নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধুনিকতার দখিনা বাতাসে সমাজবিমুখ আমি\nএখনো খুলে রাখি বোধের উত্তর জানালা\nসেই উত্তুরে বাতাসে আমার ঘরের ত্রিমাত্রিক শূন্যতায়\nভেসে বেড়ায় আমার দুই মাত্রার কাগুজে চিন্তা

ঊনআশি

ঊনআশি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশৃঙ্খলার শৃঙ্খলে বাঁধা

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০২

বন্ধু হিসেবে আমি খুবই বিরক্তিকর তবে তার থেকেও বিরক্তিকর সত্য হচ্ছে আমারও একজন বন্ধু ছিলো; মানে এখনো আছে; আর ভবিষ্যতেও থাকবে (ও ব্যাটা না থাকতে চাইলেও ওকে থাকতে হবে)।

তার সাথে আমার পরিচয় স্কুলে পড়ার সময়। সময়টা সম্ভবত ক্লাস ফোরে। সে বছর স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দৌড়ের ইভেন্টে। বাশি বাজা মাত্র যেই না দৌড় শুরু করলাম কিছুদুর যেতে না যেতেই দেখি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। ব্যাটা বদমাশ টা ল্যাং মেরেছে। ব্যাটা আমাকে চিনিস না জানিস না ল্যাং মেরে দিবি! আমি উঠে দারিয়ে দিলাম এক ধাক্কা। দুজনেই একে অপরকে দেখে নিবো টাইপের অগ্নিদৃষ্টি দিতে দিতে প্রতিযোগিতার বাইরে। ও তখন আমার চেয়ে লম্বা ছিলো। আর আমি যথারীতি ওর চেয়ে মোটা।

অতঃপর তার সাথে দেখা হলো স্কাউটিং করতে গিয়ে। তখনো বন্ধুত্ব বলে কিছু গড়ে ওঠেনি। হঠাত একদিন জানতে পারলাম কাব ক্যাম্পুরী হবে গাজীপুরের মৌচাকে। আইডিয়াল থেকে মাত্র ৬ জনের একটা দল যাবে।কিন্তু আমরা প্রায় ৮-১০ জন মতো যেতে ইচ্ছুক। বাশার স্যার তার রুমে ডাকলেন সবাইকে। আমাদের জানানো হলো ওখানে অনেক কষ্ট। থাকা খাওয়ার কষ্ট তো আছেই আসল কষ্ট টয়লেটের। একথা শুনে আমাদের মধ্যে যারা একটু বেশি ত্যাগী প্রকৃতির (!) তারা রণে ভঙ্গ দিলো। রইলো বাকি ছয়। আমি, আমার সেই তখনো না হওয়া বন্ধুবর, শাকির, হিমেল, রাজিব (ভালো রাজিব আরকি) আর আমাদের সেই বয়সে মাসুদ রানা পড়া রুম্মান।

সেই কাব ক্যাম্পুরির কয়েকটা দিন ছিলো জীবনের অন্যতম আনন্দের কয়েকটা দিন। আমাদের বিভিন্ন অবস্ট্যাকেলস অতিক্রম করতে হতো আর বিনিময়ে একটা করে স্টিকার লাগতো সার্টিফিকেটে। মনে আছে টারজান সুইং এ হিমেল দড়ি ধরে ঝুলে পুকুরের ঐ পাড়ে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু নামতে পারেনি। ফলে পুকুরের মাঝখানে এসে ঝুলছিল। আমাদের বিকট হাসি তখন দেখে কে। পরে বেচারা কে বাঁশ দিয়ে ঠেলে অন্য পাড়ে নেওয়া হয়েছিলো। বাঁশ দিয়ে ঠিক কোন জায়গায় ঠেলা হয়েছিলো তা নাহয় নাই বললাম! তবে বেচারা হিমেলের চেহারা দেখার মতো হয়েছিলো।

সেই কাব ক্যাম্পুরির কয়েকটা দিনে আমার সেই ল্যাং মারা শত্রুটা কেমন জেনো বন্ধু হয়ে গেলো।

