![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভীষণ কল্পনাপ্রবণ একজন মানুষ আমি। কল্পলোকের ক্যানভাসে ছবি এঁকে, মনোজগতের সুবিশাল হাইপার স্পেসে নিজের এক মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে আমি হয়েছি ঈশ্বর। যখন প্রচন্ড কষ্টে কাঁদতে ইচ্ছে করে, তখন নিজের সৃজিত মহাবিশ্বের অসীম গ্যালাক্সিপুঞ্জ দেখে গর্বিত অনুভব করি। অতঃপর স্বপ্নীল জগতের দিকে তাকিয়ে উচ্চারণ করি দৈব বাণী- "নিশ্চই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান। দুঃখ কিংবা কষ্ট তাকে স্পর্শ করে না।"
এই বাসযোগ্য প্রাণচঞ্চল পৃথিবী, প্রজ্জ্বলিত সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ, সহস্র আলোকবর্ষব্যাপী নীহারিকাপুঞ্জ, প্রায় অসীম বা অনির্দিষ্টসংখ্যক তারকারাজি, কয়েকশো বিলিয়ন গ্যালাক্সি এবং সব মিলিয়ে কল্পনাতীত সুবিশাল মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো- সেই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছে পৃথিবীর ইতিহাসের প্রায় প্রত্যেক দার্শনিক-চিন্তাবিদ-বিজ্ঞানী-সাহিত্যিক-ধার্মিক-ধর্মতত্ত্ববিদ-রাজা-বাদশাহ-শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ-জোয়ানসহ সকল স্তরের, সকল সময়ে, সবধরণের মানুষকে! সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে রচিত হয়েছে অগণিত বই, উদ্ভব ঘটেছে অসংখ্য দার্শনিক তত্ত্বের, আবির্ভাব ঘটেছে কিংবদন্তীর। বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা বিকাশ লাভ করার পর আমরা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে পারছি। আজ আমরা জানবো মহাবিশ্ব সৃষ্টির এখন পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত মতবাদটি সম্বন্ধে। ইংরেজীতে এই তত্ত্বটিকে বলে Big bang (বিগব্যাঙ), বাংলায় মহাবিষ্ফোরণ তত্ত্ব। অনেকেই হয়তো এই তত্ত্বটি সম্বন্ধে ইতিমধ্যেই জানেন।
বিগ-ব্যাং তত্ত্বঃ আজ থেকে প্রায় তেরোশো কোটি বছর আগে মহাকাশের বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সিপুঞ্জ, আর তার ভেতরের সকল নক্ষত্র, গ্রহ-উপগ্রহসহ সমস্ত মহাবিশ্বটি নিহিত ছিলো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি বিন্দুতে! যার ভর ছিলো পুরো মহাবিশ্বের ভরের সমান এবং ঘনত্ব ছিলো অসীম! আরেকটু বুঝিয়ে বলি। ধরুণ, এই পুরো পৃথিবীটাকে যদি কোনভাবে চেপে-টেপে ঘনীভূত করে একটা ক্রিকেট বল বানিয়ে ফেলেন, তাহলে অবস্থাটা কিরকম দাঁড়াবে একবার কল্পনা করুন। সেই ক্রিকেট বলের বস্তুর পরিমাণ হবে পুরো পৃথিবীর বস্তুর পরিমাণের সমান। পুরো পৃথিবীকে এভাবে বলের ভেতর এঁটে ফেলার জন্য তার ঘনত্ব হবে অকল্পনীয়! তাহলে এবার ভাবুন- এই পৃথিবী, তার চাঁদ, পৃথিবীর চাইতেও তেরোলক্ষগুণ বড় আকৃতির ওই সূর্যটা, পুরো সৌরজগত, সূর্যের মত লক্ষ কোটি নক্ষত্র, নক্ষত্রদের ধারণ করা বিশ হাজার কোটি গ্যালাক্সিসহ সবকিছু একীভূত ছিলো হাইড্রোজেন পরমাণুর চাইতেও ছোট একটি বিন্দুতে। সত্যিই ভাবতে পারা যায় না, তাই না?
