নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পকথার গল্পগাথা

মোহাইমিনুল ইসলাম খান

উদ্ভট থেকে উন্মাদ আমি আজীবন পাগলাটে

মোহাইমিনুল ইসলাম খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোর শহরে

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৪৫


২৩ নভেম্বর ২০০৩। অনেকক্ষণ থেকে ওয়াশিংটনের আকাশে একটি প্লেন দেখা যাচ্ছে। প্লেনটি US Airways-এর L3109 বিমান। একসময় প্লেনটি ওয়াশিংটন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল। যাত্রীরা আস্তে আস্তে নেমে এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি সার্ভেলিয়েন্স এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিকিউরিটি অফিসারদের কাছে খুব বোরিং একটা কাজ এটা। সাধারণত বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী আমেরিকায় ঢুকে তাদের কাছে সন্দেহজনক কিছু থাকে না। কিন্তু কিছু আমেরিকান বিদেশি সফর শেষে দেশে ফেরার সময় নিষিদ্ধ মাদক নিয়ে ঢোকে।
বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় একটা ছেলে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি তে পড়তে এসেছে।
ছেলেটার চেহারা মনকাড়া, ফর্সা গায়ের রঙ (বাংলাদেশি সাপেক্ষে), কালো চুল, কালো চোখ, কালো দাড়ি, কপালে একটা দাগ (সম্ভবত নামাজ পড়ার কারণে)।
ছেলেটা এয়ারপোর্টের ঢোকার সাথে সাথে, সব আমেরিকান দের মধ্যে একটা হুলস্থূল কাণ্ড বেধে গেল। বাবা মায়েরা নিজেদের বাচ্চাদের লুকিয়ে ফেলছে। এয়ারপোর্ট এর সবাই ভয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে। একটা বিড়বিড় শব্দ হচ্ছে “সন্ত্রাসী”, “জঙ্গি”।
হঠাৎ এয়ারপোর্টটাকে নিস্তব্ধ হতে দেখে ছেলেটা চমকে উঠল। খেয়াল করল সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে
হঠাৎ কেউ একজন ওর হাতে হাতকড়া পড়িয়ে টেনে নিয়ে গেল।
একটা অন্ধকার রুমে ঢুকিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হল। প্রচণ্ড ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে ছেলেটা বলল “আমি কি করলাম?”
ইংলিশে একজন সিকিউরিটি অফিসার বলল, “তোমাকে আমাদের স্পেশালভাবে চেক করতে হবে। তুমি মুসলিম। মুসলিমদের এখানে ঢুকতে হলে ভাল করে চেক করতে হয়”।
এফ.বি.আইকে খবর দেওয়া হল। ছেলেটার ব্যাগ ট্যাগ সবকিছু এলোমেলো করে চেক করা হল। ছেলেটার গায়ের জামাকাপড় সব খুলে উলঙ্গ করে চেক করা হল।
ছেলেটা লজ্জায় অপমানে কেঁদে দিল। অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্কলারশিপ পেয়ে এই দেশে পড়তে এসেছিল সে।
এফ.বি.আই অফিসার সব চেক করে বলল “সন্দেহজনক কিছু এর কাছে নেই। তবে ধর্মীয় কিছু বই আছে”।
ছেলেটার স্টুডেন্ট ভিসাটা ভাল করে চেক করে, নম্বর লিখে রাখল তারা। আর সতর্ক করে দিল। নজর রাখবে তার উপর।
আমেরিকায় প্রথম দিনটায় বিনা অপরাধে শুধু মুসলিম হবার কারণে এফ.বি.আইয়ের সন্দেহের তালিকায় নাম উঠল বাংলাদেশি সায়েদ বিন হাসানের।
ওইদিন এয়ারপোর্ট এ যখন সায়েদ বিন হাসানকে অপমান করে ক্রিমিনাল সন্দেহের তালিকায় নাম উঠানো হচ্ছিল। ঠিক সেসময় এক আমেরিকান মাতাল সিকিউরিটির চোখ এড়িয়ে একটা পিস্তল দিয়ে ৬ জন নিরাপরাধ যাত্রী কে এলোপাথাড়ি গুলি করে মেরে ফেলল।
কিন্তু এটা আমেরিকা সহ সারা পৃথিবীতে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
বর্তমান দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অপরাধ মুসলমান হয়ে জন্মানো।
একইসময় ওয়াশিংটন এর দক্ষিণ পূর্বে নিউইয়র্ক এর ম্যানহাটন থেকে একটা বাসে করে ওয়াশিংটন আসছিল আঠারো বছর বয়সী রোজ উইন্টার…বাড়ি থেকে পালাচ্ছে সে।
কারণ তার আমেরিকান সৎ বাবা তার প্রতি কুদৃষ্টি দিয়েছে। মায়ের অনুপস্থিতিতে তার সাথে খারাপ কাজ করতে চেয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে তাই তার মৃত আসল বাবার তার জন্য বরাদ্দ করা কিছু টাকা নিয়ে সে সবকিছু ছেড়ে ওয়াশিংটন যাচ্ছে। ওখানে গিয়ে কোন কলেজে ভর্তি হবে সে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির হলে জায়গা হল না সায়েদ বিন হাসানের। কারণ সে অলরেডি এফ. বি.আইয়ের সন্দেহের তালিকায়…তাছাড়া সে মুসলমান।
ভার্সিটির আশেপাশে কোন বাড়িতেও ভাড়া দেওয়া হল না সায়েদ বিন হাসানকে। তার আমেরিকায় প্রথম সপ্তাহ কাটল অন্ধকার গলিতে কুকুর বিড়াল আর ঘরহীন মাতালদের পাশে ঘুমিয়ে।