এরপর চলতে লাগলো সেই বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকা। আমি ছিলাম সেকশন ৬ এ। ও ছিলো সম্ভবত ৮ এ। প্রতিদিন টিফিন পিরিয়ডে দেখা করা। একসাথে নামাজ পড়তে যাওয়া। ছুটির পর দেখা করা। ও আমার এমনি বন্ধু ছিলো যে ওর বাসা শাহজাহানপুর হওয়া সত্তেও ও আমার সাথে বাসাবো ওভারব্রিজ পর্যন্ত যেতো মাঝে মাঝেই। অবশ্য আমাদের গ্রুপের অনেকেই বাসাবো থাকতাম।সেটাও একটা কারণ ছিলো। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো রাজিব। আমার জীবনে আমি ওইটার মতো পাজি ছেলে দেখি নাই। তো আস্তে আস্তে আমাদের এই তিন জনের বন্ধুত্ব জমাট বাধতে লাগলো।

তিনজনের বন্ধুত্বের একটা মজা হলো সেখানে সবসময় দুই জন মিলে একজন কে পচানো হয়। তবে সেই একজন কিন্তু পরিবর্তনশীল! আমরা তিনজন বাসাবোর রাস্তায় যতো ঘন্টা আড্ডা দিয়েছি আর একে অপরের পিছে দৌড়িয়ে বেরিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। ক্লাস নাইনে উঠে আমি নিলাম সাইন্স। ওরা দুইজন নিলো কমার্স। ছুটির পরে একসাথে যখন বাসায় ফিরতাম কলোনির মধ্য দিয়ে হাটতে হাটতে তখন ওরা গল্প করতো 'জাবেদা' নিয়ে। আমি ভাবতাম ওদের সাথে একাউন্টিং পরে এমন কোনো মেয়ের নাম বোধহয়। তখন কে জানতো যে ওরা নয় একদিন আমাকেই পড়তে হবে একাউন্টিং এর মতো জঘন্য এই সাবজেক্ট! রাজিবের দেওয়া আমাদের তিনজনের নাম ছিলো এমন - রাজিব যথারীতি সর্বোচ্চ সুবিগাভোগী হিসাবে নিজের নাম দিলো সিন্দবাদ; স্বাস্থ্য বিবেচনায় আমি ডুবার আর বর্ণ বিবেচনায় আমার সেই বন্ধু রঙ্গার!

আমাদের বন্ধুত্ব আরো প্রগাঢ় হলো খেলার মাঠে। সপ্তাহে শুধু বৃহস্পতিবারই আমরা স্কুল ছুটির পর খেলার সুযোগ পেতাম। আবার ঐ দিনই থাকতো স্কাউটিং ক্লাস। ধীরে ধীরে স্কাউটিং ছেড়ে খেলার দিকে ঝুকলাম দুইজনই। যদিও ও ব্যাটা স্কাউটিং এও প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড পাওয়া! নাইনে উঠে নির্মান স্কুল ক্রিকেটে স্কুল টিমে প্র‍্যাক্টিস শুরু করলাম। আমি করতাম অফস্পিন। আর আমার বন্ধু ছিলো বা হাতি ব্যাটসম্যান প্লাস পার্ট টাইম চাকার আই মিন চাক্কা বোলার। মাঝে মাঝে কিপিং ও করতো। যাই হোক অবশেষে এস এস সি পাশ করলাম। রেসাল্টের দিন একটা মজার ঘটনা। আমার রেসাল্ট শুনে আমার বন্ধুদের চেহারা দেখে বুঝলাম যে আমার রেসাল্ট বোধহয় আশানুরুপ হয়নি। আমার অবশ্য কখনোই নিজেকে নিয়ে খুব একটা আশা ছিলো না এট লিস্ট রেসাল্টের ব্যাপারে। এর কারন ক্লাস টেন এ এক স্যার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো যে রেসাল্ট কিছু নয়, বেসিক টাই হলো আসল কথা। তো আমিও সেই বিপ্লবি চিন্তায় বেসিক নিয়ে যতোটা না ব্যস্ত হলাম তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত হলাম রেসাল্ট নামক অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। তবু রেসাল্টের দিন বন্ধুদের চাহনি দেখে মনে হলো এই অবস্থায় বাসায় কিঞ্চিত দেরি করে যাওয়াটাই শ্রেয়। তাই আমার সেই বন্ধুবরকে নিয়ে আশে পাশেরর স্কুলের রেসাল্ট সার্ভে করতে বের হলাম। ভিকারুন্নেসা নামক একখানা স্কুলেও কিঞ্চিত ঢুঁ মেরেছিলাম বলে মনে পরে। রেসাল্ট দেখতে অন্য কিছু দেখতে নয়। ও বলতে ভুলে গিয়েছিলাম.... ক্লাস টেনে থাকতে হঠাত আমার বন্ধুর মনের আকাশে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিলো যে বৃষ্টির জলে আমার বন্ধু এর পরেও সিক্ত ছিলো অনেকদিন।

