| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেব্রুয়ারি মাসে কয়দিন থাকে বলো তো? দাঁড়াও দাঁড়াও, যারা বেশি চটপটে, চট করে বলে দিলে ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৮ দিনে, তারা কি একবারও এই বছরের ক্যালেন্ডারে চোখ বুলাও নি? দেখোনি, যে এই বছর ফেব্রুয়ারি মাস হবে ২৯ দিনে? অনেকেই হয়তো ভাবছো, ওমা! ফেব্রুয়ারি মাস আবার ২৯ দিনে হয় নাকি? আমাকে বলেছো ঠিক আছে, অন্য কাউকে ভুলেও যেন এই কথা বলো না; সবাই তোমাকে এমন বোকা ভাববে! এই বছরটা লিপ ইয়ার না! বাংলায় যেটাকে বলে অধিবর্ষ; মানে এই বছর ৩৬৫ দিনে না, হবে ৩৬৬ দিনে। আর ওই অতিরিক্ত একটা দিন যোগ হবে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে। মানে, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসটা হবে ২৯ দিনে।
কেন একদিন বেশি?
সেটাও তো ভীষণ প্রশ্ন! এই বছর একটা দিন বেশি হবে কেন? তার আগে বলো তো দেখি, ৩৬৫ দিনে বছর হয় কেন? আচ্ছা, আমি-ই বলছি, শোনো। আমাদের এই ক্যালেন্ডার কিন্তু ভীষণই হিসেব করা। আমরা যেই ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি, ইংরেজি ক্যালেন্ডার, ওটার আসল নাম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার নিয়ে পড়তে চাইলে এই মূল রচনাটা পড়ে দেখতে পার- (নতুন বর্ষ নতুন ক্যালেন্ডার Click This Link) এই ক্যালেন্ডার মোট ৩৬৫ দিনের, এই ৩৬৫ দিনের হিসেব এসেছে সূর্যের কাছ থেকে। পৃথিবী ৩৬৫ দিনে একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। আবার ৩০ দিনে মাসের হিসেব এসেছে চাঁদের কাছ থেকে। এক পূর্ণিমা থেকে শুরু করে আরেক পূর্ণিমা পর্যন্ত সময় হলো ৩০ দিন (আসলে সাড়ে ২৯ দিন)। তাই বলে কিন্তু ভেবো না, চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সাড়ে ২৯ দিন সময় লাগায়, এ কাজে চাঁদের লাগে ২৭ দিন ৭ ঘণ্টার একটু বেশি; কিন্তু শুধু কি চাঁদ ঘুরছে, পৃথিবী ঘুরছে না? পৃথিবীও তো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! অর্থাৎ চাঁদ ঘুরে আসতে আসতে পৃথিবীও তার জায়গা বদল করে ফেলে। তাই পৃথিবীকে সত্যি সত্যি একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে চাঁদকে একটু বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়; তাই মাসের হিসেব হয় ৩০ (সাড়ে ২৯) দিনে। আবার দিনের ২৪ ঘণ্টার হিসেব এসেছে কোত্থেকে জানো? পৃথিবী তার নিজের কক্ষপথের উপর লাটিমের মতো করে ঘুরছে। এই লাটিমের মতো একবার ঘুরতে তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
এখন সমস্যা হলো, চাঁদ যেমন পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে আসতে পুরো ৩০ দিন সময় নেয় না, একটু কম সময় নেয়; তেমনি পৃথিবীও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ঠিক ঠিক ৩৬৫ দিন সময় লাগায় না, একটু বেশি সময় লাগায়; সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর আসলে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা সময় লাগে। মানে বছর শেষেও কিন্তু আমাদের হাতে কিছু সময় থেকেই গেল। এই সময়টা যদি আমরা হিসেবের বাইরে রাখি, তাহলে কি হবে বলো তো? আস্তে আস্তে আমাদের হিসেবে গণ্ডগোল হতে থাকবে; চার বছর পর বছরের হিসেব একদিন এগিয়ে আসবে, শীতের শেষ দিনেই বসন্তের ফুল ফুটতে শুরু করবে, আবার বসন্তের শেষ দিনেই গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদ পড়তে শুরু করবে।