একদিন এক ছিনতাইকারী এসে তার ব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে গেল। টাকা ক্যাশ হিসেবে ছিল না বলে বাঁচা গেল। নইলে চার বছরের কোর্স করতে এসে অথৈ সমুদ্রে পড়তে হত তাকে।
ওয়াশিংটন এর বাংলাদেশি এলাকার সন্ধান পেল হাসান। আমেরিকায় আসার সাতদিন অসংখ্য ভোগান্তির পর অবশেষে একটু শান্তি মিলল তার। এক বাংলাদেশি পরিবার ওকে ঠাই দিল।
সেখানে ও জানল, আমেরিকায় ভাল থাকতে হলে ভুলে যেতে হবে ও মুসলিম। অন্যদেরকেও বুঝাতে হবে ও মুসলিম না। তাহলেই শুধুমাত্র ও প্রাণে বাঁচবে। নইলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।
একথা শুনে হাসান ওর দাড়ি শেভ করে ফেলল। কপালে ফেসপাউডার লাগাল, যেন নামাজের দাগ না দেখা যায়।
এবার সে ভার্সিটির পাশে এক বাসায় ভাড়া নিতে পারল। কিন্তু বৃদ্ধ বাড়িওয়ালী কে সে পরিচয় দিল সে নয়ন সেন; ইন্ডিয়ান।
রোজ উইন্টার কলেজে ভর্তির জন্য এপ্লাই করে ওয়াশিংটন-এ। হাই স্কুলে রেজাল্ট ভাল হওয়ায় অসুবিধা হয় না ভর্তি হতে। কলেজ হোস্টেলে উঠে পড়ে সে। কিন্তু আস্তে আস্তে তার টাকা কমতে থাকে জীবিকা নির্বাহের জন্য।
টাকার জন্য রেস্টুরেন্ট এ ওয়েট্রেসের কাজ করতে থাকে সে। কাকতালীয় ভাবে সায়েদ বিন হাসানও একই রেস্টুরেন্টেই ওয়েটারের কাজ নেয়।
এদের দুইজনের মধ্যে প্রায় কোন কথাই হয় না। হাসান মুসলিম বলে মেয়েদের দিকে তাকায় না, তাই কথা বলার চেষ্টাও করে না। আর রোজের সৎ বাবা ওকে ধর্ষণের চেষ্টা করার পর থেকে পুরুষদের ভীষণ ভয় পায় রোজ। মানসিক ডাক্তার দেখানোর মত টাকাও নেই তার।
সারাদিন পড়াশুনা, সন্ধ্যার পর রেস্টুরেন্টে কাজ, তারপর দুইজনের দুইদিকে চলে যাওয়া। কাহিনী তে কেউ কারো অংশ না।
একদিন এক লোক খাবার খেতে এসে ওয়ালেট ফেলে গেল। ওয়ালেটে পঞ্চাশ হাজার ডলার ছিল। একজন ওয়েটার ওয়ালেটটা হাতাতে চাচ্ছিল। রোজ সেটা দেখে ফেলল। কিন্তু ভয়ে কিছুই বলল না। কিন্তু হাসান এসে ওয়ালেটটা নিয়ে নিল। ওয়ালেট থেকে কার্ড বের করে লোকটাকে ফোন দিয়ে ফেরত দিল।
ওইদিন প্রথম রোজের মনে হল, দুনিয়ার একটা পুরুষকে দেখেই তার মনে আর ভয় জাগছে না…বাকিদের ভয় পেলেও।
রোজ টুকটাক কথা বলা শুরু করলেও হাসান প্রয়োজনীয় কথাটা সংক্ষেপে বলত। তাও চোখের দিক না তাকিয়ে।
এতে রোজ আরো অবাক হত।
এদিকে কলেজে রোজের চেহারা আর ফিগার দেখে অনেক ছেলেই পিছনে ঘুরত, কথা বলতে চাইত। কিন্তু রোজ প্রচণ্ড ভয়ে পালিয়ে আসত।
রোজের রুমমেট একটা বারে প্রস্টিটিউটের কাজ করত। রোজের শরীর দেখে সেই বারে কাজ করার অনেক অনুরোধ করে সে। কিন্তু রোজ রাজি হয় নি।
ওই বারের এক নিয়মিত কাস্টমার ওই এলাকায় পতিতা ব্যাবসা করত। রোজের রুমমেট এর খোজে একবার কলেজে এসে রোজকে দেখে ফেলে সে।
এরপর থেক রোজকে অনেক টাকার অফার দিয়ে ওই কাজ করতে বলে সে। রোজের টাকার অনেক দরকার ছিল। হয়ত সে রাজিও হত। কিন্তু পুরুষদের প্রতি ভয়ের কারণে সে মোটেও এই প্রস্তাব আমলে নিল না।
এছাড়া হয়ত টাকার চেয়েও এই মুহুর্তে কারো কাছাকাছি থাকা ওর জন্য বেশি ইম্পরট্যান্ট। একজন বিদেশি পুরুষ। যাকে দেখে সে ভয় পায় না।
ওই রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে হোস্টেলে যাবার পথে বৃষ্টি নামল খুব। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাটতে লাগল সে।
এক অন্ধকার কোনায় ঢোকার সময় তিনটা লোক ওকে জাপটে ধরল।
কয়েকমাস আগের ওর সৎবাবার বিকট লোভাতুর মুখমণ্ডল আবার স্মৃতির পাতায় ঝলসে উঠল রোজের। প্রচণ্ড ভয়ে পরিত্রাহি চিৎকার করতে লাগল সে।
হঠাৎ অন্ধকারে একটা হাত এসে রোজকে টেনে সরিয়ে দিল। তিনটা লোকের সাথে মারামারি হল তার। হয়ত প্রথমদিন থেকে পাওয়া অপমানগুলোর রাগ চেপে ছিল হাসানের মনে, আজ তা বিস্ফোরিত হল।
তিনটা লোকের দুইজনের হাত ভেঙে গেল। আরেকজনের মুখের দাতগুলো ভেঙে পড়ার আগ পর্যন্ত ঘুষি মারতেই লাগল হাসান।
রোজ এসে ওর কাধে হাত দিল।”থামো, থামো প্লিজ”
হাসান ওর দিকে তাকাল। বৃষ্টির পানিতে কপালের পাউডার মুছে নামাজের দাগ বের হয়ে গেছে।
রোজ সেখানে হাত দিয়ে বলল “তুমি মুসলিম?”
হাসান শিউরে উঠে পিছিয়ে গেল। রোজ আরো কাছে গিয়ে চোখ বড়বড় করে ওকে দেখতে লাগল “এই জন্যই তুমি আমার দিকে ফিরে কথা বল না, তাই না?”
হাসান মাটির দিকে তাকিয়ে বলল “আপনার এতরাতে বাইরে থাকা নিরাপদ না। আপনি একটু বেশিই সুন্দর”।
এর আগে কোন পুরুষ রোজকে সুন্দর বললে রোজের মনে ভয়ই জাগত। আজ প্রথম কারো মুখে ওর রূপের প্রশংসা শুনে ওর মনে হল, এই মুখের প্রশংসা ও সারাজীবন শুনতে চায়
হঠাৎ পুলিশের গাড়ির চোখ ধাঁধানো আলো পড়ল ওদের উপর, তিনটা আহত লোকের পড়ে থাকা। আর হাসানের কপালে দাগ আর হাতে রক্ত দেখে ওকে অ্যারেস্ট করে নেওয়া হল।
