজের জীবনে এক ঝড় নেমে আসলো
রমিজের মায়ের এক কঠিন অসুখ ধরা পড়লো। রমিজের বাবা রমিজের মাকে নিয়ে পাগলের মত ছোটাছুটি করতে লাগলেন।কিন্তু কোনো ডাক্তার আশার কথা শোনাতে পারলো না।রমিজের পরিবার ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে লাগলো সেই সাথে রমিজের মন। আত্মীয়স্বজন এসে মরাকান্না কাঁদে আর নানা রকম অকথা কুকথা বলে যায়।সবাই রমিজকে ইচ্ছে করেই বোঝাতে চায় রমিজের মায়ের দিন বেশি নেই
এসব কথা রমিজের কিশোর মনকে কিভাবে আঘাত করে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।রমিজের সুন্দর সরল মন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।ওকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য কেউ ওর পাশে থাকে না
এদিকে রমিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, রমিজের মেট্রিক পরীক্ষা র দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু রমিজের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। থাকবে কিভাবে? প্রস্তুতি নেয়ার মত ওর অবস্থাও নেই
রমিজের বাবা মা দুজনেই হাসপাতালে।বাসায় রমিজ একা থাকে।নিজের ছোট বোনকে একা সামলায়।একা পরীক্ষা দেয় একাই সবকিছু করে।ওর ভেতরের সমস্ত অনুভূতি যেন হারিয়ে গিয়েছে
এভাবে রমিজ পুরো একমাস মেট্রিক পরীক্ষা দেয়।উল্লেখ্য এই একমাসে রানু রমিজের কোনো খবর নেয় নি।রমিজের কিছু কাছের বন্ধু খবর নিলেও রানু নেয় নি।রানু সবই জানে কিন্তু সে রমিজএর এতটুকু খোঁজ নেয় না
রমিজ মানুষের এমন রূপ দেখে অবাক হয়ে যায়।ও ভেবে পায় না মানুষ কিভাবে সবকিছু অস্বীকার করে???
রমিজ পরে ভেবে বের করেছে রানু ওর সাথে বন্ধুত্ব করেছিল হয়তোবা নিজের স্বার্থের জন্য। ওকে রানুর প্রয়োজন ছিল।যখন রানু দেখলো রমিজ এর কাছ থেকে ওর আর কিছুই পাওয়ার নেই তখন সে রমিজকে পরিত্যাগ করলো।এ টা রমিজের ধারণা
কিন্তু কোনটা সত্যি তা উপর ওয়ালা ভাল বলতে পারেন। রমিজ যখন হাসপাতালে বসে থাকে বা ঘরের কোণে একা বসে থাকে নিজের দু:খে দু এক ফোঁটা অশ্রু বর্ষণ করে তখন রানু মনের আনন্দে সেলফি তোলে,ডেটিং করে আর বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যায়।হায়রে মানবজাতি সত্যিই বড় অদ্ভুত।
রমিজকে পরে শাহী নামের বন্ধুটা বলেছিল আসলে সবাই জানতো রানুর সাথে হাবিবের সম্পর্ক। তা প্রায় দুই বছর তো হবেই।সবাই রমিজের সাথে মজা করার লোভ সামলাতে পারে নি।তাই...
রমিজের মনের সকল অনুভূতি হারিয়ে গিয়েছে। ও কাউকে আর বিশ্বাস করে না।ও শুধু নিজেকে বিশ্বাস করে
ও এখনো আশা করে,ও এখনো বিশ্বাস করে একসময় সুখ আসবেই। ওর সব দু:খ দূর হয়ে যাবে।ও বিশ্বাস করে রানু ওকে সরি বলে আবার ফিরে আসবে,ওর বাবা মা সুস্থ হয়ে যাবে,সব আগের মত সুন্দর হয়ে উঠবে
মানুষের হাতে সৃষ্টিকর্তা কোনো ক্ষমতা দেন নি।তিনি মানুষকে প্রায়ই পরীক্ষা করেন। মানুষ কেবল ভাল ফল পাবার আশা করে বসে থাকতে পারে।রমিজের কিছুই করার নেই।সেও আশা করে বসে আছে কবে আবার সে তার জীবনের সুন্দর ভোরের দেখা পাবে
এই আশা নিয়েই রমিজ প্রতি রাতে একা একা ঘুমোতে যায়।আকাশের চাঁদ টা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।

ওর মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে।রানু লিখেছে- আমাকে কি তুই মাফ করতে পারবি? সেই রেস্টুরেন্ট এর সামনে আয় যেখানে তোর সাথে আমার কথা হয়েছিল। তোকে কিন্তু আমাকে ক্ষমা করতে হবে।

রমিজ অবাক হয়। সে মোবাইল হাতে বিছানা ছেড়ে নামে।এমন সময় রমিজের বাবা মা ওর রুমে ঢুকে ওকে আদর করতে থাকে।ওর মা ওকে বলে- তোর দু:খ শেষ। সব ঠিক হয়ে গিয়েছে।রমিজের চোখ আনন্দে ভিজে উঠে।এত সুখ,এত আনন্দ ওর জন্য অপেক্ষা করেছিল? ও খুশিতে চিৎকার করে উঠবে এমন সময়....
ওর ঘুম ভেঙে গেল।তখন ভোররাত। লোকে বলে ভোররাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়।রমিজের ক্ষেত্রে কি তা হবে? কে জানে.... এই পৃথিবী এক অদ্ভুত জায়গা আর মানুষের জীবন নাটকীয়তায় ভরপুর।সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষের জীবন এক রহস্যের বেড়াজালে বেঁধে দিয়েছেন সেই রহস্য ভেদ করা মানুষের কম্য না

সাদিয়াঃ গল্প শেষ?
আমিঃ হ্যা।
সাদিয়াঃ শেষে কি হল? কিছুই তো বললি না।
আমিঃ এটা তোর ইচ্ছা।তোর যেটা ইচ্ছা ভেবে নে।তবে রমিজের স্বপ্ন মনে হয় না সত্যি হয়েছে।স্বপ্ন কখনো সত্য
হয় না
সাদিয়াঃ এটা একটা টিনেজার ভালোবাসার গল্প?
আমিঃ নাহ।এটা একটা সাধারণ বাঙালী কিশোরের গল্প ।যে ছেলেটা বুকে এক সাগর আবেগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
সাদিয়াঃ আমার সন্দেহ হচ্ছে এটা তোর জীবনের গল্প।
আমিঃনারে ভাই আমার জীবনে কোনো গল্প নেই। এটা আমার কল্পনাপ্রসূত একটি কিশোরের কিছু ভুলের গল্প।
সাদিয়াঃতাহলে গল্পটার নাম দে -কিশোরটি একটি ভুল করেছিলো
আমিঃবেশ।মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন



যাইহোক পরবর্তীতে সাদিয়ার সাথে আমার বন্ধুত্ব আরো গাঢ় হয়েছে অবশ্য।তবে ওকে একটা মিথ্যে বলেছিলাম সেদিন।কি আর করবো?বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে টুকটাক মিছে কথা বলতেই হয়।
______________

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.