ভাবছো, একদিনের হিসেবে গোলমাল হলেই বা সমস্যা কী! আরে, গোলমাল তো আর একদিনের হবে না, প্রতি চার বছরে একদিনের গোলমাল হবে, মানে ৮ বছরে ২ দিনের, ১০০ বছরে ২৫ দিনের আর ৪০০ বছরে ১০০ দিনের হিসেবে গোলমাল! তাহলে এই অতিরিক্ত সময়টুকু কি করা যায়, বলো তো? হ্যাঁ, এই অতিরিক্ত সময়টুকুই প্রতি চতুর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে অতিরিক্ত একটি দিন হিসেবে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে; এই অতিরিক্ত সময়ই ২৯ ফেব্রুয়ারি।
অন্য ক্যালেন্ডারের লিপ ইয়ার
পৃথিবীতে ক্যালেন্ডার কি শুধু একটাই? উঁহু, পৃথিবীতে যে কত্তো ক্যালেন্ডার আছে! আমরাই তো তিন-চারটা ক্যালেন্ডার ব্যবহার করি! বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে আমি বলছি, একটু হিসেব করে দেখো তো, কয়টা হলো? আমরা স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত করি ইংরেজি ক্যালেন্ডার (আসলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী; আবার পহেলা বৈশাখ আর আমাদের আর আর যতো উৎসব, সেগুলো পালন করি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী; আবার মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় যতো উৎসব সেগুলো পালন করে ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী; আবার সনাতন ধর্মালম্বীরা তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো পালন করে হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। তাহলে মোট ক্যালেন্ডার কয়টা হলো? চারটা! আরো অনেক ক্যালেন্ডারও কিন্তু আছে, যেমন অনেক আদিবাসীদেরও নিজস্ব ক্যালেন্ডার আছে। তো, সবগুলো ক্যালেন্ডারে কিন্তু লিপ ইয়ারের এই অতিরিক্ত সময়টুকু একই সাথে হিসেব করা হয় না।
তার আগে ক্যালেন্ডারের কিছু মূল বিষয় জেনে নাও। ক্যালেন্ডার মূলত ২ প্রকার- সোলার ক্যালেন্ডার বা সৌরক্যালেন্ডার আর লুনার ক্যালেন্ডার বা চান্দ্রক্যালেন্ডার। সৌরক্যালেন্ডারে হিসেব করা হয় সূর্যকে ভিত্তি করে; যেমন- গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার, তারপর আমাদের দেশে প্রচলিত বাংলা ক্যালেন্ডার। আর চান্দ্রক্যালেন্ডারে হিসেব করা হয় চাঁদের ভিত্তিতে; যেমন- ইসলামিক ক্যালেন্ডার। আবার এই দুই ব্যবস্থার সমন্বয়ে আরেক ধরনের ক্যালেন্ডার প্রচলিত আছে, এগুলোকে বলা হয় লুনিসোলার ক্যালেন্ডার; এগুলোতে হিসেব করার সময়ে ভিত্তি হিসেবে চাঁদ এবং সূর্য- দু’টোকেই বিবেচনা করা হয়। প্রচলিত অধিকাংশ ক্যালেন্ডারই লুনিসোলার ক্যালেন্ডার; যেমন- হিন্দু ক্যালেন্ডার, চায়নিজ ক্যালেন্ডার, তারপর হিব্রু ক্যালেন্ডার।
সৌরক্যালেন্ডারের লিপ ইয়ার
