নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমাদের মাঝে কি কেউ আছে বন্ধু আমার

নগর-বাউল

Graduated from Dhaka University, Now working at a multinational company.

নগর-বাউল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলাম

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ৮:৫১

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম কোথাও বেড়াতে যাব। কিন্তু যাওয়া আর হচ্ছিল না নানা ব্যস্ততার কারণে। এর মধ্যে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া দুই বন্ধু বেড়াতে এল। ঠিক করলাম সবাই মিলে একসাথে কক্সবাজার যাব। আমি, আমার বউ, সাঈদ, লিসা, ওয়ালী আর মুনা। আমরা তিন জন এর আগেও বেশ কয়েকবার একসাথে ঘুরতে গিয়েছি, কিন্তু তিন জুটি মিলে এবারই প্রথম। এর মধ্যে শেষের দুজনের অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করার ঝামেলা না থাকলেও বাকি সবারই এটাই ছিল আসল সমস্যা। আমি আর সাঈদ একি অফিসে হওয়ায় ছুটি পাওয়া একটু কঠিন ছিল। কারণ আমাদের কাজের ধরনের কারণে ছুটির দিনেও মাঝে মধ্যে অফিসে ছুটতে হয় অল্প সময়ের নোটিসে। একারণে সাধারণত একসাথে দুইজনকে ছুটি দেয়া হয় না। তারপরেও বসকে অনেক বলে কয়ে ছুটি ম্যানেজ করলাম। অফ-সিজন হওয়া সহজে হোটেলও পেয়ে গেলাম ৫০% ডিসকাউন্টে (কাপল-বেড এসি ১০০০/-)। হোটেল সি প‌্যালেস - কলাতলী বিচ থেকে সামান্য দুরে। গ্রীনলাইন ভলভো বাসের টিকিট কাটা হল। ভাড়া ৯০০ টাকা। ওখানে গিয়ে কি করব না করব এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতেই বুধবার চলে এল। ঐদিন রাতেই বাস। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম এবং ব্যাগ গুছিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বাস ছাড়তে না ছাড়তেই ওয়ালী ফেসবুকে বেশ রোমান্টিক একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল (going to cox bazar ... first time with her :D )। আমাদের আর কারোই first time with her না। তাই আমরা মোটামুটি মানের স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে জানান দিলাম যে রওনা হচ্ছি। স্ট্যাটাস দিতে না দিতেই দেশের বাইরে থাকা আমাদের দুই বন্ধু ডিসলাইক দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগল। শেষে ডিসলাইক বাটন খুঁজে না পেয়ে তারা কমেন্ট হিসেবেই ডিসলাইক লিখে দিল। যাত্রা ভালই চলছিল, মাঝখানে বাধ সাধল ট্রাফিক জ্যাম। ভোরের দিকে এক জায়গায় প্রায় দুঘন্টা আটকে ছিলাম। যার ফলসরুপ পৌছতে পৌছতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে গেল। আমি ভাবছিলাম অন্যান্য বারের মত যদি সেইন্টমার্টিন যাওয়ার প্লান থাকত তাহলে নিশ্চিত সি-ট্রাক মিস করতাম। ক্ষুধায় তখন পেট চোঁ চোঁ করছিল। হোটেলে চেক ইন করেই ছুটলাম খাওয়ার খোঁজে। নিরিবিলি রেষ্টুরেন্টে ভরপেট লাঞ্চ করলাম ডিম ভর্তা, আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা আর ডাল দিয়ে। ভাতের চালটা খুবই ভাল মানের ছিল। শুধু ডাল আর ভর্তা দিয়েই দুপ্লেট সাবাড় করে ফেললাম। সন্ধ্যায় কলাতলী বিচে গিয়ে Angel Drop রেস্তোরায় বসলাম। অনেকক্ষণ ধরে ক্র্যাব (কাকড়া) ফ্রাই খাওয়ার চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিলাম সবাই। রাতে খেয়েছিলাম পৌষালী রেষ্টুরেন্টে। উল্লেখযোগ্য আইটেম ছিল লইট্যা ফ্রাই। পরেরদিন সকালে হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট শেষে কলাতলী বিচে গিয়ে শুরু হল দাপাদাপী। প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই চলল ওয়ালী আর সাঈদের আমাকে পানিতে চুবানোর ব্যর্থ চেষ্টা। অসুস্থ্যতার কারণে আমার বউ তীরেই বসে ছিল। সে আমাদের ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিল। ছবিগুলোর মধ্যে ওয়ালীর একটি বিশেষ মুহূর্তের ছবিও ছিল, যা কিনা রুমে আসার সাথে সাথেই রি-সাইকেল বিনে চলে গিয়েছিল। এর মাঝে দেখা হয়ে গেল আর এক কলিগের সাথে। অফ সিজন হলেও বিচে অনেক মানুষ দেখলাম।



