নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাফি আব্দুল্লাহ

সাফি আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং নাগরিক ভাবনাঃ

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:০৭





আগামী ২৮ এপ্রিল হতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্রগাম সিটি করপোরেশনের বহুল প্রতিক্ষিত মেয়র এবং কাউন্সিলর নির্বাচন। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন। এতে আনেক প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে। মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রর্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। রাস্তাঘাটে যেখানে যাকে পাচ্ছেন জড়িয়ে ধরছেন, কুলা কুলি করছেন। এমনকি রিক্সাওয়ালা, ভিক্ষুক বা পথচারী কেউ বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের আগে ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞাতা আছে। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়ে জনাব মোঃ হানিফ বা সাদেক হেসেন খোকা তেমন কিছু করতে পেরেছে কিনা তা নগরবাসী হাড়ে হাড়ে জানে। নির্বাচিত হওয়ার পর তার দুজনেই তাদের ব্যার্থতার জন্য সিটি গভার্নমেন্ট করতে না পারায় তারা কাজ করতে পারে নি বলে যুক্তি দেখিয়েছিলেন। অথচ দুজনই তাদের মেয়াদ কালে তাদের দলীয় সরকার পেয়েছিলেন।তাদের নিজেদের দলীয় সরকার আবার সিটি গভার্নমেন্ট পছন্দ করে না। এবারে আমাদের এ ধরনের অজুহাত শুনতে হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে সিটি গভার্নমেন্ট না হলেও সিটি করপোরেশনকে গতিশীল, কর্মক্ষম এবং নগরবাসীর সেবক করা যায় তা তার সূকৌশলে আড়াল করে গেছেন এবং এ কৌশল ভবিষ্যৎে নতৃন যার আসবেন তারা করবেন না তা হলপ করে বলা যায় না। তাই আমরা যারা ভোটার এবং ভোট দিয়ে আমাদের নগরের সেবকদের নির্বাচিত করব তাদের এখনি সচেতন হবার সময়। কথার ফূলঝুরিতে বিশ্বাস না করে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সে অনুযায়ী আমাদের নেতা নির্বাচিত করতে হবে। যে কাজগুলি মেয়র-কাউন্সিলরা নির্বাচিত হবার পর সহজে করতে পারে তা আদায় করে নিতে হবে।



সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নাগরিকদের স্বার্থে কিছু কাজ তারা দ্রুত করতে পারেন, কিছু কাজ মধ্যম মেয়াদে করতে পারেন, কিছু কাজের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী সময়। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়রা দ্রুত যে কাজগুলি করে নাগরিক সুবিধা বড়াতে পারেন সেগুলি হলঃ



১। সিটি করপোরেশনকে দূর্নীতি মুক্ত করার জন্য কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া। সিটি করপোরেশনের এক বিরাট অংশ কর্মকর্তা, কর্মচারী দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাদের দূর্নীতি করার রাস্তাগুলি প্রথমেই বন্ধ করা শুরু করতে হবে। উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের দূর্নিতিতে কাউন্সিলরা জড়িয়ে পড়েন। এগুলিও বন্ধ করা শুরু করতে হবে। যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং পত্রিকা মারফত জানা যায় যে সিটি করপোরেশনের যানবহন বিভাগ, ট্যাক্স কালেকশন বিভাগ, উন্নয়ন বিভাগ, এবং ট্রেড লাইসেন্স বিভাগ এ প্রচুর দূর্নীতি হয়ে থাকে। এগুলিকে দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে হবে।যাতে সেবা প্রদানকারীরা কোন মতেই দূর্নীতির কোন সুযোগ পেতে না পারে।



