![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাপান- অ্যা কান্ট্রি ডিফাইন্ড বাই বাবলস!
(ফ্রম আ নিউক্লিয়ার ওয়ান টু অ্যান ইকোনোমিক ওয়ান)
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷।।। আইভানহো মুকিত (২৪.০৯.২০১৯)।।।।।।।।।
ইকোনোমিক্সের লিটারেচারে আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ইকোনমিক ক্রাইসিস। আর ইকোনোমিক সাইকেল বা ইকোনমিক ক্রাইসিস পাঠের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানের অর্থনীতি একটা ক্লাসিক উদাহরণ হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের তিন দশকের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা ‘ইকোনোমিক মিরাকল’ এর মধ্য দিয়ে তার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এসেট প্রাইস বাবলগুলোর মধ্যে অন্যতম বাবল তৈরি হওয়া এবং সেই বাবল বার্স্ট এর মধ্য দিয়ে ডিফ্লেশনের ‘লস্ট ডিকেড’ তথা হারানো দশকে প্রবেশ করা সবই আছে এই একটি দেশের অর্থনীতির ইতিহাসে। আরো আছে নেগেটিভ ইন্টারেস্ট রেট আর কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং এর মতো মনেটারি পলিসির অপ্রচলিত টুলস ব্যবহারের পরেও ইকোনমির চাকা ঘুরাতে ব্যর্থ হওয়ার গল্প।
তো এই গল্পের পুরোটা কয়েক পর্বে লিখবো। তবে প্রাসঙ্গিকতার স্বার্থে শুরু করবো একটু আগে থেকে।
তো আসুন গল্পের ভেতরে প্রবেশ করা যাক।
জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ছিল অক্ষশক্তির পক্ষে। এই অক্ষশক্তির মূল অপর দুই দেশ ছিল জার্মানি এবং ইতালি। ‘অক্ষশক্তি’ নামটা অবশ্য এসেছে ইতালির তৎকালীন স্বৈরশাসক বেনিতো মুসোলিনির এক ভাষন থেকে যেখানে তিনি বলেছিলেন যে বার্লিন-রোম এমন একটা অক্ষ হিসেবে কাজ করবে যে অক্ষের চতুর্দিকে ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো বিপদের সময় শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে অবস্থান নেবে। কিন্তু জাপান তো ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র নয়। তাহলে জাপান কেনো এই অক্ষশক্তিতে যোগ দিলো! ঘটনা আসলে অন্যখানে। সেই ঘটনা একটু দেখে আসা যাক।
জাপান বরাবরই খুব নাক উঁচু জাতি। এখনকার জাপানিসদের দেখে অবশ্য সে কথা ধারনা করার উপায় নেই। জাপানিসরা মনে করতো তারা অন্যসব জাতির তুলনায় সুপেরিয়র ( জার্মানরাও একই বিষয় মনে করতো!) ফলে অন্য জাতিগুলোকে শাসন করা তাদের অধিকারের মধ্যে পরে টাইপের একটা বোধ কাজ করতো তাদের মধ্যে। এর ফলে জাপানের ভেতরে আশেপাশের দেশগুলতে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তারের একটা প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৪ সালে তারা চীনের যুদ্ধ বাধিয়ে কয়েকটি দ্বীপ দখল করে নেয়। ১৯০৪-০৫ এ তারা রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করে শাখালিন আইল্যান্ডের এবং মাঞ্চুরিয়ার কিছু অংশ দখল করে নেয়। ১৯১০ সালে তারা কোরিয়াতে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগ দিয়ে তারা ফ্রান্সের হাত থেকে ইন্দো-চীনের দখলও নিয়ে নেয় এবং থাইল্যান্ডের ক্ষমতায় নিজেদের পছন্দের লোক বসায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের দশক থেকেই জাপানের সরকারে মিলিটারিদের প্রভাব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। জাপানের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে অস্ত্রধারী যোদ্ধা সম্প্রদায় সেখানে সবসময়ই সুপেরিয়র ক্লাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যেমনঃ- শোগুন এবং সামুরাইদেরকে সবাই সম্মান করতো। অর্থাৎ, জাপানে মিলিটারি শাসনের জন্য ক্ষেত্র অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। বিশ্বযুদ্ধের আগ দিয়ে সেটা প্রচন্ডতা লাভ করলো মিলিটারি-ফ্যাসিস্ট সরকারের উদ্ভবের মধ্য দিয়ে। সেই সময়ের দূর প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আর্মি, নেভি এবং এয়ার ফোর্স ছিল জাপানের। জাপান ১৯৪০ সালে জার্মানি এবং ইতালির সাথে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে যেটি ‘বার্লিন চুক্তি’ হিসেবে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপে একটি নতুন অর্ডার স্থাপনে জার্মানি এবং ইতালির নেতৃত্বের প্রতি জাপান একাত্মতা ঘোষণা করে এবং বৃহত্তর পূর্ব-এশিয়ায় একটি নতুন অর্ডার স্থাপনে জাপানের নেতৃত্বের প্রতি জার্মানি এবং ইতালি একাত্মতা ঘোষণা করে। এছাড়াও সেসময়ে চলমান ইউরোপিয়ান যুদ্ধে জার্মানি এবং ইতালির বিরুদ্ধে এবং চীন-জাপান যুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে নতুন কোনো দেশ জড়িত হলে জাপান, জার্মান এবং ইতালি একে অপরকে সবধরণের সাহায্য করবে বলে তারা চুক্তিবদ্ধ হয়। মূলত ইউএসএ কে প্রতিহত করার উদ্দেশ্য করেই এই চুক্তি করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সালে শুরু হওয়ার পর ইউরোপ এবং আফ্রিকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে অক্ষশক্তির আধিপত্য চলতে থাকে। ফলে ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, হল্যান্ড সবাই সেই ইউরোপিয়ান ফ্রন্ট সামলাতে ব্যস্ত থাকায় শুধুমাত্র ইউএসএ ছাড়া প্রাচ্যের দিকে নজর দেওয়ার সক্ষমতা সেই মুহূর্তে কারো ছিলনা । তাই ১৯৪১ সালের ৭ই ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে ইউএস নেভির নৌবহরে বিমান হামলা করে বসে। এর মধ্য দিয়েই জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করে।
জাপানের পলিসি মেকাররা ভালো করেই জানতো যে ইউএস ইকোনোমির যে স্ট্রেন্থ তাতে ইউএস এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধে জাপান টিকতে পারবে না। তাই পার্ল হারবারের এটাকটা ছিল একটা সারপ্রাইজ এটাক যার মাধ্যমে ইউএস প্যাসিফিক নৌবহরকে একটা বিশাল ক্ষতির ধাক্কা দিতে চেয়েছিল জাপান এবং তাতে প্রাথমিকভাবে জাপান সফলও হয়েছিল। কিন্তু ইউএস খুব শীঘ্রই প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে নেয়। এরপর শুরু হয় রিঅ্যাকশন।
ইউএস জেনারেল ম্যাক আর্থারের নেতৃত্বে সিক্সথ ইউনাইটেড স্টেটস আর্মির অভিযান শুরু হয় জাপানের কাছ থেকে ফিলিপাইন আইল্যান্ডের দখল নেওয়ার মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে যুদ্ধ এগোতে থাকে জাপানের মেইন ল্যান্ডের দিকে। জাপান পতনের শুরুটা হয় ১৯৪৫ এর ফেব্রুয়ারিতে Battle of Iwo Jima এর ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এর পরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ ছিল Battle of Okinawa যার কোড নেম ছিল Operation Iceberg। এই যুদ্ধে জাপানিস kamikaze attacks (আত্মঘাতী বিমান হামলা যাতে বিমানটাকে মিসাইল হিসেবে ব্যবহার করা হতো) এর পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর গোলাগুলির ভয়াবহতার কারণে জাপানিসরা এর নাম দিয়েছিল tetsu no ame ("rain of steel")। এর পাশাপাশি চলতে থাকে ইউএস স্ট্রাটেজিক বম্বিং যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জাপানকে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা এবং স্ট্রাটেজিক মিলিটারি পয়েন্টগুলো ধ্বংস করা। এর মাঝে ভয়াবহতম ছিল ৬ এবং ৯ আগস্ট যথাক্রমে হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ।
জাপান ফ্রন্টে যখন এই যুদ্ধ চলছে ততদিনে ৭ মে, ১৯৪৫ জার্মানি সারেন্ডার করে ফেলেছে মিত্র বাহিনির কাছে। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরোপ ফ্রন্ট থেকে এসে যোগ দেয় জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। তারা যুদ্ধে যোগ দিয়ে প্রথমেই দখল করে নেয় এর আগে হাতছাড়া হওয়া মাঞ্চুরিয়া আর শাখালিন আইল্যান্ডের অংশগুলো। এর পর তারা অগ্রসর হতে লাগলো জাপানের মূল ভূখন্ডের দিকে।
এই সময়তা খুব ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা ঘটে। জাপানের পলিসি মেকাররা দেখলো এভাবে চলতে থাকলে তারা ইউএস এর কাছেও যুদ্ধে পরাজিত হবে আবার রাশিয়াও তাদের দেশ দখলে নিয়ে নেবে। ফলে তারা ইউএস এর কাছে সারেন্ডার করে বসলো যাতে ইউএস তাদেরকে রাশিয়ার invasion থেকে রক্ষা করে। ক্যাপিটালিস্ট ইউএস এবং কম্যিউনিস্ট রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক এমনিতেই কখনো ভাল ছিলনা তাদের ভিন্ন মতাদর্শের কারণে। তবুও তারা শক্তিশালি জার্মান আর্মির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বার্থে সাময়িকভাবে জোটবদ্ধ হয়েছিল। জার্মানি সারেন্ডার করে ফেলায় সেই জোটের প্রয়োজনীয়তা যেমন ফুরিয়েছিল তার পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কর্তৃত্ব করার সুযোগ পেয়ে ইউএস সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। ফলে জাপানের সারেন্ডারের পর ইউএস জাপানের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় যাতে সেখানে কম্যুনিজম মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এতক্ষণে বোঝা গেল কেন ইউএস শত্রুপক্ষ থেকে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী হয়ে উঠলো ! শত্রুর শত্রু বন্ধু বলে কথা!