রোজ সেই রাতে আর হোস্টেলে ফিরল না। সারারাত পুলিশ স্টেশনে বসে পুলিশদের পুরো ঘটনা বলে হাসানকে ছাড়াতে চেষ্টা করল।
সাক্ষী এভাবে বললে ওই দেশের পুলিশ সাধারণত ছেড়ে দেয় সতর্ক করে। কিন্তু হাসান মুসলিম, তাই তাকে ছাড়ার নির্দেশ নেই।
সকালে হাসান ছাড়া পেল। কিন্তু আমেরিকান লোকের উপর হামলার জন্য তার স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হয়ে গেল। এখন ভিসা ছাড়া সে আমেরিকায় থাকবে কিভাবে? তার বাবা মায়ের এত টাকা নেই যে তাকে আমেরিকান ভিসা করে দিতে পারবে।
হাসান রাস্তায় একা একা হাটতে লাগল। রোজ ওর পিছে পিছে হাটতে লাগল। হাসান ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল।”আমার পিছনে আসছেন কেন?”
রোজ বলল “আমার একটা প্রস্তাব আছে”
হাসান তাকিয়ে রইল।
রোজ বলল “আমার হোস্টেলে থাকা আমার জন্য নিরাপদ না, আমার এক রুমমেট খারাপ কাজ করে এক বারে। ওর দালাল আমাকেও ওই পথে নামাতে চায়। আমি একদিন শুনছিলাম ওরা প্লান করছে, আমি ঘুমানোর পর আমার রুমমেট কৌশলে রুমে কিছু লোককে ঢুকাবে আমাকে কিডন্যাপ করে বারে নিয়ে যেতে। আমার তাই একটা বাড়ি লাগবে। আর বাড়ি তে থাকার মত টাকা আমার নাই”।
হাসান তাকিয়েই রইল।
রোজ বলে চলল “তোমার স্টুডেন্ট ভিসা চলে গেছে। এখন তুমি এদেশে দুইভাবে থাকতে পারো। হয় ভিসা করিয়ে। অথবা কোন আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করে গ্রিন কার্ড নিয়ে। তাই আমি বলছি। যদি তুমি চাও তো আমাকে বিয়ে কর। এতে তুমি এই দেশে থাকতে পারবা। আমিও তোমার ঘরে থাকব”।
হাসান বলল “আমি মুসলমান, অন্য ধর্মের মেয়ে বিয়ে করা আমার ধর্মে নিষিদ্ধ”।
রোজ খুব অসহায় ভাবে ভাবল কিছুক্ষণ। তারপর বলল “মুসলমান কিভাবে হতে হয় আমাকে বল। কিন্তু আমি ওভাবে চলতে পারব না। তুমি নিজেই জানো মুসলিম হলে কি হয় এই দেশে”।
হাসান রোজকে এক মসজিদ এ নিয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী মুসলমান হল রোজ। কিন্তু ওরা দুইজনেই জানত এটা একটা কন্ট্রাক্ট। বিয়ে করার জন্যই এই কাজ করছে সে।
ওইদিন ওরা বিয়ে করে নিল। রোজ হাসানের ছোট অ্যাপার্টমেন্টে এসে থাকতে লাগল।
রোজের কিছু সমস্যা ছিল। যেমন অন্ধকারকে খুব ভয় পাওয়া। একা থাকলে খুব ভয় পাওয়া, ভয় পেলে বা দুশ্চিন্তা করলে বা কষ্ট পেলে তোতলানো। আর মাথা ব্যাথা। হঠাৎ করে মাথা ব্যাথা শুরু হলে পাগলের মত চিৎকার শুরু করত সে।
রোজের কাছে বিয়েটা কন্ট্রাক্টই ছিল, হাসানকে দেখে কেন যে তার ভয় করে না, সেটা সে বোঝে না। ভালবাসা কি তা সে জানে না। একসাথে থেকে দুইজনেরই উপকার হচ্ছে, সেটা সে বোঝে শুধু। দুইজনের মিলিত উপার্জনে থাকা খাওয়া পড়াশুনা সবই হচ্ছে। হাসান কাছে আসলেও রোজের ভয় লাগে না। তার সৎবাবার হিংস্র মুখটা মনে পড়ে না, বরং একটা স্বাভাবিক শারীরিক ব্যাপারই মনে হয় তার।
ও হাসানের সাথে থাকছে শুধুমাত্র প্রয়োজনে।
হাসান ভালবেসে ফেলেছে রোজকে। অনেক বেশি। রোজের সব কর্মকান্ড মুখস্ত তার। রোজের পড়াশুনায় সে হেল্প করতে পারে। রোজের কিসে ভাল লাগে, কিসে অসুবিধা হয় সব জানে সে।
অন্ধকারে রোজ ভয় পায়। দুঃস্বপ্ন দেখে। রোজের মাথার পাশের জানালাটা তাই খোলা রাখে হাসান। স্ট্রিট ল্যাম্পে আলোটা রোজের মুখে পড়ে। স্বর্গের পরীর মত লাগে হাসানের কাছে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হাসান ঘুমিয়ে পড়ে।
রাতে প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখে রোজ। ভয়ংকর সব মানুষগুলো ওকে ধরতে আসছে। চোখে লোভ। ঘুম ভেঙে যায় তার। লাফিয়ে ওঠে। সেসময় ওকে ঠান্ডা করতে ওষুধ লাগে। সিডেটিভ। হাসান ওর মাথার কাছে সেগুলো রেখে দেয়।
ভয় পেলে, কষ্ট পেলে রোজ তোতলায়। রাগ হলেও। হাসান তাই ওকে তোতলামি দূর করার জন্য চেষ্টা করে। কথা বলতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক সময়ে ও যেভাবে কথা বলে, ভয়ের সময়ও যেন সেভাবেই বলে তার ট্রেনিং দিতে থাকে।
মাথাব্যথা হলে হাসান জানে কি করতে হবে। রোজকে বুকের মধ্যে টেনে, মাথায় হাত বুলাতে হবে। ও ঠান্ডা হবে। ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে উঠলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোজকে রোজের চেয়েও বেশি চেনে হাসান। কারণ ওকে ভালবাসে খুব।
বিয়ে করার জন্য মুসলিম হলেও আজ পর্যন্ত মুসলিমদের মত কোন কাজই রোজ করে নি। হাসান জোর করে না। করতে পারে না।
অসুস্থ থাকে প্রায়ই রোজ। সারারাত সেদিন পাশে বসে থাকে নির্ঘুম হাসান।