রাতে অর্ধেক খেলা দেখে ফুরফুরে মেজাজে খেতে গেলাম প্রাসাদ প‌্যারাডাইস এর বারবিকিউ কর্ণারে। তবে মেজাজ বেশিক্ষণ ফুরফুরে ছিল না। ব্রাজিলের পরাজয় কি আর সহজে মেনে নেয়া যায়? সাথে বোনাস হিসেবে ছিল বন্ধুদের টিটকারী। ওরা আবার সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার ছিল। এর মধ্যেই খাবার চলে এল। চার রকমের কাবাবের সেট মেনু। প্রিয়দলের পরাজয়ের দুঃখ কিছুটা হলেও কাবাব দিয়ে ঢাকা পড়ল। পরের দিনটা কাটল বিচে দাপাদাপি আর হালকা শপিংয়ের মধ্য দিয়ে। সকালে বিচে গোসল করার সময় লিসার পা মচকাল। ওকে হোটেলে ফিরতে হল সাঈদের ঘাঁড়ে চড়ে। বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে X-Ray করার পর দেখা গেল আশঙ্কাজনক কিছু নয়।



আমরা কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে করে একচোট হাসলাম। সেবার আমরা গিয়েছিলাম লাবনী বিচে। হঠাৎ সাঈদের পা গেল মচকে। পরামর্শের জন্য ওয়ালীর বাবাকে ফোন করা হল। উনি পরামর্শ দিলেন ব্যথা কমানোর জন্য একটি বিশেষ অষুধ লাগবে, যা কিনা সেবন করা যায় না, বিশেষ উপায়ে বিশেষ জায়গায় প্রয়োগ করতে হয়। আমার বউয়ের প্রশ্ন ছিল শেষ পর্যন্ত কে অষুধটি প্রয়োগ করেছিল। থাক না হয় সে প্রসঙ্গ।



যাওয়ার সময় হয়ে এল। রাত দশটায় বাস। ঠিক করলাম যাওয়ার আগে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া করব। রুম সার্ভিসে ফোন করে চাইনিজ অর্ডার দিলাম। কিন্তু খাওয়ার মজা মাঠে মারা গেল আর্জেন্টিনার খেলা দেখে। সবাই আমাকে বলতে লাগল, "আমরা বুঝতে পারছি কালকে তোর কেমন লেগেছিল"। ডিনারটা স্পনসর করল ওয়ালী। খাওয়া শেষে চেক আউট করে বাসস্ট্যান্ডে আসলাম। বাগদাদ এক্সপ্রেসের মার্সিডিজ বেন্জ। কিন্তু বাস ছাড়ার পর ঝাকুনির চোটে সবার অবস্থা খারাপ। আর ড্রাইভারও খুব রাফ চালাচ্ছিল। আর থাকতে না পেরে বিরতির সময় বাস চেন্জ করল সাঈদ আর লিসা। বাকিটা সময় আমরা মোটামুটি দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আসলাম। এসেই আবার দৌড়াও অফিসে। আর অফিসে এসে যথারিতি ঘুম। সাঈদেরও দেখি একই অবস্থা। তবে এবার আর বসের কাছে ধরা পড়িনি।



স্টুডেন্ট লাইফে মাত্র কয়েক ঘন্টার প্লানে একবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেড়াতে যেতে চাইলে অনেক কষ্টে সময় ম্যানেজ করতে হয়। তাও হয়ত সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। আর কখনো এভাবে একসাথে যাওয়া হবে কিনা তা জানি না, তবে এরকম একটা টুরের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ৯:০১

বিডি আইডল বলেছেন: আপনার কক্সসবাজারে বর্ণনা খাদ্যময় :)

আমাদের যাওয়ার এই একটাই জায়গায়..এটারে একটু সুযোগ সুবিধা দিয়ে ঠিক ঠাক রাখতে আমরা পারি না...এটলিস্ট বীচটারে একটু হকার মুক্ত রাখতেও তো পারি

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৫৪

নগর-বাউল বলেছেন: আমার লেখা পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কক্সবাজার আসলেই খুব সুন্দর। আমরা একটু সচেতন হলেই একে সুন্দর রাখতে পারব।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ৯:১২

হা...হা...হা... বলেছেন: ভাইজান, আপনার দ্বায়িত্ব কিন্তু বেড়ে গেল। কি দ্বায়িত্ব বুঝতে পারেননি তো? খোলাসা করে বলি। সেই পিচ্ছিকাল থেকে কক্সবাজার যাব যাব করে এখনও যাওয়া হয়নি। যেতে না পারার একটি বড় কারণ হলো সঙ্গী না পাওয়া। এবার ভাবছি একলা চলরে নীতি অনুসরণ করব। আপনার লেখা অনেক ভাল হয়েছে। আপনি বর্ণনায় হোটেলে থাকতে কত খরচ হলো, কি খেতে কত টাকা লাগল, কোথায় থেকে কোথা যেতে কতটাকা লাগল সব লেখার মধ্যে লিখে দিতেন তাহলে নিজে নিজে একটি বাজেট তৈরি করে পেলতে পারতাম। আপনি যেহেতু তা করেননি মোটামোটি ৫/৭ দিন থাকার জন্য কত টাকা খরচ হতে পারে তার একটি হিসেব যদি দিতেন শুধু আমার না অনেকের উপকার হতো। আপনার দ্বায়িত্বটি বুঝতে পেরেছেন?