ইউএস জেনারেল ডগলাস ম্যাক আর্থারের নেতৃত্বে ইউএস ফোর্স জাপানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রথমেই তাদের সংবিধান সংশোধন করে মেইজি কন্সটিটিউশন বাতিল করে কন্সটিটিউশন অব জাপান প্রণয়ন করে যার ৯ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাপানে ডি-মিলিটারাইজেশন বা অসামরিকিকরণ ঘটে। এর ফলে জাপান তার মিলিটারি ক্ষমতাকে আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া অন্য দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না বলে আইন হয়। জাপানে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করা হয়। রাজার ক্ষমতা হয়ে পড়ে পোশাকি অর্থাৎ সিম্বলিক। ১৯৪৭ সালের ৩ মে ‘এম্পায়ার অব জাপান’ এর নাম পরিবর্তিত হয়ে যাত্রা শুরু করে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত ‘জাপান’।
আজকের পর্ব এখানেই শেষ করবো। তবে এতো রক্তারক্তির ইতিহাসের শেষটা একটু ভালোভাবে করা যাক। ঐ যে ওকিনাওয়ার যুদ্ধ যা tetsu no ame ("rain of steel") নামে জাপানিসদের কাছে পরিচিত ছিল তার স্মৃতিতে একটা অপার্থিব গান আছে। অপার্থিব বললাম একারণে যে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই ওকিনাওয়ায় যাওয়ার। ওকিনাওয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে এই পৃথিবীর অংশ মনে হবেনা। সেখানে একটা সি-ক্রুজে একজন স্টেজ সিঙ্গারের কন্ঠে গানটা শুনে গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছিল। তখন কিছুই বুঝিনি। শুধু সুর আর সেই সিঙ্গারের কন্ঠের আবেগটুকুই ফিল করেছি। পরে যখন ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে ইতিহাস আর গানটার প্রেক্ষাপট জেনেছি তারপর থেকে গানটার প্রতি একটা অন্যরকম আকর্ষণ কাজ করে।
গানটার শুরু হয় deigo নামের একটা ফুল দিয়ে (ছবি প্রথম কমেন্টে)। এই ফুলটা গ্রীষ্মের শুরুর দিকে ফোটে ওকিনাওয়ায়। আর সেই সময়টা টাইফুনের জন্যও কুখ্যাত।
গানটার লিরিক টা অনেকটা এরকমঃ-
The deigo flower has blossomed, and it has called the wind, and the storm has arrived.
The deigo flowers are in full bloom, and they have called the wind, and the storm has come.
The repetition of sadness, it's like the waves that cross the islands.
In the sugarcane forest I met you and
Beneath the sugarcanes I bid you farewell forever.
Island Song, ride the wind, with the birds, cross the sea.
Island song, ride the wind, carry my tears with you.
The deigo blossoms have fallen, and just ripples have been left and waving on the water.
A small happiness, it's like flowers of sea foam.
To my friend who used to sang together in the sugarcane forest,
Beneath the sugarcanes I bid you farewell forever.
Island song, ride the wind, with the birds, cross the sea.
Island song, ride the wind, carry my love with you.
To the sea, to the universe, to God, to life, may this peace like the sea at dusk carry on eternally.
Island Song, ride the wind, with the birds, cross the sea.
Island song, ride the wind, carry my love with you.
একেবারের প্রথম লাইনটা আর শেষের তিন লাইন কী অপার্থিব না!
আইভানহো মুকিত (২৪.০৯.২০১৯)
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫
রুপ।ই বলেছেন: দারুন,মন ভরিয়ে দিলেন।
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫২
আহমেদ জী এস বলেছেন: ঊনআশি,
ভালো লাগলো ইতিহাসাশ্রয়ী লেখাটি। গানের লিরিকসটাও সুন্দর।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৯
রাজীব নুর বলেছেন: গল্প তো পেলাম না। পুরোটাই ইতিহাস।