রোজ আর হাসান একসময়ই ঘর থেকে বের হয়। হাসান ভার্সিটিতে। রোজ কলেজে। ভার্সিটি শেষ হলে, রোজের কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে হাসান। ও জানে রোজ শুধু ওকে ছাড়া সব পুরুষ দের ভয় পায়। এটাকেই হাসান রোজের ভালবাসা বলে মেনে নেয়।
রোজ কলেজ থেকে বের হয়েই সর্বপ্রথম হাসানকে দেখে। এটা ওর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
কলেজে কি কি হল সব বলতে থাকে মেশিনের মত এক নিঃশ্বাসে। হাসান সব শোনে। পড়াশুনা ছাড়াও যেকোন মজার ঘটনাও বলে রোজ । তারপর খিলখিল করে হাসে। হাসান মুগ্ধ হয়ে দেখে বলে, “আই লাভ ইউ, রোজ”।
রোজের কোন ভাবান্তর হয় না।
এখন আর ওয়েটারের কাজ করে না ওরা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করে। দোকানে। কিন্ডারগার্টেন এ পড়িয়ে। ছোটখাটো পত্রিকা বা চ্যানেলে সাংবাদিক হয়ে আস্তে আস্তে সব কাজই একসাথে করে ওরা।
হাসান জানে রোজ ওকে ছাড়া চলতে পারে না। রোজ বুঝুক কি না বুঝুক।
এক ছোট চ্যানেলে সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে করতে আস্তে আস্তে পুরুষদের প্রতি ভয় দূর হয়ে যায় রোজের। দীর্ঘ চার বছর হাসানের সাথে থাকতে থাকতে অবশেষে নিজের মানসিক রোগগুলো কাটিয়ে ওঠে সে।
এরপর এক এফ এম চ্যানেলে আর জে হিসেবে কাজ নেয় ওরা। রোজের প্রেজেন্ট করা অনুষ্ঠান ওয়াশিংটন এ হিট হয়। রোজ বিখ্যাত হয়ে যায়।
হাসান দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখে। কিভাবে নির্ভয়ে না তোতলিয়ে কথা বলতে হয়, অনেক কষ্টে রোজকে শিখিয়েছিল সে। বাসায় বারবার রিহার্সেল করিয়েছিল। আজ ও সার্থক। গর্বে বুক ভরে যায় ওর।
হাসানের চার বছরের কোর্স শেষ হয়ে যাবে প্রায়। রোজ হাসানের বুকে মাথা না রেখে শুতে পারে না। হাসানের মুখ থেকে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমায় প্রতিদিন।
হাসান ওকে বাংলাদেশের ছোট্ট একটা শহরের গল্প বলে রোজকে, যে শহরে ও থাকত।
“জানো রোজ। আমার শহরটা অনেক সুন্দর। একটা সুন্দর নদী আছে। নদীর ওপাশে সবুজ একটা গ্রাম আছে। আজব না, রোজ? এপাশে শহর। ওপাশে গ্রাম। আমার শহরটা অনেক নিশ্চুপ। রাতে ঘুমালে গাড়ির হর্ন শোনা যায় না। ভোরে ঘুম ভাঙে দোয়েলপাখির গান শুনে। দোয়েল পাখি ফজরের আজানের সাথে সাথে গান গায়। আজানের সুরটা আরো মধুর করে দেয়। অনেক শান্তির শহর রোজ। কেউ কারো ক্ষতি করে না। সবাই খুব ভাল। তোমাকে নিয়ে যাব কয়েকদিন পর। আমার শহরে”।
রোজের চোখ ঘুমে ভারী হয়ে আসে। হাসানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গুড নাইট বলার অবকাশও পায় না।
রোজ এখন আর পুরুষদের ভয় পায় না। ও আর কিছুতেই ভয় পায় না। ওয়াশিংটন একটা স্বপ্নের শহর। সবাই খুব ভাল। সবাই রোজকে ভালবাসে। কেউ ওর ক্ষতি করতে চায় না। রোজ অনেক বড় হতে চায় এখন। চার বছর আগে নিজের নিরাপত্তার জন্য হাসানের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার কথা মনেই আসে না। হাসানকে ছাড়া জীবনটা কি হবে। আর জানতেও চায় না সে। জীবনটা অনেক সুন্দর।
কিন্তু কার জন্য কদাকার বিকট জীবনটা এত সুন্দর লাগে ওর? ভাবার মত কোন কারণই ঘটে নি।
রোজের চেহারা আর ফিগার দেখে এক টিভি সিরিজ নির্মাতার পছন্দ হয়ে যায় রোজকে। রোজ অভিনয় করতে রাজি হয়ে যায়। বাসায় গিয়ে হাসানকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে আনন্দ করে। ও এবার বিখ্যাত হবে। এক নামে ওকে সবাই চিনবে।
ওর আনন্দ দেখে হাসান হাসে।
হাসান এখন আর কোন কাজ করতে পারে না। তিন মাস রোজের শুটিং চলে। হাসান জানে রোজের ওকে ছাড়া এক মিনিটও চলে না। রেডিও স্টেশনের চাকরিটা ছেড়ে সারাদিন রোজের পাশে বসে থাকে। ।
সিরিজটা টিভিতে দেখানোর সাথে সাথে রোজের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। সবাই বলে এই মেয়ে হলিউডে অভিনয়ের যোগ্য।
স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করিয়ে ভয় আর তোতলামি দূর করিয়ে বাসায় বসে রিহার্সেলের সুফল ভেবে হাসান মনে মনে হাসে। ।
সিরিজের প্রথম সিজনের শেষপর্বের দিন, প্রযোজনা কোম্পানি একটা পার্টি দেয়। রোজ সেখানে যায়। হাসানকে পার্টির গেস্ট হিসেবে টিকেট দেওয়া হয়।
পার্টিতে যাবার পর রোজকে ঘিরে ধরে ওর ফ্যানরা। অটোগ্রাফের জন্য। হাসান দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে।
রোজকে মঞ্চে ডাকা হয় পার্টিতে ওর এই অভিনয় সম্পর্কে কিছু বলার জন্য।
রোজ ওকে সুযোগ দেওয়া পরিচালকের ভীষণ প্রশংসা করে। ওর সহ অভিনেতা দের সাপোর্ট এর প্রশংসা করে। সবাই হাততালি দেয়, বলে। এই মেয়ে বড় নায়িকা হবে।
হাসানের জায়গা রোজের ছোট ভাষণে ছিল না। হাসান কিছু মনে করে না।
হলিউডের এক পরিচালক তার সিনেমার জন্য রোজের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসে। রোজ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।
শেষপর্বের শুটিং শুরু হয়। ভালভাবেই কাহিনী শেষ হয়। কাহিনীর শেষে নায়ক নায়িকার কিস এর দৃশ্য আসে।
নায়ক রোজকে কিস করতে যেতেই হাসানের মাথায় আগুন ধরে যায়। মঞ্চে উঠে নায়ককে একটা ঘুষি দেয় হাসান।
হুলস্থূল কাণ্ড বেধে যায়। নায়ককে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সিকিউরিটিরা হাসানকে টানতে টানতে নিয়ে পুলিশে দিয়ে দেয়।
ওই রাতে রোজ ঝড়ের মত পুলিশ স্টেশনে ঢুকে। হাসান ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
রোজ রাগের চোটে চিৎকার করে বলে।”তুমি পেয়েছটা কি?? আমার শুটিং বরবাদ করে দিয়ে কি লাভ হল তোমার?”
হাসান বলল “অন্য কেউ তোমাকে ছোবে না আমার সামনে। আমি দেব না”
রোজ বলল “আমার জীবন আমি যেভাবে কাটাব। এই সিরিজ আমাকে জনপ্রিয় করেছে। এর জন্য আমি সব মেনে নিব”
হাসান বলল “তুমি আমার স্ত্রী। আমি তোমাকে অন্য পুরুষের ঘনিষ্ঠ হতে দেব না”
রোজ বলল “ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের বিয়েটা জাস্ট একটা কন্ট্রাক্ট ছিল। এতে তোমারো লাভ ছিল। আমারো। তুমিও তো আমাকে চার বছর পাওয়ার সৌভাগ্য নিয়েছ। আরো কি চাও?”
হাসান বাকরুদ্ধ হয়ে থাকল।