২।উন্নয়নমূলক কাজে কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কাউন্সিলরা ওপেন সিক্রেট দূর্নীতি করে থাকে। সাবাই জানে তবে কেউ বন্ধ করার কোন পদক্ষেপ নেয় না। ঠিকাদার তাদের বিলের জন্য এনাদের কাছে দায়বদ্ধ, তাই তার কাজের মান কমিয়ে উপরোক্তদের খুশি করে তাদের বিল নিয়ে চলে যায়। সেজন্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও অন্যান্য সেবা দেখভাল করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কাউন্সিলর উপদেষ্টা কমিটি করতে হবে। দলমত নির্বিশেষেে এই কমিটি গঠন করতে হবে।এবং এই কমিটির মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।



৩। মশক নিধন, পছিন্নতা এবং ড্রেনেজ ব্যাবস্থা পেছনে এক বিরাট সংখ্যক কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োজিত। কিন্তু অধিকাংশদের কোন কাজ নাই। কিন্তু তাদের বসে বসে বেতন ভাতা দিতে হয়। এটা এক প্রকার দূর্নীতি। এটা বন্ধ করার জন্য তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান পূর্বক দ্রুত কাজে নিয়োজিত করতে হবে। আর তা যদি না পারা যায় তবে এ সকল কর্মকান্ড পরিচালনার নিয়োজিত সকল কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে ওর্য়াড ভিত্তিক কমিউনিটি সেবা গ্রুপ করে তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে এ কাজগুলি করানো যেতে পারে।



৪। যানজটঃ যানজট নিরাশন দীর্ঘমেয়াদী হলেও তাৎক্ষনিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করলে ঢাকার যানজটের ৩০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভাব বলে আমার মনে হয়। নির্বাচিত মেয়র, পুলিশ এবং বিআটিএর সাথে আলাপ করে অবিলম্বে যে কাজগুলি করতে পারেন তা হল। প্রধান সড়কে সংযোগস্থল (মোড়ে) থেকে ৩০০ গজ দূরে সকল বাস বা পাবলিক পরিবহন এর স্টপেজ বন্ধ করতে হবে।কোন অজুহাতেই সংযোগস্থলে বাস/পাবলিক পরিবহন থামানো বা যাত্রী উঠানামা করতে দেওয়া যাবে না। কোন কারনেই এক স্টপেজ থেকে অন্য স্টপেজের মধ্যে যাত্রী উঠনামা করতে দওয়া যাবে না। এ আইন ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা তথা জরিমানা করতে হবে যা হবে সিটি করপোরেশনের আয়।



৫। ফুটপথঃ যতদ্রুত সম্ভব ফুটপথগুলি দখলমুক্ত করতে হবে। ফূটপথগুলি হকারদের দখলে থাকা যানজটের আর একটি কারণ। পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য ফুটপথগুলি উন্মুক্ত রাখতে হবে। হকারদের ব্যাপারে মানবিক দিক বিবেচনা করে কিছু রাস্তায় তাদের সন্ধাকালিন বাজার এবং ছুটির দিনে সারা দিন বসার ব্যাবস্থা করতে হবে। তবে এখানে যাতে কোন মধ্যসত্বভোগী চাঁদা তুলতে না পারে তার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে নাম মাত্র মূল্যে অনমোদন কাগজ প্রদান করতে হবে। যা হতে পারে সিটি করপোরেশনের আয়ের একটি উৎস।



৬। রাস্তা সংরক্ষণঃ ঢাকা শহরের অধিকাংশ রাস্তা পিচ দিয়ে তৈরী করা এবং বর্ষা হল পিচ ঢালা রাস্তার শত্রু। বর্ষার সময় পানি প্রবাহিত হওয়ায় নিয়ম হল রাস্তার দুপাশ দিয়ে প্রবাহিত করার। কিন্তু রাস্তার পাশের বাড়ীগুলি সীমানা থেকে রাস্তা পর্যন্ত ঢাল করে বাড়ীর ছাদের পানি সহ অন্যান্য পানি রাস্তায় প্রবাহিত করে দেয়। উল্টো ঢাল থাকায় রাস্তার উপর জমা বর্ষার পানি রাস্তার উপর দিয়ে পরিবাহিত হয় যা রাস্তার জন্য ক্ষতিকর। যার কারনে দ্রুত পিচ রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাগুলি দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য রাস্তার পাশে অন্তত ২/৩ ফুট জায়গা রাস্তা থেকে নিচু করে দিয়ে বাড়ীগুলির দ্বারা নির্মিত ঐ সকল ঢাল ভেঙ্গে দিতে হবে।