এরপর আমাদের বন্ধুত্বের সুতোয় প্রথম টান পড়লো। ও ভর্তি হলো মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজে। আর আমি নটর ডেমে। দেখা হওয়া অনেক কমে গেলো। অবশেষে ঠিক করলাম কমন কোনো সাব্জেক্ট প্রাইভেট পড়ি তাহলে দেখা হবে। বাংলা পড়তে শুরু করলাম তত্ত্ব নামের এক কোচিং এ।ওখানে একটা পাগল মেয়ের পাল্লায় পরেছিলাম আমরা দুই জন। ডেঞ্জারাস মেয়ে। সুইসাইডাল টেন্ডেন্সির। যা হোক মাস দুয়েক পড়ে আর পড়া হয়নি। আমার বন্ধুর বন্ধুত্বের পরিধি বাড়তে লাগলো। আমি অবশ্য যথারীতি একা একাই চলতে লাগলাম।

এইচ এস সি তে পরার সময় এবং এর পরেও অনেকদিন আমরা রেলওয়ে কলোনী তে ক্রিকেট খেলতাম প্রায় প্রতি বিকেলে। সন্ধায় হোটেলে পুরি আর আড্ডা। এমন ও হয়েছে রাজারবাগ মোড়ে একটানা দাঁড়িয়ে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা একটানা গল্প। তারপর দুইজন দুই দিকে বাসার পথে। ও তখন থাকতো নয়া পল্টনে। দুইজনের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক চিন্তা। আমরা দুইজন রাজশাহী তে পরীক্ষা দিতে গেলাম। আমি তখন ঠিক করে ফেলেছি যে বিজনেস স্টাডিসে পড়বো। আমার চান্স হলো ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এ আর বন্ধুবরের হলো একাউন্টিং এ। কয়েকদিন পর ঢাকা ইউনিভার্সিটির ঘ ইউনিটের রেসাল্ট দিলো। এবার আমার হলো একাউন্টিং এ। আমার বন্ধু গ ইউনিটে একাউন্টিং এ অত্যন্ত ভালো রেসাল্ট করলেও অন্যান্য সাব্জেক্টে খারাপ করায় সেইবার টিকলো না। অথচ আমি এখনো বলি যে আমার চেয়ে বেশি ও ডিসার্ভ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটির একাউন্টিং এ পড়ার। এতোদিনে ও শিওর সিএ হয়ে বের হতো। কারন ও লেখা পড়ায় একদম সময় দিতো না কিন্তু একাউন্টিং খুবই ভালো বুঝতো। আমি অবশ্য ওর ভরসাতেই একাউন্টিং এ ভর্তি হয়েছিলাম। ও ভর্তি হলো জগন্নাথে একাউন্টিং এ। আর পরের বার ঢাকা ইউনিভার্সিটির ব্যাংকিং এ। (আমার বন্ধু রাজশাহী ছেড়ে আসার দুটো কারণ ছিলো। প্রথমত আমি ছেড়ে আসছি। অন্য কারণ টি বেশ মজার। তার মতে রাজশাহী একটা শহর হলো নাকি। রিকশা করেই যদি পুরো শহর ঘুরে ফেলা যায় তবে এমন ছোট শহরে তার মতো ইবনে বতুতা টাইপ ভ্রমণপ্রিয় মানুষের নাকি থাকা সম্ভব না!)