এখন, সৌরক্যালেন্ডারগুলোতে লিপ ইয়ারে অতিরিক্ত একটা দিন যোগ হয়; গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অতিরিক্ত দিনটি যোগ হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে। আর বাংলাদেশে প্রচলিত যে বাংলা ক্যালেন্ডার, সেটি কিন্তু প্রাচীন বাংলা ক্যালেন্ডার নয়। ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র নেতৃত্বে একটা কমিটি গঠন করে পুরোনো বাংলা ক্যালেন্ডারটিকে আধুনিক করার জন্য। আর সেই কমিটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে মিল রেখে আধুনিক হিসেব-নিকেশে নতুন করে বাংলা ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। তাদের সেই ক্যালেন্ডারের মূলনীতিগুলো কী কী ছিলো জানো? বাংলা ১২ মাসের প্রথম পাঁচটা হবে ৩১ দিনে, শেষ সাতটা ৩০ দিনে। আর লিপ ইয়ারের বা অধিবর্ষের অতিরিক্ত একটা দিন যুক্ত হবে ফাল্গুন মাসের শেষে। এখন বলো তো, অতিরিক্ত দিনটা কেন ফাল্গুন মাসের শেষে যুক্ত হবে? কারণ, তাহলে সময়টা ২৯ ফেব্রুয়ারির সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে।
তবে সোলার ক্যালেন্ডারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মজার হলো ইরানিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেব। এই ক্যালেন্ডারেও প্রতি চার বছর পরপর লিপ ইয়ার হিসেব করা হয়, এবং একদিন যোগ করা হয়। তবে ৩৩ বছর পর একবার করে লিপ ইয়ার চার বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পর হিসেব করা হয়!
আবার ইসলামিক ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারে অতিরিক্ত একটা দিন যোগ করা হয়। বছরের শেষ মাসের শেষে প্রতি ৩০ বছরের ১১ বছরে এই অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। তবে এটা সকলেই মানেন না; অন্যদের মত হল, ইসলামিক ক্যালেন্ডারই তো হিসেব করা হয় চাঁদ দিয়ে; তাহলে সূর্যের হিসেবের লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের আর কী দরকার?
লুনিসোলার ক্যালেন্ডারের লিপ ইয়ার
যাই হোক, লিপ ইয়ার হিসাবে সবচেয়ে মজা হল লুনিসোলার ক্যালেন্ডারগুলোতে। কেন? কারণ, সেগুলোতে লিপ ইয়ার হিসেব করার জন্য লিপ ইয়ারগুলোতে আস্ত একটা মাসই জুড়ে দেয়া হয়! যেমন চায়নিজ ক্যালেন্ডারের কথাই ধরো না; সেই ক্যালেন্ডারেও আস্ত একটা মাস জুড়ে দেয়া হয়। তবে সেই মাসটা কখন জুড়ে দেয়া হবে, সেই নিয়ম ভারি জটিল। সেই মাসটা এমনভাবে জুড়তে হয়, যাতে ওদের একটা বিশেষ উৎসব ১১তম মাসেই পড়ে! আবার হিন্দু ক্যালেন্ডারে প্রতি ২-৩ বছরে একটা অতিরিক্ত মাস জুড়ে দিতে হয়। এই মাসটিকে বলা হয় ‘আধিক্য মাস্যা’ (অতিরিক্ত মাস)। তবে দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে তামিলনাড়–তে যেই হিন্দু ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, সেটা কিন্তু সোলার ক্যালেন্ডার! সেখানে প্রতি চার বছরে একবার লিপ ইয়ার আসে।
হিব্রæ ক্যালেন্ডারও কিন্তু লুনিসোলার ক্যালেন্ডার। কিন্তু এই ক্যালেন্ডারের হিসেবটা বড্ডো জটিল। এই ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারে একটি অতিরিক্ত মাস যোগ হয়, কিন্তু সেই মাস যোগ করা হয় বছরের শুরুতে; এই মাসটিকে বলা হয় আদর আলেফ (প্রথম আদর)। আবার লিপ ইয়ারের হিসেবটা কিভাবে হয়, জানো? প্রতি ১৯ বছরে ৭টি লিপ ইয়ার হিসেব করা হয় (সাধারণত- ৩, ৫, ৮, ১১, ১৪, ১৭ এবং ১৯ নম্বর বছর)।
কিভাবে বুঝলাম ২০১২ লিপ ইয়ার?