এই বিন্দুকে বিজ্ঞানীরা সাধারণভাবে ডেকে থাকেন ‘Singularity’ (সিঙ্গুলারিটি)। এছাড়াও ডাকা হয় বিশ্ব-ডিম্ব’ বা Cosmic egg. এই সিঙ্গুলারিটির ঘনত্ব এবং তাপমাত্রা- দু’টোই ছিলো অসীম! ঠিক ওই সময়টুকু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সিঙ্গুলারিটির ভেতরে যা কিছু ঘটেছিলো, সেটিই নির্ধারন করেছে আমাদের আজকের এই মহাবিশ্বটি কেমন হবে। সেই সিঙ্গুলারিটি বিন্দুর বিরাট বিষ্ফোরণের মধ্যে দিয়েই এই মহাজাগতিক মহাযজ্ঞের সূত্রপাত। প্রচণ্ড বিষ্ফোরণের ফলে ভেতরের সবটুকু পদার্থ অকল্পনীয় বেগে বেরিয়ে আসে। মহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারিত হতে শুরু করে।
ছবিঃ মহাবিষ্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব
শিশু মহাবিশ্ব এবং এর বেড়ে ওঠার গল্পঃ শিশু মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর ধাপটিকে বলা হয়ে থাকে প্ল্যাঙ্কের সময় (Plank Epoch)। সে সময় প্রকৃতির চারটি মৌলিক বল- মহাকর্ষ বল, তড়িৎ চৌম্বকীয় বল, উইক নিউক্লিয়ার ইন্টার্যাকশন, এবং সবল নিউক্লিয়ার ইন্টার্যাকশ্যান একীভূতভাবে একটিমাত্র বল হিসেবে ছিলো। যে সময়টুকু হচ্ছে 〖১০〗^(-৪৩)সেকেন্ড। 〖১০〗^(-১২) সেকেন্ড পর এই চারটি মৌলিক বল আলাদা হয়ে যায়। অসীম তাপমাত্রাসম্পন্ন এবং ঘনত্বসম্পন্ন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এবং ঘনত্ব যত কমতে শুরু করে ততই পরিবর্তিত হতে থাকে মহাবিশ্বের স্বরূপ।। 〖১০〗^(-৬) সেকেন্ড পরেই সৃষ্টি হয় প্রোটন এবং নিউট্রন!
ধারণা করা হয়ে থাকে, মহাবিষ্ফোরনের প্রথম সেকেন্ডেই এটি ১০ আলোকবর্ষ পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিলো। এভাবে ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হতে হতেই আমাদের আজকের এই মহাবিশ্বটি রূপ লাভ করে।
আমরা এখন ধীরে ধীরে ঋণাত্মক সময় থেকে ধনাত্মক সময়ের দিকে ধাবিত হব। মহাবিষ্ফোরণের প্রথম ১ সেকেন্ড থেকে ১০ সেকেন্ড পর্যন্ত মহাবিশ্বের ভরের বেশিরভাগ জুড়েই ছিলো লেপ্টন এবং অ্যান্টি-লেপ্টন। কিন্তু এই দশ সেকেন্ড পরেই মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এত বেশি কমে যায় যার ফলে লেপ্টন এবং অ্যান্টি-লেপ্টনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেই ১০ সেকেন্ড থেকে পরবর্তী ৩,৮০,০০০ বছর ছিলো কেবলই ফোটনের রাজত্ব। মহাবিষ্ফোরণের ৩ মিনিট থেকে ২০ মিনিট সময়জুড়ে প্রোটন এবং নিউট্রন নিউক্লিয়ার ফিউশন প্রক্রিয়ায় মিলিত হতে শুরু করে। ৩,৭৭,০০০ বছর পরে প্রথম হাইড্রোজেন পরমাণু আবির্ভূত হয়। মহাবিশ্বের বয়স বাড়তে থাকে। ১৫ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত মহাবিশ্বের বেশিরভাগ জুড়েই ছিলো প্লাজমা।
ছবিঃ মহাজাগতিক টাইমলাইন
কৃষ্ণ সময়ঃ বিগ ব্যাঙের ১৫ কোটি বছর থেকে ৮০ কোটি বছর সময়কালকে ডার্ক এজ বা কৃষ্ণপক্ষ হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ এসময় জুড়ে ফোটন কণিকা নিউট্রন এবং প্রোটনের সাথে বিক্রিয়া করে মহাবিশ্বকে পুরোপুরি কুয়াশাচ্ছন্ন বা ধূমায়িত করে ফেলে।
প্রথম নক্ষত্রের সৃষ্টিঃ ধূমায়িত গ্যাসসমূহ যখন নিজেদের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণে ঘনীভূত হতে শুরু করে, তখনই ফিউশন বিক্রিয়াটি সংঘটিত হয়। এই ফিউশন রি-অ্যাকশনের ফলশ্রুতিতেই নক্ষত্রের জন্ম। বিজ্ঞানীদের মতে মহাবিষ্ফোরণের ৪০ কোটি বছর পর প্রথম নক্ষত্রদের জন্ম। এই প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রদের বলা হয়ে থাকে ‘পপুলেশন ৩’ নক্ষত্র। এদের মাধ্যমেই মহাবিষ্ফোরণের ফলে সৃষ্ট হাল্কা উপাদানসমূহ (হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, লিথিয়াম) ভারী উপাদানে রূপান্তরিত হয়।
ছবিঃ জমাটবদ্ধ গ্যাস হতে ফিউশন বিক্রিয়ায় নক্ষত্রদের জন্ম