এক বছর পর থেকেই আবার কাছাকাছি আসা। পাশাপাশি বিল্ডিং এ ক্লাস। তবে আমি থার্ড ইয়ারে গ্রামীন ফোনে পার্ট টাইম একটা জবে জয়েন করায় ভার্সিটিতে গেস্টের মতো আসতাম আর যেতাম। প্রায় রোবোট হয়ে গেলাম। আবার দেখা হওয়া কমে গেলো। তারপর আমি বেছে নিলাম ঢাকা ব্যাংকের দাসত্ব আর কিছুদিন পর ওকে বেঁধে নিলো ব্যাংক এশিয়া। কিছুদিন পর সে চলে গেলো চিটাগং। আবার দুরত্ব। আবার আসলো ঢাকায়। ওর বন্ধু এবং অবশ্যই বান্ধবীর সংখ্যা তখন হাতে হিসাব করা যায় না। ক্যাল্কুলেটরের ব্যাটারি খরচ করে করতে হয়। তাই ওকে সবসময় নক করি না। আমি এমনিতেই কমিউনিকেশন স্কিলে খুব দূর্বল।সেটা আমার বন্ধু জানতো। তাই ওই যোগাযোগ করতো। রাগ ও দেখাতো মাঝে মাঝে। আর আমি যখন দেখতাম যে ওর অনেক বন্ধু বান্ধবীকে সময় দিতে হয় তাই আমি আরো গুটিয়ে থাকতাম। ও সেটাতে অভ্যস্তই ছিল। তবে আমার যেকোনো সমস্যায় সবার আগে ওই এগিয়ে আসতো। আমার পুরো ফ্যামিলি তে সবাই ওকে এক নামে চেনে। আমার বাবা মা এখনো কোনো কারণে আমাকে ফোনে রিচ করতে না পারলে ওকেই আগে ফোন দিবে।

আমার সেই বন্ধুটা এমনই বন্ধু যে আমার প্রতি জন্ম দিনেই সে আমাকে ফোন দেয়। কিন্তু অনেক কথা বললেও হ্যাপি বার্থ ডে বলতে পারেনা। ওর আর আমার আম্মার জন্মদিন আবার একই দিনে। প্রতি ঈদে ফোন দিয়ে নামাজ পড়তে বের করে আমাকে বাসা থেকে।

আমার এই বন্ধুকে আমি প্রায়ই নানাভাবে উত্যক্ত করে থাকি। ইদানিং তার বিবাহ সংক্রান্ত উত্যক্তকরণে সে বোধহয় বেজায় নাখোশ। মাঝখানে আমাকে হায়ার করার চেষ্টা চালিয়েছিলো প্রেমপত্র লিখে দেওয়ার জন্য। একটা কবিতাও বোধ হয় লিখে দিয়েছিলাম তার রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে। শেষে আর প্রেরণ করেনি গন্তব্যে।

আমার বন্ধু সংখ্যা এতো কম থাকার প্রধান কারন হলো আমার সেই বন্ধু আমাকে কখনও বেশি বন্ধু থাকার প্রয়োজন টুকুই বোধ করতে দেয়নি। আর আমার বন্ধুর অনেক বন্ধু থাকার কারণ বোধহয় আমি ওকে কখনো বন্ধুত্বের অনুভুতিই বুঝতে দেইনি। আমাদের দুইজনের খুব কাছের মানুষ যারা তারা প্রত্যেকেই অবাক হয় যে আমাদের বন্ধুত্ব হলই বা কিভাবে আর টিকে আছেই বা কীভাবে! আমরা দুইজন সম্পূর্ণ দুই জগতের। এমন একটা দল নেই যেটাকে আমরা দুইজনেই সাপোর্ট করি। না রাজনীতিতে, না খেলায়। দুইজনের মাঝে মতামতের, চলার পথের, চিন্তার জগতের, পছন্দের বিষয়ের এক চরম বিশৃঙ্খলা। তবু বন্ধুত্ব। আমাদের বন্ধুত্ব আসলে এই চরম বিশৃঙ্খলার শৃঙ্খলে বাঁধা.......

Rafiqul দোস্ত তুই আমার কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা। আমি জানি তুই আমার উপর ব্যাপক ক্ষিপ্ত। এই লেখাটা পড়ে আরো ক্ষিপ্ত হবি। তবে একটা কথা বলে রাখি জীবনে তো বহুত বোকা বানাইসিস আমাকে (আমার ছবি বিকৃতির ঘটনা আমি ভুলি নাই কইলাম) কিন্তু আমি যে তোকে এমন একটা বোকা বানাইসি যেইটা তুই এখনো আবিষ্কার করতে পারিস নাই। বেঁচে থাকলে তোকে তোর ৬০ তম জন্মদিনে গল্পটা বলবো। ততোদিন পর্যন্ত অন্তত কষ্ট করে হলেও পাশে থাকিস.......দূরত্ব যতোই হোক......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.