তাই তো? আমি কি করে বুঝলাম এই ২০১২ সালটা লিপ ইয়ার? অনেকেই হয়তো বলবে, নিশ্চয়ই ক্যালেন্ডার দেখে বের করেছি! উঁহু, সে তো চোরাবুদ্ধি হলো! কোনো বছর লিপ ইয়ার কি না, তা বের করারও কিন্তু সূত্র আছে। আর এই সূত্রটা খুবই সোজা; তোমার যে ছোট্ট ভাই বা বোন আছে, শিখিয়ে দিলে সে-ও পারবে, কেবল ভাগ করতে জানতে হবে! বছরটাকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি ভাগশেষ শূণ্য (০) হয়, তাহলেই সেই বছরটা লিপ ইয়ার। মানে যে বছরটা ৪ দিয়ে বিভাজ্য, সেটাই লিপ ইয়ার।
শতকের অধিবর্ষ
শতকের অধিবর্ষ বা সেঞ্চুরি লিপ ইয়ার- নাম শুনেই তো মনে হয় তোমরা বুঝে গেছো, কোনগুলো এই লিপ ইয়ার, তাই না? এই লিপ ইয়ারের জন্য হিসেব কিন্তু একটু আলাদা। প্রত্যেক শতককেই তো ৪ দিয়ে ভাগ করা যায়, তাই না? কিন্তু শতকের ক্ষেত্রে এই নিয়মটা আবার খাটে না। শতকের ক্ষেত্রে ভাগ দিতে হয় ৪০০ দিয়ে; কেবল ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য হলেই সেই বছরটা লিপ ইয়ার। মানে, প্রতি চারটা শতকের মধ্যে কেবল একটি শতকেরই শেষের বছরটা লিপ ইয়ার হয়।
ভাবছো, লিপ ইয়ার ৪ বছর পরপর হবে, তাহলে আবার সবগুলো শতকের শেষের বছর কেন লিপ ইয়ার হবে না? আসলে প্রথমে তাই-ই নিয়ম ছিল। কিন্তু পরে দেখা গেল, এতে আবার লিপ ইয়ার বেশি হয়ে যাচ্ছে! সময়ের চেয়ে ক্যালেন্ডারের হিসেবই এগিয়ে যাচ্ছে! তখন আবার হিসাব-নিকাশ করে শতকের জন্য এই নতুন নিয়ম বানানো হয়।
এখন প্রশ্ন হলো, কেন এমন হলো? কেন লিপ ইয়ার বেশি হয়ে গেল? হিসেব অনুযায়ী পৃথিবী যদি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা সময় নেয়, তাহলে তো এই সমস্যা হওয়ার কথা না। তখন হিসেব করে দেখা গেল, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর আসলে সময় লাগে ৩৬৫.২৪২৫ দিন। একদম ঠিক ঠিক হিসেব করে বললে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ১২ সেকেন্ড। আর সে কারণেই প্রতি চার বছরে একটি করে লিপ ইয়ার হিসেব করায় হিসেবে বিশাল গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছিল।
এবার তাহলে বলো তো? এর পরের লিপ ইয়ার আবার কবে? হ্যাঁ, ২০১৬ সালে। আর ২১০০ সাল কি হবে, লিপ ইয়ার? উঁহু, ওটা কিন্তু মোটেও লিপ ইয়ার না। বাঃ, বেশ তো লিপ ইয়ারের হিসেব বুঝে গেছো। এবার তাহলে পরিকল্পনা করতে বসে যাও, এইবার ২৯ ফেব্রুয়ারিতে কী কী করবে, কেমন?
©somewhere in net ltd.