প্রথম গ্যালাক্সির সৃষ্টিঃ আলোকবর্ষের পর আলোকবর্ষ বিস্তৃত গ্যাসীয় মেঘ জমাটবদ্ধ হয়ে একটি গ্যালাক্সি সৃষ্টি করে। তারপর গ্যালাক্সিগুলোর ভেতরে একে একে জন্ম নিতে থাকে নক্ষত্রপুঞ্জ। এভাবেই অজস্র নক্ষত্রের সমাবেশে গঠিত হয় একটি গ্যালাক্সি! ২০০৭ সালে কয়েকজন বিজ্ঞানী টেলিস্কোপে চোখ রেখে মহাবিশ্বের দূরবর্তীতম প্রান্তে এরকম ছয়টি গ্যালাক্সি দেখতে পান, যেগুলোর ভেতরে এখনো নক্ষত্র সৃষ্টি হচ্ছে। এই গ্যালাক্সিগুলো ১৩ হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। যার ফলে সহজেই বোঝা যায়, যে এই গ্যালাক্সিগুলো মহাবিশ্বের প্রাচীনতম গ্যালাক্সি। আমরা জানি, মহাশূন্যের বুকে আমরা যাই দেখতে পাই, তার সবটাই মূলত অতীত। হিসেব-নিকেশ করে তারা বের শকরে ফেলেন যে, গ্যালাক্সি সৃষ্টির এই ঘটনাটি ঘটেছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির ৫০ কোটি বছর পরে। তাহলে আমরা ধারণা করতে পারি, মহাবিশ্বের বয়স যখন ৫০ কোটি বছর তখনই ‘পপুলেশন ২’ প্রজাতির নক্ষত্রদের আবির্ভাব ঘটে এবং একইসাথে গ্যালাক্সি সৃষ্টি হয়। আমাদের এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিটি কিন্তু খুব একটা পুরনো নয়। এটি সৃষ্টি হয়েছে আনুমানিক ৮০০ কোটি বছর আগে।
ছবিঃ গ্যালাক্সি
সৌরজগতের জন্মঃ আমাদের এই চিরপরিচিত সৌরজগতের আবির্ভাব ঘটে বিগ ব্যাঙের ৯০০ কোটি বছর পর। অন্যভাবে বলা যায় আজ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি বছর পূর্বে! হাইড্রোজেন এবং অন্যান্য কনার সমষ্টিবদ্ধ সুবিশাল গ্যাসীয় মেঘ মহাকর্ষবলজনীত কারণে একীভূত হতে শুরু করে। ফিউশন বিক্রিয়ায় এর কেন্দ্রে জন্ম নেয় সূর্য। সূর্যের চারপাশে একটি ঘূর্নায়মান ডিস্ক সৃষ্টি হয় যেখান থেকে ধীরে ধীরে গ্রহসমূহ রূপ লাভ করে। যার মধ্যে রয়েছে আমাদের বাসভূমি পৃথিবী। প্রাণময়, নীলাভ গ্রহ পৃথিবী। বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব এখনো বিস্তর গবেষনা হচ্ছে।যদিও এটি অনেক বিস্তৃত। এই তত্ত্বটি নিয়ে রচিত হয়েছে অসংখ্য বই। আমরা এই পর্বে খুব সংক্ষেপে মহাবিশ্ব সৃষ্টির বিভিন্ন দিক আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। মজার ব্যাপারটি হচ্ছে সেই যে মহাবিষ্ফোরণের সময় মহাবিশ্বের প্রসারন শুরু হয়েছিলো, সেই প্রসারন এখনো চলছে। এখনো আমরা প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে চলছি, প্রতি মুহূর্তে গ্যালাক্সিগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে!
[চলবে]
২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ১০:৪১
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: উৎসাহ দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
২| ৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৮:৪২
আছিফুর রহমান বলেছেন: অসাধারণ, সিরিজ হিসাবে চালিয়ে যান, আপনার আরো লেখার অপেক্ষায়
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আছিফুর রহমান!
সিরিজ হিসেবে চালানোর কথাই ভাবছি...
৩| ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩
জলমেঘ বলেছেন: সবগুলোই পড়ে এলাম। খুব ভালো লাগলো। সামনের পর্বগুলো আরো ভালো হবে আশা করছি
৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫০
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: ধন্যবাদ জলমেঘ!
চেষ্টা করব সামনের পর্বগুলো আরো চমকপ্রদ করে তুলতে।
পাশে থাকবেন।
৪| ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:২৩
নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: অপেক্ষায় থাকলাম।
৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫১
নাহিদ শামস্ ইমু বলেছেন: ধন্যবাদ নাভিদ কায়সার রায়ান।
অপেক্ষার পালা খুব শীঘ্রই অবসান করার চেষ্টা করব।
শুভকামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৫৯
ভারসাম্য বলেছেন: প্রিয়তে রাখলাম।
দারুণ একটা সিরিজ হতে যাচ্ছে হয়তো। যদিও সাড়া কম, তবে দমে যাবেন না দয়া করে।
শুভকামনা।