রোজ বলল “হলিউডে যেই মুভিটায় সাইন করেছি, ওটাতে তো সেক্স দৃশ্যও আছে। কি করবা তুমি?”
হাসান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। রোজ তখনো বলছে “তুমি এভাবে করলে তো আমি বড় হতে পারব না। গত চার বছরে তুমি আমার জন্য অনেক করেছ। তাই আজ তোমাকে পুলিশ থেকে ছাড়িয়ে নিলাম। তোমার আর আমার কন্ট্রাক্ট আজ থেকে শেষ। তোমার তো সম্ভবত কালকে গ্রাজুয়েশন। এখানে থাকার আর কোন দরকার নেই, গ্রিন কার্ডও লাগবে না। তুমি অফিসিয়ালি যদি চাও তো ডিভোর্স লেটার দিয়ে কন্ট্রাক্ট টা শেষ করে দেব”।
হাসান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল রোজের দিকে। মেয়েটা আগে উত্তেজিত হলে তোতলাতো। অনেক ওষুধ খাইয়ে, থেরাপি দিয়ে অবশেষে রোগটা সারে ওর। অনেক কথা বলতে শিখেছে এখন। আর তোতলায় না রাগ হলে। স্পষ্ট ভাবেই হাসানকে চলে যেতে বলল আগে। হাসানের চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। রোজ চলে যাবার আগে হাসান বলল।”অন্ধকারে ঘুমাতে পার না তো। মাথার কাছের জানালা টা খুলে দিও। ভয় করবে না আর”।
রোজ দাঁড়িয়ে পড়ল।
হাসান বলল “রাতে দুঃস্বপ্ন দেখ মাঝে মাঝে। বেডসাইড টেবিলে পানি আর বেনজোডায়াজেপিন রেখে দিও। ভয় পেলে উঠে খেয়ে নিও। ঘুম ভাল হবে।”
“রাতে ঘুম না আসলে আমার শহরের গল্পটা মনে কর। ওই গল্পটা বললে তোমার ঘুম চলে আসে তাড়াতাড়ি। আমার শহরটা নদীর পাড়ে। ওপারে সবুজ গ্রাম। রাতে গাড়ির হর্ন বাজে না। ভোরে ফজরের আযানের সাথে দোয়েলপাখি সুর তোলে”।
হাসানের গলা ধরে আসল। রোজ একবারও না ফিরে চলে গেল। শেষবারের মত ওর মুখটাও দেখতে দিল না হাসানকে।
পরের দিন প্লেনে চড়ে হাতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়ে হাসান বাংলাদেশে ফিরে চলল। পিছনে কোন যাত্রীর মোবাইলে একটা গান বাজতে লাগল।
“পারব না ছুতে, তবু স্বপ্নে এসে
বলব তুমি ভাল থেকো”
রোজ ওইদিন অনেক রাতে বাসায় ফিরল। কালকে আপত্তিকর ঘটনার পর, আজ শুটিংটা ভালমত শেষ হয়েছে। সেই হলিউডের পরিচালক বলেছে। প্রযোজক এর সাথে ওকে কথা বলিয়ে দেবে। হাসানকে বলা দরকার বিষয়টা।
ফ্লাটে ঢুকে রোজ দেখল পুরো ফ্লাটটা নিস্তব্ধ। বাইরের বাতাস জানালার পর্দা উড়িয়ে ভিতরে ঢুকছে। আর এক শূন্যতা সৃষ্টি করছে পুরো ঘরে।
রোজের ভিতরে কি যেন একটা ফাঁকা হয়ে গেল।
শুটিং শেষ। পরেরদিন আবার কলেজে যেতে হবে। কিন্তু ওই রাতে মোটেও ঘুম আসল না রোজের। এক ফোটাও না।
সকালের দিকে ভাবল। ৪ বছরের অভ্যাস তো। কাজে ব্যস্ত হলেই ঠিক হয়ে যাবে।
পরেরদিন কলেজ এ সবাই ওকে ওর টিভি সিরিজের জন্য কংগ্রাচুলেশনস দিল। ওকে দাঁড়িয়ে সম্মান দিল। খুশিতে মন ভরে উঠল রোজের। হাসানকে বলতে হবে।
ওইদিন কলেজের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে নি। খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ওর গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার আগেই কেউ ছাতা ধরে নি। নিজে বৃষ্টিতে ভিজে ওকে শুকনো রেখে কেউ আর এগিয়ে আসে নি।
৫ মিনিট অবাক হয়ে থাকার পর রোজ বুঝল। ওর জন্য দাঁড়িয়ে আর কেউ কখনো থাকবে না।
রোজ আজো ঘুমাতে পারে নি। আজ একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে। সেই হলিউডের পরিচালক কেমন লোভী দৃষ্টিতে ওকে ধরতে আসছে। রোজ চিৎকার করে উঠল।
কেউ পিঠে আলতোভাবে চাপড় দিয়ে বলল না।”আমি আছি”
পরের দিনই সেই পরিচালক ওকে ডাকল প্রযোজকের এজেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। ওকে পরার জন্য দামি একটা ড্রেস পাঠাল। হলিউডে টিভি সিরিজের মত শার্ট প্যান্ট পরলে হয় না।
রোজ দেখল দামি জামাটা পড়লে ওর শরীরের প্রায় সবকিছুই দেখা যায়। জীবনে ও এই টাইপের কিছু পরে নি। মাত্র আঠারো বছরেই মুসলিমের সাথে বিয়ে হবার জন্য এক্সোটিক ড্রেস পরার সুযোগ হয়নি। এখন সে বুঝছে হাসান কেন এগুলো পড়তে দিত না। এগুলো পড়া যে স্মার্টনেসের পরিচায়ক সেটা কেবল মুভিতেই দেখা যায়। এমনকি আমেরিকার রাস্তায়ও এসব পরে বের হওয়া লজ্জার বিষয়।
লজ্জায় লাল হয়ে ওই ড্রেস পরেই রোজ রওনা হল। কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌছে গেল।
ঢোকার পড়েই সে দেখল তিন জন লোক বসা। পরিচালক সহ আরো দুইজন।
কথা বলা শুরু হল কন্ট্রাক্ট এর ব্যাপারে। রোজ দেখল প্রত্যেকটা লোক ওর বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে আড়ালেরও কোন উপায় নেই।
হঠাৎ একজন বলে উঠল “মুভিতে অভিনয় করতে হলে আগে কি করতে হয় জানেন তো?”
রোজ তাকিয়ে রইল। লোকটা এক গ্লাস ওয়াইন খেয়ে ওর কাছে আসল। এসে ওর গালে হাত দিল।
এক ঝলক আলোর মত ৪ বছর আগের এক ভয়ংকর স্মৃতি রোজের মমে পড়ে গেল। ওর সৎবাবা মদ খেয়ে ওর দিকে আসছে। ওকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করছে। রোজ চোখে আংগুল ঢুকিয়ে পালিয়েছিল সেদিন।
গত চার বছরে পুরুষের প্রতি হারিয়ে যাওয়া তীব্র ভয়টা আরো ৫ গুণ হয়ে আজ ফিরে আসল।
চিৎকার দিয়ে ওই লোককে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে গেল রোজ। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। অন্ধকার গলি থেকে আরো তিনটা বখাটে মাতাল বের হয়ে এল। ভয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল রোজের। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকল।
পুলিশের গাড়ির তীব্র আলো এসে পড়ল। পুলিশ রোজকে বাড়ি পৌছে দিল। পুলিশের লোকটা অবাক হয়ে শুনছিল। মেয়েটা আজব একটা নাম জপছে।”হাসান, হাসান।”
ওই রাতে রোজের প্রচুর জ্বর এল। বৃষ্টির জন্য বাইরের লাইট বন্ধ। ঘর অন্ধকার।
অন্ধকার, দুঃস্বপ্ন আর পুরুষের ভয়ে কুকড়ে আছে সে।
“আমাকে বাঁচাও হাসান।” কথাটা বলতে অনেক কষ্ট হল তার। তোতলামি ফিরে এসেছে।
রোজ শহরের কথা ভাব্ল। হাসানের শহর। নদীর পাড়ের শহর। ওপাশে সবুজ গ্রাম। রাতে গাড়ির হর্ন শোনা যায় না। সকালে ঘুম ভাঙে ফজরের আজান আর দোয়েল পাখির সুরের মিষ্টি কম্বিনেশন এ।
রোজ ঘুমিয়ে গেল। হাসান স্বপ্নে এসে বলল “ভাল থেক”
আর সহ্য করতে পারল না রোজ। মাত্র তিন দিন, মাত্র তিন দিন পারল না হাসানকে ছাড়া থাকতে। আজ ও বোঝে কতটা ভালবাসে হাসানকে। হাসানকে খুজতে যাবে সে। বাংলাদেশে যাবে।