৭। প্রতি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র সহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা, সংষ্কুতিক অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীতামূলক ব্যাবস্থা করবে সিটি করপোরেশন। যা যুবক/যুবতীদের চরিত্র গঠনে সাহায্য করবে।



৮। উন্নয়নমুলক কাজ নির্দৃষ্ট সময়ে শেষ করাঃ নগরির রাস্তা, ওয়াশার সোয়ারেজ, টিএন্ডটির উন্নয়ন এর নামে সারা বছর খোড়া খুড়ি চলে বা শেষ হয় না। চলে মাসের পর মাস। যা নাগরিকদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। এটা সহজে বন্ধ করা যায়। সব উন্নয়নমুলক কাজের নির্দৃষ্ট সময়ের মধে শেষ করার নিয়ম থাকে। তবে তা কখনই ঠিকাদারা মানে না। সিটি করপোরেশন উন্নয়নমূলক কাজের শুরু এবং শেষ সময়সীমা কঠোরভাবে মানতে ঠিকাদারকে বধ্য করতে হবে। উন্নয়নমূলক কাজের একটি সংক্ষিপ্তসার যথা কাজের নাম, ঠিকাদার , তদারকি সংস্থার নাম, দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নাম, মোবাইল নং, কাজের ধরণ, বাজেট, শুরু এবং শেষের সময়সীমা সহ একটি নোটিশ সিটি করপোরেশনের উদ্দ্যোগে কাজের স্থানে টানিয়ে দিতে হবে। কোনভাবেই পথচারী এবং যানবহন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে ঠিকাদারকে বা সংস্থাগুলিকে বাধ্য করতে হবে।



৯। নাগরিক স্বাক্ষাতঃ মেয়র এবং কউন্সিলদের সাথে সাধারণ নাগরিকরা যাতে দেখা করে তাদের সমাস্যাগুলি জানাতে পারে তার জন্য সপ্তাহে নির্দৃষ্ট দিনের ব্যাবস্থা করতে হবে। মেয়রের অফিস সপ্তাহে নূন্যতম একদিন এবং কাউন্সিলদের কার্য়ালয়ে সপ্তাহে ৪/৫ দিন নাগরিক স্বাক্ষাতকারের ব্যাবস্থা করতে হবে। যে সময় নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হবে সে সময় মেয়র বা কাউন্সিলদের স্বাক্ষাত স্থালে হাজির থাকতে হবে। কোন জরুরী কারণে স্বাক্ষাতের তারিখ পরিবর্তণ করতে হলে তা পূর্বেই নাগরিকদের যথাযথভাবে জানতে হবে। জরুরী প্রয়েজনে নাগরিকরা যাতে মেয়র বা কাউন্সিলদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তার জন্য ওয়ার্ড এর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মেয়র/কাউন্সিলদের মোবাইল/ফোন নং সম্বলিত বোর্ড স্থাপন করতে হবে।



উল্লিখিত কাজ ছাড়াও আরো অনেক নাগরিক সুবিধার জন্য কাজ মেয়র/কাউন্সিলরা করতে পারেন। সেগুলি নির্বাচিত হওয়ার পরই করতে হবে।



এর জন্য আমাদের মানে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। এবং সেভাবেই আমাদের সেবক নির্বাচিত করতে হবে। তা না হলে আমরাই আমাদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ থেকে বঞ্চিত হব।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:১৪

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: সহমত।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:০৩

সাফি আব্দুল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সহমতের জন্য।

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


ভোট হলে ৩ ডাকাত নির্বাচিট হবে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

সাফি আব্দুল্লাহ বলেছেন: আমরা যদি ডাকাত নির্বাচিত না করি তাহলে কি ভাবে ডাকাত নির্বাচিত হবে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.