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ১০:৫১

নগর-বাউল বলেছেন: বুঝতে পেরেছি। আসলে আগেই এটা করা উচিত ছিল। গ্রিনলাইন এসি বাসের ভাড়া ছিল ৯০০ টাকা। বাগদাদেরটাও একই। আর একটা আছে ১২০০ টাকা। নন এসি আরো কম। হোটেল ভাড়ার কথা তো আগেই বলেছি। তবে একটু খুজলে অনেক কমে পাওয়া যাবে। ২০০৬ সালে আমরা ৪০০ টাকায় যে হোটেলে ছিলাম তা বেশ মানসম্পন্ন ছিল। নামকরা হোটেল গুলোর বুকিং ঢাকা থেকেই দিতে পারবেন। প্রতি বেলায় আমাদের (৬ জনের) খাওয়ার বিল আসতো ৮০০ - ১০০০ টাকা। ২/৩ দিন থাকার জন্য তিন হাজার টাকাই যথেষ্ট। এছাড়াও যেতে পারেন ইনানী বিচ, হিম ছড়ি, মহেশখালী ইত্যাদি যায়গায়। অফ সীজনে গেলে বেশ শস্তায় শান্তিমত ঘুরতে পারবেন।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ১১:৪৯

শূণ্য উপত্যকা বলেছেন: ১০ বছর হল কক্সবাজার যায় না। গতবার দুইদফা প্ল্যান করার পরও যেতে পারিনি। এবার যাবই যাব।যত বাধাই আসুক তবু যাব।

০৫ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৩৩

নগর-বাউল বলেছেন: হুট করে একদিন বাসে উঠে পড়েন।

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৫:১৯

শোভন এক্স বলেছেন: "ছবিগুলোর মধ্যে ওয়ালীর একটি বিশেষ মুহূর্তের ছবিও ছিল, যা কিনা রুমে আসার সাথে সাথেই রি-সাইকেল বিনে চলে গিয়েছিল।"

-- এটা কি করলেন ভাই? এভাবে টেনশনে ফেলে দিলেন? কিসের মুহূর্ত, কি না কি এসব না ভেবেতো থাকতেই পারছিনা। :(

০৫ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১০:২৬

নগর-বাউল বলেছেন: আসলে তেমন কিছু না। ঢেউয়ের ধাক্কায় প‌্যান্ট খুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এই আর কি। :)

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪১

নৃ-নৃ বলেছেন: অনেক এনজয় করেছেন......ভালো লাগল লেখাটি পড়ে।

০৬ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৩৬

নগর-বাউল বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। জেনারেল হওয়ার জন্য অভিনন্দন।

৬| ১৩ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৩৮

গ্য।গটেম্প বলেছেন: প্লাস

১৩ ই জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:২৫

নগর-বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ। এতদিন পরে পড়লেন? .....

৭| ১৪ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:০৬

রিফাত হোসেন বলেছেন: ০৯ ই জুন, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৩
নগর-বাউল বলেছেন: কিন্তু আত্মঘাতী বোমা হামলা কোন প্রকার জেহাদ ?

উত্তর
০৯ ই জুন, ২০১০ রাত ১০:২৪

লেখক বলেছেন: আত্মঘাতী বোমা হামলা কোন জিহাদে পরে না। জিহাদের নামে সাধারণ জনগণদের মারার নিয়ম নিষেধ বরং রাসূল ﷺ জিহাদে যাওয়ার পূর্বে বৃদ্ধ, নারী, শিশু, ফসলী জমি, যারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে নি তাদের বিরুদ্ধে যে কোন প্রকার আক্রমন নিষেধ করে দিতেন। ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) ও একই কথা বলে দিতেন। পরবর্তীতে সকল জিহাদেই এই নীতি অনুসরণ করা হতো।

আত্নঘাতী হামলা সংক্রান্ত বিষয় ইসলাম সম্পর্কে ভুলভাবে জানার ফসল। আর আত্মঘাতী হামলা প্রথম আবিস্কার হয়েছে তামিল টাইগারদের দ্বারা! এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই কারণ আত্মহত্যা ইসলামে নিষেধ।

Click This Link

১৫ ই জুলাই, ২০১০ রাত ১:১৮

নগর-বাউল বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনার উত্তরের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.