সাত দিন পর রোজ প্লেনে চড়ল। এসব জিনিস ও ভাল বোঝে না, পাসপোর্ট ভিসা, টিকেট। হাসানই এগুলো করত। ওকে আগলে রাখত বাইরের কষ্ট থেকে। আজ ওকে খুজতে যাচ্ছে সে। বাংলাদেশে।
এয়ারপোর্ট থেকে নামল রোজ। জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এটা ঢাকার এয়ারপোর্ট এর আগের নাম। কিন্তু বিদেশে এখনো এই নামেই এটাকে চেনে সবাই।
কিভাবে খুজবে হাসানকে? কাকে জিজ্ঞেস করবে?
একটা লোককে সে জিজ্ঞেস করল। “আচ্ছা, এই শহরটা কোথায় বলেন তো? নদীর পাড়ে। ওপাশে সবুজ গ্রাম। রাতে গাড়ির হর্ন বাজে না। ফজরের আজান আর দোয়েলপাখির গানের কম্বিনেশনে ঘুম ভাঙে।”
লোকটা ইংলিশ জানে না। সুন্দরি সাদা চামড়ার মেয়ে প্রশ্ন করছে দেখে। অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।
দেখতে দেখতে ওকে ঘিরে ভিড় হয়ে গেল।
রোজ কে চিড়িয়াখানার পশু মনে করতে লাগল যেন সবাই। বিরক্ত হয়ে ও চলে আসল।
আরো অনেককে সেই শহরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল রোজ। কেউই বলতে পারল না। বাংলাদেশের লোকেরা তো সুন্দরিরা কথা বললে এমনিই ফ্লার্ট শুরু করে। এতো আবার বিদেশি।
আমেরিকায় পুরুষদের দেখে ভয় করত। এখানে নির্লজ্জ আচরণ দেখে ঘৃণা করতে লাগল রোজ।
কিছু কিছু লোককে সে পেল যে হাসানের মত। মেয়েদের সাথে কথা বলতে আনইজি ফিল করে। চোখের দিক তাকিয়ে কথা বলে না। তাদের অনেকে আবার ইংলিশ বোঝে না। যারা বোঝে। তার শুধু বলে। অনেক শহরই তো বাংলাদেশে এমন। ।
পুরুষদের কাছে সুবিধা করতে না পেরে এবার মেয়েদের জিজ্ঞেস করা শুরু করল রোজ। প্রথমে গরীব, কাল দেখতে মেয়েদের জিজ্ঞেস করল। কেউ কেউ ইংরেজি বোঝে না বলে হা হয়ে থাকল। কেউ কেউ ভদ্রভাবে বলল। জানে না।
স্টাইলিশ কিছু মেয়েদের জিজ্ঞেস করল। এদের ড্রেস অনেকটা হলিউডের নির্লজ্জ মডেলদের মত। এরা কেমন করে যেন ট কে ঠ। প কে ফ বলে উচ্চারণ করে। অনেকটা ইংরেজ দের মত। এরা নিশ্চয়ই জানবে। রোজ অনেক আশা নিয়ে এদের জিজ্ঞেস করে। এরা বলে। “I is not know” ইংরেজি বাক্য শুনে রোজ নিজেই ইংরেজি ভুলে যায়।
রোজ কিছু মেয়েদের দেখে, মাথায় কাপড় দেওয়া, বাইরে থেকে দেহ বোঝা যায় না। এমন মেয়েদের। একবার হাসান বলেছিল। এসব মেয়েদের ভাল লাগে ওর। রোজ এদের একজনকে জিজ্ঞেস করল। ।
রোজকে সে বলল “এরকম তো অসংখ্য শহর আছে এদেশে। নাম, জেলা না বললে কিভাবে হেল্প করব। তবে এ শহর ঢাকা না। এটা শিওর।”
রোজ বলল। “তাহলে আমি এখন কি করব?”
মেয়েটা বলল।“কাকে খুজছেন আপনি?”
রোজ বলল, “আমার স্বামীকে।”
রোজ কিছুক্ষণ বজ্রাহতের মত দাঁড়িয়ে থাকল। ১৬ কোটি মানুষ এদেশে। কোথায় খুজবে হাসানকে?
এক রাত ঢাকায় থেকেই বুঝল। হাসান কখনোই ঢাকায় থাকত না।
বাংলাদেশে নয়টা বিভাগীয় শহর আছে। এরমধ্যে ঢাকা বাদ। বাকি আটটা শহরে গিয়ে খুজবে রোজ। এভাবে না পেলে চৌষট্টি জেলা শহর। তারপরও না পেলে উপজেলা শহরে খুঁজবে সে। হাসানকে পেতেই হবে। ।
হাসানের কিছু ছবি ছিল রোজের মোবাইলে। রোজ ভাবল এই ছবি পেপারে দিবে কিনা।
রোজ পত্রিকা অফিসে খোজ নিতে লাগল। বিজ্ঞাপন এর জন্য। হঠাৎ মনে পড়ল। হাসান পেপার পড়ে না। কেন পড়ে না সেটা ঠিকমত বলে নি কখনো। তাতেও বা কি। ওর পরিচিত কেউ হয়ত ওকে চিনে বলবে।
প্রত্যেকটা জাতীয় পত্রিকায় হাসানের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিল রোজ। ইংলিশ পত্রিকায় মূলত। কারণ বাংলা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন অংশের লোকগুলো ইংলিশ বোঝে না। হাসান একবার ওকে একটা কাহিনী বলেছিল। তাসকিন নামক এক বাংলাদেশি ক্রিকেটার কে ষড়যন্ত্র করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বিসিবি এর বিরুদ্ধে আপিল করায় আপিলের রায় হয় “ICC uphelds the decision of banning Taskin” এর মানে হচ্ছে “তাসকিনের নিষিদ্ধ হওয়ার নির্দেশ বহাল রাখল আই.সি.সি।”
কিন্তু হাস্যকরভাবে প্রত্যেকটা বাংলাদেশি চ্যানেল সেই এই অনুবাদ করে ব্রেকিং নিউজ দেয় যে, “তাসকিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল আই.সি.সি”
এই কথা মনে পড়ার পর। বাংলা দৈনিকে ছবি ছাপানোর সাহস হল না রোজের।
টিভিতে কোন চ্যানেলই এই সন্ধান বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে চাইল না। একজন তো বলেই বসল, “ম্যাডাম। আপনি বরং ভারতে গিয়ে স্টার জলসায় এই বিজ্ঞপ্তি দেন। বাংলাদেশের কেউ বাংলাদেশি চ্যানেল দেখে না। ভারতীয় চ্যানেল দেখে।”
রোজ বুঝল। নিজেকেই সশরীরে গিয়ে খুজতে হবে হাসানকে।
রোজের যাত্রা শুরু হল। কত শহর ঘুরল। কত মানুষ দেখল। হাসানকে দেখল না। দিন যায়, মাস যায়। হাসানের দেখা পায় না। চোখের নিচে কালি জমে গেল। স্বাস্থ্য ভেঙে গেল।
একবার কে একজন বলছিল। “আপনি বরিশালে গিয়ে দেখতে পারেন। ঐ শহরটা হুবহু এরকম।” বাকিরা সভয়ে বলল। “খবরদার। ওখানে যাবেন না। বরিশালের মানুষ বাংলাদেশের সবচেয়ে খারাপ”
বাংলাদেশের অনেক রূপ ততদিনে রোজের দেখা হয়ে গেছে। হাসান ওকে একজোড়া কানের দুল দিয়েছিল আমেরিকায় বসে। অনেক শখ করে রোজ ওটা দিত। সেদিন এক শহরে দিনের আলোয় ছাত্রের মত দেখতে কিছু ছেলে ওর কান থেকে টান দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেগুলো। কেউ কিছু বলে নি। ওর কান কেটে গিয়েছিল। ও যন্ত্রণায় বসে পড়েছিল। কেউ হাসপাতালেও নিয়ে যায়নি। সার্কাস দেখছিল। বরিশালের মানুষ এর চেয়েও খারাপ?
রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই। হাসান তো খারাপ না। । ও ওখানে থাকবে না।
ছয় মাস ধরে বাংলাদেশের তিনশ শহর ঘুরে ঘুরে খুজল রোজ। পেল না হাসানকে।
তবে অনেক শিক্ষা সে পেল। দুশ্চরিত্র লম্পট সবদেশেই আছে।
একবার একজনকে হাসানের ছবি দেখানোর পর সে বলেছিল। “হ্যা চিনি তো”
অনেক আশা নিয়ে রোজ গিয়েছিল ওর পিছন পিছন। কিন্তু অন্ধকার এক গলির মধ্যে যাচ্ছে বলে পুরনো ভয় ওর ফিরে আসছিল। কে যেন মানা করছিল, যেও না। ও আসলেই গেল না। পিছে হাটতে শুরু করল। হঠাৎ দেখল। ওই গলি থেকে সেই লোকটা আরোর ৪ জনকে নিয়ে বের হয়ে ওকে ধাওয়া করল। অনেক কষ্টে দৌড়ে বেঁচেছিল সে।
ছয় মাস চলে গেল রোজ বাংলাদেশে। তার আমেরিকার অ্যাকাউন্টের টাকা আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ হাসানের সন্ধান দিবে বলে ঠকিয়ে টাকা নিচ্ছে। হোটেলওয়ালা বিদেশি পেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে। কয়েকবার ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে।
এর মধ্যে আবার একদিন বান্দরবন এ খুজতে গেল হাসানকে। ম্যালেরিয়া বাধিয়ে আসল। চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হল। জ্বর কমে না। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। দুর্বল হয়ে স্টেশনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে। বিদেশি বলে মানুষ কুরবানির গরুর মত দেখে। তারপর চলে যায়। রাতে হুশ ফিরলে। কোন রকম আড়ালে চলে যায়। যেন কেউ না দেখে। একদিন পাব্লিক টয়লেটের ছাদেও ঘুমাতে হয়েছিল।
হঠাৎ একদিন চশমাপরা, কলেজপড়ুয়া এক ছেলেকে দেখল সে। এ অন্যদের মত ড্যাবড্যাব করে তাকাচ্ছে না। পরিচিত লাগছে বলে তাকাচ্ছে। ছেলেটার নাম হাসান।
সে বলল “আচ্ছা আপনাকে দেখতে রোজ উইন্টারের মত লাগে। ওই যে একটা টিভি সিরিজ করে হিট হয়ে গিয়েছিলেন ওয়াশিংটন এ”
রোজ দুর্বল কণ্ঠে বলল। “হ্যা আমি ই রোজ”
হাসান বলল। “আমি হাসান। আমি ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। আমি আপনার সব পর্ব দেখেছি। এমনকি এত ভাল লেগেছে। ইউটিউবে আপনার শুটিংয়ের দৃশ্যও দেখেছি। আপনার সাথে সাথে সবসময় একটা ছেলে ঘুরত। অনেকটা বাংলাদেশিদের মত দেখতে।”
রোজ ককিয়ে উঠে বলল “ও আমার স্বামী। ওকে খুজতেই আমি এদেশে এসেছি। ছয় মাস ধরে খুজছি। পাচ্ছি না”
হাসান বলল “আপনি আমার সাথে চলেন। আমি আপনাকে সাহায্য করব”
রোজ ছেলেটাকে দেখেই বুঝেছিল, ছেলেটা নিষ্পাপ। ও ওর সাথে গেল। হাসানের বাসায় শুধু ওর মা থাকে। ও কয়েকদিন ওখানে থাকল।
হাসান হাসানের ছবি ফেসবুকে দিয়ে রোজের মুখ থেকে শোনা পুরো কাহিনী লিখে পোস্ট দিল। পোস্টের অনেক শেয়ার হল। অনলাইন পত্রিকায় নিউজ হল।
অবশেষে হাসান আহমেদের খোজ পাওয়া গেল। সে বরিশালে থাকে।
হাসানকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে ওই দিনই রোজ বরিশালের দিক রওনা দিল। বাস পথে নষ্ট হল। একটা ট্রাক ওকে লিফট দিল। ঈদের সিজন। বাস পাওয়া দুষ্কর। একটা কাপল ওর সাথে ট্রাকের পিছনে বসল। হাজবেন্ডটা ওয়াইফকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। যেন শীত না করে। ভয় না লাগে। রোজ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ওইদিক। । হাসানের কথা মনে পড়ল। জোরে বৃষ্টি নামল। ওকে ভিজিয়ে দিল। কাপলটাকেও। হাজবেন্ডটা নিজে ভিজে ছাতা ধরে রাখল বউয়ের মাথায়। রোজ এর বুক টা হু হু করে উঠল। কোথা থেকে কার মোবাইলে যেন গান বাজছে।
“তুমি আমায় ডেকেছিলে কোন মেঘেডাকা ভোরে
কেন আমি দেই নি সাড়া।
আমার চোখে আকাশ দেখে তুমি বলেছিলে কিছু
বুঝিনি কেন সেই ইশারা।
এখন আমি অন্য আমি হয়ে খুজে ফিরি তোমার শহরে
হারিয়ে চোখের যত ঘুম।”
**********************
হাসান আহমেদ কীর্তনখোলা নদীর পারে প্রতিদিন বসে থাকে। নদীর পানি দেখে। দাড়ি আর গজাতে দেয় নি সে। ধর্মের বিরুদ্ধে হলেও। । হয়ত একদিন রোজ আসবে। ওকে চিনবে।
মুক্তিযোদ্ধা পার্কে রোজ ঢুকলে। বুকের মধ্যে অজানা কারণে হৃদপিন্ডটা লাফাচ্ছে। হয়ত। খুব পরিচিত কারো উপস্থিতি টের পেয়েছে। অনেক পরিচিত কারো। ।
মুক্তিযোদ্ধা পার্কের শেষ বেঞ্চে বসে থাকা একজন কে দেখে সশব্দে হাত থেকে লাগেজ পড়ে গেল রোজের।
হাসান ঘুরে তাকাল। চোখ বড় করে তাকিয়ে রইল। নিচের ঠোটটা থরথর করে কাপতে লাগল।
রোজের চোখে পানি এসে গেল। হাসানের কাছ থেকে শেখা ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলল “তোর শহরে এলাম রে। তোর শহরে এলাম।”

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৪৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভ ব্লগিং। পরে পড়ে কমেন্ট করছি।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫৩

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৪৯

সনেট কবি বলেছেন: গল্পটা বেশ ভাল লিখেছেন। সুখ পাঠ্য অবশ্যই। আরো লিখবেন। বিভিন্ন পোষ্টে মন্তব্য করবেন। হয়ত সেই সুবাদে কেউ কেউ আপনার পোষ্ট পড়বে। এরপর মডু আপনার লেখা পছন্দ করলে আপনি প্রথম পাতা পাবেন।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৭:৫০

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার দিকনির্দেশনামূলক মন্তব্যের জন্য।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:২১

টারজান০০০০৭ বলেছেন: পিরিত কাহিনীতে আমার এলার্জি আছে !তবুও পড়িলাম ! চালায়া যান ! শুভ ব্লগিং !

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: তিনটি সেপারেট ঘটনা, একটি পোষ্টে না দিয়ে পৃথক ভাবে দিলে বোধহয় ভালো হত। ১ - প্রসঙ্গে, দিল্লিতে তখন বিজেপির নেতৃত্বে এন ডি এ সরকার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফান্ডান্ডেজ। বিদেশ সফরে আমেরিকায় যেতে হয়েছিল, সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় হয়েছিল, ওনাকে ওদেশে এরকম ন্যাকেড করে চেক করা হয়েছিল। শাহরুখ খানের ' মাই নেম ইজ খান ' ফিল্মটা দেখতে পারেন। সিনেমা মানেতো যেটা ঘটে তারই একটি সাজানো গোছানো রূপ।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ২ - প্রসঙ্গে, কন্ট্রাক্ট বিয়ে নিয়েও বেশ কিছু হিন্দি বাংলা ফিল্ম হয়েছে। তবে আপনার লেখনির গুনে হাসান রোজের সম্পর্কটা বেশ সুখপাঠ্য হয়েছে।

শুভকামনা রইল।

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৩৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: এতবড় পোষ্ট পড়তে ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় নিল, যেখানে প্রত্যেকটি গল্প আলাদাভাবে কমেন্টের দাবি রাখে। আপনি সেফ হলে একেকটি পর্বকে আলাদাভাবে রিপোষ্ট করতে পারেন । পোষ্ট প্রসঙ্গে, রোজ আমেরিকা ছেড়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। একেতো বিদেশী ভাষা সমস্যা প্রবল, তার উপর অজানা পরেবেশে এক হাসানের মাধ্যমে আরেক হাসানকে খুঁজে দেওয়াটা যেন বড্ড তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। অথচ এখানেও একদল নেকড়ের সামনে ফেলার সুযোগ ছিল। বিজ্ঞাপন দিয়ে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়ে রোগব্যাধিতে জেরবার হয়ে যখন একপ্রকার হাল ছাড়তে বসেছিলেন তখনই কাকতালীয় ভাবে হাসানের সঙ্গে সাক্ষাতটা দেখালে বোধহয় আরও জীবন্ত হয়ে উঠতো। যাইহোক সুন্দর গল্প পড়লাম। এবার আপনিও আমাকে তুলোধোনা করতে আমার ব্লগে আসবেন আশাকরি । পাশাপাশি আরও বেশি বেশি অন্যন্য ব্লগারদের পোষ্টে কমেন্ট করুন, তাঁদেরকে আপনার ব্লগে আমন্ত্রণ করুন, খুব শীঘ্রই সেফ হবেন আশাকরি ।


শুভকামনা রইল।



১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:১২

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সাবলীল বক্তব্যের মাধ্যমে লেখার ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। কথাপ্রসঙ্গে আমি লেখালেখিতে একদমই নতুন, এটাই আমার প্রথম গল্প। তাই অনেক ভুলই হয়েছে। আশা রাখি ধীরে ধীরে ভুলগুলো কাটিয়ে ওঠতে পারবো।

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



শুভ ব্লগিং...........................................

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৬

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপনি যেহেতু নুতন তাই বলছি, খারাপভাবে নেবেননা। আমারই তিনটি কমেন্ট আছে। তার উপরে প্রিয়টারজানভায়ের মন্তব্য আছে। কমেন্ট ডিঙিয়ে প্রতিমন্তব্য করাটা সমীচীন নয়। আপনার সময় না থাকলে পরে উত্তর দিয়েন। পাশাপাশি প্রত্যেকটা কমেন্টের প্রতিমন্তব্য কাম্য। এতে আপনার নিজেরই ব্লগিং স্পিরিট তৈরী হবে। মডুরাও বিষয়টি নজরে রাখে যার পরিপ্রেক্ষিতিতে আপনার সেফ হওয়া নির্ভর করে।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: এ ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

৯| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:

হ্যাপি ব্লগিং....@

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ

১০| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৩০

ভাইয়ু বলেছেন: সামুতে স্বাগতম ৷
লেখালিখি চলুক অবরাম ৷
শুভকামনা রইলো...

১৫ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৫

মোহাইমিনুল ইসলাম খান বলেছেন: ধন্যবাদ

১১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:১১

রেজওয়ান তানিম বলেছেন: পড়লাম আপনার গল্প। কাহিনীর বিস্তার খারাপ লাগল না, তবে গল্প অতি নাটকীয়। মেজাজ হারানোর সংখ্যাও একটু বেশিই, যেখানে আগে থেকেই তাকে একরকম নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.